শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪

।প্রতিদিন বিভাগ।। ।। জুন সংখ্যা।। ।। বিষয় - মুক্ত (গুচ্ছ কবিতা) -৯।। বিদ্যুৎ মিশ্র-র কবিতা।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।





          ।।প্রতিদিন বিভাগ।। 

          ।।  জুন সংখ্যা।। 

 ।।  বিষয় - মুক্ত (গুচ্ছ কবিতা) -৯।।




বিদ্যুৎ মিশ্র-র  কবিতা 

১.
কোথায় যাবো


কোথায় আর যাবো এই বনভূমি
সরীসৃপের মতো মেঠো লাল পথ, এই
খড়ের ছাউনী আমার বড্ডো প্রিয়।
কোথায় আর যাবো। এখানেই আমার
ছেলেবেলা কখন যুবক হয়ে উঠেছিল
আমার বার্ধক্য আমার জ্বর আমার ক্ষয়
আমার যাবতীয় সুখ
সবকিছু এই মাটিতেই মিশে আছে।
অগত্যা আমি আর কোথায় যাবো,
এখানেই প্রবল শৈত্য আমার
কলেজা পর্যন্ত হিম করে দেয়।
এখানেই আমার মৃত্যু
এই বনভূমি মেঠো লাল পথ
আমাকে একটু একটু করে সবকিছু
চিনতে শিখিয়েছে।
যারা কোনদিন আমাকে ভালোবেসেছিল
এই দুঃসময় তারাই নতুন করে
আঘাত দিয়েছে সবার আগে।
তবু তাদের ভালবেসে গেছি বারবার,
বলো এরকম আকুলতা ছেড়ে
কোথায় যাবো আমি।


২.
অনেকটা রাত বাকি



এখন তো অনেকটা রাত বাকি
এখনো টুপটাপ ঝরে পড়ছে শিশিরের বিন্দু।
আকাশের গায়ে ঝিকিমিকি লক্ষ তারার মেলা
একফালি চাঁদ কখন মেঘের আড়ালে।
এখন তো অনেকটা রাত বাকি
এইতো সবে ফেরিঘাটের আলোগুলি
ফিসফিস করে কথা বলে যায়।
জানালার ওপারে
একটা বিস্তীর্ণ বনভূমি
দূরে কোথাও ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক।
একটু একটু করে ভিড় কমে আসে লোকালয় থেকে
সারাদিনের ব্যস্ততা কখন যেন নীরবতায় ম্রিয়মান।
এত নিশ্চুপ রাত্রি দেখিনি কোনদিন
এ রাত শুধু তোমার আমার
এ রাত শুধু স্মৃতি বিজড়িত
এ রাত কল্পনার থেকেও দীর্ঘ।



৩.
অপেক্ষা


চলো আর একটু অপেক্ষা করা যাক
যতটা অপেক্ষা করলে
আর কোন আক্ষেপ থাকেনা।
যেখানে তুমি যাবতীয় আকাঙ্ক্ষা ধুলিস্যাৎ করে
নিশ্চুপ হয়ে দূরে সরে যাবে
আমি অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকব
সেই নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া।
আরেকটু অপেক্ষা করা যাক।
এখনো তো অনেকটা প্রহর বাকি
এখনো তো সবুজ রয়ে গেছে নদীর চর
এখনো তো দিন আসে দিন যায় আগেরমত
এখনো নিদ্রাহীন রাত জেগে থাকে ;
এখনো অনেকটা অপেক্ষা বাকি।



৪.
চেনা ফুটপাথের মোড়ে



তাকে দেখেছিলাম ফুটপাতের একটা কোণে
এখনো চশমার আড়ালে তাকে দিব্যি চেনা যায়।
একটু কাছে যেতেই চেনা পারফিউম
চেনা শহরের অচেনা মানুষের মুখগুলো যেমন
কখন যেন পরিচিত হয়ে যায়।
প্রত্যাশিত বাস স্ট্যান্ডে অথবা চেনা পাড়াটির মোড়ে
শুধু দেখে আর মাথা নিচু করে নেয়।
যেভাবে অপূর্ণ কবিতার মতো;
হৃদয়ের অলিন্দ থেকে কখন যেন
রাত ভেঙ্গে এক একটা দিব্যি সকাল ফুটে ওঠে।




৫.
নিরুদ্দেশ



বহুদিন পরে বৃষ্টি নামে পাহাড়ের বুকে।
তারপর সবকিছু ধুয়ে মুছে নতুনের মত
সারি সারি ফুল ফুটে ওঠে নিষিদ্ধ বাগানে।
তাকে দেখেছিলাম সেই ফুটপাথের কোণে
একটু বেলা গড়িয়ে গেলে যেমন
ব্যস্ততা বেড়ে যায় শহরের রাস্তায়
দিব্যি চেনা মুখগুলো অচেনা হয়ে যায়
ঠিক সেই মতো চেনা পারফিউম গন্ধে
পরিচিত মানুষগুলো অনেকটা অচেনা হয়ে যায়।
আবছা আলোর অন্ধকারে গোমড়া মেঘের সুর
অচিন পাখি নিরুদ্দেশ আজ দৃষ্টি বহুদূর
কেউ জানে না কখন কোথায় মেঘ বালিকা এসে
টাপুর টুপুর বৃষ্টি দিলো একটুখানি হেসে।
জল থৈ থৈ পুকুর ডোবা বৃষ্টি পাতার ডালে




৬.
অসুখ



কত যুগ ধরে ছুটতে ছুটতে
আলো আর জোছনার ছায়া ধরে
নিজেকে নির্বাসন দিয়েছি
বিবর্ণ চৈত্রের শেষ দুপুরে।

এক খানি ভাঙা দেরাজ আর
ঘুপচি গলির খানাখন্দে
তুমুল আকাশের রং
আমার একান্ত প্রিয়।

কত যুগ ধরে শুধু কাগজে আঁচড় কেটে
বলে গেছি নিজের কথা;
কতযুগ শক্ত করে ধরে রেখেছি
বাপ ঠাকুরদার ফেলে আসা
আমার আদ্যিকালের জমানো অসুখ।



1 টি মন্তব্য: