লেবেল

বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০২২

ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস(পর্ব-৮)।। ... এবং ইরাবতির প্রেমগৌতম আচার্য।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।




ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস (পর্ব-৮)


... এবং ইরাবতির প্রেম
গৌতম আচার্য


মূহুর্তে ইরাবতিকে মেসেজ লিখতে শুরু করে  দিলো সত্যেন।। I'm sorry. কি করে বুঝবো, আপনি এ্যতো রাতে আসবেন? অনেকক্ষন আপনার আশায় অপেক্ষা করে ছিলাম।। শেষপর্যন্ত কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি।। যাহোক, এবারের মতো আরো লিখলো, আপনি এখনও জেগে বসে আছেন বলে মনে হচ্ছে।। মেসেঞ্জারের মাথায় সবুজ আলো জ্বলছে।।
অপর প্রান্ত থেকে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো, কি করবো বলুন... আপনি তো রাগ করে বসে আছেন।।
-- আরে না না।। রাগবো কেন?
-- ঐ যে বলেছি, "দেখলেন না..জানলেন না..."
-- আমি কিছুই মনে করিনি।।
-- বললে হবে? আমি দেখতে পাচ্ছি তো।।
-- কি দেখতে পাচ্ছেন?
-- ওরে বাবা... গাল দুটি ফোলা ফোলা, কেমন লাল হয়ে আছে, চোখ দুটিতে যেন আগুণ জ্বলছে... এমন করলে তো ভষ্ম হয়ে যাবো, সাহেব বুঝি সেটিই চান?
-- ঠিক উল্টোটি তো আমি দেখছি।।
-- বললেই হবে? করবো ভিডিও কল? তখন বোঝা যাবে কে রাগী বাবু হয়ে রয়েছেন।।

আতঙ্কিত হয়ে ওঠে সত্যেন।। সে এখন বাড়িতে।। এই ব্যস্ত সময়ে ভিডিও কল..তাও কিনা কোন সুন্দরী? কেউ দেখে ফেললে আর রক্ষে নেই।। তাড়াতাড়ি সত্যেন লিখলো, যদি সুযোগ থাকতো তাহলে ভিডিও কল করে বোঝা যেতো কে রাগ করে আছে।। কিন্তু এখন তো সেই সুযোগ নেই, তাই অগত্যা আমি না হয় মেনে নিচ্ছি সবকিছু।।
-- আজ্ঞে না স্যার, অকারনে মেনে নিতে হবেনা।।
-- কিন্তু ম্যাডাম তো নাছোড়বান্দা।।
-- মোটেও না।। রাগীবাবুকে রাগী বলেছি।। বেশ করেছি, যা সত্যি তাই তো বলেছি।।

সত্যেনের বুঝতে অসুবিধা হয়না, ইরাবতি ইতিমধ্যে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে।। ইরাবতির কথাবার্তা তাই বলছে।। সত্যেন নিজে তো প্রথম থেকেই আগ্রহী।। সুতরাং যদি দুই আর দুই চার হয়ে যায়, তাহলে নিশ্চয়ই কারও আপত্তি হবে না।। দ্বিগুণ উৎসাহে সত্যেন প্রশ্ন করলো, "তা কি করা হয় জানতে পারি কি"?
-- কি হবে জেনে?
-- এটি কি কোনও প্রশ্ন হলো?
-- একটি ছোট্ট কাজ করি, কয়েক ঘন্টার।। তারপর রান্না বাড়ি, ঘরদোর পরিস্কার রাখা..সময় সুযোগ পেলে একটু লেখালেখি করবার চেষ্টা।।
একটু থেমে ইরাবতি আবার শুরু করে, তা সাহেবের কি করা হয়?
-- আমিও ছোট্ট একটি ব্যবসা করি।। খাই- দাই- ঘুরে বেড়াই, আর একটি পত্রিকা গোষ্ঠী আছে, মাঝে মাঝে সেই গোষ্ঠীর যে পত্রিকা প্রকাশ হয়, তার মূল দায়িত্বটি মানে, সম্পাদনা করি।।
-- নিজে লেখা হয় না?
-- লেখালেখি তেমন আসে না।। কখনও সখনও দুই একটি গল্প লিখে ফেলি।। তা ম্যাডামের কি কবিতা লেখা হয়...নাকি গল্প... অথবা প্রবন্ধ?
-- ওরে বাবা.. গল্প- প্রবন্ধ, ওসব আসে না, লেখাপড়া বেশিদূর নয় তো।। ঐ আর কি দুই একটি কবিতা।।
-- তার মানে কবি ম্যাডাম?
-- ওসব বলে লজ্জা দেওয়ার কোন মানে হয় না।। এই ভাবে বললে তো কথা বলাই দায় হয়ে উঠবে।।
-- মানে? একজন কবিকে কবি বললে লজ্জা দেওয়া হয়?
-- না স্যার, আমাকে কবি বলবার মতো কবি আমি আদৌ নই।।

সত্যেন বুদ্ধি করে এবার আর এক ধাপ এগিয়ে গেলো।। হঠাৎ সে লিখে বসলো, আশ্চর্য! তখন থেকে আমরা কেউ কাউকে আপনি বা তুমি বলছি না, কেউ কারও নাম ধরছি না... শুধু এড়িয়ে এড়িয়ে কথা বলে যাচ্ছি।। আরে ম্যাডাম, আমার একটি নাম আছে।। আমার নাম সত্যেন চ্যাটার্জি।।
-- তাতে কি হলো? আমি কি 'এই যে সত্যেন চ্যাটার্জি' বলে হাঁক পাড়বো?
-- তা কেন? আমাকে সত্যেন বলে ডাকা যেতেই পারে।।
-- না বাবা, আমি ঐ নাম ধরে ডাকতে পারবো না।।
-- কেনো, সত্যেন বলে ডাকতে অসুবিধা কোথায়?
--আমার লজ্জা করে।।
-- সে কি? সত্যেনকে সত্যেন বলে ডাকতে লজ্জা করে?
-- করে তো।।
-- এ তো দেখি, লজ্জাবতী লতাও শেষে হার মানবে।।
-- লজ্জা যে নারীর ভূষণ।।
-- তাহলে আমিও যে নাম ধরে ডাকতে পারবো না।।
-- আমার নাম ইরাবতি।। ডাকনাম পিয়া।। আমাকে যে কোন নামে ডাকা যেতেই পারে।।
-- ও: নিজের বেলা "লজ্জা নারীর ভূষণ"-- তাই নাম ধরে ডাকতে লজ্জা করে।। আর আমার বেলা "নাম ধরে ডাকা যেতেই পারে"।।
-- হ্যাঁ তো।।
-- না তো।।
-- হ্যাঁ... হ্যাঁ... হ্যা...।।

সত্যেন এর এসব ভালো লাগছে।। ইচ্ছে করছে, ইরাবতি.... বলে প্রাণখোলা ডাক ডাকতে।। ইচ্ছে করছে ইরাবতির কাছে ছুটে চলে গিয়ে ইরাবতি-কে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরতে।। তার মনে হচ্ছে, ঠিক এমন কাউকেই সে মনপ্রাণ দিয়ে এ্যতোদিন খুঁজে গেছে।। আজ ইরাবতি এসে ধরা দিয়েছে সেই অপূর্ণতা কে পূর্ন করতে।।

মনে মনে সত্যেন ইরাবতির একদম কাছাকাছি পৌছে গেছে।। সে আর ইরাবতি, ইরাবতি আর সে।। যেন জন্ম- জন্মান্তরের ভালোবাসা আজ প্রেম হয়ে ঝরে ঝরে পড়ছে ইরাবতি আর সত্যেন এর এই চির সম্পর্কের ঠিক মাঝখানটিতে।। মানসিক ভাবে অনেক খানি এগিয়ে গেছে সত্যেন।। সে ইরাবতির কাছে দাবি করে বসেছে, "আমরা দুজনেই আপনি না তুমি- র দোলাচলে ভুগছি।। কেউ কাউকে আপনি বা তুমি কোনটিই না বলে কথা বলে যাচ্ছি।। অবসান হোক এই আড়ষ্টতা।। আজ থেকে আমরা দুজনকে দুজন "তুমি" বলেই সম্বোধন করবো"।। ইরাবতি শুধু বলেছে, "আমার লজ্জা করছে"।। সত্যেন আরও স্মার্ট- ঘনিষ্ঠ মন নিয়ে বলে উঠেছে, "দূর পাগলী, এর মধ্যে লজ্জা কিসের? বোকা কোথাকার"।।

ইরাবতি আবার বলেছে, " লজ্জা নারীর ভূষণ"।। সত্যেন এর এই কথাটি ভীষণ ভালো লেগেছে।। সে মনে মনে শুধু বলেছে, "তোমার সব লজ্জা একদিন আমি কাটিয়ে দেবোই।। তুমি ভরসা রাখো আমার ওপর।। আমি ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দেবো তোমায়, তুমি সব লজ্জা কাটিয়ে নিশ্চিন্ত আশ্রয় নেবে ঠিক আমার বুকের মাঝখানটায়"।।

চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন