বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০২২







ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস পর্ব-১০


...এবং ইরাবতির প্রেম

গৌতম আচার্য


ইরাবতি যেন হারিয়ে যাওয়া সেই তিস্তা.... যে সত্যেন কে বলেছিলো, "আমি তিস্তা গো তিস্তা-- মা বলে তিস্তা পাড়ের মেয়ে- তিস্তা"।। ইরাবতি একটু একটু করে দুর্বল করে তুলছে সত্যেন কে আর সত্যেন যেন অচেনা ইরাবতিকে নতুন করে জেনে ফেলছে প্রতিক্ষণে।। সত্যেনের কেবল-ই মনে হচ্ছে, হারিয়ে যাওয়া সেই তিস্তা নতুন ভাবে এসে ধরা দিয়েছে তার কাছে।। আরও বেশি করে তার বিশ্বাস গাঢ় হলো, যখন ইরাবতি কিছু না জেনেবুঝে ই সত্যেনকে বললো, "আমাদের তো তিস্তা পাড়ে বাস।। আসুন একবার আমাদের জলপাইগুড়ি শহরে, আপনাকে তিস্তা পাড়ে নিয়ে যাবো"।।

এটি সত্যি জলপাইগুড়ি শহরের এক প্রান্ত দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা।। তিস্তা নদীও সকলের পরিচিত।। কিন্তু জলপাইগুড়ি শহরের বুকের ঠিক মাঝখানে যে নদী বয়ে গেছে, তুলনায় কম পরিচিত হলেও, সে "করলা নদী"।। তবু সত্যেন ক্রমশ তার "তিস্তা পাড়ের মেয়ে-- তিস্তা" কে খুঁজে পেতে শুরু করেছে ইরাবতির মধ্যে।।

শৈশব জীবনের সেই হাতছানি যেন নতুন করে আজ ধরা দিয়েছে।। প্রতিটি মূহুর্ত সত্যেন নতুন করে তার জীবনের অনুভবে জুড়ে দিচ্ছে।। সেদিন হঠাৎ-ই সে ইরাবতি কে বলে বসলো, আজ থেকে আমরা দুজনে দুজনকে আপনি ছেড়ে "তুমি" বলতে পারি না? আমি কিন্তু আর "তোমায়" আপনি বলতে পারবো না।। "এ বাবা, আমি বলতে পারবো না"-- মোবাইলে কথা বলতে বলতে জবাব দিলো ইরাবতি।। ইরাবতির উত্তর শুনে সত্যেন একটু জোরের সঙ্গেই দাবি করলো, কোন কথা শুনবো না, বলতে তোমায় হবেই, নাহলে আমি ছাড়বো না।। দ্যাখো, আমি তো তোমায় তুমি বলতে দ্বিধা করছি না।। উত্তরে ইরাবতি আবার বলে উঠলো, আমার লজ্জা করে।। এবার রীতিমতো রুষ্ট হয়ে সত্যেন বললো, ধ্যাৎ কেবল লজ্জা করে, লজ্জা করে আর লজ্জা করে।।
-- লজ্জা যে নারীর ভূষণ।। উত্তর করলো ইরাবতি।।
-- প্লিজ্... আমার কাছে লজ্জার কি আছে? আমরা তো বন্ধু।। কালতো আরও কিছু হতেই পারে।।
-- কাল কি হতে পারে? উৎকন্ঠিত ইরাবতি জানতে চাইলো সত্যেন এর কাছে।।
-- বলতে পারি, কিন্তু আগে তুমি বলতে হবে।।
-- এ বাবা আমি পারবো না।। বলুন না প্লিজ কি হতে পারে?
-- "বলুন না" বললে বলবোই না।। আগে বলো "বলো না" তবেই বলবো।।
এবার ইরাবতি বললো, কি শয়তান রে বাবা।। সেই এক কথা তুমি তুমি তুমি।। ঠিক আছে বলছি, এবার তো বলা যাবে?
-- কোথায় বললে তুমি? তুমি করে না কথা বললে আমি কিছুতেই বলবো না।। উত্তর দিলো সত্যেন।।
-- ঠিক আছে বলছি।। "বলো না প্লিজ কাল কি হতে পারে"? তারপর উত্তর শোনার আগেই ইরাবতি আবার বলে উঠলো, "ঠিক আমাকে তুমি বলিয়ে তবে ছাড়লো।। কি জেদি আর শয়তান রে বাবা।।

ভীষণ ভালো লাগছে সত্যেনের।। তাকে ইরাবতি যে "শয়তান" বলেছে, তার মধ্যে একটি ভালো লাগা আর প্রশ্রয় লুকিয়ে আছে।। খুব খুশি হয়েছে সে।। কিন্তু যে কথা সে ভেবে ফেলেছে আগামী কাল মানে ভবিষ্যত- কে চিন্তা করে, সেটি কি আদৌ এখনই এ্যতো তাড়াতাড়ি ইরাবতিকে বলা উচিত? দ্বিধাদ্বন্দ্বে বুঝতে পারছে না সত্যেন।। তার এক একবার মনে হচ্ছে, একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।। তার পরেই মনে হচ্ছে, এটিই উপযুক্ত সময় সেই কথা বলে দেওয়ার।।

এদিকে তাগাদা আসছে ইরাবতির দিক থেকে- "তুমি তো বলেছি মশাই।। এবার বলো, কাল কি"? অপ্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে সত্যেন।। কি করবে, কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না সে।। দ্বিধা আর মানসিক প্রতিবন্ধকতা ঝেড়ে ফেলে একদম সরাসরি বলে ফেললো, "এটাও তো হতে পারে, সমস্ত দ্বিধা কাটিয়ে আমরা দুজন দুজনের আরও কাছাকাছি চলে এলাম"।
-- ধ্যাৎ।। তা আবার হয় নাকি?
-- কেন হয় না।।
-- তুমি থাকো কলকাতা মহানগরীতে।। আর আমি কোন জলপাইগুড়ি শহরে।।
-- দূরত্ব তো মাত্র সাড়ে ছশো কিলোমিটার।।
-- এমন ভাবে বলছো যেন সাড়ে ছয় কিলোমিটার।।
-- তাই তো।। ভাবতে পারলে তাই-ই।।
-- মানে?
-- মানে তুমি যদি মন থেকে চাও, তাহলে সাড়ে ছশো কিলোমিটার কোন দূরত্ব-ই নয়।। আসল হচ্ছে চাওয়া মানে ডিজায়ার।।
-- হুমম্ তা ঠিক।।
-- তাহলে সিওর?
-- কি?
-- নাউ অনওয়ার্ড উই আর ফর ইচ্ আদার? আমার উপরে ছেড়ে দাও।। আমি এটিকে উই আর মেড্ ফর ইচ্ আদার করে নেবো।। কি বলো কিছু।।
-- না বাবা, এখনই কিছু বলবো না।। আগে একটু ভাবি।। তারপর বলবো।।
-- এতে এ্যতো ভাবাভাবির কি আছে? কথাতেই তো বলে, লাভ এ্যাট্ ফার্স্ট সাইট্।।
-- না না, অনেক কিছু ভাবতে হয়।।

সত্যেন নাছোড়বান্দা।। অস্হির হয়ে উঠছে সে।। এই কথা সে বুঝতে পারছে, আসলে যতোই হোক মেয়ে তো, তাই এক কথায় "হ্যাঁ" বলা ইরাবতির পক্ষে ঠিক সম্ভব হচ্ছে না।। তবে সত্যেন বুঝতে পারছে, ইরাবতি আসলে রাজি।। রাজি না হলে এতক্ষনে ইরাবতি ফোন ছেড়ে দিতো, হয়তো তাকে বলতো, আমাকে আর ফোন করবার দরকার নেই।।

সত্যেন বলে, কি হলো, এ্যতো গম্ভীরতা কেন? বলো কিছু।।
-- কি বলবো?
-- আচ্ছা আজ রাতে হোয়াটসঅ্যাপে তুমি ইয়েস, নো বা ভেরি গুড্, ভেরি ব্যাড জানিও।। যেটি তোমার ইচ্ছে।। ডোন্ট ফিল এনি প্রেসার।। তাহলে হবে তো?
-- ঠিক আছে।।

দুজনেই ফোন অফ্ করে দেয়।। সত্যেন ভাবতে থাকে- বড্ডো তাড়াহুড়ো হয়ে গেলো না তো?




চলবে..... 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন