লেবেল

শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০

শারদীয় সংখ্যা -১৪২৭ / প্রবন্ধ

 



প্রবন্ধ-


মাস সাতেক সতের কিলোমিটার  ও তারপর 
আ শি স মি শ্র

১.
গত মাস সাতেক সতের কিলোমিটারের মধ্যে শরীর ঘুরপাক খাওয়ার পর যখন সত্তর কিলোমিটারের বেশি শরীরকে ঘুরিয়ে আনলাম, তখন মাথা থেকে সব উড়ে গেলো। মনে হলো একটা সমান্তরাল মনোভূমি অকস্মাৎ দুমড়ে গেছে। ভাবলাম, এই বেশ তো ছিলাম। ইঁদুর বাহন নিয়ে গণেশ হয়ে থাকাই ছিলো মঙ্গল। হঠাৎ ময়ূর নিয়ে কার্তিক হতে গিয়ে মুখের স্বাদ হয়ে গেলো করলার মতো। তার মানে গত সাত মাসের সিস্টেমে আমি কি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি? হঠাৎ সেই সিস্টেম ব্রেক করতেই চোখের সামনে সবকিছুকে অচেনা মনে হলো? অপূর্ব দৃশ্যকল্প দেখেও যখন একলাইনও কবিতা এলো না, তখন আমি জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে দিলাম আমার সাত মাসের বৃত্তকে। সেখানে নিয়ে এলাম সত্তর কিলোমিটারের বেশি এক নতুন বৃত্ত। না, তাতেও দেখছি, আমি আমার 'ডিফিকালটি ওভারকাম' করতে পারলাম না। আমি ব্যর্থ এক শরীরখন্ড মাত্র। তার সমস্ত তেজ ম্রিয়মাণ। কিন্তু এই সিস্টেম ব্রেক তো তাকে করতেই হবে। তখন কীভাবে চলাচল করবে এই শরীর। তার ভেতর তো জং ধরতে শুরু করেছে। অগত্যা জং ছাড়াতে কবিতার আশ্রয় নিতে হয়। মনে পড়ে পেমেন্দ্র মিত্রর কবিতা --" হাওয়া বয় শনশন তারারা কাঁপে/ হৃদয়ে কি জং ধরে পুরনো খাপে?/ কার চুল এলোমেলো / কি বা তাতে এলোগেলো/ আর হওয়া বয় শনশন তারারা কাঁপে... "।

২.
 নতুন কাব্যভাষা ও নতুন চিত্রভাষা খোঁজার জন্য এই যে হঠাৎ করে আমরা পাঁচ জন একটু বোহেমিয়ান হয়ে গেলাম,  সমুদ্রের একটা অচেনা জায়গায় গিয়ে অতল জলরাশিকে জাপ্টে ধরলাম, সেখানেও তো আমাদের বং -কানেকশন। তার মানে জীবন মাঝে মাঝে হুঁকো বা বং -এ মুখ ছোঁয়াতে চায়। তার মানে সেই তো ধোঁয়া। আমি এই ধোঁয়াতে অভ্যস্ত নই। তবুও ওদের পাল্লায় পড়ে একটু গাইতে হলো -- ' ধোঁয়া ধোঁয়া ধোঁয়া / পারি না সইতে... ' কবে যেন কোনো এক কলমচি কিশোরজীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি কোন স্কেলে গান করেন? কিশোরজী নাকি বলেছিলেন, আমি রাস্কেলে গান করি। ---তাই আমরাও সবকটা রাস্কেল মিলে বালিতে গড়িয়ে গেলাম। অসাড় শরীরে বিপুল তরঙ্গ এসে গুঁতো মেরে ফেরত পাঠিয়ে দিলো রুমে। আর চাঁদ ব্যাটা বিড়ি টানতে টানতে বললো--ছোকরা সকল, বেশি বাড়াবাড়ি করো না। বুড়ো সমুদ্রের সঙ্গে ফাজলামো চলে না। 

৩.
একবারই সুযোগ এসেছিলো কক্সবাজারে সন্ধ্যা দেখার। কিন্তু সেবার যাওয়া হলো না। মালিবাগের সন্ধ্যায় এক চক্কর দিয়ে ফিরে এলাম। সেবার ফিরে এসে একটা সিরিজ লেখা হয়ে গেলো। কিন্তু এই যে অনন্ত অন্ধকারে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের প্রাণের স্পন্দন শুনলাম, চাঁদের আলোছায়ায় নানারকম ইজম ধরা দিলো, তা তো ধরা যাচ্ছে না। সিরিজ লেখা তো দূরের কথা। বুঝতে পারছি আমি কিছুতেই ডিফিকালটি ওভারকাম করতে পারছি না। আসলে সবার দ্বারা সব হয় না। শিশির বললো, স্বামীনাথনের সেই কথা ভাবো। যে কথা শঙ্খবাবু তাঁর গদ্যে লিখেছিলেন। 
আমারও মনে পড়লো সেই কথা। আমি গুম হয়ে বসে থাকলাম। আমাদের অন্য তিনটে বং এসে আবার হুল্লোড় শুরু করলো। তাদের হাতে গিটার। আমরা মেতে গেলাম। মাতবারই কথা। জলযানের ঢেউ তখন তোলপাড় করছে যে মগজে... 

৪.
সবাই সব পারে না। যেমন " তোমার বাড়ির সমানে দিয়ে আমার মরণযাত্রা... " গানটি মান্না দে  বা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে দিয়ে হলো না। অগত্যা কিশোরজী তো গাইলেন। এবং কী অপূর্ব। যেমন আজ আমাদের সঙ্গে শিল্পী বন্ধু শ্যামল জানা বা হিরণ মিত্র থাকলে এখন অন্ধকারে দাঁড়িয়ে সব দৃশ্য ধরে রাখতেন খাতায়। আমি তো খাতা ও রং নিতেই ভুলে গেছি। তাই আমার তো শুধু দেখা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এই "দেখা " কতদিন পর কীভাবে আমার কাছে ধরা দেবে জানি না। এসব ভাবছি যখন, তখনই জাভেদ আখতার। --" ইয়ে রাতে ইয়ে মৌসম নদী কা কিনারা / ইয়ে চঞ্চল হাওয়া.. "। এ গানও আমাকে অবিরাম কাঁদিয়ে চললো। এ কি কাঁদবার গান? তা তো নয়। কিন্তু এই গান আমাকে কেন কাঁদাবে?  এই সংগীতভাষার এমন জাদু, যা শুনে মনে হলো আমি কিছুই এতোদিনে লিখতে পারিনি...। 
দিন দুই সেই গানের ঘোর কাটিয়ে যখন লেখায় ফিরলাম, তখন মনে হলো আমি বোধহয় ডিফিকালটি ওভারকাম করতে পারলাম।





বিদ্যাসাগরের মহত্ব

তু ল সী দা স   মা ই তি


"ধন্য তোমরা, তোমাদের তপস্যা ব্যর্থ হয়নি, তোমরা একদিন সত্যের সংগ্রামে নির্ভয়ে দাঁড়াতে পেরেছিলে বলেই আমাদের অগোচরে পাষাণের প্রাচীরে ছিদ্র দেখা দিয়েছে। তোমরা একদিন স্বদেশবাসীদের তিরস্কৃত হয়েছিলে, মনে হয়েছিল বুঝি তোমাদের জীবন নিস্ফল হয়েছে, কিন্তু জানি সেই ব্যর্থতার অন্তরালে তোমাদের কীর্তি অক্ষয়রূপ ধারণ করছিল।" বিদ্যাসাগর সম্পর্কে বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একদিন এমন কথা বলেছিলেন । কথাটির তারপর্য অনেকটাই গভীরে নিহিত। ওইদিনই রবীন্দ্রনাথ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন যার মূল্য অপরিসীম। দেশবাসীর বিদ্যাসাগর স্মরণের উদ্দেশ্যকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে সেদিন তিনি বলেছিলেন- 

"বিদ্যাসাগর তাঁর চরিত্রের যে মহত্বগুণে দেশাচারের দুর্গ নির্ভয়ে আক্রমণ করতে পেরেছিলেন সেটাকে কেবলমাত্র তাঁর দয়া-দক্ষিণ্যের খ্যাতির দ্বারা তাঁরা ঢেকে রাখতে চান। বিদ্যাসাগরের যেটি সকলের চেয়ে বড়ো পরিচয় সেইটিই তাঁর দেশবাসীর তিরস্করণীর দ্বারা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।"(প্রবাসী, ভাদ্র, ১৩২৯)। এই প্রসঙ্গটির নিবিড় ব্যাখ্যার জন্যই এই প্রতিবেদনের অবতারণা।

বিদ্যাসাগরের মহত্বটি প্রকৃতপক্ষে কোথায় বা তাঁর আসল পরিচয়টি কি তা নিয়ে আজো আলোচনা জরুরি হয়ে পড়ছে। প্রকৃত প্রস্তাবে আধুনিক ভারত নির্মাণের জন্য যে প্রত্যয় বৃক্ষের বীজ উনিশ শতকের বঙ্গভূমি তে প্রোথিত হয়েছিল রামমোহন হাতে, বিদ্যাসাগরের হাতে তার লালন। এর জন্য যে মহৎ শক্তির প্রয়োজন তা বিদ্যাসাগরের ছিল। একটা সংঘাত ময় জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন তিনি এই শক্তি দিয়ে। 

বিদ্যাসাগরের বহুবিধ কাজের প্রধানত তিনটি  দিক।   এক ।। ধর্ম বাদ দিয়ে সমাজ সংস্কার আন্দোলন।।

বিধবাবিবাহ প্রচলন, বাল্যবিবাহ প্রথার বিলোপ ইত্যাদি এই শ্রেণির কাজের মধ্যে পড়ে।
যে সময়কালে বিদ্যাসাগর তাঁর কাজ গুলি করছেন তখন সমস্ত সমাজ ধর্মের বেড়াজাল কুসংস্কার ও কুপ্রথায় জর্জরিত। ধর্মকে বাদ দিয়ে সমাজসংস্কার কিভাবে সম্ভব। রামমোহন রায় তাঁর পূর্বসূরী। তিনি ধর্মকে আশ্রয় করেই সমাজসংস্কারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু বিদ্যাসাগর সে পথে হাঁটেন নি। ধর্ম ও ঈশ্বর-এসবের প্রতি তিনি উৎসাহী ছিলেন না। অবশ্য ধর্মের বিরুদ্ধে জেহাদও ঘোষণা করেননি।তাঁর কাছের মানুষজন অনেকেই রামমোহন প্রবর্তিত ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেছিলেন । অনেকে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছেন। বিদ্যাসাগর বিচলিত হননি। প্রতিক্রিয়াও দেখান নি। তিনি বুঝেছিলেন বিধবাবিবাহ প্রচলন,বহুবিবাহ প্রথা রদ, বাল্যবিবাহ প্রথার লোপ-এই সব কাজের জন্য ধর্ম থেকে দূরে থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে রাধারমণ মিত্র বলেছেন-

"বিদ্যাসাগর ধর্ম বিষয়ে উৎসুক্য দেখাননি। সমাজসংস্কার করতে গিয়ে তিনি বুঝেছিলেন যে ধর্ম সমাজকে রক্ষা করছে না। বরং পীড়ন করছে। সেটা ধর্মের দোষ নয়, যারা ধর্মব্যবসায়ী, ব্রাহ্মণ-পান্ডা-পুরোহিত - তারাই এই কাণ্ডটা ঘটাচ্ছেন। এজন্য তিনি সরাসরি ধর্ম প্রসঙ্গটাই বাদ দিয়ে দিলেন। কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন যে, বিদ্যাসাগর পুরোপুরি নাস্তিক ছিলেন।" 

স্বাভাবিকভাবেই তিনি শত্রু হলেন একশ্রেণির মানুষের কাছে। এমন কি ক্রমশ একা হয়ে গেলেন। কিন্তু জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর কাজ তিনি করে গেছেন। কখনো আদর্শ-চ্যুত হননি। আর এখানেই বিদ্যাসাগরের চরিত্রের মহত্ব। এখানেই তিনি অন্যদের থেকে ভিন্ন, স্বতন্ত্র।

দুই ।। শিক্ষাসংস্কার আন্দোলন। নতুন নতুন  বিদ্যালয় স্থাপন, নারী শিক্ষার নানান আয়োজন ইত্যাদি।।

যে আদর্শে বিদ্যাসাগর সমাজসংস্কার আন্দোলন করেছিলেন সেই পথেই তিনি শিক্ষাসংস্কারের প্রতিও মনোনিবেশ করেন। এখানেও তাঁর লড়াইটা ছিল গভীর। ছাত্রজীবন ও শিক্ষকতাজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বুঝেছিলেন বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষার জন্য শিক্ষা সংস্কারের প্রয়োজন। পাঠক্রম ,শিক্ষাপদ্ধতি- সবকিছুর আমূল পরিবর্তন দরকার। সংস্কৃত কলেজে তিনি কয়েকবছর চাকরি করেন মাঝে তাকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল ওই একটাই কারণে। তিনি পাঠ্যসংস্কার করতে চেয়েছিলেন এবং শিক্ষাপ্রণালীর পরিবর্তন চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। আদর্শহীন রসময় দত্ত মেনে নেননি। আদর্শপরায়ণ বিদ্যাসাগর ইস্তফা দেন। পরে অবশ্য আবার আসেন এখানে চাকরিতে।
নারী শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কমবেশি সবার জানা। বঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে তিনি বিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য স্কুল। বিদ্যালয়গুলো চালু রাখা এবং সংস্কার করার জন্য তিনি কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন নি। অবশ্য বিডন সাহেব কিছু সাহায্য করতেন। সংস্কারমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে প্রকৃত শিক্ষার প্রয়োজন- এটা তিনি অন্তর দিয়ে বুঝেছিলেন বলেই তাঁর এই লড়াই।

তিন ।। গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ।।

গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ বিদ্যাসাগরের এক উল্লেখযোগ্য কাজ। বাংলা সাহিত্যে প্রথম শিল্পিত গদ্যের তিনিই প্রথম স্রষ্টা বলে মনে করা হয়। রামমোহনের কেজো গদ্যকে তিনিই প্রথম সাহিত্যপদবাচ্য করে তোলেন। অবশ্য আধুনিক কালের বহু গবেষক অক্ষয়কুমার দত্তের ১৮৪৭ সালে প্রকাশিত ভূগোল গ্রন্থের গদ্যকে প্রথম সাহিত্যিক গদ্য বলে মনে করে থাকেন। সে বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, এক অনন্য গদ্যশিল্পী ছিলেন তিনি। বিদ্যাসাগরের গ্রন্থ রচনার উদেশ্য তাঁর জীবনের অন্যান্য উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। দেশের মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য চাই বাংলাবই এবং স্কুল চালানোর জন্য চাই অর্থ। গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রেও তিনি ওই একই আদর্শকে মেনে চলেছেন।। কোথাও ধর্মীয় আবেগকে প্রশ্রয় দেননি। বিধবাদের যাতনা ও নারীর দুঃখের মতোই দেশের বালক-বালিকাদের শিক্ষা নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন। শিক্ষা সংস্কারের অন্যতম এককও ছিল তাঁর রচিত গ্রন্থ। এ প্রসঙ্গে শিশু উপযোগী পাঠ্যপুস্তক বর্ণপরিচয়,প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ বই দুটির কথা বলতেই হয়। বলাবাহুল্য, বর্ণ পরিচয় ( ১৮৫৮)- এর আগে বিদ্যাসাগর অনেকগুলি পুস্তক রচনা করেছিলেন। 'বেতাল পঞ্চাবিংশতি' 'বাংলার ইতিহাস', 'জীবনচরিত' 'শকুন্তলা' প্রভৃতি গ্রন্থ রচনার উদ্যেশ্যের সাথে বর্ণপিরিচায়ের উদেশ্য পুরোপুরি এক নয় । শিক্ষাসংস্কারের কাজে বিদ্যাসাগর শিশুর প্রথম শিক্ষার জন্য বিজ্ঞান সম্মত বইয়ের প্রয়োজন উপলব্ধি করেছিলেন। তার আগে যে বই ছিল না তা নয়।  ১৮৪৯-৫০ সালে প্রকাশিত মদনমোহন  তর্কালংকারের লেখা 'শিশুশিক্ষা' '( প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ) বইটি ছিলই।  ছিল ১৮৫৩ তে লেখা স্কুল বুক সোসাইটির বই 'বর্ণমালা', হিন্দু কলেজের বাংলা পাঠশালার সম্পাদক ক্ষেত্রমোহন দত্তের 'শিশুসেবধি'.অক্ষয় কুমার দত্তের 'চারুপাঠ 'ইত্যাদি বই ছিলই। কিন্তু কোনোটাই শিশুদের বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষার করে নির্মিত ছিল না 
এই পুস্তকেই বিদ্যাসাগর বর্ণমালার আমূল পরিবর্তন করেন। এখানে তিনি পূর্বের ৪৮ টি বর্ণের বদলে তিনি আনেন ৫২ টি বর্ণ। দীর্ঘ 'ঋ' এবং দীর্ঘ '৯'-কার বাংলাভাষায় ব্যবহৃত হয় না বলে বাদ দিয়েছেন। অনুস্বার ও বিসর্গ কে ব্যঞ্জনবর্ণে নিয়ে আসেন। চন্দ্রবিন্দু কে অক্ষরের মধ্যে রাখা হয়। আগে স্বতন্ত্র মর্যাদা ছিল না। ক্ষ কে যুক্তবর্ণ থেকে তুলে এনে ব্যঞ্জন বর্ণে রাখেন। সংস্কৃত বর্ণমালায় থাকা ড় ঢ়, য় কে বাংলা ভাষার নিজস্ব হরফের স্বীকৃতি দেন বিদ্যাসাগরই।
বর্ণপরিচয় লিখতে হয়েছিল সহজ সরল ভাবে শেখানোর উদ্দেশ্যেই। এখানে খুব গুরুত্বের সাথে একটি কথা বলতেই হয়, যে বর্ণ পরিচয় এর বর্ণ ,শব্দ, বাক্য, এসবের ক্রমে একটা বিজ্ঞানসম্মত ভাবনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিদ্যাসাগর এই পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে প্রথমে বর্ণপরিচয় পরে প্রকৃতি পরিচয় এবং শেষে সমাজের সাথে পরিচয় করিয়েছেন। আর এই সম্পূর্ণ পর্যায়ে কোথাও ঈশ্বর ও ধর্মের প্রসঙ্গ আনেন নি। তৎকালীন সময়ে যা ছিল খুব কঠিন। এখানেও বিদ্যাসাগর তাঁর আদর্শকে অটুট রেখেছেন। এখানেই বিদ্যাসাগরের মহত্ব।

দীর্ঘ দুশো বছর দেশবাসী বিদ্যাসাগরের মহত্বের আলোতে স্নান করে চলেছে। কিন্তু তারা 'আধুনিকতম মানুষ'টির এই মহত্বকে কতটুকু চিনতে পেরেছে?
আজ তাঁর দুশো বছর পূর্তিতে প্রকৃতরূপে তাঁকে যদি আমরা চিনে নিতে পারি, তবেই এই স্মরণ-কাল হবে সার্থক।


 শিক্ষক
অ নী শ ঘো ষ

উত্তর কলকাতার গলিঘুঁজির পুরনো বসবাস ছেড়ে যখন উত্তরের আরেক মফস্‌সল শহরে— উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে ঠাকুর্দার ভিটেতে নিজের পরিবার নিয়ে আমার পিতৃদেব থিতু হলেন, তখনও আমার বিদ্যালয় গমন শুরু হয়নি। তবে স্কুলে ভর্তির বয়স হয়ে গিয়েছিল বলে সেখানে বসবাস শুরু করার পরেই তিনি বাড়ির একেবারে কাছে ছেলেদের সবচেয়ে নামী ও ভালো সরকারি স্কুলটিতে যোগাযোগ করলেন। বারাসত রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয় অর্থাৎ ইংরেজিতে বারাসত গভর্নমেন্ট স্কুল নামে যার ব্যাপক পরিচিতি সে সময়। এখন অবশ্য তার নাম বদলে প্রথম প্রধান শিক্ষক ‘‌ফার্স্ট বুক অফ ইংলিশ’‌খ্যাত বরেণ্য প্যারীচরণ সরকারের নামে হয়েছে। শতাব্দীপ্রাচীন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো বটেই, এটির প্রতিষ্ঠা ও বেড়ে ওঠার সঙ্গে তৎকালীন সারস্বত বঙ্গসমাজের অনেক কিংবদন্তী মানুষ জড়িয়ে ছিলেন। সে প্রসঙ্গ এখানে না বললেও, ওই বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীতে আমার ভর্তি হওয়ার কাহিনীটি অবশ্যই এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। কেননা এই ছোট্ট লেখাটি আমার যে শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের উপচার হিসাবে পেশ করছি— সেই প্রণম্য মানুষটিই তখন ওই বিদ্যালয়ের প্রাতঃকালীন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বা টিচার ইনচার্জ হিসাবে বহাল ছিলেন। আমাদের স্কুলের মর্নিং সেকশনের হেডমাস্টার মশাই হিসাবে পরিচিত ও কর্মরত শ্রদ্ধেয় সেই মানুষটি হলেন প্রয়াত ধীরেন্দ্রনাথ কুমার।
১৯৬০ সালের কথা বলছি। প্রাতঃকালীন বিভাগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ধীরেন কুমার মহাশয়ের সঙ্গেই আমার পিতৃদেব দেখা করে আমার ভর্তির বিষয়ে কথা বলেন। সে বছর তখন নতুন শিক্ষাবর্ষের কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং যথারীতি প্রতিটি ক্লাসের পঠনপাঠনও চালু। দেখা গেল, প্রথম শ্রেণীতে নয়, দ্বিতীয় শ্রেণীতে একটিমাত্র আসন অপূর্ণ আছে। আমাকে সেই শ্রেণীতে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে হবে বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক মহাশয়। বললেন, বয়সের হিসাবে অবশ্য কোনও অসুবিধে নেই তাতে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ওই সরকারি বিদ্যালয়টিতেই আমাদের ঘোষবাড়ির প্রায় প্রতিটি ছেলে সাধারণত আগে ও পরে বিভিন্ন সময়ে পড়াশুনো করে গেছে। এমনকি আমাদের বাড়ির সম্পর্কে আত্মীয়রাও যাঁরা কাছাকাছি থাকতেন, তাঁদের অনেকের পুত্রসন্তানরাও ওই স্কুলের ছাত্র ছিল। যে সময়ের কথা বলছি, তখন ওই বিদ্যালয়টি মানের দিক থেকে এতদঅঞ্চলে এক নম্বরে থাকলেও, যেহেতু এলাকার জনসংখ্যা আজকের মতো এত বিপুল ছিল না, ফলে আজ ওই সরকারি স্কুলে ভর্তি হতে গেলে যে চাপ ও সমস্যার মুখে পড়তে হয় অভিভাবকদের, বা চাইলেও ভর্তি করতে পারেন না সন্তানদের, সে সময় এমন সমস্যা ছিল না। যদিও পড়াশুনোয় মনোযোগী না হলে তখনও এই সরকারি স্কুলে পড়ার সুযোগ মিলত না, ভর্তি হয়েও বার্ষিক পরীক্ষায় পর পর দু’‌বছর অকৃতকার্য হলে তখনও স্কুল থেকে বিদায় দেওয়ার নিয়ম চালু ছিল।
বারাসত স্টেশন ও যশোর রোডের পুবদিকের অঞ্চলের ছেলেরাই সাধারণত পড়ত এই স্কুলে, পশ্চিমের ছেলেরা অন্য স্কুলে। পরবর্তীতে এই সীমানা ভাগ যেমন প্রায় ভিত্তিহীন হয়ে গেছে পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে, তেমনই এলাকা হিসেবে বারাসতের বিস্তৃতি আজ অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়ে গেছে, এমনকি লাগোয়া ও দূরবর্তী এলাকার মানুষজনও দিন দিন এই স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করার জন্য যেন উঠেপড়ে লেগে পড়েন, কেননা এই বিদ্যালয়ের সুনাম আজও আগের মতোই সসম্মানে বিদ্যমান। ফলে সেই সময়কার মতো শুধু চৌধুরিপাড়া, শেঠপুকুর বা দক্ষিণপাড়ার ছেলেরাই, অর্থাৎ শুধু এদেশীয় বনেদি পাড়ার ছেলেরা আজ বারাসত রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়ে পড়ে না, অন্য বহু এলাকার ছেলেরাও এই স্কুলে পড়াশুনো করে চলেছে।
যা–‌ই হোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরি। ভর্তির পরীক্ষা তো দিলাম এবং মনোনীতও হলাম দ্বিতীয় শ্রেণীর একমাত্র শূন্য আসনটিতে ভর্তির যোগ্য হিসাবে। কিন্তু ওই ক্লাসে ভর্তি হওয়া আমার হল না। ঘটনাটা বলি। আমার এক খুড়তুতো দিদির পরিবারও বারাসতে আমাদের পরিবার বসবাস করতে আসার কিছুদিন আগেই বাইরে থেকে এসে সেখানে থিতু হয়েছে। জামাইবাবুর বদলির চাকরির সূত্রে। তাঁর বড় পুত্রটি, মানে সম্পর্কে আমার তুতো দাদা (‌বয়সে আমার থেকে এক বছরের কিছু বড়)‌ আগের বছর পরীক্ষা দিয়েও প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ পায়নি এবং সেবার প্রথম শ্রেণীতে আসন শূন্য থাকায় যথারীতি আমি ছাড়াও আরও কয়েকজনের সঙ্গে একই ক্লাসে অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তির পরীক্ষা দিয়েছে সে। কিন্তু মনোনীত তো হয়েছি আমি। তালিকার পরের নামটি অবশ্য আমার ওই দাদার ছিল। এখন আমাকে ভর্তি না করিয়ে বাবা যদি সুযোগটা ছেড়ে দেন, তবে তার দাবিদার সে হয় এবং তাতে সে বছর তার ভর্তি সুগম হয়— এই অনুরোধ এল আমার সেই জামাইবাবুর তরফে। তখন একান্নবর্তী পরিবারগুলো একটু একটু করে ভাঙতে শুরু করলেও তুতো সম্পর্কগুলো কিন্তু যথেষ্টই জুড়ে জুড়ে ছিল। যথেষ্ট আত্মিক যোগ ছিল সে সব সম্পর্কে। বাবাও বুঝলেন, এবারেও ভর্তি হতে না পারলে ওই দাদার বয়স আরও বেড়ে যাবে এবং তাতে তার পড়াশুনোর সমস্যা বাড়বে। এককথায় তাই তিনি রাজি হয়ে গিয়ে জামাইবাবুকে বললেন, ঠিক আছে, শুভ যখন বয়সে বড়, এ বছর ওকেই না হয় ভর্তি করে দাও। বাবু পরের বছর আবার পরীক্ষা দেবেখন। ফলে ওই দাদা দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে গেল। ধীরেনবাবু যে ছাত্র হিসাবে আমাকে চেয়েছিলেন, বিষয়টা যে তাঁর মাথায় ছিল, তা বোঝা গেল মাস খানেক পর।
হঠাৎই একদিন তিনি স্কুলে ডেকে পাঠালেন আমার বাবাকে। আকস্মিক এক সুযোগ তৈরি হয়েছে সে বছরই আমার ওই স্কুলে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে। কেননা প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া একটি ছাত্র ওই স্কুল ছেড়ে অনিবার্য কারণে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। বাবাকে ডেকে পাঠিয়ে তিনি এই কথাটিই জানিয়ে বললেন, ক্লাস ওয়ানে যে আসনটি খালি হয়েছে, আপনি চাইলে আমরা আপনার ছেলেকে সেখানে ভর্তি করে নিতে পারি। নতুন করে পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, ও তো ক্লাস টু–‌তে সিলেক্টই হয়ে গিয়েছিল। ওর মেরিট আছে। সুতরাং অসুবিধা হবে না। বাবা তো আমাকে প্রথম শ্রেণীতেই ভর্তি করতে চেয়েছিলেন, সিক্স প্লাস বলে এবং প্রথম শ্রেণীতে আসন না থাকায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তির জন্য আমার পরীক্ষা দেওয়াটা অনুমোদিত হয়। সুতরাং এই সুযোগটি এসে যাওয়ায় আর কোনও সমস্যাই থাকল না। আমিও শেষ পর্যন্ত ভর্তি হয়ে গেলাম ক্লাস ওয়ানে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ধীরেনবাবুর বদান্যতায়।
এর পর থেকে ক্রমে আমি তাঁর প্রিয় ছাত্র হয়ে উঠি, প্রতিটি ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করার সুবাদে, অর্থাৎ ক্লাসের ফার্স্ট বয় হওয়ার কারণে। আমার শিক্ষা জীবনের শুরুতে তিনিই হয়ে ওঠেন এক বটবৃক্ষের মতো। তাঁর স্নেহচ্ছায়ায় মসৃণভাবে এগোতে থাকে আমার প্রাথমিক স্তরের পঠনপাঠন। একটু ভারী চেহারা, বিরল কেশ, ধুতি–‌পাঞ্জাবি পরিহিত মাস্টার মশাইয়ের ক্লাসঘরের সামনে পায়চারি করা, স্নেহের ধমক, কখনও–‌সখনও দু–‌একটা ক্লাস নেওয়ার প্রায় সবটুকুই স্মৃতিতে অম্লান আজও। অন্য শিক্ষকদের স্নেহ থেকেও অবশ্য কোনওদিনই বঞ্চিত হইনি। টানা ১১ বছর একই স্কুলে পড়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করি। আর পড়াশুনো ও সাহিত্য–‌সংস্কৃতির সঙ্গে ওই বয়সেই জড়িয়ে থাকার সুবাদে অনেক শিক্ষক মহাশয়েরই যথেষ্ট স্নেহ, ভালোবাসা পেয়েছি বরাবর। মনে পড়ে মর্নিং সেকশনের নিশারানী দিদিমণি, কানাইলালবাবু, হরিনারায়ণবাবু, সমরজিৎবাবু, আশুবাবু থেকে শুরু করে ডে সেকশনের বুদ্ধিপদবাবু, জ্যোৎস্নাময়বাবু, জ্যোতিষবাবু, গোবিন্দবাবু, শীতলবাবু, মিহিরবাবু, দেবপ্রসাদবাবু, পলাশ স্যার, দিলীপবাবু, শুভাশিসবাবু, পণ্ডিত স্যার, মৌলবি স্যার বা দেবব্রতবাবুর কথা। এঁদের অনেকের সঙ্গেই স্কুলের বাইরেও একটা আলাদা যোগাযোগ বা সম্পর্ক ছিল। বিশেষত যাঁরা এই শহরেই মূলত বসবাস করতেন। এঁদের অনেকের সঙ্গে নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ, কথাবার্তাও হত, স্কুল ছেড়ে কলেজ–‌বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কর্মজীবনে প্রবেশের পরও অনেকের সঙ্গে এই সম্পর্কটা দীর্ঘদিন বজায় থেকেছে। এঁদের কেউ কেউ বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেলেও কখনও দেখা হলে দু’‌দণ্ড দাঁড়িয়ে তাঁর কুশল নেওয়া, প্রণাম করা বা তাঁর জিজ্ঞাস্যর জবাবে নিজের খবর জানানো— এ সব সেই সময়ে চালু ছিল। শিক্ষকদের আমরাও যথেষ্ট শ্রদ্ধার চোখে দেখতাম। তখনও শিক্ষাক্ষেত্রে আজকালকার মতো নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়নি। এটা মূলত ঘটেছে সত্তর দশকের শেষের দিক থেকে এবং আজও যা নিঃসন্দেহে সমাজে এক বড় আক্ষেপের জায়গা।
প্রসঙ্গত এখানে আরও দুজন বরণীয় শিক্ষকের কথা একটু আলাদা করে উল্লেখ না করাটা অনুচিত হবে। একজন হলেন প্রয়াত জাতীয় শিক্ষক নারায়ণচন্দ্র চন্দ্র। আমি যখন প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হই, তখন তিনি বারাসত সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু যখন দিবা বিভাগে উন্নীত হলাম, ততদিনে তিনি বদলি হয়ে অন্য স্কুলে চলে গেছেন, তাঁর জায়গায় প্রধান শিক্ষক হিসাবে কার্যভার নিয়েছেন প্রয়াত সতুগোপাল প্রামাণিক মহাশয়। ফলে কখনও নারায়ণবাবুর প্রত্যক্ষ ছাত্র না থাকলেও যেহেতু তিনি ছিলেন একজন খ্যাতিমান ‘‌জাতীয় শিক্ষক’‌ এবং সাহিত্যিক, তাঁর স্থায়ী বসবাসও ছিল বারাসতেই, স্কুল–‌কলেজের পাঠ শেষ করে ফেলার পরেও তাঁর সঙ্গে হৃদ্যতার সম্পর্ক বজায় ছিল আমার। তাঁর বাড়িতে নিয়মিত যেতাম, তাঁর একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ছিল সেখানে, সেটা ব্যবহার করতাম, তিনি তাঁর লেখা পড়ে শোনাতেন, আমিও আমার লেখা স্যারকে পড়াতাম, তাঁকে দিয়ে সংশোধনও করিয়ে নিতাম মাঝেমধ্যে। সংবাদপত্রের অফিসে স্থায়ী চাকরি পাওয়ার পর যোগাযোগ ক্রমে কমে যায় কাজের চাপে, কিন্তু মনে আছে আমার জীবনের প্রথম চাকরির আবেদনপত্রটি তিনিই লিখে দিয়েছিলেন সস্নেহে। আর সতুগোপালবাবু স্কুল জীবনে বহুবার আমার সহায় হয়েছেন নানা বিষয়ে। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় বাবা মারা যাওয়ার পর উদ্যোগ নিয়ে পড়ার খরচ ‘‌ফুল ফ্রি’‌ করে দেওয়া, পুওর ফান্ড থেকে সাহায্য–‌সহ ফার্স্ট বয় হিসাবে কেন্দ্র সরকারের বুক গ্রান্টের ব্যবস্থা করে দেওয়ার পিছনে তিনিই ছিলেন আসল মানুষ, যা আমাকে চরম আর্থিক দুর্দশার মধ্যেও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে মদত জুগিয়েছে। সরকারি স্কুলের এই সব সুযোগ–‌সুবিধা তাঁর জন্যেই নিতে পেরেছিলাম। পরিবার নিয়ে তিনি থাকতেন স্কুলেরই কোয়ার্টারে। স্কুলের নির্দিষ্ট সময়ের পরেও সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করাটা আমার কাছে ছিল অবাধ। কয়েক বছর পর তিনিও অন্যত্র বদলি হয়ে যান। দুর্ভাগ্য, স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ তখনই ছিন্ন হয়ে যায়। 
ধীরেনবাবুর প্রসঙ্গে ফিরে এই স্মৃতিচারণা শেষ করি। পঞ্চম শ্রেণীতে উঠে যখন সকালের বদলে দিবা বিভাগে ক্লাস শুরু করলাম, পড়াশুনোর বিষয়ে তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে না থাকলেও, সম্পর্ক অটুট থেকে গেছে বহু বছর যাবৎ। যতদিন তিনি ওই স্কুলে চাকরিরত ছিলেন এবং তারও পরে খুবই কাছে স্থানীয় এলাকাতে তাঁর স্থায়ী বসবাসগৃহ হওয়ায় স্যার জীবিত থাকাকালীন সেই বাড়িতে আমার প্রায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তাঁর পুত্র বিমানদাও আমার যথেষ্ট পরিচিত ছিলেন, রাস্তাঘাটে দেখা হলে আমার খবর নিতেন, বাবার খবরও দিতেন। স্যার আসলে একজন প্রকৃত সাহিত্যানুরাগী মানুষ ছিলেন। আর সেদিকে আমার প্রথমাবধি খানিক ঝোঁক বা চর্চা লক্ষ্য করেই হয়ত আমার প্রতি তাঁর মনের কোথাও আলাদা স্নেহ, প্রীতির ধারাটি পুষ্ট থেকে গিয়েছিল জীবদ্দশায়। বারাসত সরকারি স্কুলে আমাকে যে কোনও প্রকারে ভর্তি করে নেওয়ার পিছনে তাঁর যে সচেষ্ট প্রয়াস ও ভূমিকা আজ থেকে অর্ধশত বছরেরও বেশি আগে প্রথম দিনটিতেই অনুভব করতে পেরেছিলাম, সেটিই পরবর্তী কালে অনির্বাণ দীপশিখার মতো হৃদয়ে প্রজ্জ্বল থেকে গেছে। কোনওদিন ভুলিনি। কালের নিয়মেই তিনি প্রয়াত হয়েছেন বহু বছর হয়ে গেল। তবু এই প্রণম্য মানুষটির প্রতি আমার মনে এক বিশেষ আসন তোলা আছে আজও। সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই আমার প্রথম শিক্ষাজীবনের গুরু, প্রয়াত শিক্ষক ধীরেন্দ্রনাথ কুমারের প্রতি। 







কথা সাহিত্যিক  এডগার অ্যালান পো
বি ম ল ম ণ্ড ল 


বিশ্ব সাহিত্যের প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসাবে এডগার অ্যালান পোয়ের মর্যাদাগুলি মূলত তাঁর উদ্ভাবনী এবং গভীর সংক্ষিপ্ত গল্প, কবিতা এবং সমালোচনামূলক তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে নির্মিত, যা কবিতা এবং কল্পকাহিনী উভয় ক্ষেত্রেই সংক্ষিপ্ত রূপের জন্য অত্যন্ত প্রভাবশালী যুক্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আধুনিক ছোটগল্পের স্থপতি হিসাবে সাহিত্যের ইতিহাস এবং হ্যান্ডবুকগুলিতে নিখুঁত, পোও উনিশ  শতকের ইউরোপীয় সাহিত্যে "শিল্পের পক্ষে শিল্প" আন্দোলনের প্রধান অগ্রদূত ছিলেন। যেখানে পূর্বের সমালোচকরা মূলত নৈতিক বা আদর্শিক সাধারণতার সাথে নিজেকে উদ্বিগ্ন করেছিলেন, পো তাঁর সমালোচনাগুলি স্টাইল এবং নির্মাণের নির্দিষ্টকরণগুলিতে মনোনিবেশ করেছিলেন যা কোনও কাজের কার্যকারিতা বা ব্যর্থতায় অবদান রেখেছিল। নিজের কাজে তিনি ভাষা ও কৌশলের একটি উজ্জ্বল আদেশের পাশাপাশি একটি অনুপ্রাণিত এবং মূল কল্পনাও প্রদর্শন করেছিলেন।

পো নিজেকে কেবল কবিতা ও কথাসাহিত্যের এক উচ্চমানের লেখক হিসাবেই পরিচিতি দিয়েছিলেন না, এমন সাহিত্যিক সমালোচক হিসাবেও পরিচিত করেছিলেন যার কল্পনাশক্তি ও অন্তর্দৃষ্টি এখনও পর্যন্ত আমেরিকান সাহিত্যে অপ্রকাশিত ছিল। ১৮৩০ এর  শেষের দিকে এবং ১৮৪০ এর  গোড়ার দিকে পোয়ের লেখাগুলি দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও তাঁর কাজ থেকে প্রাপ্ত লাভ খুব কমই থেকে যায়  এবং ফিলাডেলফিয়া এবং  ব্রডওয়ে জার্নালে বার্টনের জেন্টলম্যানস ম্যাগাজিন  এবং  গ্রাহামের ম্যাগাজিন সম্পাদনা করে তিনি নিজেকে সমর্থন করেছিলেন। 

 

বিশ্বসাহিত্যে পোয়ের সবচেয়ে সুস্পষ্ট অবদান বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি থেকেই তিনি সৃজনশীল লেখক এবং তাঁর সমসাময়িকদের রচনার সমালোচক হিসাবে অনুশীলন করেছিলেন।  তাঁর স্ব-ঘোষিত উদ্দেশ্যটি ছিল এক মিলিয়তে কঠোরভাবে শৈল্পিক আদর্শ গঠন করা যা তিনি সাহিত্যের উপযোগী মূল্যবোধের সাথে অত্যাধিক  উদ্বিগ্ন বলে মনে করেছিলেন, এমন একটি প্রবণতা যা তাকে "ডিড্যাক্টিকের ধর্মবিরোধী" বলে অভিহিত করেছিলেন। যদিও পো এর অবস্থান বিশুদ্ধ নান্দনিকতার প্রধান প্রয়োজনীয়তা অন্তর্ভুক্ত করে, সাহিত্যিক আনুষ্ঠানিকতার উপর তার জোর তার দার্শনিক আদর্শের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিল: ভাষার গণনার ব্যবহারের মাধ্যমে কেউ সর্বদা অসম্পূর্ণভাবে, সত্যের দর্শন এবং মানুষের অস্তিত্বের প্রয়োজনীয় অবস্থা প্রকাশ করতে পারে। সাহিত্যের সৃষ্টির পো এর তত্ত্বটি দুটি কেন্দ্রীয় পয়েন্টের জন্য উল্লেখ করা হয়েছে:—

 প্রথমতঃ-একটি কাজ অবশ্যই পাঠককে সফল হিসাবে বিবেচিত হওয়ার জন্য প্রভাবের ঐক্য তৈরি করতে হবে।
দ্বিতীযতঃ-এই একক প্রভাবের তৈরি  অনুপ্রেরণার ঝুঁকির মধ্যে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, তবে স্টাইল এবং বিষয়টির ক্ষুদ্রতম বিবরণে লেখকের পক্ষে যুক্তিযুক্ত আলোচনার ফলাফল হওয়া উচিত। কবিতায়, এই একক প্রভাব অবশ্যই পাঠকের সৌন্দর্যের বোধকে জাগিয়ে তুলবে।
এই আদর্শ পো যে দুঃখ, কষ্টের   সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত; গদ্যের ক্ষেত্রে এই প্রভাবটি কিছু সত্যের প্রকাশ হিসাবে প্রকাশ পেয়েছে।   যেমন "অনুপাতের গল্প" বা "সন্ত্রাস, বা আবেগ বা ভৌতিক ঘটনা" উদ্দীপনার কাজ করে।একটি সাধারণ তাত্ত্বিক ভিত্তি বাদে, একটি মানসিক তীব্রতা রয়েছে যা পো এর লেখার অন্যতম  বৈশিষ্ট্য। বিশেষ  করে গল্পগুলি যা তাঁর সেরা এবং সর্বাধিক পরিচিত রচনাগুলিকে সমন্বিত করে। এই গল্পগুলিতে- যার মধ্যে রয়েছে "দ্য ব্ল্যাক ক্যাট," "দ্য ক্যাস্ক অফ অ্যামোনটিল্যাডো" এবং "দ্য টেল-টেল হার্ট" - প্রায়শই প্রথম-ব্যক্তি বর্ণনাকারীর দ্বারা বলা হয়, এবং এই ভয়েসের মাধ্যমে পো কোনও চরিত্রের মানসিকতার কাজটি অনুসন্ধান করে। এই কৌশলটি ফায়োডর দস্তয়েভস্কির মনস্তাত্ত্বিক অন্বেষণ এবং মনস্তাত্ত্বিক বাস্তববাদের বিদ্যালয়ের পূর্বাভাস দেয়। তাঁর গথিক গল্পগুলিতে, পোও মূলত প্রতীকী, প্রায় রূপক পদ্ধতিতে কাজ করেছিল যা "হাশ অব হাউসারের পতন," "রেড ডেথের মসজিদ" এবং "লাইজিয়ার" মতো এর প্রতীকী কাজের সাথে  যুক্ত। পোয়ের গল্পগুলির প্রভাবটি পরবর্তীকালের লেখকদের কাজে দেখা যেতে পারে, যেমন অ্যামব্রোজ বিয়ার্স এবং এইচপি লাভক্রাফ্ট, যারা পোয়ের সূচনা করেছিলেন ভৌতিক সাহিত্যের একটি স্বতন্ত্র ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত। আধুনিক ভৌতিক গল্পের স্রষ্টা হিসাবে তাঁর কৃতিত্বের পাশাপাশি পো কে আরও দুটি জনপ্রিয় ঘরানা: বিজ্ঞান কল্পকাহিনী এবং গোয়েন্দা গল্পের প্যারেন্টিংয়ের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। “দ্য অনুপম সাহসিক অফ হ্যান্স পাফাল” এবং “ভন কেম্পেলেন এবং তাঁর আবিষ্কারের মতো কাজগুলিতে,” উনিশ  শতকের গোড়ার দিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণের যে আকর্ষনীয় ও চমকপ্রদ বিবরণ তৈরি হয়েছিল তা এক ধরণের সাহিত্যের প্রত্যাশা করে পোও মনোযোগ নিয়েছিলেন যা বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ব্যাপকভাবে অনুশীলিত হয়নি। একইভাবে, পো'র অনুপাতের তিনটি কাহিনী - "দ্য ম্যুর্ডস ইন দ্য রিও মর্জি," "দ্য পার্লোইনড লেটার, "এবং" মেরি রোজের রহস্য "- এমন একটি মডেল হিসাবে স্বীকৃত যা গোয়েন্দা কথাসাহিত্যের প্রধান চরিত্রগুলি এবং সাহিত্যিক সম্মেলনগুলি প্রতিষ্ঠা করে, বিশেষত অপেশাদার  যিনি এমন কোনও অপরাধ সমাধান করেন যা কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করেছে এবং যার দ্বারা প্ররোচিত যুক্তির প্রমাণগুলি দলিল করেছে সহযোগী পো যেভাবে বহু সফল লেখককে প্রভাবিত করেছিল এবং সিম্বলিজম এবং পরাবাস্তববাদের মতো বড় সাহিত্যিক আন্দোলনের পূর্বপুরুষ হিসাবে গণ্য হয়, তেমনি তিনি পূর্ববর্তী সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব এবং আন্দোলন দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছিলেন। পৈশাচিক এবং কৌতুকপূর্ণ ব্যবহারে পো, 'ইটিএ হফম্যান' এবং 'অ্যান র‌্যাডক্লিফের গথিক' উপন্যাসগুলির গল্পগুলির প্রভাবের প্রমাণ দিয়েছিল, যখন তাঁর লেখার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হতাশা ও বেদনা  উনিশ শতকের গোড়ার দিকে রোমান্টিক আন্দোলনের সাথে সখ্যতা প্রতিবিম্বিত করে। ।

কবিকে তাঁর সংক্ষিপ্ত কথাসাহিত্যের জন্য প্রায়শই স্মরণ করা হয়, লেখক হিসাবে তাঁর প্রথম প্রেমটি ছিল কবিতা, যা তিনি কৈশর কালে লেখা শুরু করেছিলেন। তাঁর প্রথম শ্লোকটি লর্ড বায়রন ,  জন কিটস এবং  পার্সি বাইশে শেলির মতো ইংরেজি রোম্যান্টিকসের প্রভাবকে প্রতিফলিত করে , তবুও তাঁর পরবর্তী কবিতাগুলি চিত্রিত করে যা একটি বিষয়ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরাবাস্তবতা রহস্যময় দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করে। "টেমর্লেইন" এবং "আল আরাফ" পোয়ের বিবর্তনকে বাইরোনিক নায়কদের চিত্রায়ণ থেকে তাঁর নিজস্ব কল্পনাশক্তি এবং অবচেতনতার মধ্যে ভ্রমণের  এক চিত্র  তুলে ধরেন। বায়রনের "চিল্ড হ্যারল্ডের তীর্থযাত্রা" তা স্মরণ করিয়ে দেয়।   এই প্রবন্ধটি চতুর্দশ শতাব্দীর মঙ্গোল বিজয়ীর জীবন ও দুঃসাহসিক ঘটনা বর্ণনা করে; পরবর্তী কবিতাটি একটি স্বপ্নের জলের চিত্রায়িত হয়েছে যেখানে ভাল বা মন্দ দুটোই স্থায়ীভাবে বাস করে না এবং যেখানে পরম সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করা যায়। অন্যান্য কবিতাগুলিতে - " টু হেলেন ," " লেনোর ," এবং " দ্য রেভেন " বিশেষত - পো আদর্শ আদর্শ সৌন্দর্যের ক্ষতি এবং এটি পুনরুদ্ধারে অসুবিধা সম্পর্কে তদন্ত করে। এই টুকরোগুলি সাধারণত একটি যুবক দ্বারা বর্ণিত হয় যিনি তার প্রিয়জনের অকাল মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন। " টু হেলেন"  যা ইংরেজি ভাষার অন্যতম সুন্দর প্রেমের কবিতা হিসাবে পরিচিত। কাজের বিষয় হ'ল একজন মহিলা যিনি বর্ণনাকারীর দৃষ্টিতে প্রাচীন গ্রীস এবং রোমের ধ্রুপদী সৌন্দর্যের রূপ ধারণ করেছিলেন। "লেনোর" এমন উপায় উপস্থাপন করে যাতে মৃতদের স্মরণ করা হয়, হয় শোক বা পার্থিব সীমানা ছাড়িয়ে জীবন উদযাপন করে। "দ্য রেভেন"-এ পোও সাফল্যের সাথে তাঁর দার্শনিক এবং নান্দনিক আদর্শকে এক করে দিয়েছেন। এই মনস্তাত্ত্বিক অংশে, একজন তরুণ পন্ডিত তার মৃত প্রেমিকের সাথে পরবর্তীকালের সম্ভাবনা সম্পর্কে তাঁর প্রশ্নের উত্তরে "নেভারমোর" এর কাকের অশালীন পুনরাবৃত্তি দ্বারা আবেগময়ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। চার্লস বাউডিলায়ার  "দ্য রেভেন" সংস্করণটির ফ্রেঞ্চ সংস্করণটির ভূমিকাতে উল্লেখ করেছিলেন : “এটি হতাশার নিদ্রাহীনতার কবিতা; এর কোনও কিছুরই অভাব নেই: না ধারণার জ্বর, না রঙের হিংস্রতা, না অসুস্থতার সাথে যুক্তি, না সন্ত্রাস চালানো, না এমনকী উদ্ভট অত্যাচার যা এটিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে পোও এমন কবিতা লিখেছিলেন যেগুলি উচ্চস্বরে পড়ার উদ্দেশ্য ছিল। শব্দ এবং তালের সংমিশ্রণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তিনি পুনরাবৃত্তি, সমান্তরালতা, অভ্যন্তরীণ ছড়া, স্বাক্ষরকরণ, এবং আমেরিকান কবিতায় তাদের ভুতুড়ে, সংগীতের গুণগত মানের জন্য অনন্য যে রচনাগুলি তৈরি করার জন্য  প্রযুক্তিগত ডিভাইস ব্যবহার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, “বেলস” -তে, বিভিন্ন কাঠামোর মধ্যে "ঘণ্টা" শব্দের পুনরাবৃত্তি কবিতায় বর্ণিত বিভিন্ন ধরণের ঘন্টার অনন্য স্বরূপকে ফুটিয়ে তোলেন।তাঁরই একটি কবিতায় স্মরণ করি-


একটি স্বপ্ন  
ভাষান্তর - বিমল মণ্ডল


অন্ধকার রাতের দর্শন
আমি বিদায় নিয়েছি স্বপ্ন দেখেছি—
তবে জীবন ও আলোকের জাগ্রত স্বপ্ন
আমাকে ভগ্ন হৃদয় রেখে গেছে।

আহ! দিনের পর দিন কি স্বপ্ন নয়
যার দিকে চোখ
একটি রশ্মি নিয়ে তার চারপাশের জিনিসগুলিতে
অতীতকে ফিরিয়েছে?

সেই পবিত্র স্বপ্ন — সেই পবিত্র স্বপ্ন,
যখন সমস্ত বিশ্ব চঞ্চল ছিল,
আমাকে একটি সুন্দর মরীচি হিসাবে উৎসাহিত করেছে
একাকী আত্মা অনুসরণ 

সেই হালকা হলেও, ঝড় ও রাতে,
তাই দূর থেকে কাঁপছে
এর চেয়ে বিশুদ্ধ উজ্জ্বলতা আর কী হতে পারে
সত্যের দিন তারকা?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন