মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০২৪

আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তিরোধান দিবস।। প্রকাশিত হলো— অঙ্কুরীশা-র পাতায় ২২শে শ্রাবণ সংখ্যা চুয়াল্লিশ জন কবির কবিতায় — ।। শ্রদ্ধাঞ্জলি।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

  




আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের   তিরোধান দিবস।।

                   প্রকাশিত হলো— 

   অঙ্কুরীশা-র পাতায় 

২২শে শ্রাবণ সংখ্যা চুয়াল্লিশ    জন কবির কবিতায় —  
            
      ।। শ্রদ্ধাঞ্জলি।।
















সূচিপাতা
---------------- 

অজিত বাইরী 
তৈমুর খান 
গৌতম হাজরা 
শাহীন রেজা 
সৌমিত বসু 
রবিন বণিক 
রবিন বসু
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় 
দুরন্ত বিজলি 
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় 
দুর্গাদাস মিদ্যা 
সুধাংশুরঞ্জন সাহা 
সমাজ বসু 
অমিত কাশ্যপ 
ফটিক চৌধুরী 
অশোককুমার লাটুয়া 
বিশ্বেশ্বর রায় 
স্বপনকুমার রায়
সুবীর ঘোষ 
বিকাশ রঞ্জন হালদার 
ড.রমলা মুখার্জী
স্বপন শর্মা 
কবিতা ভট্টাচার্য 
বিশ্বজিৎ রায়
তপনজ্যোতি মাজি 
অনিন্দিতা শাসমল 
রাসমনি ব্যানার্জি 
পার্থ সারথি চক্রবর্তী 
রথীন কর
জগদীশ মণ্ডল 
দীপক বেরা 
অশোক রায় 
প্রদীপ্ত সামন্ত
আশিস চৌধুরী
বিমল মণ্ডল 
রূপক চট্টোপাধ্যায় 
সুজিত রেজ 
জয়দেব মাইতি 
সজল বন্দ্যোপাধ্যায় 
নন্দিনী মান্না
সুব্রত চৌধুরী 
শ্রাবণী বসু
ভবানী প্রসাদ দাশগুপ্ত 
স্মৃতি শেখর মিত্র 




















শ্রাবণের ধারা  
 অজিত  বাইরী


শ্রাবণের ধারা ঝরছে শালের জঙ্গলে;
পিছনে হাতে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছো
খোয়াইয়ের পাড়ের উপর; আকাশে 
চরে বেড়াচ্ছে মেঘ; বৌঠানের সঙ্গে
দেখা করে তারা কী বলবে কবির কথা!

শ্রাবণ ঝরোঝরো, আজ বাদল বাতাসে
বেহাগের সুর, দীর্ঘ যাত্রার শেষে এসে
এবার কবির একক যাত্রা; মেঘে মেঘে
আঁকা কত মুখ, কত স্মৃতি,বেদনার চিত্ররেখা!









২২শে শ্রাবণ 

তৈমুর খান


 মেঘ নেই, স্মরণের ধূসর বিকেলে

 অস্ত আলোর রশ্মি  তির্যক হয়ে পড়েছে জলে।

 নৌকা সব চলে গেছে স্বর্গের দিকে

 আমরা বিভ্রান্ত যুগে আর ডাকি না তোমাকে।

 বেহুলাও ফিরবে না আর;ঊর্বশী নেমেছে ঘরে ঘরে

 ডুবে গেছে চাঁদ ধ্যানভঙ্গ কামার্ত তিমিরে।

 তোমার গানের রেণু লেগে আছে অভিমানী ফুলে

 ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে দেখি, তার প্রেম হেম হয়ে জ্বলে।

 কুমারী মাছরাঙাদের  পাড়ায় কারা ঢেউ তোলে?

 সভ্যতা গড়ায় দেখি রঙিন রঙিন সাইকেলে।

 রাস্তার স্ট্যাচুগুলি আর কি জাবর কাটে উল্লাসে?

 ভাষাহারা পাখি আর কি ভাষা খুঁজতে আসে?

 পাঠশালার সহজপাঠে শ্রাবণের নদীরগুলি হাসে 

 আমরা আরোগ্য চাই এই তপোবন ভালোবেসে।

বাইশে শ্রাবণে শুধু গীতবিতানের আলো পেয়ে

 স্পন্দিত হোক তবে  নন্দিত এ অসীমে  চেয়ে।





২২শে শ্রাবণে
গৌতম হাজরা

কপালে চন্দন ফোঁটা, সাদা বেনারসীর জোড়
অজানুলম্বিত চাদর গলায় ঝোলে
গোড়ে মালার গন্ধে ঘর আমোদিত
বাইরে গাছের শাখা মৃদু মৃদু দোলে। 

শুভ্র কেশ শুভ্র বেশ, এ কি তবে শান্তির ঘুম? 
চেয়ে থাকি অতৃপ্ত নয়নে
চারিদিক শান্ত, ছলোছলো চোখ
কবি অনন্তযাত্রায় গেলেন বাইশে শ্রাবণে। 




একদিন রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন আমার শহরে 
শাহীন রেজা

আমাদের শহরে একদিন রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন
বরিশাল থেকে ষ্টিমারে হুলারহাট হয়ে পা রেখেছিলেন জনারণ্যে।

পথে অবশ্য ক্ষণিক দাঁড়িয়েছিলেন শহীদ ফয়েজুদ্দিনের সমাধির পাশে,
তারপর সাধনা পোলের উপর থেকে দৃষ্টি ছড়িয়ে খুঁজেছিলেন আহসান হাবীবকে, তাকে পড়ে শোনাতে চেয়েছিলেন  বনলতা সেন; একদিন আগেই কীর্তনখোলার পাশে দাঁড়িয়ে যা তাঁকে শুনিয়েছিলেন স্বয়ং জীবনানন্দ দাশ।

শহর তখন যানবাহনহীন, নেই রিকশা নেই গাড়ী এমনকি কোন মোটরসাইকেলও;
সমগ্র লোকালয় স্তব্ধ, সমস্ত মানুষ সদর রোডমূখী–
কবির সৌজন্যে টাউন হলে সেদিন মঞ্চস্থ হয়েছিলো রক্তকরবী,
নন্দিনী রুপী শাহানা আকতারের লিপে ভেসেছিলেন ক্ষমা দাসগুপ্ত, তার সহঅভিনেতা শংকর সাঁওজাল,
যাদুর কাঠি নিয়ে রবি ঠাকুরের চুলে ঢেউ তুলেছিলেন জুয়েল আইচ।

সবশেষে কবি এসে থমকে গিয়েছিলেন খেয়াঘাটে,
শহীদ মিনারের বেদীতে সেদিন শত রক্তজবা;
কবি তারমধ্যে খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন বিধানের রক্ত আর ভাগীরথীর লজ্জাকে।

এরপর  বলেশ্বর পেরিয়ে তার দীর্ঘ পা জোঁড়াসাঁকোর দিকে–

একদিন আমার শহরে রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন,
একদিন পিরোজপুর হয়েছিলো কবির শহর।




বাইশে শ্রাবণ
সৌমিত বসু


একটি বর্ষার কাছে যেভাবে একটি শামুক
নতজানু হয়ে থাকে
তোমার কাছে আমি ঠিক তেমনই।

আকাশে বৃষ্টি হ'লে ভাবি, তোমারই কৃপা।
আগুনে কেউ  পুড়ে গেলে ভাবি
দাউদাউ উৎসবের ভেতর তোমারই গান।
কেউ নিঃস্ব হ'য়ে গেলে আতিপাতি খুঁজে বেড়াই  কাদম্বরীর চোখ।

এতোগুলো ব্যথা পুটুলিতে করে গাছের ওপর তুলে
তুমি যুদ্ধে চলে গেলে,
আমরা শুশ্রূষা নিয়ে
আজীবন বসে আছি তোমার আশায়।





২২শে শ্রাবণ
রবিন বণিক 

২২শে শ্রাবণআমাদের শ্বাসকষ্টে দিন

আবিষ্কার থেমে যাবার দিনশায়িত কলম


যতিচিহ্ন কুড়িয়ে রাখি শান্তিনিকেতনের পায়ে


যে খাটের উপর তাঁকে শুয়ে থাকতে দেখেছিলাম

যে চেয়ারে তাঁকে বসে থাকতে দেখেছিলাম

সেই খাট  চেয়ারে এখন বুদ্ধ পূর্ণিমা আঁকি


আঁকা সমাপ্ত হলে

ঘুম পাড়িয়ে শব্দহীন হেঁটে চলে যা

                                 ২২শে শ্রাবণের মাঠে—






বর্ষার গান

রবীন বসু


কোথাও বৃষ্টি পড়ছে

কোথাও তুমুল ভিজছে শালগাছ

আমার বুকের মাঝে ভিজে যাচ্ছে বাইশে শ্রাবণ।


তোমার ছবির পাশে বর্ষারাগ আর 

বিষণ্ণতা বেজে ওঠে!

কী সুন্দর নাচছে মেয়েটি ছাতিমতলায় বৃষ্টিতে; 

আমি ভিজে যাচ্ছি, ভিজে যাচ্ছে বাংলাভাষা

বর্ষার গান হয়ে তুমি দাঁড়িয়ে আছো, রবীন্দ্রঠাকুর!






চলে যাওয়ার আগে

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়



চলে গেল বলতে বলতে 

তিনটে বাস, পাঁচটা ট্রেন, 

সাতটা সাইকেল চলে গেল 


চলে যাব বলেও 

হাত পা বাড়িয়ে 

ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাছ 


আজন্ম চোখে চোখ রেখেও

সবুজ চেনেনি যারা

তাদের সঙ্গে আমার ভাব হয় নি 


আমার তো কোনো বন্ধুই নেই 


চলে যাওয়ার আগে 

একবার দু'পায়ে দাঁড়াতে পারলে 

সবুজ আঁকার চেষ্টা করব। 









এতো কান্না কেন?
দুরন্ত বিজলী


এতো কান্না কেন?
ভেঙে চুরমার হৃদয়দেউল!
ঠাকুর! তোমার শ্রাবণপ্রয়াণে
এতো বৃষ্টি অশ্রু হয়ে গেল!

হাহাকার! যন্ত্রণা !
না না আর পারছি না ঠাকুর,
তোমাকে অবমাননার
কঠোর কুঠারাঘাত
সহ্য করতে পারছি না।
ভেঙে যাবে সাহিত্য সংস্কৃতি ও
ভালোবাসার সেতু ?

এই দুঃসময়ে সেই তো তুমিই ভরসা -
'বাংলার মাটি, বাংলার জল,
বাংলার বায়ু, বাংলার ফল,
পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান!












রবীন্দ্রনাথ -৩   

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

আমার দৈনন্দিন তোমার বাণীতে বাঁধা
সহজপাঠ বুকে তোমার গভীর উপলব্ধির তত্ত্বতালাশে পথচলা
ভাবনায় অবিরাম সংক্রমণ পথভ্রষ্ট হতে দাও না রবীন্দ্রনাথ।

তোমার হিমালয় কুয়াশার ভেতর দুর্লঙ্ঘ্য সবুজ টান চলমানতার প্রণোদনা
সমুদ্রের গভীর নীলে আর শুভ্র ফেনায় প্রাণের স্পন্দন -- বিশ্বভ্রমণ।

একটু বিশ্রাম তোমার ভুবনডাঙায় সবুজ প্রান্তরে ছায়াময়
কথা আর সুরে পার হই ঊষর ভূমি
আঘাতে ভাঙে না আশা দুর্নিবার জয়ে প্রবল প্রত্যয়।

সূর্যের মতো জীবনের ইঙ্গিত সীমিত পৃথিবীর রং জাগানিয়া কৃষ্ণচূড়ায়
শিরীষ শাখায় বা চাঁপাগন্ধে উতরোল দিনের দিশায় মানসযাত্রা
শিলং পাহাড় বা শিলাইদহে নীলগ্রহের দিকে দিকে জেগে ওঠা
প্রাণ আমার রবীন্দ্রনাথ।



তিরোধান দিবস
  দুর্গাদাস মিদ্যা

বাইশে   শ্রাবণ  এলে
 অন্তর ভাসে চোখের জলে
  অন্তঃক্ষরণ হয়। 

প্রিয়জনের বিয়োগ ব্যথায়
অশ্রুকণা বয়ে যায়
 হৃদয় অববাহিকায়। 

যদিও জানি তিনি মৃত্যুঞ্জয়
  তবু  সর্বগ্রাসী ক্ষয় 
   নেমে আসে অন্তরে। 

   বিষাদ-বর্ষায়
  বাংলার  চিদাকাশ  ভরে যায়
  বাইশে শ্রাবণে
  তাঁর  তিরোধানে।




প্রার্থনা
সুধাংশুরঞ্জন সাহা

রবীন্দ্রনাথ তুমি কবেই
রাতের ঘুটঘুটে এই মহানগরী ছেড়ে
চলে গেছো নদী বরাবর।
এবার হয়তো পাড়ি দেবে নদী,
পেরিয়ে যাবে সুদৃশ্য দ্বিতীয় হুগলি সেতু।
সেতুও হয়তো জেনে গেছে এতোদিনে,
ন্যাশনাল হাইওয়ের গতির গল্প।

এই বিজন রাতদুপুরে
আকাশ ছেয়েছে ঘন কালো মেঘে।
বৃষ্টিবাদল, ঝড় সঙ্গে নিয়ে
রবীন্দ্রনাথ তুমি আবার ফিরে এসো,
ফিরে এসো জোড়াসাঁকো,
আমাদের এই অবহেলিত জীবনে।
ফের মেলে ধরো জীবনের বিপুল আয়োজন,
গভীর নদীর স্রোত আর
ছায়াঘেরা নিবিড় অরণ্য নিয়ে।



এভাবেই ফিরে আসুক
সমাজ বসু

সকাল সকাল হেসে উঠুক পুলকার--
জমে উঠুক অফিসপাড়ায় ভাতের দোকানগুলো--
ব্যাস্ত রাস্তায় মিনিবাস আটকে  চালান তৈরি।
এভাবেই ফিরে আসুক--
আউটরাম ঘাট থেকে বিদ্যাসাগর সেতুর কোলাহল--
ফুলের বাজার কিংবা উৎসবের জৌলুস। আর--

যাবতীয় সন্দেহ ভয় অবিশ্বাস মুছে গড়ে উঠুক
মানুষের বুকে বিশ্বাসের বসতবাড়ি--
এবং নিবিড় শ্রদ্ধায় ফিরে আসুক জোড়াসাঁকোয়
বাইশে শ্রাবণ.....




ঠাকুর 
অমিত কাশ‍্যপ

পিচকুড়ির ঢাল পেরিয়ে উঠে এল মহিরাবণ
দশ বছরের মহিরাবণ, ইয়া গোঁফ, লাল টিপ
মাথায় রাংতার মুকুট, রাংতার তলোয়ার 
হা হা অট্টহাসি মধ্যে চলেছে সংলাপ 
গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস ছুটেছে পরিত্রাহি

ভাবনায় শান্তিনিকেতন, ধ‍্যানে ঠাকুর 
সকাল-সন্ধ‍্যা, সারাদিনই গানে  গানে
কবিতায় কবিতায়, গল্পে গল্পে
তিনি তো নিত্য আরাধনা, নিত‍্য বন্দনা
পঁচিশে বৈশাখ আর বাইশে শ্রাবণ শুধুই দিন 







মহাবিয়োগের দিন
ফটিক চৌধুরী

এক একটি মাস আসে
আমরা তার রূপ রস গন্ধ
আহরণ করি।

কিছু তারতম্য থাকে
কিছু বিচ্যুতি কিছু বৈচিত্র্যও
কখনো পুলকিত, আনন্দিত
মাঝে কখনও অপার বিষণ্ণতা।

শ্রাবণ প্লাবন আনে
তাই অঝোর শ্রাবণধারা।
আজ মহাবিয়োগের দিন--
বাইশে শ্রাবণ।





বৃষ্টি দাও বাইশে শ্রাবণ 
  অশোককুমার লাটুয়া

বুকের ভিতরে অহরহ রুদ্ধশ্বাস যাপনের অস্থির বিস্ফোরণ। মগজের ভিতরে স্বপ্নের শূন্যে রকেট উৎক্ষেপণ । সম্পর্কের পর্যাপ্ত ধূলিকায় ভাইরাস সংক্রমণ। অস্তিত্বের সাথে অস্তিত্বের হাইভোল্টেজ সংঘর্ষের রক্তক্ষরণ। ভালোবাসার ভরাডুবিতে হৃদয় হলুদপাতা। নিঃস্ব ক্লোরোফিল ব্যর্থ সালোকসংশ্লেষে। দীর্ঘশ্বাসের কারাগারে বন্দী বলাকার ডানার আকূতি। লোভ হিংসার সহবাসে জন্ম নিচ্ছে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি -- জারজ আত্মরতি। শান্তি স্বস্তি সততা অসম্মানে আনত স্বরলিপি। বৃষ্টি দাও বাইশে শ্রাবণ -- মৃত্যু অতিক্রান্ত জীবনের বীজ বুনি দুদন্ডের সান্ত্বনায় নতজানু।





২২শে শ্রাবণ প্রতিদিন  
   বিশ্বেশ্বর রায়


এলোমেলো হাওয়া ঝিরঝিরে বারি পুরানো স্মৃতি
গাছের মাথায় গলির খাঁচায় ছোটে ইতিউতি৷
হাতে খবরের কাগজ, সামনে খোলা জানালার
সিক্ত বাড়ির কার্ণিশে বসে করে হাহাকার
ক'টা কাক, সপসপে ভেজা ডানা ঝাপটায় অবিরাম,
আকাশের বুকে বিদ্যুৎ খেলা নয়নাভিরাম,
পাগলা হাওয়ার সঙ্গে রয়েছে এফ এম সাথী—
"পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে----" রবীন্দ্রগীতি৷
দূরে চরাচরে নদীর কিনারে শালিখের মেলা,
গাঙুরের জলে একা ভেসে চলে বেহুলার ভেলা৷
এমনই নিশিথে অভিসারে পথে শ্রীমতি একা,
নিবিড় আঁধারে সড়ক দেখায় বিদ্যুৎরেখা৷
এমন দিনেই রবীন্দ্রনাথ বিকেলবেলায়
কোপাইয়ের ধারে খোয়াইয়ের পথে পদচারনায়
একলা পথে বিভোর যখন নিভলো তখন বাতি,
এখন আমি করি নে ভয় আছেন তিনি সাথী৷
বাদল ঝরা দিনের শেষে সাঁঝের বাতি জ্বলে,
দেখি তখন সিক্ত তিনি আমার অশ্রুজলে৷




প্রাণের বিশ্বকবি
স্বপনকুমার রায়

সকাল থেকে ব্যস্ত সবাই
পূজার আয়োজনে
ফুলমালাতে সাজিয়ে বেদী
বাইশে শ্রাবণে।

কেউ করবে নাচ সে পূজায়
কেউ পড়বে ছড়া
তার জন্যে ক'দিন ধরে
চলছিল মহড়া।

শ্রাবণ ছাড়াও পূজা চলে
পঁচিশে বৈশাখে,
প্রতিবছর দু-বার সবাই
এই ঠাকুরকে ডাকে।

কোন সে ঠাকুর কিসের ঠাকুর?
আঁকেন যিনি ছবি ---
শব্দ বোনেন কথায় সুরে
প্রাণের বিশ্বকবি!
       



বাইশে শ্রাবণ
সুবীর ঘোষ

শুধু বাইশে  শ্রাবণ নামটা আছে বলে আমাকে দুটো সিনেমা দেখতে হয়েছে ।
শুধু  বাইশে শ্রাবণের বিবরণ পড়ব বলে
বুদ্ধদেবের তিথিডোর কিনে পড়েছি এক সময় ।
জীবনে একটা সময় বাইশে শ্রাবণ মানেই ছিল
শ্রীনিকেতনের হলকর্ষণ আর বৃক্ষরোপণ ।
পথিকবন্ধু বৃক্ষের কানে কানে কিছু বলা ।
এ বছর প্রথম আষাঢ়ে ভিজেছে  বঙ্গদেশ ,
জানি না  শ্রাবণ তার রবিহারা কান্না কাঁদবে কী না !
হয়তো মেঘ ডাকবে সারা দক্ষিণ বাংলা জুড়ে ,
বাঘবন্দী খেলবে জল ।
আর বেড়া থেকে বেরিয়ে এসে রবীন্দ্র ঠাকুর
নিমগাছের নীচে দাঁড়িয়ে মরুবিজয়ের পাতা গুনবেন ।




নিঃশব্দ-গন্ধে 
বিকাশরঞ্জন হালদার 

নির্জনতা সরে যায়।
 নিঃসঙ্গতার উপাসক অবশেষে না থাকার উঠোনে অনিবার্য। একখণ্ড বাদল-মেঘ কখন যেনো ডেকে আনে বাইশে-শ্রাবণ। তারপর-- মুছে যাওয়া ঝড়ের এপারে, হুহু-বুকে নিঃশব্দ-গন্ধে  ফুটেওঠে  সৃষ্টিগুচ্ছ, কৃতিত্ব-আবলি।

কে'না  জানে, কবির মৃত্যু নেই! বিচিত্র জন্মে বারবার  ...



 
জীবন জুড়ে তোমার সুরে
  ড. রমলা মুখার্জী 

রবির সবলা দৃপ্ত কঠিনা নয় সে বাক্যহীনা - 
রক্তে মাদল বাজায় পাগল বাজায় রুদ্রবীণা ।
মুক্তি ধুলোয়, মুক্তি আলোয় মুক্তি হীরক-কণা --
 প্রতি ঋতুর কোনে কোনে রবির আনাগোনা।
কবিতা, গানে, বিহ্বলতা করেছেন যিনি দূর....
তিনি আমাদের রবি ঠাকুর বাজান প্রাণে সুর।
সর্ব কাজে হৃদয় মাঝে সতত যিনি দ্বারে.... 
হাজার বছর পথ হেঁটেও ভুলবো না কেউ তাঁরে ।
তিনি সবার রবীন্দ্রনাথ,সারা বিশ্ব মাত.... 
হাসি-কান্নায় চুনী-পান্নায় জাগরিত দিন রাত ।






স্বপন শর্মা
অকৃপণ প্রেমে 

পঁচিশে বৈশাখ থেকে বাইশে শ্রাবণ 
সময়ের গর্ভে জন্মে বিমূর্ত  বিষাদ 
কল্পলোকে দেখে প্রিয় কবি ও প্রেমিক                                                             বয়সের  ভারে নুব্জ রাজত্ব অটুট । 

বাইশে শ্রাবণে শুরু মাথা উঁচু হাঁটা
আজ তিনি মহাকাল অরূপের রূপে
অদেখা শাসন তাঁর লক্ষ প্রশ্নোত্তর
প্রেমে অকৃপণ পান মৃত্যুতে জীবন।

উদার আকাশে জ্বলে যে কজন তারা
নলিনী ও রাণু, সঙ্গে  ওকাম্পো উজ্জ্বল
পেয়েছে হেমন্তবালা নম্র নীলে ঠাই 
কাদম্বরী জ্বলেছিল নক্ষত্রের মতো ।



বাইশে শ্রাবণ

কবিতা ভট্টাচার্য

ভোর হল আজ
এক বিচিত্র শব্দ তরঙ্গের মিশ্রনে
বেলফুলের গাছগুলো
দাঁড়িয়ে আছে উঠোন জুড়ে 
হাওয়ার সাথে সুরের খেলা 
বর্ষার রিমঝিম রিমঝিম গান 
শ্রাবণের আকাশে জলতরঙ্গ বাজে
বাতাসেরা অনর্গল এঁকেবেঁকে ছোটে
      
বাউল বাজনা বাজায়
মনের গভীরে রবীন্দ্র কবিতা ভাসে 
তাই কি আজ - বাইশে শ্রাবণ 
গভীর মেঘ আকাশ কালো 
শ্রাবণ শুধুই আত্মহারা 
অদ্ভুত বেদনা উঠে আসে 
বাদল ঝরা দিনে




পরজগতে "বাইশে শ্রাবণ"
বিশ্বজিৎ রায়

"বাইশে শ্রাবণ" শুধু কবিগুরু নন
মনে পড়ে যায় আরও অনেক কবিজীবন---
কালের নিয়মে যারা চলে গেছেন 
এই মায়ালোক ছেড়ে,  দূরের অজানা জগতে 
তাদের জন্যও ঝরঝর বাজে "বাইশে শ্রাবণ "....

সেই অজানা জগতে অদ্ভুত আঁধার নেমে এলে
ট্রাম রাস্তা ধরে হেঁটে বেড়ান এক কবি,
বৃষ্টিমাথায় তুমুল তর্কে মাতেন
বিষ্ণু-প্রেমেন-অরুণ-সুভাষ ও তিন গানের কবি,
ওদের আড়াল করে মৌতাতে মাতেন
সুনীল-তারাপদ-শক্তি-অমিতাভ ---
গণেশ-বিকাশ-পরিতোষরা আঁকতে বসেন ছবি....

মেয়েদের অধিকার নিয়ে সেমিনারে বলেন
রোকেয়া-কাদম্বিনী-মল্লিকা-কবিতা সিংহ,
দলবেঁধে মেয়েরা তাদের  মন দিয়ে শোনেন ---
খেরোখাতায় " কড়চা" লেখেন কালীপ্রসন্ন সিংহ....

সে জগতে নজরুল শুনে মুগ্ধ হন ঈশ্বর ও মধুসূদন, 
গান্ধী-সুভাষ বিতর্কে মাতেন ধুম্রপায়ী বুদ্ধিজীবীগন --- 
বেলা-অবেলা পেরিয়ে  রবিঠাকুরকে ঘিরে
ওরা করেন " বাইশে শ্রাবণ" উদযাপন...




মহাপ্রস্থান
তপনজ্যোতি মাজি

বিপুল হৃদয় ঐশ্বর্য রেখে তিনি চলে গেছেন মহাসিন্ধু পারে ,
যথার্থ বৈদিক তিনি , ন হন্যতে , হন্যমানে শরীরে।
তাঁর মহাপ্রস্থান -পথের দুদিকে প্রস্তর খন্ডে খোদিত সহস্র
কবিতা। শ্রাবনের বাতাসে ভাসছে আবহমান জীবনের সুর।
পরানসখা ঋষিকল্প মানুষটি নশ্বর শরীরে ধারন করেছেন
অবিনশ্বর মন।
পঁচিশে বৈশাখ থেকে বাইশে শ্রাবন এই খণ্ড সময়ের পরিসরে
তিনিই অখন্ড জীবন।

স্তুতি নয় , চর্চার মননে তাঁকে চাই।
ধর্মের সংকীর্ণতায় তিনিই তো মুক্ত প্রাণের অগ্রদূত।
জীবনকে জীবনের আসনে প্রতিষ্ঠার জন্যে তিনিই
পৃথিবীর উজ্জ্বল উত্তরাধিকার।

 তাঁর গান  গাইছে কেউ মুক্তস্বরে ,
 তাঁর কবিতা আবৃত্তি করছে কেউ শ্রাবন জ্যোৎস্নায় ভিজে
একলা ছাদে।
শ্রাবন ঘন নিশীথে টেবিল ল্যাম্পের আলোয় কবি পড়ছেন
গীতাঞ্জলির কবিতা ধীর স্বরে একা।





তুমি,শুধু তুমি
 অনিন্দিতা শাসমল

দেওয়ালে মালা-চন্দনে সাজানো তোমার ছবি ; 
শুভ্রবসন , উজ্বল হাসিমুখ।
তোমার শান্ত দৃষ্টির সামনে অবনত আমি।

এই যে এত দুঃখ , মৃত্যু ,হাহাকার, প্রতি মুহূর্তে আতঙ্ক, বর্ধিত নাড়ির গতি , উচ্চরক্তচাপ---
সব কিছুর নিরাময় তুমি আর তোমার যত সৃষ্টি ।

বৈশাখ মানে তোমার আবির্ভাব।
আর , অঝোর বর্ষণ শ্রাবণের কানে কানে বলে যায়,তুমি নেই---
না না , কে বললো তুমি নেই ?
তুমি আছো ,তুমি আছো..
"সুন্দর হৃদিরঞ্জন তুমি নন্দনফুলহার
তুমি অনন্ত নববসন্ত অন্তরে আমার।।"



আজও আছো বেঁচে 
রাসমণি ব্যানার্জী 


মহাবিশ্বে আজও তুমি সবার প্রিয় কবি 
নীল নীলিমায় তোমায় খুঁজি
অন্তরেতে তোমায় বুঝি
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ 
সয়ে ছিলে ঘাতপ্রতিঘাত 
এখন তুমি সবার মনে পটে  আঁকা ছবি।

নশ্বর দেহ গেছো ছেড়ে সৃষ্টি তোমার জ্যান্ত 
নীহারিকায় আজও আছো 
গোলাপ বনে গোলাপ বাছো 
প্রভাতসূর্য আজও তুমি 
তাইতো তোমার চরণ চুমি 
তোমায় ছাড়া আজও "কবি" সবাই যে দিক্ ভ্রান্ত ।


প্রণাম 
পার্থ সারথি চক্রবর্তী

মনের জানালা যতবার খুলি-
সর্বত্র বিরাজমান তুমি, শুধু তুমি 
কী পূবে কী পশ্চিমে-
শীতগ্রীষ্মে আলো-আঁধারে 
                তোমারই দিকনির্দেশ।
ঝড়ের রাতে তুমি স্নেহের ছোঁয়া,
জীবনখেলার আশ্রয় গীতবিতান।
তুমি হৃদয়ে নয়, মিশে আছ-
শিরায় শিরায়, রক্তধারায়।
যখনই কোন উত্তর খুঁজি,
তৃষ্ণা জাগে বুকে-
প্রাণপণে আঁকড়ে ধরি তোমাকে।




মহাকালের রথে
রথীন কর
     
সাদা বেনারসির জোড়
কপালে চন্দন রেখা পাট করা
চাদর গোড়ের মালা
ঘুমিয়ে আছেন চিরচঞ্চল
আশির তরুণ অক্লান্ত বাউল

কপিল গুহার অন্ধকারে বিলীন
নান্দনিক মনন
আমাদের ক্ষীয়মাণ মানসে
সুন্দরের গান বিকৃত বিভাসে বেহাগে

এখনো অচিহ্ন যুবক অক্লান্ত সজীব
ভাবনা খুঁটে আনে তোমার দুয়ার থেকে

বাইশে শ্রাবণ চলেছে মহাকালের পুষ্পক রথে...




রবিঠাকুর দাঁড়ায় এসে
জগদীশ মন্ডল

ঝরছে বাদল মেঘের মাদল
বাজছে গুরু গুরু,
শ্রাবণ দিনে বৃষ্টি ধারায়
বুক করে দুরুদুরু।

এমন সময় 'বাইশ' এলে
চুপটি করে থাকা,
শান্তিনিকেতন ছাতিম তলা
বিষণ্ণতায় ঢাকা।

ঘন্টা,বেদি,আম্রকুঞ্জ
পিয়াল, চুপিসারে,
মন খারাপের দিনটিরে কে
দূরে রাখতে পারে !

তাঁর হাত ধরে আশার প্রদীপ
জ্বালাই বোশেখ মাসে,
রবিঠাকুর দাঁড়ায় তখন
কৃষ্ণচূড়ার পাশে।

তুমি আছো হৃদয় জুড়ে
চেয়ে দেখো কবি,
রামধনু রঙ তুলির টানে
আঁকি প্রতিচ্ছবি।



   বাইশে শ্রাবণ
 দীপক বেরা

বাইশে শ্রাবণে তুমি চলে গেলে 
রবি গেল অস্তাচলে বিন্ধ্যাচলে
চারিদিকে কালো আঁধার নামে
শ্রাবণের আকাশ কাঁদে বৃষ্টিজলে!

আমি 'কৃষ্ণকলি' ময়নাপাড়ায় 
ডুবে যাই তোমার মায়ার ছায়ায় 
শ্রাবণধারায় অনন্ত গভীরতায় 
তুমি 'রঞ্জন' হয়ে হাত বাড়াও 
আশার আলোর দিশারী হয়ে 
আমি ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকি তোমাকে 
তোমার 'নন্দিনী', 'লাবণ্য' হয়ে 
ভরে ওঠে আমার এ-শূন্য-হৃদয় 
তোমার 'অমিত' ভালোবাসায়! 

বৃষ্টিজলে মেঘ ধুয়ে আবার রবি ওঠে 
সৃষ্টির পথ আকীর্ণ করে আছ ধরায়
প্রতিটি বসন্তের নতুন পল্লবে পল্লবে
মর্মরধ্বণিতে তোমারই মৃত্যুচেতনায়! 




কালরাত্রির শ্রাবণ


অশোক রায় 


বিদায়ের ধূসর পরিসরে

বিষাদ-ব্যথার নীল অবসরে

তৃষিত মরুপথে চলেছি

মহাপ্রস্থানের দুই প্রজন্ম পরে

 

বিশ্বাস ক্রমশ বর্ধমান ছায়াপথ

উন্মুক্ত প্রান্তর ছাড়িয়ে বনান্তের কায়া

কালের গভীরে চিরহরিৎ কবিতাস্ম

হারাই মহাপথিক তোমায়, বারে

 

লতিকা হতে মহীরুহ স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল

সৃষ্টির জ্যোতিষ্ক হতে ফিউশন এখনো আবিরাম 

বেলা ফুরালে বিবেকের অন্তরালে

নিরন্তর কথা কই অশ্রুনিন্দিত সুরে ।।







কবির সেরা রবি

প্রদীপ্ত সামন্ত

এত কবি থাকতে কেন
কবির সেরা রবি ?
তেরো সালেই জিতে নিলেন
নোবেল বিশ্বকবি ।

ছোট্ট সেই ছয় বছরে
নিঝুম দুপুর বেলা ,
আমসত্ব কদলী দুধে
আপন কাব্য খেলা ।

ঠাকুর বাড়ির ছোটো ছেলে
ব্রাহ্ম পরিবেশ ,
আলখাল্লা জেববা ঢোলা
লম্বা দাঁড়ি কেশ ।

এই চেহারায় চিনি তাঁকে
করি নমস্কার ,
গান ,কবিতা ,নৃত্য, নাটক
পাই যে পুরস্কার ।

দু:খ ,সুখে ,কান্না, হাসি
বিরহ ব্যাথায় তিনি ,
আকাশ তারায় রবি'ই সেরা

আমরা তাঁকেই চিনি ।





রবীন্দ্রনাথ


আশিস চৌধুরী


 ওই যে জোব্বা পরে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি
হাত চেপে ধরে বলি
‘সভ্যতার সংকট’ চলছে
‘শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলবে?’বলে
দ্রুত পায়ে চলে যাচ্ছেন তিনি

হে আলোর পথযাত্রী ক্ষণেক দাঁড়াও।





বাইশে শ্রাবণ
বিমল মণ্ডল 

তোমার কাছে প্রেমের পাত্র ঠেলে দিলে 
জ্যোৎস্না আলো
শেষের কবিতার লাবণ্যের প্রচ্ছদ। 

প্রকৃতির রঙিন রোদ দেওয়ালে প্রজাপতি 
তোমার কাব্যের ছায়ায় তাকিয়ে টের পাই
শ্রাবণ ধারায় ভেসে গেলেও 
দরজা ঠেলে তোমার গানে আনন্দ জড়ো করি স্তুপ স্তুপ

আর বর্ষায় নেমে আসে ঘুটঘুটে অন্ধকার 
তখনও তুমি বাজিয়ে  চলেছো জলতরঙ্গ সুর
আমিও সময়কে সঙ্গী করে হেঁটে যাই—
বাইশে শ্রাবণের সঙ্গীত  ধারায়।




স্মরণ 
রূপক চট্টোপাধ্যায় 

তোমার অমৃত ফোঁটায় যে ঠোঁট তৃপ্তি রেণু মাখে। 
সে বুকেও দুরু দুরু বাজেবাইশে শ্রাবণ! 
মন গহিনের মেঘে মেঘে 
সারাদিন অঝোরে বন সজল মায়া,
দিকে দিকে জেগে ওঠে গীতবিতান। 
কেউ এর মাঝে এসে ,
পাশে বসে বলে গ্যাছে কানে কানে 
মরণরে তুঁহু মম শ্যাম সমান! 
চার পাশে পরিচিত মানুষের ছায়া
একে একে ছিন্ন করে শিরা, সম্পর্ক জাল, 
ছিন্ন করে সাঁকো নির্মাণ। 
পড়ে থাকে আধো মোমবাতি, শূণ্য টেবিলে
আকাশে বুঝি চাঁদ উঠবে এবার।
তাই শুনি কানে কানে কেউ এসে, 
পাশে বসে বলে যায়
মরণরে তুঁহু মম শ্যাম সমান! 





পরানবঁধু
সুজিত রেজ 


প্রাণের কবিতা
লিখতে লিখতে কখন তা
পরমের ছোঁয়ায়
তোমার কবিতা হয়ে যায়।

কালপ্রবাহের 
আবর্তনের প্রতি মুহূর্তে 
পরমপিতা 
জলরঙের ছবি এঁকে যায়।

কবিতার মতো স্পষ্ট এ চরাচরে কিছু নেই।

যে-শব্দ
চলনবিলের প্রবহমানতায়
আমি যেন তাকে তুলে এনে
পরিয়ে দিতে পারি কবিতার খোপায়।

রোদ পড়লেও
যে-গাছের ছায়া থাকে
আমি যেন তার
শ্বাসমূল হতে পারি।




 রবি মরমে
সজল বন্দ্যোপাধ্যায়

আমরা কি আর কবি
নয়ন জলে জীবন ধুয়ে
আঁকি তোমার ছবি ।

আমরাও গান গাই
কিন্তু সে সুর সে সব কথা
এখন কোথায় পাই !

আমরা তোমায় ভাবি
এক বছরে মাত্র দু'দিন
তাতেও খাই খাবি !

বাইশ শ্রাবণ আজ
চলে যাবার এমন তিথি
স্মরণ করাই কাজ ! 




অক্ষয় বাইশ
 নন্দিনী মান্না

লেখনি শিখার রশ্মি ধারার চূড়া
 বাঙালিয়ানার আগমনী
 সারাদিন রাতের জ্বলন্ত সূর্য
 সৃষ্টি ধারার সৌদামিনী।
 এক পৃথিবী সৃষ্টির মহামেলা
 মন শ্রাবনের সৌপর্ণ 
চতুরঙ্গ খেলার ঘরে বাইরের লেখক 
শব্দ প্লাবনের সৌবর্ণ।
 অবিরাম কলম ধারার যবনিকাপাত
হৃদ কলমের সুরকার
কলমের বিশ্রাম দিন বাইশে শ্রাবণ
 অশ্রু তারিখের অক্ষয়কার।






ঈশ্বরের চোখে 
জয়দেব মাইতি

জ্বেলে দিয়েছ বলে, জ্বেলে রাখি দ্বীপ। 
বাতাসের কি সাধ্যি, নিভিয়ে  রাখার??

দমকা হাওয়ায় নিভু নিভু করতে করতে প্রাণ প্রদীপ তো জেগে রয় ঈশ্বরের পায়ে।

 সেই ভালো সেই ভালো সুর ভাসে -আমার প্রাণে

রবিশ্বরের চোখে পড়ে নিই
গীতবিতান। 




আমাদের রবীন্দ্রনাথ
শ্রাবণী বসু
 

আয়ত আকাশ অথবা বানডাকা মেঘ হয়ে
কঠিন শিলার দেশে নেমে আসেন- 
তাপ হরণকারী সঘন সঞ্চারী - রবীন্দ্রনাথ।

বাইশে শ্রাবণ,পঁচিশে বোশেখ -
দু-খানি দিনাঙ্ক, একজন কবি,
একখানি পথ , একমাত্র আশ্রয়।

পাণ্ডুর পদক্ষেপে যখন হেঁটে যেতে বাধ্য
চারু চোখ যখন নোনতা সরোবর,
এলোমেলো হাওয়ার সেইসব দিন
ব্যথাহরণকারী সুধার নামটি- রবীন্দ্রনাথ।

যে কবির জন্ম আছে,
যাঁর মৃত্যুহীন প্রাণ দৃষ্টির বাইরে বসে
হৃৎপিণ্ডের শিরায় শিরায় ভরে দেন আনন্দ
আত্মায় লিখে দেন মানববৃক্ষের সারতত্ত্ব কথা,

লেখ'নির আলো যাঁর আভিজাত্যের হেতু
তিনি আমার, আমাদের  - রবীন্দ্রনাথ।





রবির লেখা

সুব্রত চৌধুরী


রবির লেখায় যায় যে কেটে 

কালো অমানিশা,

কবির লেখায় পাই যে খুঁজে 

বেঁচে থাকার দিশা।

রবির লেখায় পূর্বাকাশে 

হাসে রাঙা ভোর,

কবির লেখায় যায় খুলে যায় 

শেকল ভাংগা দোর।

হৃদের কোণে লাগে দোলা 

রবির গানের সুরে,

 মনটা আমার যায় হারিয়ে 

কোন সে অচিনপুরে 




কবিগুরুর মহা-প্রয়াণ
 ভবানী প্রসাদ দাশগুপ্ত 


বাংলা মায়ের সূর্য সন্তান
নাম ছিলো তার রবি,
মাটির টানে বেঁধে মন-প্রাণ
আঁকতেন বাংলার ছবি।

পালের নৌকোয় ঘুরে দেখতেন
বাংলার প্রতি ঘাটে,
পদ্মার পাড়ে নোঙর করতেন
বটতলার সেই হাটে।

পাবনা আর কুষ্টিয়ায় ছিলো
সাধের কুঠি বাড়ী,
জ্ঞান আহরণের আশায় দিলো
সুদূর বিদেশ পাড়ি।

সোনার তরী নিয়ে গেলেন
বিশ্বের জ্ঞান দরবারে,
তরী বোঝাই সম্মান পেলেন
নোবেল পুরস্কারে।

কবিতা গান নাটক অংকন
ছিলো কবির ধ্যান জ্ঞান,
আপন মনে কবি কংকণ
ধ্যানে জুড়াতেন প্রাণ।

সাহিত্যের সব অমর কীর্তি
রবীন্দ্রনাথের দান,
প্রেমের গানে ভাষার মানে
বাংলা পেলো সম্মান।

বাংলা ভাষা ধন্য আজি
কবিগুরুর দানে,
জগৎ সংসার শ্রদ্ধা ভরে
বিশ্ব-কবি মানে।

বার্ধক্যকাল সুখে কাটান
শান্তি নিকেতনে,
অন্তিম কালে মুক্তি নিলেন
জোড়াসাঁকোর ভবনে।

মায়াময় ধরা ত্যাগ করলেন
বাইশে শ্রাবণ দিনে,
সবাই শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন
শোকাতুর কায়মনে।







দ্বিতীয় ঈশ্বর
স্মৃতি শেখর মিত্র
            


ঈশ্বরের কাজ শুধুই সৃষ্টি করাতুমিও তাই করে গেছো জীবন ভর যা কিছু সুন্দর নয়ন ভোলানো সৃষ্টি হয়েছে তোমার কলমের ডগায়।
   
    
 যত রূপ, রস,  ধ্বনি সব কিছুর স্রষ্টা তুমি
 তোমারই রচিত সঙ্গীতে শোনা যায় প্রতিনিয়ত প্রকৃতি প্রেম ও ঈশ্বরের বন্দনা।
     
 দেশ মাতৃকার তুমি সুযোগ্য সন্তান তোমার কিরণে যা কিছু সুন্দর তাই উদ্ভাসিত।তুমি কবি শ্রেষ্ঠ , তুমি ধন্য  এ বিশ্বমাঝারে।

তোমার লেখনীর পরশে আমরা নতুন ভাবে নতুন আঙ্গিকে প্রেমের বাঁশি বাজিয়েছি ধরাধামে।মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে শুধুই প্রেমের জয়গান 


 রাম রহিম তোমার চোখে সবাই সমান "শক--হুন-দল পাঠান মোগল এক দেহে হল লীন" এ কথা শুধু তুমিই বলে গেছো।হে কবি তোমার মৃত্যু নেই তোমার বাণী তোমার কণ্ঠ যুগ যুগ ধরে বেঁচে আছে থাকবে চিরকাল।

 "বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দ ধারা"এ শুধু তোমার অনুভবেই ধরা পড়ে। অমল তোমারই সৃষ্টি যার চোখে সামান্য কিছুও ভালবাসার প্রতীক হয়ে ধরা দেয়,এ বিশ্বের যাবতীয় সুন্দর। সে দেখতে পায় কল্পনার চোখে।তাই অমল আজও প্রতীক্ষায় থাকে 'সুধার' আশায় যে প্রতিদিন ফুল নিয়ে আসে অমলকে ভালবেসে তাদের প্রেম চিরকাল থাকে অমলিন। 











কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন