মঞ্জীর বাগ
অহো মন্দার
সমুদ্রগান ছোঁওয়ার জন্য তীব্র অবগাহন, রাধা নামের বৃষ্টি ফোঁটা
ধুয়ে যাক বুক
কোন চন্দ্ররাতে তিন যুগের মায়াস্নান সেরে
নীল শাড়িটি জমা রাখি
এখন আমি মাছ অথবা নারী
জলের তলায় ভেসে মৎসকন্যার পোষাক।
আনন্দম, পরমানন্দম
বহু ক্ষতক্ষেত লুকিয়ে রাখি জল, তোমায় প্রেম বলে ডাকি
মন্দারমণির সমুদ্রে রাত ভরা মায়া
জল ভরে ওঠে নীলাভ স্বপ্নের মতো
পূর্ণিমা য় মায়া ডেকে যায়, রামধনু নেমে আসে জলে, সম্পানে ভাসি
সৃষ্টির অন্বয় কালে হেঁটে যাই, এখনই বর্তমান
আমারা ভাসতে ভাসতে নোঙর করেছি
চাষাবাদ,পশ্চিমের সৃর্যের সাথে আমাদের আনাগোনা
মন্দারবন, মান্দারমণি এখনও তোমাকে ছুঁলে
তৃষ্ণাগান জেগে ওঠে, রাধা নামের বৃষ্টি নামে
সাদার রঙের আড়ালে জাগে হরিৎ শ্বাসের ঘ্রাণ
পথ
বাবা একা থাকতে পারতেন না
বলতেন মানুযের স্পর্শ ছাড়া গৃহ পায় না স্বরূপ
সে এক ইঁট, কাঠ, স্তুপ
গৃহ প্রাণ পায়, আসে যদি মানুষজন,অতিথি কল্যাণ
দালানে বসলেই হাঁক দিতেন
দুর্গাবাটির দালালে বসাতেন শিশুমহল
মুরুব্বি মনুষ জন দরকরি কথা সেরে নিতেন
বাবা একা থাকতে পারতেন না
পড়ন্ত বিকলে গাছের তলায়
আরামকেদরা পেতে বসলেই
এক দুরন্ত বুলবুল ঠুকরে পেয়ারা খেত
পাখিও জানতো একলা থাকার দুঃখ
আজ সকলে মিলে বাবাকে নিয়ে গেল
জুঁই ফুল বড় ভালবাসতেন
বাগনের গাছটাও তা জানতো, সারা পথই ফুল সাজিয়ে রাখতো
ওরা আজ ফুল ছড়াচ্ছে দু'হাত ভরে
খইয়ের ফুল।
ওরা বাবাকে রেখে এলো
পুর্বজ মানুষজন আনতে এলেন
বলে গেলেন, দীর্ঘজীবন পথের কিছুটা সঙ্গীময় হলেও
যাত্রাপথটি একান্ত আপনার।
বসন্ত কুমারী ও কথামালা।
কথার ওপর বড় টান,
ফেবেলস নামক কথামালায়
ঈশপ নামক ভদ্রলোকগল্প শোনায়
বসন্ত রাতে
পূর্ণচাঁদে...
কুমীর গল্প কথা,অক্লান্ত বংশীবাদক
তার দাঁত লুকিয়ে রাখে
খাওয়া দাওয়ার পর পড়ে থাকে
মৎস্যকন্যার হাড় মাংস,
গল্পের শেষে, কুমীর মুখ শুদ্ধি চেবায়
তবুও
হাড়ের মাঝে জেগে থাকে প্রেম বাস
একটা আধ ফোটা স্বর্গপারিজাত । প্রেমের মতন...
পরিযায়ী পথ
কিছু পথ হাঁটছে বলেই পথিক বলা যাচ্ছে নাওই মানুষদের; ওরা দলে দলে পরিযায়ী।
একটি অদৃশ্য ভাইরাস নামক ছোবলে হারিয়ে গেছে আধার কার্ডের বৈধতা।
দেশ এখন কোয়েন্টাইন সেন্টার। প্রত্যেকই আড় চোখে দেখছি অপরকে। দেশটাকে নিজের ভেবেই রুজির টানে ভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার বাহবাটি এখন অপরাধ।
এরাজ্য বলছে তুমি আমার না,নিজের রাজ্য বলছে তুমি ভাইরাস
প্রতিবেশী বলছে তুমি কোয়েন্টাইন
পরিবার বলছে তোমার জন্য আমায় পঙ্গপাল হতে হয়েছে
পঙ্গপাল বলছে এবারে ছেয়ে দেব গোটা আকাশ
আমফান চলে যাওয়ার আগে হাসতে হাসতে বেঁচে থাকার আশাটিকে দুশ বছরের পুরোনো বট গাছের পুরোনো শিকড়ের মতো উপড়ে ফেলে হিজড়ে দলের হাত তালি এবং হাসিকে মাখামাখি করে
ছিঁড়ে ফেলল আশার রেশন কার্ড।
তবু ও আমাদের হাঁটতে হচ্ছে।ফিরে আসার অলীক রেলপাতে টুকরো টূকরো করে ছড়ানো আছে রক্তমাখা রুটি
রেল স্টেশানে মরা মার আঁচলে নিরাপত্তা নামক
অলীক আশ্রয়ের গান খুঁজছে যে শিশুটি এই এসময়েই কৌরবসভা দ্যুতক্রীড়া ছুঁচো বাজিটি দেখেছে
আমরা বাচ্চাটিকে দেখছি, মৃত আঁচলটি দেখছি
সোসাল মিডিয়া দেখছি, বহুকিছু দেখার পরেও
নিজেদের গুটি অবস্হাটি দেখছি না
দেখছিনা বলেই কৌরব সভায় মামাবাবু পাশা খেলছে হাসিমুখে
কেবল একটি ছেঁড়া কাপড়ের আড়ালে সদ্য জন্মানো না কাঁদা বাচ্চাটা জানে কিছু পরেও
কান্নাকাটি করা চলবে,কেননা বহু কান্না জমিয়ে রাখতে হবে জীবন কোয়েন্টাই।।
নকশি কথা
কত দেখা না দেখা ছবির ফুটে ওঠা দেখি কাঁথার
মাঠজমিতে
পুরোনো কাপড়ের সুতোর রঙীন বান্ডিল নিয়ে প্রতিদিন বসতেন দিদিমা
ছেড়ে আসা গ্রাম, নদীজল, চেনামানুষজন
স্মৃতি তে আছে যারা স্মৃতিতে ভাসে যারা
মনে করা যায় নদীর ওপারে ভাসে যে নৌকা ও মাঝি, তারা ভেসে ভেসে
আগুন আঁকতে বড় ভালোবাসতেন দিদিমা, আগুনের মেয়ে, স্বাধীনতার আগুন
আমাদের ছাদ বাড়িতে নিভৃত আগুন
আগুনে জ্বলে বহুজনেই দিয়ে গেল
তিন রঙের উত্তরাধিকার
আঁকো, বলে মা ছুঁচে সুতো
কাঁথার ওপর বসে, আমি কাঁথাটা দেখলাম
ছবিদেখি, আগুনের ডিতরজল
এ ছবি যে আমি আঁকবো জানাছিল
রঙে ভিতর জল ছিল, জলের মধ্যে
কিছু বাঁচা শ্বাসবিশ্বাস
ফলসা রঙের শাড়ি পরে যে মেয়েটি
ভালবাসার জলে ভেসে গেল
সে গানে বিশ্বাসের মাঠ পুড়ে অনন্ত ফিনিক্স
আগুনে পুড়ে যাচ্ছে পৃথিবী
জলে ছবি, তবু তুলি শুকিয়ে যাচ্ছে
নকশিকাঁথার মাঠ প্রান্তরে হেঁটে যাচ্ছে
একটি হাত ছুঁয়ে আর একটি হাত
প্রতি হাতে শিশু গাছ
ধুসরতা মুছে যাও
যুগান্তের পোড়া ঘ্রাণ মুছে
সবুজ সবুজ
বৃষ্টি নামল, পাতায় পাতায়
অপ্রকাশিত গদ্য ও পদ্য পাঠান
অভিমত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন