ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস (পর্ব-৩)
আংটী রহস্যের নেপথ্যে
অনন্যা দাশ
জিকোর মনটা বেশ অশান্ত। ও যে এত বড় ক্লুটা খুঁজে বার করল মামা কিনা সেটাকে পাত্তাই দিলেন না! কেন কেউ গোরস্থানে চশমা ফেলে আসবে? কবরে ফুল দিতে গিয়ে কেউ নিজের চশমা ফেলে আসে? যত্ত সব! কেউ পাত্তা দিচ্ছে না দেখে জিকো ঠিক করল সে নিজেই অনুসন্ধান চালাবে। ওর কাছে ফোন আছে ইন্টারনেট আছে, ওকে আটকায় কে! যদি কিছু পাওয়া যায় তো ভাল না পাওয়া গেলে চেপে যাবে ব্যাপারটাকে। সেই ভেবে নিয়ে সে চশমাটাকে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগল। ওটার গায়ে ছোট ছোট করে কয়েকটা কথা লেখা। পাওয়ার মাইনাস ৪, কিছু খুদি খুদি করে লেখা নম্বর আর একটা কোম্পানির নাম। বাহ এই তো! গোয়েন্দাগিরি আর কাকে বলে। জিকো বেশ উৎফুল্ল হয়ে কোম্পানিটার নামটা লিখে ফেলে ইন্টারনেট থেকে তাদের ফোন নম্বর জোগাড় করে ফেলল। তারপর তাদের ফোন করে ফেলল টুক করে। কিন্তু সেখানেই আটকে গেল সে। কোম্পানিটাতে ফোন আর ধরে না কেউ। ক্রমাগত বাজনা বেজে চলেছে। মাঝে মাঝেই বলছে ‘ইওর কল ইজ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট ফর আস...’ ইত্যাদি ইত্যাদি ছাইপাঁশ। প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে থেকে কান ব্যথা হয়ে যাওয়ার পর একজন জ্যান্ত মানুষ ফোনটা ধরল।
জিকো তার মিথ্যে নিয়ে তৈরি ছিল, সে বলল, “আমি একটা দামি চশমা খুঁজে পেয়েছি এবং আসল মালিককে ফিরিয়ে দিতে চাই তাই কার চশমা সেটা জানার চেষ্টা করছি।”
ওপাশের লোকটা জিকোর কাছ থেকে সব নম্বরটম্বর নিয়ে খুঁজে পেতে বলল, “ওই নম্বরের চশমাটা নিউ ইয়র্কের ইউনিভার্সাল আই কেয়ারে পাঠানো হয়েছিল। আমরা পেশেন্টের নাম পাই না, শুধু কাস্টামার নম্বর দেওয়া থাকে আর কত পাওয়ার ইত্যাদি। আমরা চশমাটা তৈরি করে ওদের দিয়ে দিই আর ওরা তারপর কাস্টামারকে দেয়। তাই আপনাকে ইউনিভার্সাল আই কেয়ার থেকে পেশেন্টের নাম জানতে হবে, আমরা দিতে পারব না।”
ফোনটা ছেড়ে জিকো কী করবে ভাবছে এমন সময় মামা কেকাকে নিয়ে ওপর তলা থেকে নেমে এলেন। দুজনেই বাইরে যাওয়ার জন্যে রেডি বলে মনে হল।
জিকো জিগ্যেস করল, “কোথাও যাচ্ছ নাকি তোমরা?”
মামা চোখ টিপে বললেন, “ইউনিভার্সাল আই কেয়ার! ওরা ফোনেতে নাম দেবে বলে তো মনে হয় না আমার। এখানে পেশেন্টের নাম দেওয়া নিয়ে খুব কড়াকড়ি আর একজন বাচ্চা ছেলে একা একা ওদের ওখানে গেলে কিছু সুবিধা করতে পারবে বলে মোটেই মনে হয় না তাই ঠিক করলাম আমিই যাই!”
জিকো মামাকে মারতে ছুটল, “তোমরা কী বদমাইশ! ওপরের এক্সটেনশান থেকে সব শুনছিলে!”
মামা বললেন, “আধঘন্টা ধরে ফোনটাকে ব্যস্ত রাখলে আর কী হবে? নে এতটা করলি যখন তখন এবার চল!”
ইউনিভার্সাল আইকেয়ারে বেজায় ভিড়। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে শেষমেশ যখন একজনকে পাওয়া গেল তখন মামা তাকে চশমাটা এগিয়ে দিয়ে বললেন, “আমার বন্ধু ট্যাক্সি চালায়। ওর ট্যাক্সিতে কেউ এটা ভুলে ফেলে গিয়েছিল। প্রেসক্রিপশান চশমার দাম তো আর আপনাদের বলে দিতে হবে না, তাই আমরা ভাবলাম কার চশমা সেটা জেনে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে। কোম্পানিতে ফোন করতে তারা বলল আপনারা এটা ওদের অর্ডার করেছিলেন তাই আমাদের এখানে আসা।”
কাউন্টারের মহিলা বেশ ভাল ছিলেন। আর কোন প্রশ্ন না করে নিজের কম্পিউটারে এটা সেটা এন্টার করে বললেন, “এটা অগডেন রজার্সের জন্যে অর্ডার দেওয়া হয়েছিল দু বছর আগে।”
“ওনার ঠিকানা বা ফোন নম্বর পাওয়া যাবে কী?”
মহিলা নিজের ডেস্ক থেকেই ফোন করতে চেষ্টা করলেন কিন্তু কেউ ধরল না। উনি তখন নম্বরটা মামাকে দিয়ে বললেন, “কেউ তো ধরছে না, আপনারা পরে চেষ্টা করে দেখবেন, যদি ধরে তাহলে চশমা ফিরিয়ে দেবেন। গুড লাক!”
নম্বর নিয়ে আইসক্রিম খেয়ে ওরা বাড়ি ফিরে এল।
কেকা জিকোকে বলল, “তোর জন্যে আমরা বুনো হাঁসের পিছনে ধাওয়া করে এলাম!”
জিকো মুখ গোমড়া করে একটা বই নিয়ে বসে রইল।
বিকেলে কেকা পাশের বাড়ির একটা পাঞ্জাবি মেয়ের সঙ্গে গল্প করছিল এমন সময় মিসেস পার্কার আর ওনার ম্যাসাজ থেরাপিস্ট টেসা ওখান দিয়ে যাচ্ছিল।
মিসেস পার্কার তো কেকাকে দেখেই শুরু করলেন, “কী মেয়ে তোমার আঙ্কেল কিছু খুঁজে পেলেন ওর ভাইকে নিয়ে?”
কেকা বলল, “এখনও কিছু পাওয়া যায়নি তবে মামা খোঁজ খবর করে দেখছেন।”
মিসেস পার্কার বিড় বিড় করতে করতে এগিয়ে গেলেন, “বেচারা অগডেন, খুব ভাল ছেলে ছিল!”
কেকার কানে যেতেই সে চমকে উঠল! ছুটে গিয়ে ওনাকে জিগ্যেস করল, “কী বললেন? কী নাম ছিল বললেন ওর?”
টেসা বলল, “ওহো!ওর নামটাই তো ঠিক করে বলা হয়নি তোমাদের! ওর নাম ছিল অগডেন, অগডেন রজার্স!”
“এ বাবা! আমরা তো ডেনি লরেন্স ভাবছিলাম!”
“না, না। ডেনি ওর ডাক নাম আর লরেন্স তো আমার বিয়ের পরের পদবি। ওর পদবি রজার্স।”
“সর্বনাশ! আপনারা এখানেই দাঁড়ান! আমি এখুনি আসছি!”
ছুটে বাড়ির ভিতরে ঢুকে সে চেঁচিয়ে বলল, “মামা, জিকোটা একেবারে জ্যাকপটে ঢিল মেরে ফেলেছে! অগডেন রজার্স আর কেউ নয় মিসেস পার্কারের ম্যাসাজ থেরাপিস্টের ভাই!”
মামা ওপরের তলায় ছিলেন, সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে বললেন, “কী বললি?”
“অগডেন রজার্স মিসেস পার্কারের ম্যাসাজ থেরাপিস্ট টেসার ভাই! ওর ডাক নাম ডেনি ছিল।”
“অ্যাঁ! তাহলে সে ওখানে গোরস্থানে কী করছিল? উনি আছেন এখন মিসেস পার্কারর বাড়িতে?”
“হ্যাঁ, আমি ওদের দুজনকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে এসেছি!”
“চল তাহলে কথা বলে আসি।”
মিসেস পার্কার আর টেসা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সবাই মিলে মিসেস পার্কারের বাড়িতেই যাওয়া হল। জিকো তো একেবারে ফুলেফেঁপে একাকার!
মামা বললেন, “আমরা আপনার ভাইয়ের চশমাটা খুঁজে পেয়েছি মনে হয়। একবার দেখুন তো এটা ওর কিনা।”
চশমাটা দেখে টেসা বললেন, “হ্যাঁ, এটা ডেনিরই চশমা। আপনারা কোথায় পেলেন এটাকে?”
মামা বললেন, “জায়গাটা খুব অদ্ভুত, তাই ওখানে আপনার ভাইয়ের চশমা গেল কী করে সেটাই আশ্চর্যের।”
“মানে?”
“মানে একটা গোরস্থানের কাছে!”
“কোন গোরস্থান?”
“সেন্টারফিল্ড গোরস্থান।”
“ও বাবা সেটা আবার কোথায়? আমি তো নামই শুনিনি!”
“শহর থেকে অনেকটা দূরে।”
“ওর তো গোরস্থানে যাওয়ার কথা নয়। আমাদের জানা কেউ ওখানে নেই। ডেনি তাহলে ওখানে কী করছিল?”
মামা বললেন, “এমনও হতে পারে যে প্লেস্যান্ট মেডোজের কোন বাসিন্দা মারা যাওয়ার পর তাকে ওই গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। আপনার ভাই তো ওদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ট হয়ে পড়ত।”
টেসা বললেন, “হ্যাঁ, তাই হবে। তবে কে জানি না। ও কিছু বলেনি।”
“ঠিক আছে আমি কালই প্লেস্যান্ট মেডোজে গিয়ে খোঁজ নেব। আমার মনে হয় চিন্তার কিছু নেই।”
টেসা তাও বললেন, “ডেনি কিন্তু আমাকে চশমা হারানো নিয়ে কিছু বলেনি। কবে হারিয়েছিল কে জানে। ওর আবার কনাট্যাক্ট লেন্স তেমন সহ্য হত না, চশমাই পরত।”
তারপর একটু ভেবে বললেন, “রবিবার যখন ওকে শেষবার দেখেছি তখনও ও এই চশমাটাই পরে ছিল। আমার স্পষ্ট মনে আছে। দাঁড়ান আমার কাছে সেদিনের তোলা একটা ছবি আছে, দেখাচ্ছি!”
বলে মোবাইল থেকে একটা ছবি বার করে দেখালেন। ওরা সবাই দেখল – একই চশমা।
“ঠিক আছে, এই ছবিটা আমাকে পাঠিয়ে দিন,” বলে মামা ওনাকে নিজের ইমেল অ্যাড্রেসটা দিলেন।
চলবে...
আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾
*প্রেমের কবিতা পর্ব ২৪*
*আজকের কবি*
জ্যোতির্ময় দাশ
👩❤️👨👩❤️👨👩❤️👨👩❤️👨
https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/08/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_75.html
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন