আত্মস্বর
হয়তো আজকের দিন ঠিক টুকে রাখা যেতো | মাথার ভেতর জমে থাকা বিভিন্ন রুমাল উড়িয়ে দিয়েছি নক্ষত্রের দিকে, নক্ষত্র মানে আমার হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের ঠিকানা, যেখানে ভোররাতে চাঁদ চিঠি বিলি করে, শরীরে জড়ানো থাকে ডোরাকাটা কুচক্রী যান |
মন্দির দেখলে মাঝে মাঝে হাসি পায় | আমার ভাইয়েরও পেতো |আসলে হিন্দু বলে একথা লিখছি, যদি অন্যায় ভাবো, রানুবৌদি তোমার শরীরে এতগুলো আরশোলা কোথা থেকে এলো, তুমি তো প্রতিমার সামনেই উবু হয়ে ছিলে?
এই মন্ত্রের ভেতর দিয়ে ঢুকে যাবো তোমার শরীরে |যদি বাধা দিতে আসো আগে ভেবে দেখো সেই নিঃশ্বাস কার কার গায়ে লেগেছিলো |গায়ে মানে আত্মার গভীরে, যেখানে সমাদৃত হয়ে দু-দন্ড কাজ করা যায় | কোনো কেচ্ছা নয়, কুলকাঁটা মাথায় সাজিয়ে ছুটে চলা নক্ষত্রের দিকে | আগেই জানিয়েছি নক্ষত্র মানে কতগুলো ব্যথার ঠিকানা |
ঘোরসন্ধ্যা
চিরদিন কি দুধমাখা ভাত আগলে বসে থাকবে মা?
চিরদিন কি ছেলে চোখের সামনে ঢুকে যাবে জঙ্গলের ভেতর?
আর অপেক্ষায় থেকে থেকে মা
ঝরিয়ে ফেলবে সমস্ত শাদা চুল।
কার বাড়ি গিয়েছে খোকন?কার বাড়ি?
একবার ডেকে বলো ওর মা ধীরে ধীরে নুইয়ে পড়ছে লাউডগার মতো।
দু-হাত দিয়ে অতিকষ্টে ভাতের ওপর থেকে মাছি তাড়াচ্ছে।
এসো সকলে মিলে খোকনকে খুঁজি। যাই...
সন্ধিপত্র
জাগ্রত বুদ্ধির পাশে স্থির বসে থাকি |
আমায় নাড়িয়ে দেয় সে |
বলে," আমায় চিনতে তোমার
এতোদিন কেটে গেলো?
এতোগুলো বিকেল খেলতে বেরিয়ে
অহেতুক হারিয়ে ফেললো পথ |"
মরচে পড়া পুরোনো সন্ধ্যাগুলো
পিঠে হাত রাখে, আমায় জানায়
"একদিন ব্যাগ থেকে সময় সুযোগমত
খুলে দেখো, সেদিনের গাছগুলো
পাতা ঝরে বুড়ো হয়ে গেছে |"
আমি ভাবি, এতো মৃত্যু চারিদিকে,
এতো মতামত |
হস্তান্তর
চেনাগলি দিয়ে হেঁটে আসছে
হাত ধরাধরি করা অন্ধকার ,
কতো বছর পর আপন মনে হচ্ছে তাদের |
আলোর কথা আজ থাক |
ঘাতক যেন চিনতে না পারে আমাদের |
এইসব তামাটে পাতারা সবুজ হয়ে উঠবে একদিন
ছিনিয়ে নেওয়া জলে ভাগ বসাবে সাইবেরিয়া
এতখানি আকাশ আর মানুষের অধিকারে থাকবে না কিছুতেই |
যেদিন বিষ নেমে যাবে
তুমি যেন পা টিপেও যেওনা টিলার ওপর
ওখানে যে ঘুমিয়ে আছে থাক
তার কপাল থেকে চুল সরিয়ে দিলে
সে কিন্তু ভেঙে যাবে আগের মতন |
চেনাগলি অন্ধকার ঘাতক
আর যেন ফিরে না আসে |
মায়া বৌ - ৪০
আমার সম্পদ আমি রেখে যাই তোমার ছায়ায়
একদিন ঠিক গুনে নেবো।
বাণিজ্যে চলেছি আজ।ফিরে আসবো নৌকো সাজিয়ে।
ততদিন তাকে রেখো হাসিকান্নায়।
এই ঘর জানে, জানে সিঁড়ির প্রতিটি কোন
জানে দৈবাৎ ছাতের পাশে থমকানো হাওয়া
সে আমার কতোখানি।আমি তার কতোখানি জুড়ে।
দূরে ভাঙে বাতিঘর, আলো আজ কিছুতে দেবে না
প্রবল আকাশ থেকে মেঘ নামে থমথমে মুখে
হাত ধরাধরি করে কুয়াশারা চোখের পাতায় এসে বসে
আমি চলি।পেছনে না ফিরে আমি দৃঢ় পায়ে সামনে এগোই।
ও নগর, আমার সম্পদ আমি রেখে যাই তোমার জিম্মায়
ফিরে এসে ঠিক বুঝে নেবো।
যেকোনো বিভাগে অপ্রকাশিত লেখা পাঠান।
মতামত জানান
bimalmondalpoet@gmail.com
কবির কাজ আমাদের চিনিয়ে দেওয়া, আমাদের সামনে ই আছে অথচ ধরতে পারিনি । কবির কবিতার আলোয় আমাদের দেখে কবির দেখা আমাদের দেখা হয়ে যায়। এই সঞ্চরণে কবিতার সার্থকতা। কবি সৌমিত বসুর কবিতা বারেবারে তার সাক্ষ্য রাখে , এবারেও তা থেকে ব্যতিক্রম নয়।
উত্তরমুছুন