জ্যোতির্ময় দাশ
একসময়ে একটু অন্য ধরনের ছিল আমাদের এই
ভারতবর্ষের পরিচিত মানচিত্রের পরিধির ব্যাপ্তি
আজও ঘুমের মধ্যে দেখতে পাই মুণ্ডিত মস্তকে
ভিক্ষু অতীশ দীপঙ্কর ত্রিপিটক থেকে শোনাচ্ছেন
সিংহলের মুগ্ধ জনগণকে তথাগতের উপদেশবাণী
অন্যদিকে মানচিত্রের দ্রাঘিমাংশ ভেদ করে জেগে ওঠে
ব্রিস্টলে রাজা রামমোহনের জীর্ণ সমাধির স্তম্ভ
শান্তাবেনের কাঁধে ভর দিয়ে গান্ধীজি হাঁটছেন দ্রুত পায়ে
ডান্ডির পথে আইন অমান্য করে একমুঠো লবণের জন্য
আর শতাব্দীর ঝাপসা অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসছেন
উত্তরীয় কাঁধে এক অনমনীয় দীপ্ত পুরুষ
তালতলার প্রসিদ্ধ চটিটি একপাশে সরিয়ে রেখে তিনি
পূজাপাঠের নিষ্ঠায় রচনা করছেন খন্ডে খন্ডে বর্ণপরিচয়
এক ভয়াবহ অজ্ঞানতার উজান স্রোতের বিরুদ্ধে
ভারতবর্ষের নিরক্ষর জনতার জন্য তিনি দ্বিতীয় ঈশ্বর...
ডাক নাম তার ছিলো "টিপলে"রোগা খর্ব লোকে গেলো ভুলে !
ছিলো না তার কোনো গর্ব
রোগা হ্যাঙ্গলা একরত্তি চেহারার ছেলে হেঁটে এলো মাইলের পর মাইল!সে যে বিস্ময় বালক !
নয় কিছুতেই হার মানা !
দীর্ঘ পথে ছিলো তার কেবল
জিগ্গাসা আর জিগ্গাসা !শেষ নেই অজানাকে জানার !
পিতা ভগবানদাশ বুঝেছিলেন একদিন হবেই হবে তার স্বপ্ন সার্থক !
"ঈশ্বরচন্দ্র" নাম তার সাধ করে কী রেখেছি !মুখের পরে যে নাম এসেছে, বসিয়ে দিয়েছি !তার মূল্য কি অসীম আজ বুঝেছি !
নিশ্চয় হবে সে ভারত জননীর গর্ব !
নামের সঙ্গে জুরলো সর্বনাম "বিদ্যাসাগর "
জীবনভোর দিয়ে গেলো
মানুষের জন্য শিক্ষার আলো
আর বাল্যবিধবার মুক্তি স্নান !
প্রতিজ্ঞায় রাখলেন, নারী শিক্ষার সুমহান ব্রত :
ভাস্বর হলেন! পেলেন জয়ীর সম্মানতিলক !
অনেক অনেক কষ্টের পর অন্ধকারে আলো !
বালক 'টিপলে' হলেন একদিন "যুগমানব" ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর !
চির বরেণ্য চির অম্লান !
তাঁর পায়ে নমস্কার !
'হে মহাসাগর- ভুলেছি তোমায়
দ্বিশত সৈকতে'
অশোক রায়
তুমি বীর
যখন কেউ তোমায় সঙ্গ দেয় নি
তুচ্ছ করে একাই এগিয়ে গেছ বিবেক বুদ্ধির পক্ষীরাজে
বিধবা-বিবাহ কোহিনুর হিরা তোমার সিংহাসনে
তুমি সিংহ তুমি সুর্য
ছোট মাপের বিশাল পুরুষ সমাজের মাথায় পা রেখে
ভেঙেছ হাজার বছরের বর্বর সংষ্কার নির্মম লোকাচার
নারীর জীবনে প্রভাত-উদয় তোমারি সিংহনাদে
তুমি ভগীরথ
‘আমরি’ বাংলা ভাষা তোমার কৃপায়
আঁতুর ঘর হতে সক্ষম পা রেখেছিল
বঙ্গ-হৃদি-কন্দরে বিকশিত হবার মানসে
তুমি নাস্তিক
পূজেছ ঈশ্বর জ্ঞানে শুধু পিতা-মাতা নরদেবতারে
আর কোনো দেবতারে কর নি বিশ্বাস
না মেনেছ অন্ধ আচার বিচার অলৌকিক লীলা
তুমি পন্ডিত
শিক্ষা তোমার আগুনের মত সর্বগ্রাসী
জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত তব আপামর দেশ-কাল
বিদ্যায় পার করেছ মাইলস্টোন অপার
তুমি সাগর
তোমার মধ্যে নানান গুণের সমভিব্যহার
গভীর চেতন স্থিতধী অসীম ধীমান
কত নদী এসে তোমার করুণায় হয়েছিল লীন
হে প্রাজ্ঞ, আজ আমাদের অপদার্থতায়, তুমি বিস্মৃতপ্রায়।।
সাগর কথা
শুভ্রাশ্রী মাইতি
বর্ণ পুরুষ
জয়দেব মাইতি
কি নামে ডাকবো তোমায়?
তেত্রিশ কোটি দেবতার মতো, তুমিও তো নামাঙ্কিত। সর্বত্রই আপন বিচরন-
কোনদিন অন্যায় এর সামনে মাথা নত করনি।নত হওনি ঈশ্বরের কাছে
অথচ - মানুষ দেবতা হয়ে, সুখ দুঃখ আনন্দ উচ্ছ্বাস ে সাথী হয়েছো আজন্ম-
ফিরে দেখনি জাতপাত, ধনী- দরিদ্র, নারী পুরুষ -
মুখে ভাষা,হাতে অক্ষর, ক্ষুদাতুরকে অন্ন আর নারীদের অধিকার দিতে নিবেদন করেছেন নিজেকে।
শুধু মানুষের জন্য -
হাতে অক্ষর, মুখে ভাষা আর চির পৌরুষের গল্প শোনাতে শোনাতে একজনই তো' ঈশ্বর' হয়ে আলো জ্বেলে রাখেন
তিনিই আমার দেবতা - আমার বর্ণপুরুষ
আগুন সাগর
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়
যুগপুরুষ
অমৃতা খেটো
আপামর বাঙালির চোখে "বর্ণ পরিচয়ে"র
অক্ষরপ্রদীপ জ্বালালেন যিনি–
মানবতার মূর্ত প্রতীক দীনের বন্ধু,
দয়ার সাগর, সমাজ-সংস্কারক
তিনি আমাদের প্রাণপুরুষ বিদ্যা সাগর...
নারীরা পণ্য, এই ধারণাকে নস্যাৎ করে
নারীদের মানুষ করলেন, স্কুলে পাঠালেন,
"বিবাহ"নামের পুতুলখেলা বন্ধ হল
অনেক লড়াই, আত্মত্যাগ ও অর্থনষ্টের পর
বিধবারা পুনরায় বিবাহের ছাড়পত্র পেলেন,
বন্ধ হল বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহের কুপ্রথা...
অশিক্ষা, কুশিক্ষায় ভরা ভারত বর্ষের
প্রকৃত সিংহপুরুষ, প্রকৃত হিরো তিনিই
তাকে আমাদের শত স্যালুট...
জীবনসায়াহ্নে, স্ত্রী-পুত্র-পরিজনের সান্নিধ্যহীন
নিঃসঙ্গতার জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন
অন্যায়ের সাথে আপোষ করবেননা বলে...
শয্যাকণ্টকী! শয্যাকণ্টকী!
ভগ্নস্বাস্থ্য, ভগ্নমন নিয়ে ছটফট করছেন,
নিদ্রাহীন চোখ, প্রিয়জন পাশে নেই
প্রিয়বন্ধুরা উধাও,
ঠকিয়ে গেছে বহু মানুষ–
নিঃশব্দে অনন্তযাত্রা করলেন
ভারতের প্রকৃত আধুনিক মানুষ...
নির্দোষ
মানসী মিশ্র হালদার
যে প্রদীপ দুরু দুরু বুকে
আলোর ছটা দিয়ে যায়
সে যখন কাঁপানো গলায়
বাচাঁর আর্তনাদ করে
তখন যদি পাশে থাকি তার --
কি দোষ বলো তাতে?
যদি একটু তেলের স্পর্শে
ও বেঁচে ওঠে
জেগে ওঠে আলোক শিখায়
হাসিতে ভরায় ঘর
নব জীবনের আনন্দময়তায়--
কি দোষ বলো তাতে?
ও জানে নিজেকে পুড়িয়ে
মঙ্গলময় শুভ সূচনা
অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার
অন্ধকার মনের নব প্রেরণা
তাই চায় নিজেকে জ্বালিয়ে রাখতে-
কি দোষ বলো তাতে?
কত শত বরষের
কত শত প্রাণ
অকালে গিয়েছে ঝরে
তারা বারে বারে চেয়েছে
বেঁচে থেকে দিতে বাঁচার প্রতিদান-
কি দোষ বলো তাতে?
জাতির প্রত্যাশা
দেব প্রসাদ জানা
আদর্শবাদী শিক্ষক,আলোকিত করে,
সমাজ ও মানুষকে। জীবনের ধারা-
বিদ্যাসাগরের মতো। শত বর্ষ ধরে-
উন্নয়নের ধারক ছিল শিক্ষকেরা।
নৈতিকতা মূল্যবোধ,আর তার শিক্ষা
যদি ঠিক মতো কাজ করে,সততায়-
তবে একটা মানুষ,করবে না ভিক্ষা।
সমাজ তবে নিজের প্রাপ্য বুঝে পায়,
এই প্রত্যাশা মানব জাতি করে আজ।
লোভ লালসার ফাঁদে,আর্থিক চাহিদা।
স্বার্থের খেলায় যদি না পড়ে,সমাজ
গড়ার কাজে প্রস্তুত থাকত সর্বদা।
সুশিক্ষায় শিক্ষা নিতে পারত শিশুরা।
ঘরে ঘরে জন্ম নিত,বিদ্যাসাগরেরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন