ধারাবাহিক ভ্রমণকথা(পর্ব-২৬)
পৃথিবীর উল্টো পিঠ
বিশ্বেশ্বর রায়
Marriott-এ প্রতিদিন সকালের খাবার (প্রাতরাশ )দেয় বিনা পয়সায়। খাবারের রকমারিত্ব এবং মান খুবই ভালো। ব্যুফে সিস্টেমে খাওয়া। যার যা ইচ্ছা, যতখুশি ইচ্ছা। তবে প্রতিদিন স্ক্রাম্বেল এগ, পোটাটো ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কেক, আপেল জুস, অরেঞ্জ জুস, দুধ, চিজ, নানা ধরনের মিশ্রিত কাটা ফল, গোটা কলা, আপেল, চা, কফি, পোর্ক, বিফ, কার্ড, চকোলেট ছাড়াও নানা ধরনের স্যান্ডুইচ এবং বার্গারও থাকে। আর তিনদিন ফ্রি ডিনার দেয়। ডিনারে এক এক দিন এক এক রকম আইটেম থাকে। প্রতি সপ্তাহে আইটেমগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেয়।এটা হল ওখানকার হোটেল বা রিসর্টের সাধারণ রীতি।
শনি-রবি ছাড়াও এ সপ্তাহে সোমবারও বাবাইয়ের ছুটি আছে। অবশ্য ঠিক কর্মহীন ছুটি নয়। ওদের Bank of America-য় ছুটি। ওদের work from home করতে হবে। 6ই সেপ্টম্বর আমেরিকায় 'কলম্বাস ডে' পালিত হয়। ওইদিন কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেন বা আমেরিকার মাটিতে পা রাখেন সাড়ে চারশো বছর আগে।
আজ 'প্যাটেল ব্রাদার্সে' গিয়েছিলাম। শার্লটেও প্যাটেল ব্রাদার্সের আউটলেট আছে। তবে সেটা একটু দূরে। তাই আমরা পাশের সিটি পিনেভেল-এ (Pineville) গেলাম। আমেরিকায় যতগুলি ইন্ডিয়ান গ্রসারি আছে তারমধ্যে প্যাটেল ব্রাদার্সই সবচেয়ে বড় চেইন। ওদের মারফতেই আমেরিকার বিভিন্ন শহরে গ্রসারি খুলেছে ভারতীয়রা। এছাড়াও হার্টফোর্ডে দেখেছি Cosmos নামে Indian Grossary. এইসব দোকানগুলোতে ভারতীয় যাবতীয় জিনিস পাওয়া যায়। চাল, ডাল, আটা, ময়দা থেকে শুরু করে সমস্ত প্রকার সবজি, চানাচুর, ঝুরিভাজা, সিঙাড়া জাতীয় নোনতা ভাজাভুজি, মশলাপাতি, মাছ-মাংস প্রায় সবই পাওয়া যায়। তবে দক্ষিণ ভারতীয় খাবার-দাবারের প্রাধান্যই বেশি। এখানকার বড় বড় দোকান বা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর্স যেমন--ওয়ালমার্ট, ওয়ালগ্রিন, ডলার ট্রি, ফ্যামিলি ডলার, সেভ আ লট ইত্যাদি নানা ধরনের বিশাল বিশাল বিক্রয় কেন্দ্রে সূঁচ থেকে গাড়ি পর্যন্ত যাবতীয় জিনিস পাওয়া যায়। তবে ভারতীয় মশলাপাতি, চাল, বিশেষত মসুর ডাল এবং সর্বোপরি পোনা, পারশে, ভেটকি, পাবদা, ট্যাংরা, পুঁটি, পাঁকাল, কই, শোল, ল্যাটা, মৌরলা জাতীয় মাছ প্রায় দেখাই যায় না। ওসব দোকানগুলোতে মাছ বলতে পাওয়া যায় সলমন, পোলক, টুনা আর অঢেল চিংড়ি এবং তিলাপিয়া। কিছু অন্যবিধ সামুদ্রিক মাছও পাওয়া যায়। আর পাওয়া যায় হিলসা বা ভালো সাইজের ইলিশ। বেশিরভাগ মাছই কাঁটা ছাড়া ফিলে করা। তবে আশপাশে ভারতীয় দোকান না পাওয়া গেলে চিংড়ি, তিলাপিয়া আর মাটন-চিকেন দিয়েই দিব্যি চালিয়ে নেওয়া যায়। ভেড়ার মাংসও পাওয়া যায়। আর পাওয়া যায় টার্কির মাংস। তবে গরু এবং শুয়োরের মাংস অঢেল পাওয়া যায়। কিন্তু সবই ফ্রোজেন। তবে প্রত্যেকটি খাদ্যের মোড়কে খাদ্যগুণ, কতদিন খাওয়া যেতে পারে, ক্যালরি থেকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, প্রোটিন, ফ্যাট ইত্যাদি সমস্তকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে লেখা থাকে। কোন্ জিনিস মানুষ খাবে তা দেখেশুনে খাবে, বিচার করে খাবে। তার জন্য প্রস্তুতকারক সংস্থার কোনও দায় থাকবে না। এখানকার খাদ্য-আইন খুব কড়া। কোনও উপভোক্তা যদি কেস ঠুকে দেয় তো এখানকার খাদ্যসামগ্রী বা যেকোনো দ্রব্য প্রস্তুতকারক সংস্থা সেই কেসে যদি হেরে যায় বা তাদের তরফে কোনও গাফিলতি ধরা পড়ে তবে বড়সড় জরিমানা তো হবেই এমন কি তাদের লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে। আমাদের দেশেও নানা আইন আছে বটে তবে তার প্রয়োগ প্রায় নেই বলে অসাধু ব্যবসায়ী এবং প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি আইনের তোয়াক্কা করে না।
শুধু তাই নয়, এখানকার প্রস্তুত যেকোনো সামগ্রীর মান
এমন উচ্চতায় বাঁধা যে, তার দাম বেশ চড়া হতে বাধ্য। তাই চীন, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার ইত্যাদি এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কমদামি সামগ্রীতে মলগুলো এবং বড়ো বড়ো দোকানগুলো ঠাসা। তার অর্থ এই নয় যে সেখানে দ্রব্যের গুণমানে কোনও আপোস করা হয়েছে। আসলে আমেরিকায় শ্রমিকের মূল্য এতো বেশি যে, দ্রব্যমূল্য বাড়তে বাধ্য। পক্ষান্তরে এশিয়ার ওসব দেশে শ্রমিকের মূল্য আমেরিকার সিকি ভাগও না। ফলে দ্রব্যমূল্য অনেক কম। কিন্তু ওষুধ এবং কসমেটিক্স-এর ক্ষেত্রে কোনও আপোস করে না। তাই এই দ্রব্যগুলির সিংহভাগ আমেরিকায় তৈরি এবং দামও অনেক বেশি।
চলবে...
বিশ্বেশ্বর রায়
Marriott-এ প্রতিদিন সকালের খাবার (প্রাতরাশ )দেয় বিনা পয়সায়। খাবারের রকমারিত্ব এবং মান খুবই ভালো। ব্যুফে সিস্টেমে খাওয়া। যার যা ইচ্ছা, যতখুশি ইচ্ছা। তবে প্রতিদিন স্ক্রাম্বেল এগ, পোটাটো ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কেক, আপেল জুস, অরেঞ্জ জুস, দুধ, চিজ, নানা ধরনের মিশ্রিত কাটা ফল, গোটা কলা, আপেল, চা, কফি, পোর্ক, বিফ, কার্ড, চকোলেট ছাড়াও নানা ধরনের স্যান্ডুইচ এবং বার্গারও থাকে। আর তিনদিন ফ্রি ডিনার দেয়। ডিনারে এক এক দিন এক এক রকম আইটেম থাকে। প্রতি সপ্তাহে আইটেমগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেয়।এটা হল ওখানকার হোটেল বা রিসর্টের সাধারণ রীতি।
শনি-রবি ছাড়াও এ সপ্তাহে সোমবারও বাবাইয়ের ছুটি আছে। অবশ্য ঠিক কর্মহীন ছুটি নয়। ওদের Bank of America-য় ছুটি। ওদের work from home করতে হবে। 6ই সেপ্টম্বর আমেরিকায় 'কলম্বাস ডে' পালিত হয়। ওইদিন কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেন বা আমেরিকার মাটিতে পা রাখেন সাড়ে চারশো বছর আগে।
আজ 'প্যাটেল ব্রাদার্সে' গিয়েছিলাম। শার্লটেও প্যাটেল ব্রাদার্সের আউটলেট আছে। তবে সেটা একটু দূরে। তাই আমরা পাশের সিটি পিনেভেল-এ (Pineville) গেলাম। আমেরিকায় যতগুলি ইন্ডিয়ান গ্রসারি আছে তারমধ্যে প্যাটেল ব্রাদার্সই সবচেয়ে বড় চেইন। ওদের মারফতেই আমেরিকার বিভিন্ন শহরে গ্রসারি খুলেছে ভারতীয়রা। এছাড়াও হার্টফোর্ডে দেখেছি Cosmos নামে Indian Grossary. এইসব দোকানগুলোতে ভারতীয় যাবতীয় জিনিস পাওয়া যায়। চাল, ডাল, আটা, ময়দা থেকে শুরু করে সমস্ত প্রকার সবজি, চানাচুর, ঝুরিভাজা, সিঙাড়া জাতীয় নোনতা ভাজাভুজি, মশলাপাতি, মাছ-মাংস প্রায় সবই পাওয়া যায়। তবে দক্ষিণ ভারতীয় খাবার-দাবারের প্রাধান্যই বেশি। এখানকার বড় বড় দোকান বা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর্স যেমন--ওয়ালমার্ট, ওয়ালগ্রিন, ডলার ট্রি, ফ্যামিলি ডলার, সেভ আ লট ইত্যাদি নানা ধরনের বিশাল বিশাল বিক্রয় কেন্দ্রে সূঁচ থেকে গাড়ি পর্যন্ত যাবতীয় জিনিস পাওয়া যায়। তবে ভারতীয় মশলাপাতি, চাল, বিশেষত মসুর ডাল এবং সর্বোপরি পোনা, পারশে, ভেটকি, পাবদা, ট্যাংরা, পুঁটি, পাঁকাল, কই, শোল, ল্যাটা, মৌরলা জাতীয় মাছ প্রায় দেখাই যায় না। ওসব দোকানগুলোতে মাছ বলতে পাওয়া যায় সলমন, পোলক, টুনা আর অঢেল চিংড়ি এবং তিলাপিয়া। কিছু অন্যবিধ সামুদ্রিক মাছও পাওয়া যায়। আর পাওয়া যায় হিলসা বা ভালো সাইজের ইলিশ। বেশিরভাগ মাছই কাঁটা ছাড়া ফিলে করা। তবে আশপাশে ভারতীয় দোকান না পাওয়া গেলে চিংড়ি, তিলাপিয়া আর মাটন-চিকেন দিয়েই দিব্যি চালিয়ে নেওয়া যায়। ভেড়ার মাংসও পাওয়া যায়। আর পাওয়া যায় টার্কির মাংস। তবে গরু এবং শুয়োরের মাংস অঢেল পাওয়া যায়। কিন্তু সবই ফ্রোজেন। তবে প্রত্যেকটি খাদ্যের মোড়কে খাদ্যগুণ, কতদিন খাওয়া যেতে পারে, ক্যালরি থেকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, প্রোটিন, ফ্যাট ইত্যাদি সমস্তকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে লেখা থাকে। কোন্ জিনিস মানুষ খাবে তা দেখেশুনে খাবে, বিচার করে খাবে। তার জন্য প্রস্তুতকারক সংস্থার কোনও দায় থাকবে না। এখানকার খাদ্য-আইন খুব কড়া। কোনও উপভোক্তা যদি কেস ঠুকে দেয় তো এখানকার খাদ্যসামগ্রী বা যেকোনো দ্রব্য প্রস্তুতকারক সংস্থা সেই কেসে যদি হেরে যায় বা তাদের তরফে কোনও গাফিলতি ধরা পড়ে তবে বড়সড় জরিমানা তো হবেই এমন কি তাদের লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে। আমাদের দেশেও নানা আইন আছে বটে তবে তার প্রয়োগ প্রায় নেই বলে অসাধু ব্যবসায়ী এবং প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি আইনের তোয়াক্কা করে না।
শুধু তাই নয়, এখানকার প্রস্তুত যেকোনো সামগ্রীর মান
এমন উচ্চতায় বাঁধা যে, তার দাম বেশ চড়া হতে বাধ্য। তাই চীন, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার ইত্যাদি এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কমদামি সামগ্রীতে মলগুলো এবং বড়ো বড়ো দোকানগুলো ঠাসা। তার অর্থ এই নয় যে সেখানে দ্রব্যের গুণমানে কোনও আপোস করা হয়েছে। আসলে আমেরিকায় শ্রমিকের মূল্য এতো বেশি যে, দ্রব্যমূল্য বাড়তে বাধ্য। পক্ষান্তরে এশিয়ার ওসব দেশে শ্রমিকের মূল্য আমেরিকার সিকি ভাগও না। ফলে দ্রব্যমূল্য অনেক কম। কিন্তু ওষুধ এবং কসমেটিক্স-এর ক্ষেত্রে কোনও আপোস করে না। তাই এই দ্রব্যগুলির সিংহভাগ আমেরিকায় তৈরি এবং দামও অনেক বেশি।
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন