ব্যক্তিগত ঈর্ষা
যত্ন করে ঈর্ষা পুষি— আহা,ঈর্ষা!
অবিরত সে প্রেমের মতো আমার সাথে চলে।
ভোর-বিকেল — আস্ত ডুবে যাওয়া রোদ
সন্ধ্যা রঙে তীব্র রাত— সব হারিয়ে
ঈর্ষা পুষি। অথচ তুমি সম্মোহনে বেঁধেছিলে!
ছিন্ন করে সকল মায়া বাঁধন-হারা টানে—
সুখে থাকার দণ্ড নিয়ে নান্দনিক তুমি!
দণ্ড দিয়ে তোমাকে আজ দ্বি-খণ্ডিত আমি।
দূরত্বের কার্ফিউ
মৃত্যুটা বড় সস্তা মূল্যে স্বাভাবিক-
স্পর্শের শহরে চলছে দূরত্বের কার্ফিউ।
গৃহবন্দি বিশ্রামে ক্লান্ত শরীরের শিরা-উপশিরা—
ইলেকট্রিক নোটবুকের নীলচে আলোয়
দৃষ্টির সুরঙ্গ ধরে উঠে আসে
দীঘল চুলের দীর্ঘশ্বাস-কন্যা—
বৃহন্নলা-রোদ শুষে নিচ্ছে বেঁচে থাকার ঘাম।
মৃত্যুর কাউন-ডাউন জীবনের চারপাশে চলাচ্ছে বিলুপ্তির ভয়ানক তাণ্ডব—
শত্রুর গোলটেবিলেও চলছে পরস্পরকে বাঁচিয়ে রাখার গোপন শলাপরামর্শ—
মুখোশের মায়ায় বিভ্রান্ত ভয়ানক-মন!
মৃত্যু সবকিছুর দাম কমিয়ে দিয়েছে—
কেবল বাড়িয়েছে স্পর্শের দাম।
চড়া দামে কিনতে হচ্ছে জীবন—
এখানে হৃদয়ে-হৃদয় ছোঁয়া বড়ো দুর্মূল্য!
ফাঁদ
শ্রাবণ-জলে পাঠালে তুমি
ভালোবাসার চাঁদ
ভিজিয়ে আমায় বোঝালে তুমি
জোছনা একটা ফাঁদ।
ফাঁদে পড়েও না কেঁদে
জড়িয়ে নিলাম রাত
বুকের ভেতর খুব গোপনে
চালালে তোমার হাত।
হাতের অস্ত্রে রঙিন রেখা
চোখে আঁকা চাঁদ
চাঁদের আলোয় ভেসে গেল
আমার সকল রাত।
দারুণ অনুভব
কিছু গল্প — গল্প না হয়ে কবিতা হবে
পাত্তা পাবে না কিছু শূন্যতা
রয়ে যাবে দারুণ অনুভবে।
আঁটসাঁটে বাঁধা হবে কিছু কথা
ভুলে যাবো ব্যথা পেয়েছিলাম
কার কথায় কে কবে!
কিছু কথা রেখে দেব দারুণ অনুভবে।
যদিও হবে শেষ তবু রয়ে যাবে রেশ
না বলা গল্পসম্ভবে।
দেখো, কিছু না কিছু রয়েই যাবে
দারুণ অনুভবে।
বুনো মেঘের ছায়া
আচমকা দেখা হলো ভিড়ে—
মুহূর্তেই মনে হলো সংসারের পলকা হাওয়া
গায়ে মেখে পুরো দস্তুর সংসারী হয়ে উঠেছে,
অথচ বিবাগী হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলো সে!
বাস থামলো পরের স্টেশনে।
চোখে খরখরে রোদ্দুর মেখে আমার ভেতর
প্লাবিত জলে পা রেখে ছুটলো সংসার মুখে—
পড়ন্ত আষাঢ়ের গল্প চলছে তখন পারিজাত মেঘে,
নামতে নামতেই ভিজে গেলো সে!
বুনো মেঘের ছায়ায় বৃষ্টি ধরবো বলে
ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে কতোবার ভাসিয়েছি শরীর—
লুকোচুরি জোছনায় কতোবার জেগেছে মন
কতোবার সে দিব্বি দিয়েছে হারিয়ে যাওয়ার!
কতোকাল পর আজ আবার দেখা হলো ভিড়ে!
চকিতে মনে হলো —হারায়নি সে হারিয়ে আমায়।
অপ্রস্তুত আক্রমণে যেমন বিপর্যস্ত হয় সৈনিক
তেমনি দিশেহারা আমায় মধুর ছুরি বুকে বসিয়ে
হাসতে হাসতে বললো, কেমন আছ তুমি?
আমায় দেখছো কেমন বুড়িয়ে গেছি!
সময় করে বাড়ি এসো— একটুও বদলাওনি তুমি!
পড়ন্ত আষাঢ়ের গল্প চলছে তখন পারিজাত মেঘে,
নামতে নামতেই ভিজে গেলো সে —
আচমকা দেখা হয়েছিল তার সাথে ভিড়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন