লেবেল

শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ






                        অমিত গোলুই 


    
     আলপথ

আলপথের দু'দিকে একই রকম ধানখেত । 
একই চাষিরা দু'দিকের জমিই চাষ করে । 
একই পাম্প দু'দিকের জমিকেই জল দেয় । 

তবু , এদিকের ধানখেতের সঙ্গে
ওদিকের ধানখেতের সামান্য হলেও
পার্থক্য দেখা যায় । 
মাঝে আলপথ আছে বলেই কি
পুরোপুরি প্রতিবিম্ব হয়ে উঠতে পারেনি ? 



   সমর্পণ


আসন পাতছো কেন ? 
কোথায় বসবেন উনি
তুমি কি জানো ? 
তার থেকে বরং ভাঁজ করে রাখো , 
তিনিই সুবিধা মতো বিছিয়ে নেবেন । 

মোটা খাতাটায় আর কিছু লিখো না , 
একটা পাতা অন্তত সাদা রাখো
যাতে উনি কিছু লিখতে পারেন । 

পরিষ্কার করে রাখো মেঝে , 
যাতে আলতা পরা পায়ের ছাপ
স্পষ্ট ফুটে ওঠে সাদা মেঝেতে ।    




    বৃদ্ধাশ্রম


ছেলে আমেরিকায় । মেয়ে দিল্লিতে । 
বুড়ো বাবা এখন একাই থাকে এতবড় বাড়িতে । 

না , ছেলে - মেয়েদের কোনো দোষ নেই । 
তারা দু'জনেই চেয়েছিল বাবাকে নিয়ে যেতে ।
 নাতনি শেলিও বলেছিল -- চলো না দাদু , 
ওখানে গেলে তোমার হাঁটু ভালো হয়ে যাবে । 
শুনে দাদু বলেছিল -- সে হয় তো যাবে
তবে , ওখানে কি ভোরের শিউলি পাবো
শিশির ভেজা পথে ? 
পাবো , সন্ধেবেলা ঠাকুর ঘরে
ধুনোর গন্ধ , শাঁখ , ঘন্টার শব্দ ? 

এখন বাবা আরো বুড়ো হয়ে গেছে । 
ধূপ - ধুনোর গন্ধে হাঁপানির কষ্ট
বাড়ে বলে ঠাকুর ঘরেও যায় না । 
শাঁখ , ঘন্টার শব্দও অসহ্য লাগে । 
ডাক্তারের কথায় শিশির ভেজা পথে
খালি পায়ে হাঁটাও নিষেধ । 

ছেলে - মেয়েরা কেউই বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়নি । 
তবু , নিজের বাড়ি , নিজের অজান্তেই
বাবার কাছে বৃদ্ধাশ্রম হয়ে গেছে  । 




    রঙিন


এ ওকে রঙ মাখাচ্ছে । সে তাকে । 
রঙ মাখতে মাখতে সুন্দর মুখগুলো
কুৎসিত হয়ে উঠছে । 

আমি ওদের লক্ষ করে বলি --
অন্যকে রঙ মাখানোর আগে
নিজেকে রঙ মাখিয়েছ ? 
ওরা আমার কথায় হাসতে হাসতে বলে --
পাগল !  নিজের দু'হাতে রঙ মেখে
কি কেউ নিজের গালে রঙ মাখায় ? 

ওদের কী করে বোঝাই
নিজেকে রঙ মাখানোর আনন্দ । 
কী করে বোঝাই , নিজেকে রঙ মাখালে     
সকলকে এতটাই রঙিন লাগে যে , 
হইহই করে আর কাউকে
রঙ মাখানোর দরকারি হয় না । 

শিমুল - পলাশকে দেখে এরা শুধু
মুগ্ধই হতে জানে , 
শিখতে পারে না
নিজে রঙিন হয়ে ওঠা  । 




     প্রিয়


প্রিয় খাবারের স্বাদও কি আমরা
ঠিক ভাবে গ্রহণ করতে পারি ! 

ধরো , তোমাকে দেওয়া হয়েছে
তোমার প্রিয় সব খাবার । 
তুমি কী করবে  ? 
হয় চক্ষুলজ্জার খাতিরে
যে কোনো একটা তুলে বলবে , 
একটা নিচ্ছি আর খেতে পারব না । 
আর না হলে নির্লজ্জের মতো প্লেটের
সব খাবার খেয়ে হাঁসফাঁস করবে । 

আর প্রিয় স্বাদ চিরকাল অপূর্ণই থেকে যাবে ।




                                     লেখা পাঠান 
                                   অভিমত জানান
                        bimalmondalpoet@gmail. com   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন