বসন্ত এসে গেছে -৪০
সুকুমার রুজ
১.
প্রেমগান গাও
এই শাল-পিয়ালের বনে তোমার আমার যুগল সম্মিলনে
আগুন পলাশ রক্তশিমুল হেসে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে।
সপ্তপদী ও অগ্নিসাক্ষী, মালিকা বদলাবার
কী দরকার কী দরকার কী দরকার!
সাক্ষী রইল এই বনরাজি, সম্মতি মনে মনে।
পরাগ মাখানো ফুলছাপ ডানা, ইচ্ছের প্রজাপতি
রোমাঞ্চকর ভালোবাসা খোঁজে শরীরের ইতিউতি।
জল-হাওয়া বুঝে, দিন খুঁজে খুঁজে রোপন সবুজ চারা।
দাম্পত্যের দ্রবণ মিশিয়ে আগামীতে কড়া নাড়া।
একদিন জানি কাঙ্খিত সেই দিনক্ষণ এসে ডাকবেই !
জননী-গরবে গরবিনী হয়ে অপত্যজল মাখবেই!
জমিয়ে রাখা সে আনন্দগুচ্ছ, সোহাগ-আদর ঝরাবে।
হৃদয় আঁকড়ে তুলে রাখা ধন প্রতিরোধহীন নানা অর্জন,
দিনে দিনে বেড়ে নওলের মতো তোমার হৃদয় ভরাবে।
তবে কেন মিছে চৌচির করো ইচ্ছে কাচের আয়না,
হৃদয় শরীর সবকিছু চায়, মন তবে কেন চায় না!
ঘোর লাগা যত মৈথুনরং হয়ে যায় কেন ফিকে,
চূড়ান্ত সেই তৃপ্তির পাখি কেঁদে ফেরে দিকে দিকে।
তাই বলি ওগো কমলিনী রাই ইচ্ছের মালা পাল্টাও
নওলকে তুমি কন্ঠে জড়িয়ে নতুন প্রেমের গান গাও।
২.
হৃদয় শুশ্রূষা
এই রক্তাক্ত ফাগুনে কামনার পথ ঘুরে,
রোমাঞ্চিত প্রস্তুতি নিয়ে ত্রিকোণ-আহ্বানে
শরীরী আগুনে নিঃশেষে না পুড়ে,
সবকিছু উপেক্ষা করে, হৃদয়ের আনন্দগানে
স্বচ্ছতোয়া নদীটির মত নিঝুম প্রণয়ের নাম প্রেম।
ফিসফিসে ফাগুন-বাতাস আর্দ্র-উষ্ণ গুঞ্জনে
রাই-নওলের কানে কানে ছড়ায় প্রেমের বারতা...
তাকে দূরে ঠেলে, অবিমিশ্র মুগ্ধতা দু'জনের মনে
অরূপ শুশ্রূষায় আনুক হৃদয়ের সুস্থতা।
এমন পারস্পরিক হৃদয়-ওষধির নাম প্রেম।
তাই নয় আর ত্রিকোণের খেলা, না হয়ে খাক্,
প্রশান্তি-সুর থাক, নয় আর তুরীয় আনন্দের গান...
প্রেমটুকু বেঁচে থাক, হৃদরঙ বসন্ত-রঙে মিশে যাক...
তোলা থাক দু'জনের যা কিছু মান-অভিমান।
এমন হৃদয়-বসন্ত-বাতাসের নাম প্রেম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন