অনীশ ঘোষ
এসো নবজন্ম ম্যাজিক
মেঘে মেঘে ঘনাইছে গরল বাতাস
দিকচক্রবাল ফুঁড়ে উঠে আসে বিষম বিষাদবেলা...
হে বিষাদবর্ষ, বলো, ভাইরাস-শৃঙ্খলে বাঁধা পড়া
এ জীবন লাট খেতে খেতে কোন পথে যাবে!
মৃত্যু উপত্যকার দৃশ্যাবলি-ত্রস্ত মানব সন্তান
আজ থমকে আছে বেদনাবিধুর
কোথায় ফেলে এলে তোমার রূপ-রস-গন্ধ-বর্ণের সুললিত ওম...
হে পেলব বৃষ্টিদিন, তোমার মায়াস্নিগ্ধ আসনখানি
পেতে রেখেছি হৃদিপদ্ম মাঝে, এসো,
শুধু একবার তোমার নবজন্মের দুরন্ত ম্যাজিক দেখাও!
জলছবি
মেঘসিঁড়ি জুড়ে পায়ে পায়ে মেদুর বৃষ্টিনূপুর
চরাচরে ছড়িয়ে আছে একলা নীরব দুপুর
সেই দৃশ্যে মোহমুগ্ধ নদীতীরে জেগে থাকা গাছ
মেঘ ও জলের ভালোবাসা দেখে পুলকিত মাছ
নেশাতুর তারা আজ প্রেমাতু্রও কিছুটা বটে
অপেক্ষায় যদি কোনো আশ্চর্য প্রণয়কাণ্ড ঘটে
বৃষ্টির নূপুর বাজে পায়ে পায়ে বাজে তার সুর
জানালায় শুয়ে থাকে অফুরান নীরব দুপুর।
এপিটাফ: শম্ভু রক্ষিত
এ মুগ্ধ মহাপৃথিবীর তিনি এক নির্মোহ কবি
ভালোবাসায় গড়ে তুলেছিলেন নিজের ভুবন
আজ তিনি অকস্মাৎ সাঙ্গ করে দিলেন আশ্চর্য সেই কবিতাজীবন
খাতা জুড়ে বিরাট এক শূন্য এঁকে রেখে এ বিদায়
স্তব্ধ হয়ে দেখতে থাকে বিমূঢ় মানব
কবি কি পরজন্মে বিশ্বাসী কেউ
চোখে চোখ রেখে গুনে যাবেন ভালোবাসা
দেখবেন কি তাঁর যাবতীয় ঐশ্বর্য বুকে করে আগলে রেখেছে প্রেমিক পাঠক
জীবন নশ্বর জানি কবিও কি তাই?
অবিনশ্বর যত কিছু লেখা তাঁর জাগিয়ে রাখে আমাদের
দেহ পুড়ে যায় পোড়ে না কখনও তার অনন্ত জীবন
কবিতায় মানুষে ভালোবাসাবাসি
জেগে থাকে অনিবার
জীবনের যাত্রাপথ গড়িয়ে চলে সেদিকেই
আমরা দেখি কবির নবনির্মাণ নবজন্মের ইঙ্গিত
কবির মৃত্যু না হয়ে ছড়িয়ে থাকে কবিতাভুবনে।
শম্ভু রক্ষিত
জন্ম-১৬ই আগষ্ট, ১৯৪৮
মৃত্যু- ২৯শে মে ২০২০
নদী, তোমাকে
ছলাতছল নৌকাবিহার মাঝনদীতে টাল
মাঝির হাতে রশিজীবন শক্তপোক্ত হাল
আকাশ কালো ছুটছে নদী গড়গড়িয়ে ওই
হাত পেতেছি আঁচল করে একটুখানি সই
তোমার স্বপ্ন দেবে আমায় দেবে তোমার হাসি?
একটুখানি পেলেই আমি অনেক ভালোবাসি।
ভালোবাসায় ভরিয়ে নেব এ পৃথিবীর ঘর
তখন তুমি এবং আমি আর হব না পর
সে উপহার পেলেই আমি নবীন সুখে জাগি
নদীর জন্ম বুকের মাঝে চিরজীবন আঁকি।
আগুন জীবন
আগুনখেকো জীবন কত মৃত্যু খেয়েছে বারবার
ভালোবেসে লাফ দিয়েছে ভরন্ত নদীতে
সরু সুতোয় ঝুলতে ঝুলতে রওনা দিয়েছে পর্বত শিখরে
দাবানলে ঝাঁপ দিয়েছে অরণ্যবিহারে গিয়ে
তবু সে মৃত্যুকে গিলে খেয়ে ফেলেছে নিঃসঙ্কোচে
আজ তাকে ভাইরাস-সন্ত্রাসে ডেকে নিচ্ছ দু'হাত বাড়িয়ে
তোমাকে চেনে না দেখেনি কখনও এ জীবন
গাল বাড়িয়ে দিয়ে চুমু খাবে সপাটে তেমন প্রেয়সী তুমি নও
ঘৃণায় দূরে ঠেলে তাই বলি আমি এ আলিঙ্গন চাই না বিষ
আমি চেনা আগুনের সঙ্গ করতেই পারি
তার সঙ্গে খেলতেই পারি জীবনমৃত্যু খেলা জন্মভর
তোমার গোপন অস্ত্রে ঘায়েল হতে চাই না
মুখোমুখি বীরের লড়াই লড়তে জীবনকেও বাজি রাখতে পারি
তুমি তো সে খেলায় বিশ্বাসী নও জানি
আমার মূল্যবান জীবন তোমার নোংরা হাতে সঁপে দেওয়ার জন্য নয়
বিদায় হও হে বিষ ভাইরাস আমরা আগুনের পূজারি
জলই আমাদের নমস্য দেবতা।
লেখা পাঠান
অভিমত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন