লেবেল

শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ


                    হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় 


অন্ধকারের কারুশিল্প

বসে আছি দামোদরের চরে,মালিয়াড়ার দিকে সন্ধ্যা নামছে অচেনা লাগছে কি 
জলাভূমি ?
শ্মশান থেকে উঠে এলেন একজন
লম্বা চুল দাড়ি ঝুল পাঞ্জাবি 
চোখে তার অদ্ভুত গোধূলি
বলি,কে আপনি  ?
উত্তর নেই...
কিছুক্ষণের বিরতি
অপুকে দেখেছো  ?   অপুকে
অমলকান্তিকে  ?  ঐ যে, যে  রোদ্দুর হতে চেয়েছিলো... আচ্ছা অমিত  কিংবা লাবণ্যকে...

আমাকে নিশ্চুপ দেখে তিনি নেমে গেলেন জলে
পার হয়ে যাচ্ছেন
কিছু কি বলছেন
শুধু বিচ্ছেদের, বিজয়ার গান বাজছে  কোথাও

বিড় বিড় ধ্বনি কানে বাজছে 
জানি একদিন ভুলে যাবে
রঞ্জন নন্দিনীকেও ,দুর্বল  বাল্মীকিকেও

স্বপ্ন দেখতে তোমরা  ভুলে যাবে একদিন...



ত ওবা   ত ওবা 

একটি রাতের খেলা বড়ো জোর,আমি হাত রেখেছি অজানায়
তুমুল  পরিধি জুড়ে নূহের  জাহাজ
তখনও বজ্রাসন  ,কূটকৌশল
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে
রাজনৈতিক মিথ্যাচার...
আ্যন্টিসেপটিক থেকে কনট্রাসেপ্টিভ
রোদে পুড়ে ঘেমে নেয়ে দেখতে পাচ্ছি একটি
বৃষ্টিমুখ উবু হয়ে আছে ভাতের হাড়ির
ঢাকনার মতো আর মৌমাছিরা উড়ে উড়ে
পথ করে দিচ্ছে
একক শক্তি বলে কিছু নেই
সবাই ভাগাভাগি, আমি বলে কিছু হয় না
আমরাই আসল,অথচ সূচীপত্রজুড়ে 
লেখা থাকে টাকা মাটি মাটি টাকা
তুমি হে সংগোপন  তুমি ই ক্রমবিকাশের ছবি
উন্নয়ন নাম ধরে সীমাহীন কলরবে
অধিষ্ঠান তোমার। হে পূতজন
অকপটে নিসর্গপ্রতিভা
শান্তিনিকেতনের পথে বাসিফুল কখন যে। পুষ্প
হয়ে যায় তোমারি মহিমায়...

আমাদের অর্ধেক জীবন, সাধ সংকলন
হাসানহোসেনের নিরবধি নিয়মকাহিনী
একটি রাতের খেলা
বড়জোর  তারপর  সব ঠিক হ‍্যায়
ত ওবা  ত ওবা। ...



কাঠটগরের উপকথা

ঐ দূরে যে ফুলগাছটি দেখেছো ,ওটি হল কাঠটগর ,আমার প্রাকযৌবনে ভালোবাসার সঙ্গী,হারাকিরি...প্রেম ভালোবাসা মানে যাদের কাছে এখনো রক্ত শূন্য করা হাহাকার...

যারা এতকাল দূরে দূরে ছিল
যারা এতকাল কঠিন গ্রানাইট
পাথর বিছানো সম্পর্কের কফিন
আসছি বলে প্রেমিকা পালিয়ে যায় নাগপুর
তারাও ক্ষুধার্ত শীতের মতো নবমীর  জ‍্যোৎস্না
গোপন অশ্রুর ফাঁস

তাদের সবার ধারাভাষ্য নিয়ে ঐ কাঠটগর
দাঁড়িয়ে আছে আন্দামানের সেই পিপুল গাছটির মতোই...
আর এদিকে কামোচ্ছাস,শীৎকার এক অবিস্মরণীয় যৌবনের গান
গা ইতে গাইতে যেসব প্রেমিকারা কবি হয়ে গিয়েছিল একদিন, ঐ কাঠটগরের ঘ্রাণ
তাদের অনেক কিছু ই শিখিয়েছিল 
সমকোণী ত্রিভুজ থেকে সমকামিতা
ট্রাপিজিয়ামের দুষ্টুমি বিপত্তারিণীর  ব্রত
সঙ্গী হীন জানলা দিয়ে অন্তর্বাস বেবিফুড...
ডোকরাতে লাগানো সোনা
হতাশায় যুক্তিবোধ হারিয়ে গেলে ও 
আমি কখনো ঐ কাঠটগরের সহনশীলতা ভুলিনা ,ও: কাঠটগর তুমি আমার শির:পীড়া
তুমি আমার স্বপন কুমার স্বপ্না কুমারী
তুমি আমার ফেরিঘাটে জেগে থাকা মাধুরী দীক্ষিত...





ছায়াযাপন

নদীর ধারে বসে আছে প্রেমিক, সারা শরীরজুড়ে
বিজ্ঞাপন একটি পুরনো আর মেরুন রঙের গাছ
এখন হাওয়া দিচ্ছে খুব, নদীর জল কাপছে
দূরে নৌকো কুকড়াহাটি যেখানে মেঘেরা নেমে এসে পা দোলায়...
এখানে নাটকের মহড়ায় শেখানো সংলাপ নেই
ভালোবাসার অভিমানে সবাই নীরব
স্মৃতিগন্ধ ঘুরছে ফিরছে পাক খাচ্ছে
ভূমিকা টীকা যাপনের স্থির চিত্র সব
রাত বাড়ে বাকিরা ফিরে যায়
রোজ ই একটু একটু করে জল নেমে আসে
ধূসর সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে
প্রেমিকের ছায়া...




সামান্য কামিনী ফুল

সামান্য কামিনী ফুলের জন্য নির্জন চায়ের
দোকান এখনো খুঁজে ফেরো অনিমেষ
জীবনের কতো সাকো  অনায়াসে পেরিয়েছো
নীচে জল বেওয়ারিশ
জুয়াড়ির মতো অনবদ্য, জাদুবিদ‍্যা হাতে নিয়ে 
কতনা পায়রা তুমি আকাশে ওড়ালে 
সজল চোখের পাতায় তার প্রতিটি স্পর্শ লেগে আছে,আজ স্বেচ্ছানির্বাসনে যেতে যেতে
নিপুণ মুখোশে ঢাকো মুখ
তবু তুমি মুখ ফুটে জানালেনা পরমার্থ কাকে বলে... অথচ ক্রমশ এই বিষাদ দুপুরে
জাল ফেলে মাছ ধরে জেলে
দূরে মাছরাঙা উড়ে এসে বসে
প্রগলভ আনন্দে কেউ কেউ রাতপাখি হয়ে যায়
তুমি শুধু সামান্য কামিনী ফুলের জন্য
অনিমেষ নির্জন চায়ের দোকান খোঁজো ,আজো ...



আপনার অপ্রকাশিত গদ্য ও পদ্য পাঠান
মতামত একান্ত কাম্য
bimalmondalpoet@gmail. com       


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন