স্নেহ
বরণ
আঁটকুড়ী বদনাম কাটাতে অনাথআশ্রম থেকে দত্তক নেওয়া বছর সাতের শুভকে আজকাল ভারি অসহ্য লাগে সুতপার।তার কোল জুড়ে এখন খেলা করছে তারই স্বপ্ন দিয়ে গড়া একটা ছোট্ট ননীর পুতুল।
অথচ বাড়ীর রকে এক সদ্যপ্রসবা মা-কুকুর একপাল কুকুরছানার সাথে গভীর মমতায় স্তন ভাগ করে দিচ্ছে মোটরবাইক চাপা পড়া বেড়ালটার মা-হারা বাচ্চাটিকেও।
মানুষ
কদিন আগেই মসজিদ পাড়ার আব্দুল রক্তচোখে মশাল তুলে ধরেছিল মন্দির পাড়ার ভটচাজদের ঘর পোড়াবে বলে।কৈবর্ত্তপাড়ার রমা আঁশবটি নিয়ে তেড়ে গিয়েছিল চার্চ রোডের মাইকেলের দিকে।
আজ ভয়ংকর মহামারী মৃত্যুদূত হয়ে এসে দাঁড়িয়েছে দরজার ওপারে।আব্দুল,রামা আর মাইকেল একসাথে প্রাণপণে চেপে ধরেছে দরজাটা বাঁচার তাগিদে।
ভাইরাস
প্রায় প্রতি রাতেই দোকানের দাওয়ায় ঘুমিয়ে থাকা পাগলীটার দমচাপা অসহায় আর্তনাদে অভ্যস্ত হয়ে গেছে আশেপাশের বাড়ীর ঘুমন্ত মানুষগুলো। তবু দু-পেয়ে শয়তান কুকুরগুলোর অত্যাচার বন্ধ করতে ঘুম ভেঙে বেরিয়ে আসে না কেউই।
লকডাউনের জেরে এখন সব বন্ধ।পলিথিনের ওপর এখন রোজ রাতে পাগলীটার ক্লান্ত দুচোখে নামে শান্তির ঘুম।সৌজন্যে মারণ ভাইরাস।
বরণ
মিত্তিরবাড়ীর দূর্গাপুজোর সোনালী রোদের হাসি এখন সারা গ্রাম জুড়ে।আট বছরের কুসুমের নবমী পুজো দেখতে যাওয়ার লাল-হলুদ সাজটা বোধহয় চোখ পুড়িয়ে দিয়েছিল মিত্তিরদের বখাটে ছোটছেলে আর তার মাতাল বন্ধুদের।
তাই মিত্তিরবাবুর কুমারী মাকে লালপেড়ে শাড়ীতে বরণ করে নেবার পুণ্যক্ষণেই খিড়কি পুকুর আলো করে ভেসে উঠল একটা ছেঁড়াখোড়া লাল-হলুদ শাড়ী।
বাড়ী
আমফান কেড়ে নিয়েছিল ঘরের চাল।ত্রাণের ত্রিপল দিয়ে কষ্টে বানানো অস্হায়ী আশ্রয়টাকে নিসর্গের ঝাপটায় ছিন্নভিন্ন হতে দেখে হাউহাউ করে কেঁদে উঠল শিবু।বাপটা থম মেরে দাঁড়িয়ে।আর কি ত্রাণের ত্রিপল মিলবে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন