।।প্রতিদিন বিভাগ।।
।। জুন সংখ্যা।।
।। বিষয় - মুক্ত (গুচ্ছ কবিতা) -১০।।
অর্ণব মিত্র -র কবিতা
১.
সারারাত বৃষ্টি
সন্ধ্যে হয়ে এল
পুরনো পাড়া, রেল কলোনির ঘরবাড়ি ছুঁয়ে
ভেসে আসছে বৃষ্টি ভেজা হাওয়া।
মেঘলা আকাশ ডুবে যাচ্ছে গোলাপি অন্ধকারে
রেল-কোয়ার্টার-এর ভেজানো দরজা থেকে
ভেসে আসছে টিভির আওয়াজ
আর বৃষ্টি ভেজা জবা গাছ লুটিয়ে পড়ছে বারান্দায়,
আকাশ মিশে যাচ্ছে
আরও নিঝুম বৃষ্টিধারার অন্ধকারে
আজ সারারাত বৃষ্টি হবে
আর
জলে ভেসে যাবে
অতনুদের সেই বাড়ির চাতাল
ছাদ, সিঁড়িঘর
মাইতিদের পুকুর
শ্মশানকালীমেলার লাল মাটির পথ
আর বলখেলার মাঠ।
২.
সেইসব গলি
দেখেছি বাড়িওয়ালা অতনুদের সেই গেট ও চাতাল
দেখেছি তুষারবাবুর বাড়ির দরজায় জুতোর ভিড়,
পর্দা দুলছে - আর ভিতর থেকে ভেসে আসছে টিউশুনির কোলাহল।
দেখেছি বন্ধ সবুজ সংঘ ক্লাবঘর-এর সামনে
বহু পুরনো সেই নেতাজীর মূর্তি! ।
অনেক ঘুরে শেষে এসে দাঁড়িয়েছি
রেল-কোয়ার্টারের গলির পাশে
সেই নিম গাছের ছায়ায়।
আশপাশ দিয়ে চলে যায় কত মুখ
চেনা ভেবে তাঁদের দিকে তাকাই বারবার
মনে পড়ে যায় তিরিশ বছর আগের দিনগুলো
তমাল,পলাশ,শুভদীপ এর সাথে
দেখা হত রোজ,
তারা আজ কোথায় !
মুম্বাই না ব্যঙ্গালোর !
ওরা কি বহুদিন এখানে আসে না!
তবু দেখা হবে জেনে
সেই পাড়ায় এসেছিলাম আবার।
এবার ফিরে যাব-
আমি এক অপরিচিতর মত শূন্য মনে
আর
পেরিয়ে যাব পরিচিত সেই
গোলবাড়ির উঠোন, বলখেলার মাঠ
ও সেইসব গলি।
৩.
বাড়ি ফেরা
সন্ধ্যের অন্ধকারে মিশে
বাড়ি ফেরার পথ দেখি চলে গেছে দূরে
শুকনো পাতা ছড়িয়ে আছে চারিদিকে
পুকুরের উপর সবুজ অন্ধকারে
জোনাকি সরে সরে যাচ্ছে, আর
বাঁশপাতার মৃদু কাঁপনির মাঝে
বাঁশঝোপের ওপারে নিভে যাওয়া আকাশে
ফুটে উঠেছে কয়েকটি তারা।
এমন আলো-অন্ধকারময় পথে
বাড়ি ফিরতাম তিরিশ বছর আগে
আর
সারা পথে ছড়িয়ে থাকা
কথা-গল্প-রহস্যের মাঝে হারিয়ে গিয়ে
ভুলে যেতাম বাড়ি ফেরার কথা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন