কোনও একদিন প্রখর গ্রীষ্মে
কোনও একদিন প্রখর গ্রীষ্মে
মধ্যদুপুর বেলায়,
ঘুঘুপাখিটির ডাক শুনে আমি
মেতেছি পদ্য খেলায় ৷
দোর ঠেলে এসে দখিনা বাতাস
মাতায় ভাবুক মনকে,
লিখছি পদ্য," জলজ-পদ্ম
জন্মায় কেন পঙ্কে"—
এ-হেন বিষয় ভাবতে গিয়েই
মন চলে যায় বাইরে,
গ্রীষ্মের ছবি — চক্ষুবন্দি
তাইরে-নাইরে-নাইরে !
পুকুরে এখন একহাঁটু জল
মাঠ চৌচির খরায়,
গ্রীষ্মের গুণ — ঘেমে-নেয়ে খুন
আমার কবিতা-ছড়ায় ৷
বর্ষা এসেছে
বর্ষা এসেছে — জেগেছে হরষ
আজ সকলের মাঝে,
কৃষক-ভায়েরা ব্যস্ত এখন
চাষ-আবাদের কাজে ৷
দাদুর ডাকছে আদুরে গলায়
পুকুরে ভর্তি জল...
দখিনা বাতাসে কেঁপে কেঁপে ওঠে
বনকলমির দল ৷
একটা ডাহুক, ডাক দিয়ে জোর
চকিতে আড়াল হয়,
ভাবতে গিয়েই... বাজের ধমকে
সহসা জেগেছে ভয় ৷
বর্ষা এসেছে — ভালবাসি তার
রিমঝিম-সুর গান,
সবুজ স্বপ্নে ভোর হয়ে রয়
কচি-কাঁচাদের প্রাণ ৷
শরতের টান
সোনা রোদ্দুরে হাসছে শরৎ
কত যেন তার ঢং
এমন দৃশ্যে সত্যি বলছি
ভরে যায় প্রাণ-মন ৷
জল থইথই পদ্মপুকুরে
আপন খেয়ালে হাঁস,
ভেসে চলে আর মুখ দেখে তাতে
ঝকঝকে নীলাকাশ ৷
দূরে-প্রান্তরে সোনালি ফসল
হাতছানি দিয়ে ডাকে,
বলাকার সারি চকিতে হারায়
ধবল মেঘের ফাঁকে ৷
প্রবল বাতাসে কাশের গুচ্ছ
নদীতে বাড়ায় মুখ,
মনে হয় তার কাতর পরান
পিপাসায় উন্মুখ ৷
দেখে সুখ জাগে, বুকের ভিতরে
এক অদ্ভুত তান
খেলা করে যেই অনুভব করি
প্রিয় শরতের টান ৷
হিমঋতু
হেমন্তকে দেখব চোখে
এই হয়েছে আশ
কিন্তু তাকে পাব কোথায়
ভেবেই নাভিশ্বাস !
শরৎ-শীতের মধ্যিখানে
শিশির ভেজা ঘাস
রোদ্দুরেতে ঝিকমিকিয়ে
দেখাল উচ্ছ্বাস ৷
দিঘির জলে পদ্ম-শালুক
এবং কতক হাঁস
ডুবসাঁতারের খেলায় মাতে,
যেন বা সার্কাস !
হিম-হাওয়াতে ভেসে বেড়ায়
শিউলিফুলের বাস
এসব নিয়েই মনকেমনের
বিষণ্ণ উদ্ভাস
হিমঋতু যে জাগিয়ে তোলে
সন্ধান তার পাস ?
শীতের পরশ
শীতের পরশ লাগলে গায়ে এক্কেবারে পৌষে
পুকুর ঘাটে বাসন মাজে কাদের বাড়ির বৌ সে !
হাতের চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ আসে কানে
কেমন করে ঘুম ভাঙে তার রাতের অবসানে ?
ভাবছি শুয়ে — কষ্ট তবু উঠতে ভীষণ ভোরে
হাড়ভাঙা-শীত কখন এসে জাঁকিয়ে বসে দোরে !
বোনটি আমার দুষ্টু ভারি দিচ্ছে গায়ে ঠেলা
বলছে — দাদা, উঠবি কখন আটটা হল বেলা ?
আর নয় ঘুম — আর নয় ঘুম, শয্যা ছেড়ে উঠি
দাঁতটি মেজে, টিফিন খেয়ে, পাঠশালাতে ছুটি ৷
বসন্তরাজ
কনকনে শীত কোথায় গেল
পাচ্ছি না তার সাড়া,
ফুরফুরে এক দখিন হাওয়ায়
জাগলো গোটা পাড়া ৷
গাছের কচি-সবুজ পাতায়
ঠিকরে পড়ে আলো,
মধুর সুরে ডাকছে কোকিল
একটানা জমকালো ৷
ঝরছে আগুন পলাশবনে—
কৃষ্ণচূড়ার শাখায়,
ওইদিকে কেউ তাকিয়ে জানি
মন দিয়েছে আঁকায় ৷
কনকনে শীত কোথ্থাও নেই
মুক্ত-নীলাকাশে,
সত্যি বলি — বসন্তরাজ
খিলখিলিয়ে হাসে ৷
রাতের আকাশ
রাতের আকাশ তারায় ভরা
বাঁকা চাঁদটি ফাঁকে,
বাঁধনহারা খুশিতে তাই
দেখছে যেন কাকে ?
ধূমকেতুটা বড্ড ভীতু
পুচ্ছে বেঁধে ঝাঁটা
হাঁটা দিতেই — উল্কারাজি
হাতটি নাড়ে টা টা ৷
মেঘের ছানা এসব দেখে
অবাক হল ভারি,
সে জানে, এই আকাশ হল
আপন ঘরবাড়ি ৷
হাওয়া যে তার খেলার সাথি
হয় না কাছ ছাড়া,
রাতের আকাশ জানে বলেই
মাতে যে চাঁদ-তারা ৷
কেন?
পাহাড় কেন বিশাল উঁচু ?
কেন -বা খাদ নিচুতে ?
সাগরজলে লবণ কেন ?
মিষ্টি কেন লিচুতে ?
মরু কেন বালুকাময় ?
সূর্য কেন উপরে ?
দাদুর কেন আদুড় দেহ ?
ছোটকা কেন শ্যু পরে ?
ফুলের কেন গন্ধ থাকে ?
কন্যা কেন বালিকা ?
খাতায় কেন অঙ্ক কষি ?
পাতায় কেন জালিকা ?
গড়ায় কেন সন্ধেবেলা ?
ছড়া-য় কেন ছন্দ ?
পড়ায় কেন মন বসে না ?
তর্কে কেন দ্বন্দ্ব ?
কেন এসব প্রশ্ন জাগে ?
জানতে কেন উতলা ?
কেন আকাশ বর্ণময় ?
আঁধার কেন ভূ-তলা ?
কেন ? কেন ? চিন্তা করে
কেন যে উন্মত্ত ?
'কেন' কি আর নিজেই জানে
কেন তিনগুণ সত্য ?
ভূতকাহিনি
সত্যি-মিথ্যে সাতসকালে
বলবো কেমন বেআক্কেলে ?
গল্প বলি শোন্ তাহলে —
এক ছিল ভূত গাছের ডালে ৷
জ্যৈষ্ঠ মাসের অন্ধকারে
ঝাঁকড়া বটের ঝোপের ধারে
ওঁ মন্তর — ফুস্ -মন্তর
বলতে থাকো মিনিট অন্তর
দেখতে পাবে গোমড়া ভূতো
ক্যামনে এসে দিচ্ছে গুঁতো
কানটি ধরে — 'বদমাস,
পড়াশোনায় সর্বনাশ ?'
ওরে বাব্বা ! ভূত তো নয়
ঠাকুরদাদার জ্যৈষ্ঠ তনয়,
মানে বোঝো — আমার বাবা,
ভূত কাহিনি ? তোবা ! তোবা !
বড়দিন
সাতসকালে পাখির ডাকে
সুয্যি ওঠে জেগে,
হাওয়াও দেখি ইত:স্তত
বইছে দ্রুতবেগে ৷
আজকে সবার চোখে-মুখে
খুশির অনুভূতি,
জাগছে কেন ! তা জানো না ?
বড়দিনের ছুটি ৷
নদীর ধারে বনভোজনে
দারুণ মজা হবে,
বন্ধুরা তো জুটবে, ভ্রমর
ফুলের সৌরভে
কোমর বেঁধে নাচবে, নাকি
গান শোনাবে মিঠে,
এসব ভেবেই মন ছুটে যায়
সুদূর, কাছে-পিঠে ৷
ডিসেম্বরের পঁচিশ মানেই
বড়দিনের কেক,
দেখা হলেই কোলাকুলি
নতুবা হ্যান্ডশেক ৷
চমৎকার সব ছড়া-কবিতা! অভিনন্দন কবি।
উত্তরমুছুনচমৎকার সব ছড়া-কবিতা! অভিনন্দন কবি।
উত্তরমুছুনখুব ভাল লাগল দাদা
উত্তরমুছুনখুব ভাল লাগল দাদা
উত্তরমুছুন