ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস (পর্ব-৮)
...এবং ইরাবতির প্রেম
গৌতম আচার্য
ইরাবতির মেসেঞ্জার খুলেই সত্যেন ঘাবড়ে গেলো।। ইরাবতি লিখেছে, "আমাকে দেখলেন না, জানলেন না, অথচ একেবারে জীবন সঙ্গী পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন? আপনি আবেগ প্রবন বুঝতে পারছি।। তবে সেই নিয়ে ভেসে বেড়ালে শুধু দুঃখ বই কিছুই মিলবে না।। যাহোক, আপনি থাকেন কোথায়"?
ভীষণ অপমানবোধ কাজ করছে সত্যেনের মনের মধ্যে।। সে তো ভালোমন্দের বিচারক নয়।। তাছাড়া সে কি বলেছে নাকি, "আমার জীবন সঙ্গী হও"? কেন খামোকা আগ বাড়িয়ে ইরাবতি এমন কথা বললো? সত্যেন তো শুধু চেয়েছে তার পাশে দাঁড়িয়ে তার যা কিছু দুঃখ যন্ত্রণার ভাগ নিতে, তার কষ্ট লাঘব করে তাকে সুখী দেখতে।। এ্যতো অহঙ্কারী কথা সে আশা করেনি ইরাবতির কাছ থেকে।।
মনে মনে আত্মগ্লানি আর হীনমন্যতার শিকার হয়ে চলেছে সত্যেন।। কাউকে ভালো লাগলে তার জন্ম- ঠিকুজী কি আগে থেকে জেনে রাখতে হবে? আগে থেকে সবকিছু প্ল্যান করে তবে তার সঙ্গে ভালোবাসা করতে হবে? ভালোবাসা কি চাকরি নাকি যে, মাস গেলে কতো টাকা মাইনে পাবো.. আমাকে কি করতে হবে.... কতোক্ষণ ডিউটি... এ সব আগে থেকে জানা থাকবে? ভালোবাসা কি কোনও নিয়ম মানে... নাকি সিনেমার মতো এই দৃশ্যের পর ঐ দৃশ্য মেনে চলা সম্ভব?
মনে মনে ভীষণ অভিমান জমা হচ্ছে।। কোন উত্তর সে করেনি ইরাবতির কথার।। চুপচাপ ফোন লাইন বন্ধ করে রেখে দিয়েছে।। ঠিক করেছে, ইরাবতির সঙ্গে আর কোন যোগাযোগের দরকার নেই।। নিজের অহঙ্কার নিয়ে থাকুক ইরাবতি।।
বেশ অনেক সময় ধরে তার মনের মধ্যে একরাশ চিন্তা ভাবনা দোলা দিচ্ছে।। সত্যেন ভাবে, এই জীবনে সে আর কারও জন্য আগ বাড়িয়ে কিছু ভাববে না।। তার এই মানসিকতার কোন মূল্য দেয়না কেউ।। সত্যেন জানেনা ইরাবতি তাকে নিয়ে কি ভাবছে? হয়তো খুব বোকা বা অপাঙ্ক্তেয় ভাবছে।। সত্যেন ভাবে, নিজেকে কি খুব খেলো করে ফেললো সে?
মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে চোখ বুজলো সত্যেন।। ঘুম আসতে চায় না।। যতো সে ঘুমের চেষ্টা করে, ততোই ইরাবতির কথা গুলি তাকে অস্হির করে তোলে।। কি যে করবে ভেবে পাচ্ছে না সত্যেন।। শুধু মনে মনে ভাবে, সে আগ বাড়িয়ে চড় খেয়েছে ইরাবতির কাছে।। ঘুমের জন্য মনপ্রাণ দিয়ে নিজেকে একাগ্র করে এবার।।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সত্যেন দেখলো ট্রেন হাওড়া ষ্টেশনের আউটিং এ দাঁড়িয়ে আছে।। অপেক্ষা করছে প্ল্যাটফর্মে ঢোকার সিগন্যালের জন্য।। দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি নিজের আসনে ফিরে এলো সে।। চাদর ইত্যাদি গুছিয়ে ব্যাগে পুড়লো।। ট্রেন ঢুকলো হাওড়া ষ্টেশনের একুশ নম্বর প্ল্যাটফর্মে।। বাড়ি ফিরে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে অভ্যাস মতো খবরের কাগজে চোখ রাখলো।।
আজ আর বেরোবে না ঠিক করেছে সত্যেন।। খুব মানসিক অস্থিরতা কাজ করছে মনে।। ইরাবতির কাছে সে নিজেকে খুব ছোট করে ফেলেছে।। তার পূর্ণ সুযোগ নিয়েছে ইরাবতি।। এর পরেও আর ইরাবতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে তার মান- ইজ্জৎ বলে আর কিছু থাকবে না।। খবরের কাগজ পড়া শেষ করে মোবাইল হাতে তুলে নিলো সত্যেন।।
একি? ইরাবতি তাকে উন- পঞ্চাশ টি মেসেজ করেছে?
--- "মেসেজ দেখেও উত্তর না দেওয়াটি কি ঠিক"?
--- "আরে বলবেন তো কিছু"।।
--- "দ্যাখো রাত তিনটে বাজে।। আমি উত্তরের আশায় ঘুমাতে পারছি না.. অথচ বাবুসাহেব হয়তো এতক্ষনে কষ্যে নাক ডাকছেন"।।
--- "ধ্যাৎ! ভাল্লাগে না।। আরে একটু উঠুন না।। দয়া করে মোবাইলটি খুলুন না।। দেখুন না, কেমন চাতক পাখির মতো মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বসে আছি"।।
--- "না, আপনি দেখবেন না মনে হচ্ছে"।।
--- "আপনি কি আমার কথায় আঘাত পেয়েছেন? ঐ যে লিখেছি, 'দেখলেন না, বুঝলেন না...' অথচ"
-- "রাগ হয়েছে মশাই এর? আচ্ছা বাবা আচ্ছা।। ঘাট হয়েছে আমার"।।
এরপর আবার ইরাবতি পরপর লিখে গেছে, "এ্যাই", "এ্যাই", "এ্যাই", "এ্যাই", "এ্যাই", "এ্যাই", "এ্যাই", "এ্যাই", "এ্যাই".... শেষে লিখেছে, সাহেব, ভোর হয়ে গেলো, সাড়া পেলাম না।। কুম্ভকর্ণ যেনো ঘুম দিচ্ছেন।। ওরে বাবা কি ভীষণ নাসিকার গর্জন... ঘুমান, ঘুমান, ভালো করে ঘুমান।। আমি না হয় শুধু আপনার ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় জেগে বসে থাকি।। কথাটি মনে রাখবেন কিন্তু।।
মূহুর্তে চঞ্চল হয়ে ওঠে সত্যেন।। মনে মনে বলে, "না খুব অন্যায় হয়ে গেছে আমার।। আমার বোঝা উচিৎ ছিলো সবকিছু"।।
চলবে......
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন