বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজ ২৬শে সেপ্টেম্বর।। আজ প্রকাশিত হল... বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জন্মবার্ষিকীতে অঙ্কুরীশা-র কবিতাঞ্জলি।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 


















ঐতিহাসিক পুরুষ বিদ্যাসাগর এক অক্ষর সাগরের নাম। যাঁকে এককথায় বলা যায় শিক্ষাচেতনার পরম পুরুষ।যিনি সাহিত্য ভাবনার এক মাইলফলক। সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষে দাঁড়িয়ে  তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাই।                  





  







 বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জন্মবার্ষিকীতে অঙ্কুরীশা-র    কবিতাঞ্জলি —     




কলমে —

১.জ্যোতির্ময় দাশ
২..মনোজ ভৌমিক
৩.তৈমুর খান
৪..অনীশ ঘোষ
৫.রবীন বসু
৬.রবিন বণিক
৭.সাতকর্ণী ঘোষ 
৮.মঙ্গল প্রসাদ মাইতি
৯.ফটিক চৌধুরী 
১০.সুস্মেলী দত্ত  
১১.বিকাশ দাস (মুম্বাই) 
১২.হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩.অশোককুমার লাটুয়া  
১৪.শুভঙ্কর দাস
১৫.প্রদীপ কুমার সামন্ত
১৬.রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
১৭.রঞ্জন ভট্টাচার্য
১৮.পুষ্প সাঁতরা 
১৯.অশোক রায়
২০.শুভ্রাশ্রী মাইতি
২১.বিমল মণ্ডল 
২২.জয়দেব মাইতি
২৩.দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়  
২৪.শ্রাবণী বসু
২৫.অমৃতা খেটো
২৬.মানসী মিশ্র হালদার 
২৭.দেব প্রসাদ জানা 
২৮.শিব শঙ্কর বকসী
২৯.তপনজ্যোতি মাজি
৩০.বিষ্ণুপদ জানা  
৩১.তাপস চন্দ্র বর্মন  


  
              




















বিদ্যাসাগর : দ্বিতীয় ঈশ্বর
 জ্যোতির্ময় দাশ

একসময়ে একটু অন্য ধরনের ছিল আমাদের এই
ভারতবর্ষের পরিচিত মানচিত্রের পরিধির ব্যাপ্তি
আজও ঘুমের মধ্যে দেখতে পাই মুণ্ডিত মস্তকে
ভিক্ষু অতীশ দীপঙ্কর ত্রিপিটক থেকে শোনাচ্ছেন
সিংহলের মুগ্ধ জনগণকে তথাগতের  উপদেশবাণী
অন্যদিকে মানচিত্রের দ্রাঘিমাংশ ভেদ করে জেগে ওঠে
ব্রিস্টলে রাজা রামমোহনের জীর্ণ সমাধির স্তম্ভ
শান্তাবেনের কাঁধে ভর দিয়ে গান্ধীজি হাঁটছেন দ্রুত পায়ে
ডান্ডির পথে আইন অমান্য করে একমুঠো লবণের জন্য

আর শতাব্দীর ঝাপসা অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসছেন
উত্তরীয় কাঁধে এক অনমনীয় দীপ্ত পুরুষ
তালতলার প্রসিদ্ধ চটিটি একপাশে সরিয়ে রেখে তিনি
পূজাপাঠের নিষ্ঠায় রচনা করছেন খন্ডে খন্ডে বর্ণপরিচয়
এক ভয়াবহ অজ্ঞানতার উজান স্রোতের বিরুদ্ধে

ভারতবর্ষের নিরক্ষর জনতার জন্য তিনি দ্বিতীয় ঈশ্বর...




প্রণাম সবার 
 মনোজ ভৌমিক 


নক্ষত্র ঝটিকা যুক্ত নির্মল আকাশ,
উনবিংশ উন্মাদ প্রলয় উচ্ছাস। 
শব্দ শৃঙ্খলিত ছিল অক্ষরের কান্না, 
জন্মিল অক্ষর শ্রষ্টা মেদিনী অনন্যা।
দামোদর উচ্ছ্বসিত ধরাতে প্লাবন, 
আনন্দিত সসাগরা ধন্য ত্রিভুবন। 
কঠিন দারিদ্র্য ছিল আকন্ঠ শৈশব, 
অসীম অধ্যাবসায় বাড়িল বৈভব। 

স্বাধীন অক্ষর শ্রষ্টা ভাষার জনক, 
বাংলা-সাহিত্যাকাশে আনিলে রণক। 
দয়ার সাগর তুমি সুহিদ হৃদয়,
বিধবা বিবাহ তব শ্রেষ্ঠ পরিচয়। 
সমাজের শীর্ষমূলে মারিলে কুঠার, 
অসাধারণ ব্যক্তিত্বে প্রণাম সবার।






বরফের দেশে, বিদ্যাসাগরের দেশে 
তৈমুর খান


বরফের দেশে সুখ্যাতি কুড়াইতে আসিলাম 
একটা সোনালি রঙের চিল 
যাত্রাপথে ঘুরিয়া ঘুরিয়া নামিতে লাগিল ।
মাইকেল মধুসূদনকে আমার মনে পড়িল 
যিনি অনেকদিন আগেই এই পথে আসিয়াছিলেন 
আর তিনিও সোনালি চিল দেখিয়াছিলেন। 
পথ বহুদূর বিস্তৃত। কোথাও সুখ্যাতির দেখা মিলিল না। 

শীতে কাবু হইয়া বসিয়া পড়িলাম। 
সোনালি চিলটি নামিতে লাগিল ।
তার তীক্ষ্ণ চঞ্চুতে বিদ্যুতের দীপ্তি দেখিতে পাইলাম। 


সে কি আমার বক্ষ ভেদ করিবে? 
সে কি আমার মস্তিষ্ক ভেদ করিবে? 
এক্ষণে আমি সুখ্যাতির বিড়ম্বনা ত্যাগ করিতে চাই 

আমি বিদ্যাসাগরের দেশে অবিদ্যাকেই ডাকিতে লাগিলাম 





বিদ্যাসাগর সমীপেষু
অনীশ ঘোষ

কেউ ভাঙে মূর্তি কেউ করে কেচ্ছা
এই বাঙালিকে তুমি শিখিয়েছ স্বেচ্ছায়
অ-আ-ক-খ লিপি বা বঙ্গীয় অক্ষর
চেয়েছিলে হবে তারা শিক্ষিত, সাক্ষর।
বর্ণপরিচয় শিখে এই সেই বাঙালি
বিদেশি ভাষার প্রতি কী দারুণ কাঙালি!
নারীশিক্ষার জন্য লড়ে গেছ প্রাণপাত
সেই নারী তোমাকেই দেয় দাগা, তোলে হাত!
নরাধম বাঙালি এইটূকু জানে না
এই ইট-পাটকেলে ঈশ্বর মরে না!
চিরকালই তিনি থাকেন শ্রীবিদ্যাসাগরে
সুমানুষের মনন ও স্বপ্নে কী জাগরে।
অমূল্য সে কীর্তি এতটাই অমলিন
চুনোপুঁটি বাঙালি তার কাছে হীনদীন!
দুইশত বছরে নতমাথা নিবেদন
ক্ষমা করো হে মনীষী, শুদ্ধ হোক নীচ মন।



চির-সংগ্রামের দিশা
রবীন বসু

বর্ণের ঈশ্বর তুমি বাংলা ভাষার জনক
ভারতবর্ষ তোমাকে চেনে বর্ষ দ্বি-শতক। 
মান দিলে, প্রাণ দিলে দুখিনী বিধবার
শিক্ষার আলো দিয়েই ঘুচালে অন্ধকার। 

তোমাকে আঁকড়ে ধরে অসহায় দেশ
অভাবের অন্ন দিয়ে বাঁচালে স্বদেশ। 
ঋণে জর্জরিত মানুষকে করলে মুক্ত
মানবতার শুক্তি মাঝে রয়েছ যে সুপ্ত। 

তুমি তো দিয়েছ শিক্ষা, নারীদের দীক্ষা
উদ্যোগ ব্রত নিলে, অদৃষ্ট নিল পরীক্ষা। 
কুসংস্কার আর গোঁড়ামির বিরুদ্ধে ছিলে
রেনেসাঁ-জন্মসূত্র তুমিই তো বেঁধে দিলে। 

আজ যত আলো দেখি উজ্জ্বলতা ভালো
সবটুকু নিয়ে জীবন সায়াহ্ন দিল কালো। 
তবু তুমি সর্বসত্য,আঁধারে অমলিন শিখা
তোমাতেই ফিরে পাই চির-সংগ্রামের দিশা।



বিদ্যাসাগরের সন্তান
রবিন বণিক 

পাতায়  মুখ  ঢেকে  পাশ  কাটিয়ে  চলে  গেলেন
অতি  পরিচিত  কোনো  এক  অনুজ্জ্বল  আলোর  মতো
মুখ  ফিরিয়ে  রাখেন  তার  ভেঙে  ফেলা  মূর্তির  ছায়ায়
বিপন্ন  মানুষের  কথা  ভাবতে  ভাবতে   ফিরে  তাকান  বর্ণমালায় 
তিনি  জানেন  ভুলে  যাওয়াটা  জীবিত  মানুষের   স্বভাব 
মৃতরা  ভুলে  যায়  দেহ, ভুলে  যায়  সামাজিক  নখের  দাগ 

বর্ণমালা  ও  বিবাহিত  বিধবার  দিকে  তাকিয়ে  হাসতে  হাসতে
শূন্যে  মিলিয়ে  গেলেন  বিদ্যাসাগর –



সাগর কিনারে দাঁড়াই এসো
সাতকর্ণী ঘোষ

আজও তোমার পায়ের কাছে 
নতজানু হই বিদ‍্যাসাগর
বর্ণ চিনে চিনে তোমাকে লিখেছি 
সত‍্য কি কঠিন সে তুমি জানো
ভেঙেছ অন্ধকার খুঁজছো আলো
বিধবার আঁচল থেকে সমাজ তুলে এনে 
সদবার আঁচলে দিয়েছ তুলে 
সাগর জ্ঞান নিয়ে হেঁটেছ অনন্ত
অন‍্যায়ের পায়ে বেড়ি পড়িয়ে 
ঘুড়িয়ে ছেড়েছ দম্ভহীন রাস্তার ওপারে 

এখন সাগর কিনারে দাঁড়িয়ে দেখি
তুমি দুশো সময় অতিক্রম করেও 
সময়কে ডেকে তুলছ হাত নাড়ছ ক্রমাগত...




একগুঁয়ে ছেলেটা 
মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি 

একগুঁয়ে এক ছেলে ছিল বীরসিংহ গ্রামে
অভাব তাকে ছুটিয়ে মারে তবুও না সে থামে। 

একগুঁয়ে এক ছেলে ছিল পড়ায় ভীষণ ঝোঁক
চেয়েছিল দুখী বাবার দু:খ মোচন হোক। 

একগুঁয়ে এক ছেলে ছিল কলকাতাতে গেল 
মাইলফলক দেখে দেখে সংখ্যা চিনে নিল। 

একগুঁয়ে এক ছেলে ছিল পরীক্ষাতে সেরা 
মেধার জোরে ডিঙিয়ে গেল সব বিষয়ের বেড়া। 

একগুঁয়ে এক ছেলে ছিল মায়ের ডাকে পাগল
দামোদর সে পেরিয়ে গেল, তুচ্ছ ঝঞ্ঝা-বাদল।

একগুঁয়ে এক ছেলে ছিল নানান শাস্ত্র ঘাঁটে
বিধবাদের বিয়ে দিতে নতুন আইন আঁটে। 

একগুঁয়ে এক ছেলে ছিল রাত জেগে বই লেখে 
কথামালা বোধোদয়-সবাই অবাক দেখে।

একগুঁয়ে এক ছেলে ছিল অপমান না মাখে 
কার সাহেবের জব্দ তরে টেবিলে পা রাখে। 

একগুঁয়ে এক ছেলে ছিল তোয়াক্কা না করে 
দিকে দিকে নারীশিক্ষার বিদ্যালয় সে গড়ে।    

একগুঁয়ে এক ছেলে ছিল অন্য দুখে কাতর
বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়ায় বাছে না আপন-পর।

একগুঁয়ে সেই ছেলেটার নাম যে বিদ্যাসাগর 
ঠাকুরদাস আর ভগবতীর প্রাণেরই ঈশ্বর। 


ছাব্বিশ সেপ্টেম্বর
ফটিক চৌধুরী

প্রতিভা কীভাবে আগুন দেয় জ্বেলে
আমরা চেয়ে থাকি শুধু অপলক
হাঁটতে হাঁটতে বালকটি শিখে ফেলে
ইংরেজি সংখ্যা,দেখে মাইলফলক।

ছাত্র জীবন কর্ম জীবন বহুল প্রশংসিত
দেখেছি  তার মেধার ভীষণ স্ফূরণ
দাঁড়িয়েছে দীন দরিদ্রের পাশে নিয়মিত
ব্রিটিশ শাসক করেনি কোন উচ্চারণ।

ঈশ্বরচন্দ্র নামে যত না তোমায় চেনে
বিদ্যাসাগর বলেই চেনে এই উপাধিটি
প্রতিভা বিচ্ছুরিত হয় বিদ্যায় ও জ্ঞানে
উপাধিটি প্রদান করে হিন্দু ল' কমিটি।

তোমাকে তাই স্মরণ করি ছাব্বিশ সেপ্টেম্বর
দয়ার সাগর করুণা সাগর , তুমি বিদ্যাসাগর।






ঈশ্বর-ভাবনায়
সুস্মেলী দত্ত  

আজ যতটুকু লড়াই লড়াই বেঁচে থাকা মানে যুদ্ধবাদ
নারী ও পুরুষ সমান সমান শেখালো যেদিন সাম্যবাদ

নারীশিক্ষার প্রদীপ জ্বালালে বিধবা বিবাহ মেয়েলি মন
মোচন কষ্ট অভিমান ভয় হাহাকার যারা সর্বক্ষণ

বহুবিবাহিকে লাগাম পড়িয়ে সমাজের চোখে নিন্দে গাল
মেয়েরা ভোগ্য মেয়েরা পণ্য ওসব অতীত দুঃখ কাল

তবুও খোলেনি শিকল পায়ের নাগরিক শ্রেণী দ্বিতীয় লোক
বিশ্বায়নের অত্যাচারে ভাগ্যদেবীর
খাদ্য ভোগ

মুক্তি কোথায় মুক্তি কোথায় ডাকছে আকাশ খাঁচার পাখি
ঢাল তরোয়াল থাক পড়ে থাক সাগর তীর্থে কলম রাখি|




বিদ্যাসাগর
বিকাশ দাস (মুম্বাই)  

জন্মমুহূর্তে ঠাকুরদার মুখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিল অমোঘ সত্য বহুদূর   
বীরসিংহ ব্রাহ্মণ আঁতুড় ঘরে জন্মেছে এক মাথা মোটা এঁড়ে বাছুর।  
যাঁর গোঁ ব্যক্তিত্বের দীপ্তি চিনিয়ে গেছে অক্ষরে অক্ষরে বর্ণপরিচয় 
ত্যাগের প্রতীক দীনের বন্ধু দয়ারসাগর। বর্ণজাতির নির্ভয় হৃদয়। 
যিনি ঈশ্বরচন্দ্র বাংলা ভাষার জনক। সমুদায় জাতির অহংকার 
স্বদেশ বিদেশ বহুবিদ্যার জ্ঞান ব্যাকরণ।প্রতিভার ভূষণ অলংকার।
দারিদ্র যাঁর আজন্ম সহচর।আপোষহীন কর্তব্য সাধনে নির্ভীক সংগ্রাম 
শিক্ষার শিক্ষক।ধর্ম শাস্ত্রের গোঁড়ামি সরিয়ে পূর্ণজ্যোতি ভরিয়ে দেশধাম। 
ধর্মের দুর্গম পথ খুলে যুক্তির অস্ত্র তুলে বর্ণজাতির কুসংস্কার শোধন সারা।
অপবাদ নিন্দার নির্মম অত্যাচার সহে বিধবা পুনর্বিবাহে মুক্ত আইনধারা। 
বাল্যবিবাহ,বহুবিবাহের বিরুদ্ধে সমাজ শাস্ত্রীদের সঙ্গে অনিরুদ্ধ বিবাদ 
স্ত্রীশিক্ষা নারীমুক্তি আন্দোলনের তর্কতোড়ে মহানির্বাণ, দুর্বোধ্য প্রতিবাদ।   
তিনি প্রাণবন্ত পণ্ডিত অতি সাধারণ।নিরন্নের নারায়ণ।অবলার মানসম্মান।  
কর্তব্য সংকল্প বজ্র কঠোর সমান।মায়া মমতা কুসুমের চেয়ে কোমলপ্রাণ।  
বিদ্যাসাগর মানে প্রজন্মের চিত্তে দায়িত্ববোধ জ্ঞান একতা সততার প্রতিষ্ঠান 
ঈশ্বরের চেয়েও ঈশ্বর।অক্ষয় বটবৃক্ষ ছায়ায় গোটা মানব জাতির তীর্থস্থান। 





বিদ‍্যাসাগর
হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়

তারপর আর তাকাতে পারিনি আমরা
তোমার মুখের দিকে আকাশের দিকে
আমাদের মুখ নিচু হতে হতে 
মাটিতে ঠেকে গেছে
বর্ণপরিচয় দ্বিতীয় ভাগ ঐক্য বাক্য মাণিক‍্য
পড়তে পড়তে আমরা একদিন আমারাই
মাথা উঁচু করে হাটতে শিখেছিলাম
দেখেছিলাম পুঞ্জ মেঘের প্রথম জলধারা
রাত্রি শেষে ভোরের প্রান্তর
নদী জঙ্গল দেবালয়
সরলবর্গীয় বৃক্ষ ও পাহাড়...
ব‍্যাকরণ কৌমুদী পড়তে পড়তে বুঝেছিলাম
বাংলা ভাষার দিবস এবং রজনী আসলে কী...
কিন্তু হঠাৎ কীযে হলো আমাদের
আদমসুমারি শেষে তাড়াহুড়ো করে নেমে গেলাম
কোথায় নামলাম কেন নামলাম
সামান্য পরিমাণ অস্বস্তি বোধ ও করলো 
না,শব্দহীন রঙের দাঙ্গায় মেতে উঠলাম
ফিরে যাবার আর কোনো রাস্তা র ইলো  না
অবশিষ্ট বলতে ছিল
তোমার আবক্ষ মূর্তি তাকেও ভেঙে টুকরো টুকরো করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে কেউ আমরা দ্বিধা করলাম না
আজ আর আমাদের কোনো কান্নার ভাষা র ইলো না, মাথা নিচু শীতের মাঠে আমরা হেঁটে 
চলেছি দলে দলে আর কতদূর
বীরসিংহপুর...




ঈশ্বরের জন্মদিনের ফুল ফোটে 
   অশোককুমার লাটুয়া 

যেদিন স্লেটে প্রথম পেন্সিলে লিখেছি স্বরবর্ণ ''অ' 
সেদিন থেকেই আমার আঙুল  ধরেছেন ঈশ্বরচন্দ্র। 
হৃদয়ের কক্ষপথে তিনি গড়ে দিয়েছেন আলো অক্ষরের পৃথিবী। 
কর খল ঘট জল 
জল পড়ে পাতা নড়ে 
ঐক্য বাক্য মাণিক্য 
খুলে দিয়েছে বোধের দরজা আমার। 
মনে হয় দুশো বছর আমারও বয়স। ঈশ্বর আজো ছুঁয়ে আছেন আমাকে আর আমিও  ঈশ্বরকে। 
প্রতিদিন বাংলা বর্ণমালার সবুজ বাগানে ঈশ্বরের জন্মদিনের ফুল ফোটে 
চিরন্তন স্মৃতির সুঘ্রাণে। 
আমিও রেখেছি আমাকে 
আজও তাই তাঁর সাথে 
সমুজ্জ্বল শুভেচ্ছায় এবং পবিত্র প্রণামে। 





অভিধানের বাইরে একজন 
শুভঙ্কর দাস

একটি অন্ধকার বর্ষার রাত।
জল জমে গেছে রাস্তায়,প্রতিটি দরজার কাছে স্থির হয়ে আছে প্রত্যাখ্যানের পর্বত।একটি যুবতী অন্ধকার হাতড়ে হাতড়ে কোনো সুরাহা করতে পারেনি,আদিমতম চাহিদার,ক্ষুধার!
রাতের চেয়েও,বৃষ্টির চেয়েও,রাস্তার চেয়েও নির্জন এবং কঠোর আট আঙুলের ব্রহ্মান্ড!
সেখানে যুবতী একা,অসহায় এবং কাতর।

একটি অপরিমেয় আলোর হাত।
মেয়েটি ছুঁয়ে দিল।সে একমুঠো চালের জন্য সব বিকিয়ে দিতে চায়।সে যে জানে, বিনিময় ছাড়া এক দানাও মুখে তুলে দেয়নি!
সেও বিস্মিত। দেখল।আলোর হাত শুধু নয়, তার একটা মুখ হয়ে যাচ্ছে,তাতে ঝরছে অশ্রু,যা সহস্র তৃষার্তকে প্রাণদান করতে পারে!
যুবতী প্রথমবার শুনল,তাকে কেউ মা বলছে,তার হাতে তুলে দিচ্ছে,পকেটের যাবতীয় টাকা- কড়ি,এমন কি হাতের ঘড়িটিও, 
নীরবে চলে গেল,একটি আকাশছোঁয়া সুশীতল ছায়ার বৃক্ষের মতো!
জলের ওপর কোনো দাগ থাকে না,চিহ্নও আঁকা হয় না!
তবু সেই মেয়েটি দেখতে পেল, পরিষ্কার পায়ের ছাপ

যা এতদিন সে মন্দিরের গর্ভগৃহে দেখেছিল!







অমর বিদ্যাসাগর 
প্রদীপ কুমার সামন্ত  

সহস্র প্রতিভার অতল সাগরে
       ঝরে বিদ্যাসাগরের অমর নাম
শিক্ষা শুরুতে 'বর্ণপরিচয় '  , বোধোদয়ে
              গদ্র স্রষ্টার মহান অবদান ।

মানবপ্রেম আর পরোপকারে
          মাতৃভক্তিতে অমর তিনি
শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর মহা অবদান
          দয়ার সাগরের কাছে ঋণী  ।

শকুন্তলা, সীতার বনবাস , জীবন চরিত
           আর বেতাল পঞ্চবিংশতি
বিদ্যাসাগরের অমর সৃষ্টি 
           গদ্য সাহিত্যে তাঁর অবাধ গতি ।

বিদ্যাসাগর শিক্ষক প্রকাশক লেখক
           সমাজ সংস্কারক ও পরোপকারী
তাঁর বহুমুখী প্রতিভার আলোর শিখায়
           চিরকাল বাঙালী অহংকারী  ।

বাংলার বুকে হাজার বছর 
          দয়ার সাগর বেঁচে থাকবে
শিক্ষাদীক্ষা ও মানবতাবোধে
           বিদ্যাসাগরের কথা মনে রাখবে ।





এক নতুন সূর্য 
রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী   

ডাক নাম তার ছিলো "টিপলে"রোগা খর্ব লোকে গেলো ভুলে !
ছিলো না তার কোনো গর্ব
রোগা হ্যাঙ্গলা একরত্তি  চেহারার ছেলে হেঁটে এলো মাইলের পর মাইল!সে যে বিস্ময় বালক !
নয় কিছুতেই হার মানা !
দীর্ঘ পথে ছিলো তার কেবল
জিগ্গাসা আর জিগ্গাসা !শেষ নেই অজানাকে জানার !
পিতা ভগবানদাশ বুঝেছিলেন একদিন হবেই হবে তার স্বপ্ন সার্থক !
"ঈশ্বরচন্দ্র" নাম তার  সাধ করে কী  রেখেছি !মুখের পরে যে নাম এসেছে, বসিয়ে দিয়েছি !তার  মূল্য কি অসীম  আজ  বুঝেছি !
  নিশ্চয় হবে সে ভারত জননীর গর্ব !
নামের সঙ্গে জুরলো সর্বনাম "বিদ্যাসাগর "
জীবনভোর দিয়ে  গেলো
মানুষের জন্য শিক্ষার আলো
আর বাল্যবিধবার  মুক্তি স্নান !
প্রতিজ্ঞায় রাখলেন, নারী শিক্ষার সুমহান ব্রত :
ভাস্বর হলেন!  পেলেন  জয়ীর সম্মানতিলক !
অনেক অনেক কষ্টের পর অন্ধকারে আলো !
বালক 'টিপলে'    হলেন একদিন  "যুগমানব" ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর !
চির বরেণ্য চির অম্লান !
তাঁর পায়ে নমস্কার !






সাগর
রঞ্জন ভট্টাচার্য


তাঁকে আবারও করি আহ্বান 
সাগর সমান ....
বিদ্যার ঝুড়িগুলো গেছে ক্ষয়ে 
জল পড়ে...
সে কারিগর আজ কোথায় ?
কোথায় সেই সাগর ?
পুঁথি আছে ব্যাখ্যা আছে পর্বে-পর্বে 
মন নেই ,নেই মানও !
সব যেন বেমানান তাঁর কাছে 
সেখানেই দলিত হয় সে
দম্ভ যেন শেষ করে দেয় 
তাঁর গুণমান তাঁর অস্তিত্ব তাঁর রেখে যাওয়া সেই ভান্ডার...
লাঞ্ছিত হয় পদে পদে 
ধুলোয় মিশে অযোগ্যের হাতে 
রেখে যাওয়া মান লুণ্ঠিত হয় বর্বরের পায়ে 
তুমি এসো হে দয়াময় 
ক্ষয়িত সমাজকে জাগিয়ে তোল 
এক অপরূপ সাজে 
অন্য এক রূপ 
অন্য আঙ্গিকে...





ঈশ্বরের নাম মানুষ
পুষ্প সাঁতরা  

এক গুঁয়ে বেঁটে মানুষটি বাঘের চোখে
চোখ রাখার স্পর্ধা দেখায়
বিধবা নারীকে দেন সধবার চিহ্ন
দুঃখের রোদকে করেন বাক্য বন্ধের পূজা
সূর্যের তাপ অসহ্য লাগলেও
এ'কঠোর কোমল তাপ
নিষ্কাম কর্মযোগীর পরিক্রমা পথে বজ্রবিদ্যুত---

হেঁটেছেন অখন্ডপুরুষকার
বড় মানুষের সংজ্ঞা অনেক হতে পারে-- 
না--- এতে কোন অলৌকিকত্ব নেই
আছে শুদ্ধ মানবাত্মা
মুকুটহীন- দামীপাদুকাবিহীন অলংকার শূন্য
রক্তমাংসের মানুষটি ক্রমশঃঈশ্বর হয়ে উঠছেন--- 
ঈশ্বরের নাম মানুষ
মানুষের নাম ' ঈশ্বর '





'হে মহাসাগর-  ভুলেছি তোমায়

দ্বিশত সৈকতে' 

অশোক রায়


তুমি বীর

যখন কেউ তোমায় সঙ্গ দেয় নি 

তুচ্ছ করে একাই এগিয়ে গেছ বিবেক বুদ্ধির পক্ষীরাজে

বিধবা-বিবাহ কোহিনুর হিরা তোমার সিংহাসনে

 

তুমি সিংহ তুমি সুর্য

ছোট মাপের বিশাল পুরুষ সমাজের মাথায় পা রেখে

ভেঙেছ হাজার বছরের বর্বর সংষ্কার নির্মম লোকাচার

নারীর জীবনে প্রভাত-উদয় তোমারি সিংহনাদে   

 

তুমি ভগীরথ

‘আমরি’ বাংলা ভাষা তোমার কৃপায়  

আঁতুর ঘর হতে সক্ষম পা রেখেছিল

বঙ্গ-হৃদি-কন্দরে বিকশিত হবার মানসে

 

তুমি নাস্তিক

পূজেছ ঈশ্বর জ্ঞানে শুধু পিতা-মাতা নরদেবতারে  

আর কোনো দেবতারে কর নি বিশ্বাস

না মেনেছ অন্ধ আচার বিচার অলৌকিক লীলা   

 

তুমি পন্ডিত

শিক্ষা তোমার আগুনের মত সর্বগ্রাসী

জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত তব আপামর দেশ-কাল

বিদ্যায় পার করেছ মাইলস্টোন অপার    

 

তুমি সাগর

তোমার মধ্যে নানান গুণের সমভিব্যহার

গভীর চেতন স্থিতধী অসীম ধীমান

কত নদী এসে তোমার করুণায় হয়েছিল লীন

 

হে প্রাজ্ঞ, আজ আমাদের অপদার্থতায়, তুমি বিস্মৃতপ্রায়।। 



সাগর কথা

শুভ্রাশ্রী মাইতি


দ্বিপ্রাহরিক সূর্যের প্রখর দহন। ফুটিফাটা চাষজমি। 
পায়ে পায়ে ক্ষুধারঙা কাঙালীর দীর্ঘ মিছিল।
 পেটের অতল খাদ,শতচ্ছিন্ন কাপড়,খড়ি ওঠা হাত আর মাথার রুখু চুলের পাশে প্রবল খরার সযত্নচর্চিত চিহ্ন।
গন্তব্য টুলো বামুনের লঙ্গরখানা। শিউলিফুলী ভাতের সুগন্ধ ছড়ানো এখানে ওখানে। 
বিরাট আগুনে হাঁড়ির ভেতর টগবগ করে ফুটে চলেছে সাত রাজার ধন। 
উনুনের ধোঁয়ায় ভেজা চোখে তখন এক থালা ভাতের নবান্ন উৎসব।
মুহূর্তে পাঁচিল হয়ে ওঠে গামছারঙা কর্মীদের হাঁকডাক করা ঘৃণার তর্জ্জনী।
শামুকের মতো কুঁকড়ে যায় ক্ষুধাজর্জর অচ্ছ্যুত মিছিলটা।

আলোর দিগন্ত থেকে সহসা ছুটে আসে এক উত্তাল সাগর-ঢেউ
দুর্লঙ্ঘ্য পাঁচিলটা ভেঙে গুঁড়িয়ে পরম মমতায় আলিঙ্গন করে
 সমস্ত ঝুলপড়া দৈন্য, কালো বুভুক্ষুতা,আর ঝুঁকে পড়া হীনমন্ন্যতার ছেঁড়া ছেঁড়া মিছিলটাকে।
রুখু মাথায় মাখিয়ে দেয় তেল,পরিয়ে দেয় আস্ত এক একখান কাপড়
আদর করে গরাস মেখে খাইয়ে দেয় এক এক গাল ভাত ভালবেসে।
হাতে ধরে শিখিয়ে দেয় মানুষ হওয়ার আশ্চর্য আলোর মন্ত্র।
 
 আকন্ঠ পিপাসা রয়ে গেছে আজও।
আঁজলা ভরে জল তুলছে একটা গোটা জাতি,গোটা দেশ, সেই কবে থেকেই।
তবু জল শুকোয় না কিছুতেই।আশ্চর্য আনন্দে বেড়ে চলে অসীম,অনন্ত ঢেউয়ের মতো।
ঢেউয়ের মাথায় মুকুটের মতো ফসফরাসের জ্বলজ্বলে হৃদয়।
বেদন খুঁড়ে গল্প বলে চলে মমতার, ভালোবাসার,দিনবদলের।
চোখের জল বড় ভারী আর লোনা।এ সাগর তা নয়।
বরং চোখের জলের দুফোঁটা নুনকে সুপেয় অমৃত করবে বলে
 এ সাগর ঢেউ ভাঙে,ভাঙতেই থাকে আশ্চর্য  আলোক জন্মের




অঞ্জলি 
বিমল মণ্ডল 

বর্ণময় শব্দ  এক জীবনের  ছায়া 
এগিয়ে যায় সিন্ধুপারে
অক্ষর  অক্ষর  ঢেউ  খেলে 

হু হু করে ঢুকে পড়ে  স্রোত 
জনারণ্যে গ্রামে গ্রামান্তরে

চাঁদের  সাথে  পথে পথে
সেই ছায়া ধরে 
খুঁজে  পাই আমার সীমানা 

আমার সীমানাজুড়ে  স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের ছায়া -ছায়া
গাছে গাছে পাখিদের  আনন্দ ঝরে পড়ে 
ফুল -ফল সূচিপত্রে 
সকরুণ  কাহিনী আজও  কানে বাজে
তোমার হাতের উষ্ণতা  টগবগিয়ে  ছোটে বর্ণ পরিচয়ে
সেই আশীষ  আমার হৃদয়ে  দাগ কেটে  যায় 
ছায়া দেবতা হয়ে 

ছায়াতলে  সাঁতার  দিই 
 অঞ্জলি ভরে।




   বর্ণ পুরুষ 


  জয়দেব মাইতি 


কি নামে ডাকবো তোমায়?


তেত্রিশ কোটি দেবতার মতো, তুমিও তো নামাঙ্কিত।  সর্বত্রই  আপন বিচরন-


কোনদিন অন্যায় এর সামনে মাথা নত করনি।নত হওনি ঈশ্বরের কাছে

অথচ - মানুষ দেবতা হয়ে, সুখ দুঃখ আনন্দ উচ্ছ্বাস ে সাথী হয়েছো আজন্ম-


ফিরে দেখনি জাতপাত, ধনী- দরিদ্র, নারী পুরুষ -


মুখে ভাষা,হাতে অক্ষর, ক্ষুদাতুরকে অন্ন আর নারীদের অধিকার দিতে নিবেদন করেছেন নিজেকে।


          

শুধু মানুষের জন্য -

হাতে অক্ষর, মুখে ভাষা আর চির পৌরুষের গল্প শোনাতে শোনাতে একজনই তো' ঈশ্বর'  হয়ে আলো জ্বেলে রাখেন 


তিনিই আমার দেবতা - আমার বর্ণপুরুষ






 আগুন সাগর

 দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়



ঈশ্বর চলেছেন
ক্লান্ত পায়ে লাল মাটিতে জুতোর মশমশ
প্রাণের দেবতা সাজা
অসহায় দেহাতি মানুষের ডাক্তার দাদা
বড়ো অবুঝ ভালো - কাঙ্গাল  মানুষ

চাদর চাপা হৃদয় ক্ষতবিক্ষত
চাপ চাপ রক্তের আলপণা
অপমান বঞ্চনা অসম্মানের পাহাড়
ফুলে আজ তার খুব ভয়
কখন যে শক্ত পাথরের মালা হয়ে যায়


শব্দ সংস্কারক কখনও বা সমাজ সংস্কারক
নারী শিক্ষা বা বিধবা বিবাহ
চরৈবেতির রঙ্গিন উড়ান
তিনি চলেছেন তেজময়
শিরদাঁড়ায় যুদ্ধের দুন্দুভি
এই উঁচু হতে থাকা মাথাটাকে মাটিতে মেশানোর
একরাশ প্রয়াস 
না হলে যে সমাজ টলোমলো
কিন্ত কীটসমাজ 
পারলে কই
নাম যে স্বয়ং ঈশ্বর ভুলে গেলে বোধহয়


মৃত্যুটা আটপৌড়ে   রোজ  দেখা নয়
বুকের ক্ষতের ওপর জমে থাকা
হ্যাঁ। চোখেরই জল
প্রিয়জনের প্রয়োজন ফুরানোর মোড়কেউপহার
ঈশ্বরের আর এক ঈশ্বরকে শিউলি বিদায়

অনেক লড়াইয়ের আগুন খেয়ে
ভারতমায়ের জীর্ণ টলোমলো স্বপ্নগুলো আজ মহীরুহ
আশ্রয়ে কোটি কোটি ঊর্দ্ধ বাহু
লড়াইয়ের আগুন বুকে নিয়ে মিছিলের মুখ
ঈশ্বর ও যে তোমারই মুখ
জাগ্রত জীবন্ত ভারত তো সেখানেই
ঠিক সেখানেই
তোমার পাশে তোমারই আশে





মানব বৃক্ষ
শ্রাবণী বসু

পৃথিবীর যে সব মানুষ বৃক্ষ হয়ে জন্মান
তাঁরা নীলগ্রহে নন্দনকানন তৈরি করেন।

কোনো কোনো মানুষ সত্যি বৃক্ষ হয়,
ওই আতর গাছটার মতো।
সারা গায়ে পেরেক পুঁতে মেরে ফেললেও
আতরগন্ধে বাতাস ভরিয়ে দেয়
তেমনই একজন বৃক্ষ- প্রভু যীশু।

কোনো কোনো মানুষ বৃক্ষ হয়েই জন্মায়,
ভালোবাসার শস্য ফলিয়ে 
মাটিতে পুণ্য স্পর্শ রেখে যায়।
তেমনই একটি বৃক্ষ - মাদার টেরেসা।

কোনো কোনো মানুষ -মানুষ নয়, বৃক্ষ -
বাতাসের দূষণ শোষণ করে তাঁরা
প্রতিবেশীকে শুদ্ধ বাতাস দান করেন।
তেমন একজন বৃক্ষ - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।



           যুগপুরুষ


        অমৃতা খেটো 


আপামর বাঙালির চোখে "বর্ণ পরিচয়ে"র

অক্ষরপ্রদীপ জ্বালালেন যিনি–

মানবতার মূর্ত প্রতীক দীনের বন্ধু,

দয়ার সাগর, সমাজ-সংস্কারক 

তিনি আমাদের প্রাণপুরুষ বিদ্যা সাগর...


নারীরা পণ্য, এই ধারণাকে নস্যাৎ করে

নারীদের মানুষ করলেন, স্কুলে পাঠালেন,

"বিবাহ"নামের পুতুলখেলা বন্ধ হল


অনেক লড়াই, আত্মত্যাগ ও অর্থনষ্টের পর

বিধবারা পুনরায় বিবাহের ছাড়পত্র পেলেন, 

বন্ধ হল বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহের কুপ্রথা...


অশিক্ষা, কুশিক্ষায় ভরা ভারত বর্ষের

প্রকৃত সিংহপুরুষ, প্রকৃত হিরো তিনিই

তাকে আমাদের শত স্যালুট...


জীবনসায়াহ্নে, স্ত্রী-পুত্র-পরিজনের সান্নিধ্যহীন

নিঃসঙ্গতার জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন

অন্যায়ের সাথে আপোষ করবেননা বলে...


শয্যাকণ্টকী! শয্যাকণ্টকী!

ভগ্নস্বাস্থ্য, ভগ্নমন নিয়ে ছটফট করছেন, 

নিদ্রাহীন চোখ, প্রিয়জন পাশে নেই

প্রিয়বন্ধুরা উধাও,

ঠকিয়ে গেছে বহু মানুষ–


নিঃশব্দে অনন্তযাত্রা করলেন

ভারতের প্রকৃত আধুনিক মানুষ...





নির্দোষ 


মানসী মিশ্র হালদার 


যে প্রদীপ দুরু দুরু বুকে 

আলোর ছটা  দিয়ে যায়

সে যখন কাঁপানো গলায়

বাচাঁর আর্তনাদ করে

তখন যদি পাশে থাকি তার --

কি দোষ বলো তাতে?


যদি একটু তেলের স্পর্শে

ও বেঁচে ওঠে 

জেগে ওঠে আলোক শিখায়

হাসিতে ভরায় ঘর

নব জীবনের আনন্দময়তায়--

কি দোষ বলো তাতে? 


ও জানে নিজেকে পুড়িয়ে 

মঙ্গলময় শুভ সূচনা 

অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার 

অন্ধকার মনের নব প্রেরণা 

তাই চায় নিজেকে জ্বালিয়ে রাখতে-

কি দোষ বলো তাতে? 


কত শত বরষের

কত শত প্রাণ

অকালে গিয়েছে ঝরে

তারা বারে বারে চেয়েছে

বেঁচে থেকে দিতে বাঁচার প্রতিদান-

কি দোষ বলো তাতে? 

        

   


জাতির প্রত্যাশা


  দেব প্রসাদ জানা


আদর্শবাদী শিক্ষক,আলোকিত করে,

সমাজ ও মানুষকে। জীবনের ধারা-

বিদ্যাসাগরের মতো। শত বর্ষ ধরে-

উন্নয়নের ধারক ছিল শিক্ষকেরা।


নৈতিকতা মূল্যবোধ,আর তার শিক্ষা

যদি ঠিক মতো কাজ করে,সততায়-

তবে একটা মানুষ,করবে না ভিক্ষা।

সমাজ তবে নিজের প্রাপ্য বুঝে পায়,

 

এই প্রত্যাশা মানব জাতি করে আজ।

লোভ লালসার ফাঁদে,আর্থিক চাহিদা।

স্বার্থের খেলায় যদি না পড়ে,সমাজ

গড়ার কাজে প্রস্তুত থাকত সর্বদা।


সুশিক্ষায় শিক্ষা নিতে পারত শিশুরা।

ঘরে ঘরে জন্ম নিত,বিদ্যাসাগরেরা।




  



     সিংহ         
  শিব শঙ্কর বকসী

সিংহের জন্ম আফ্রিকাতে নয়, 
                  আমাদের দেশেতেও ছিল।  
বীরসিংহ গ্রামের সিংহ শিশু,
                  বাবা-মা ঈশ্বর নাম দিল।


  ছোট থেকেই বাবা ও মায়ের,
                  ভীষনই বাধ্য ছেলে ছিল।  
  পরিণত হয়ে সেই বংশের,
                  মুখ আলোকিত করেছিল।

        
  তাঁরই লেখা বর্ণ পরিচয়, 
                  আজকে সবার ঘরে ঘরে।  
  বাংলা ভাষাতো মধুর হয়েছে, 
                  তাঁরই অবদানের জোরে। 


  সবাই তাঁকে প্রনাম জানাই, 
                  অনেক ভাল কাজের জন্য।  
   তিনিই তাই হতে পেরেছেন, 
                  সারা পৃথিবীর অগ্রগন্য।  


দ্বিশতবর্ষে প্রনাম জানাই
                    তুমিইতো আজ ধন্য ধন্য, 
বাঙালি মননে সিংহপুরুষ
                       দয়ার সাগর, তুমি অনন্য। 



ঈশ্বর 
তপনজ্যোতি  মাজি 

ঈশ্বর ছিলেন ঈশ্বর সম্মন্ধে উদাসীন I 

আলোর বৃত্তে জ্যোতির্ময় ঈশ্বরের প্রেমময় মুখ অপেক্ষা 
দারিদ্র্যক্লিষ্ট  সম্বলহীন নারী পুরুষের মুখ 
মনোযোগী  ও চিন্তান্বিত রাখতো মধ্যউচ্চতার 
ঋজু ঈশ্বরকে I 

সমকালীন অনেক মানুষ , সাধারণ এবং প্রসিদ্ধ , তাকে 
খাটো করতে চেয়েছেন নাস্তিক অথবা 
দাম্ভিক বলে I 

খেউর , ব্যঙ্গ এমনকি মিথ্যাচারও বর্ষিত 
হয়েছে শ্যামবাংলার 
শ্রাবন বিকেলের শিলাবৃষ্টির মতো I 
দারিদ্র্য এবং দৃঢ়তা বড় বিষম বস্তু ,
মানতে পারেনি কেউ I 

সমাজ হিতৈষণা , দয়া ,  দান , 
বিধবা বিবাহ প্রবর্তন , এমনকি স্ত্রী শিক্ষা 
ও বিদ্যালয় স্থাপনের  কাজগুলি করেও 
বঙ্গ সমাজে নিন্দিত 
হয়েছেন দাম্ভিক 
ও এক বগ্গা মানুষ হিসেবে I 

নিজেকে নির্বাসনে পাঠিয়ে 
ভুলতে চেয়েছেন নিজের জ্যোতির্ময় 
কাজগুলি I 

আসলে 
এই দুশো বছরের ব্যবধানে আমাদের 
প্রাতিষ্ঠানিক ঈশ্বর পূজা যত বেড়েছে ,
ভুলে গেছি 
মানুষ ঈশ্বরকে I



প্রণমি তোমায়
বিষ্ণুপদ জানা

আলবেলে বাতাস। সবুজ শ্বাস নিতে নিতে, কাদা মাটির পথ ধরে ; ঘাস পাতা দাঁতের কেটে পা দিতাম গ্রামের পাঠশালা

প্রশান্ত মুখশ্রী। মাথায় ঝাঁকড়া চুল। পরনে দেহাতি ধুতি ও পাঞ্জাবি। পায়ে নাগরা চটি চশমা চোখে - লোকটি

কি স্কুলে পড়বে !

আঁধারের আলো জ্বেলে কিশলয় বর্ণপরিচয়ের অ আ ক খ, জল পড়ে পাতা নড়ে, বনে থাকে বাঘ - আজও উচ্চারণ করে অন্তরে জন্মান্তরে

আজীবন ছাত্রদরদী পরোপকারী লোক-  পায়ে মাথা নত করি। সভ্যতার আলো দিগন্ত রঙিন । 
জ্ঞানের শূন্যতা মাঝে  জানাই প্রণাম। 






বিদ্যাসাগর
তাপস চন্দ্র বর্মন

বীরসিংহের বিদ্যাসাগর
   মহামানব তুমি,
তোমায় পেয়ে ধন্য মোরা
   ধন্য ভারত ভূমি।
বর্ণ পরিচয় কথামালা
  অমর তোমার সৃষ্টি,
বাংলা গদ্যের পুরোধা তুমি
  বাংলা মায়ের কৃষ্টি।
নারী শিক্ষা বিধবা বিবাহে
  নবজাগরণ আনলে,
বহু বিবাহ বন্ধ করে
গোঁড়ামি যত ভাঙলে।
সহজ সরল জীবন যাপন
  জ্ঞানের আলো ধরে,
অসহায় আর্তের সেবা করে
  থাকলে হৃদয় জুড়ে।



 






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন