লেবেল

সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

প্রকাশিত হল...অঙ্কুরীশা-য় সুর সরস্বতী লতা মঙ্গেশকরকে শ্রদ্ধা নিবেদনে কবিতা-য় শ্রদ্ধাঞ্জলি সংখ্যা।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।



কলমে- 
তৈমুর খান 
গৌতম হাজরা
বাবলু গিরি
জ্যোতির্ময় দাশ 
দুরন্ত বিজলী 
সৌম্য ঘোষ 
অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় 
সমাজ বসু 
দীপক বেরা 
বিকাশরঞ্জন হালদার 
প্রদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী
নিমাই জানা 
তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য 
নীতা কবি  মুখার্জী
অশোক ব্যানার্জি 
অশোক রায় 
শ্রাবণী বসু 
গৌতম বাড়ই 
স্মৃতি শেখর মিত্র 
জয়শ্রী সরকার
জয়দেব মাইতি 
রঞ্জন ভট্টাচার্য
হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়
বিমল মণ্ডল 






সুরের সূর্য
 তৈমুর খান

 কোনও কথা হবে না আর
 শুধু গান হবে
 গানই পৌঁছাবে অমরত্বের ঠিকানায়

 আমরা সুরের ঝরনায় নৌকা ভাসাব
 আমরা সুরের আকাশে পাখি হব
 আমাদের স্বরলিপির সভ্যতা
 আমাদের সূর্যের নাম লতা মঙ্গেশকর....


গানের ওপারে
গৌতম হাজরা

স্তব্ধ চরাচর। অবিরাম বৃষ্টি ঝরে পড়ে। 
বৃষ্টি থেকে গান, গান থেকে সুর
সুরের ঝরণাধারায় চাঁদ হেলে পড়ে। 
কে তুমি গাইছো বলো নদী ছলছলে? 
ভূমি কাঁপে, কেঁপে ওঠে প্রতি পলেপলে
শূণ্য বাতাসে ওঠে হাহাকার ধ্বনি
আছাড়িবিছাড়ি খায় ভোরের আলোকে। 
 সুরের ভেতর থেকে জলজ বুদবুদে
চোখের সাঁকোতে দেখি পার হয়ে তুমি
আনমনে হেঁটে গেলে গানের ওপারে! 


লতা মঙ্গেশকর
 বাবলু গিরি 
                    
সেই সুর যখন বেজে ওঠে -
হৃদয়ে তখন পরমেশ্বরও জেগে ওঠে।
সেই গান যখন কন্ঠে বাজে -
বিশ্বের সব সুর সঙ্গীতে উৎসবে সাজে।

যে কন্ঠের গান শুনে জাগে হৃদয়ের ঈশ্বর ।
মনে হয় নিশ্চয়, রত্নকন্ঠী লতা মঙ্গেশকর।


লতা মঙ্গেশকর স্মরণে
জ্যোতির্ময় দাশ 

সুরের সম্রাজ্ঞী তুমি, তুমি বিশ্বজয়ী
এ মর্ত্যর সকলেই তোমাতেই ঋণী—
তোমার প্রয়াণে তাই মর্ত্য মগ্ন শোকে
আনন্দ বিতরিছ তুমি আজ সুরলোকে!




মুগ্ধ জ্যোৎস্নায় লতাবিতান
দুরন্ত বিজলী


বৃষ্টিধারায় যে সুর ধ্বনিত
তার কাছে অবলীলায় নদী কথা কয়।
নদীরও স্রতোপথে ভেসে যায় সুরমূর্ছনা।
সমুদ্রসঙ্গমে সুরসম্রাজ্ঞীর প্রভূত রাজত্বে
উথাল পাতাল। মনমোহিত ফেনাপুঞ্জে
উথলে উঠে কোকিলকণ্ঠীর আবেগ ও আহ্লাদ।
আপ্লুত নয়নে আলো, ঝর্ণাধারা, মেঘমেদুর
কান্না ও কুহক।

লতাবিতানে এখনও সুললিত সুর
আলোর বিচ্ছুরণের মতো।

রাজত্ব ও রাজপ্রাসাদ আছে,
কিন্তু মহারানী নেই।

শূন্যতায় মুগ্ধ জ্যোৎস্না
কত যুগ পেরিয়ে যাবে
কেউ কি তা জানে? 


নিস্তব্ধতা

সৌম্য ঘোষ

 

নদীর শেষ বাঁকে আর খুঁজে পাইনি
যত দূর তাকাই ঝাপসা
যে সুর বাজছিল কানে
- ঢেউয়ের পর ঢেউয়ে,
হঠাত্‍ কেমন ফাঁকা।

এ নদী বড় আপন, এ পাড়
দূরে যেতে চাই আরো,
কিন্তু তারপর যে অনন্ত, অসীম !

গর্জন সয় না,
নিস্তব্ধতা ঢের ভালো
মাথায় হাত বুলিয়েছিল -
শান্ত নদীর তীর আর
ছলাৎ ছলাৎ ।

আজ আর কোনো শব্দ নেই
আকাশ মেশে সাগরেই ।


বিষন্নতায় উপত্যকা
অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় 

এই উপত্যকা আজ বিষন্ন
সুর গুলো উড়ে গেলো
দূরে দূরে কোন এক অনন্ত পথে

এই উপত্যকা আজ ভারাক্রান্ত 
গাছেরা নিস্চুপ, আন্দোলিত নয় 
গা' দিয়ে ভেজা জলরাশি গড়িয়ে যায়

এই উপত্যকা আজ  আকাশমুখি
বর্তমান যে কী ভাবে ইতিহাস
হয়ে গেলো ভাবতে ভাবতে 
সমুদ্রহীন হয়ে গেলো অন্তস্থল

 এই উপত্যকা আজ বড় বিষন্ন...



আর এক বীণাপাণি
সমাজ বসু

বুনোহাঁস নেই,
চাঁদমালা কিংবা হাতেখড়ি---
তবু তিনি সরস্বতী।

অদৃশ্য বীণার তারে সেই আর এক বীণাপাণির---
সা-রে-গা-মার কারুকাজ গাঁথা নকশীকাঁথায় মোড়া
ভারতবর্ষের মানচিত্রে আজ কী ভীষণ হাহাকার---
বসন্ত পঞ্চমীর প্রহর শেষে লক্ষকোটি মানুষের
কান্নার প্রতিধ্বনি---

সুরহীন তালহীন কালহীন
বড় শূন্য শূন্য দিন...




সুরসম্রাজ্ঞী 
দীপক বেরা 


তাঁর হাতে ছিল এক অদৃশ্য বীণা
কন্ঠের জাদুতে তাঁর সুরের মূর্ছনা
একমেবাদ্বিতীয়ম, তিনি 'লতা মঙ্গেশকর'।
এ ধরায় ছিলেন তিনি বাগদেবীর মানবী রূপ
'সুরসম্রাজ্ঞী'র প্রয়াণে সারা দেশ আজ নিশ্চুপ
স্তব্ধ হল 'রঙ্গিলা বাঁশি'র সুরেলা সুরবাহার
ঝুলিতে রইল পড়ে নামী-দামি অজস্র পুরস্কার 
'পদ্মভূষণ', 'পদ্ম বিভূষণ' থেকে 'ভারতরত্ন'
'দাদাসাহেব ফালকে', ফ্রান্সের 'লেজিয়ঁ দনর'
রেখে গেলেন প্রজন্মের কাছে প্রেমের গোলাপ
আর, জীবনের এপিটাফে সুরমাধুরীর সংলাপ! 

দেখা হবে না তো আর.. 
দিন বদলের গানে, পালাকীর্তনের ধুনে
বসন্তের ডালে কোকিল-কন্ঠের সুর-ঝঙ্কারে
তোমার নিজস্ব শৈলীর সারস্বত উচ্চারণে! 
পায়ে পায়ে তোমার স্মৃতির সরণি বেয়ে 
হাঁটছি শবযাত্রার মিছিলের হরিধ্বনিতে
জানি, তুমি একা আজ, একান্ত মননে 
একার সঙ্গে একার মৌন কথোপকথনে। 

সঙ্গীত জীবনের দীর্ঘ পর্যটন শেষে
সুরলোকের এই অনন্ত যাত্রাপথে 
দিয়ে যাও সুরসাধনার নিভৃত আহ্বান 
আর, রেখে যাও তোমার বিস্ময় প্রতিভার 
সুর-বৈভবের পবিত্র স্বর্গীয় পারিজাত ঘ্রাণ! 
থাকো তুমি সুর-লয়, ছন্দ-তালের জগতে 
আমাদের চির প্রণম্য, চির দিশারী হয়ে---
সর্বকালের সঙ্গীতের একচ্ছত্র সুরসম্রাজ্ঞী হয়ে। 



জন্ম এক অনিবার্য নূতন 
বিকাশরঞ্জন  হালদার 

না, কোনো মৃত্য নয়। জন্ম এক অনিবার্য নূতন

নত নয়নে বিনীত ডাক? আহ্বান? 
অবসানের সীমানা পেরিয়ে দূরে আরও দূর পরিক্রমা ...
সঙ্গে চলে সুর সুন্দর! 

শ্বাশত মধুর কণ্ঠ, নিষ্ঠা,সাধনা 
ধেয়ে যায় ভালোবাসা, অনন্ত শ্রবণ

অবসান, আঁধী-অন্ধকার, বয়ে আনে নবজন্মে 
প্রভিন্ন আলোক!

সে-তো আবহমান  ...


লতাজি স্মরণে 
প্রদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী

আজ ভারত গগন শূন্য বড়ই
   সুরসাধিকা আস্তাচলে ,
চিনচিনে ব্যথা হৃদয় জুড়ে
   এই অন্তিম ফলাফলে ।
জীবন মরণ সত্য দুটোই
   তবু প্রাণ ছিল মন্দির, 
সুর  ধূপ ধূনা পুণ্য ছোঁয়ায়
    রেখেছিল তাকে ধীর ।

কতকাল ধরে সুরমায়াজাল 
    কোকিলের কুহু তান ,
কত যে শব্দ ছন্দ লহরী
    উচ্ছ্বাস ভরা প্রাণ ।
তিনি সুরজাদুলতা সুর -ব্যাকুলতা
   কণ্ঠ সুরায় জারানো,
তিনি সুর তপোবনে নিভৃতচারিনী
  সঙ্গীত সুধা মাখানো।

সুর তাল লয়ের তিনি অপ্সরা
  বেগম ইন্দ্রসভার ,
চলনে বলনে সুরের যাপনে
   সুরই কণ্ঠহার ।
কত যে ভাষায় নিখুঁৎ আশায় 
   খেলতো সে রামধনু ,
কত দেশপ্রেম প্রেমের আগুনে 
   স্নিগ্ধ হতো সে তনু ।

কত যে আবেগ নিত্যকালের 
  তাঁর কণ্ঠেই মুগ্ধতা,
বহতা সে নদী সুর তাল সাথে 
  বিরাজিত শুদ্ধতা ।
আকাশ প্রদীপ আজ নিভে গেল 
  ঢেকেছে কৃষ্ণ আঁধারে ,
পা মা গা রে সা র সেই নিবেদন
  আর ফেরে কি এধারে !!


 



একটি অপ্রকৃত ভগ্নাংশের আয়না অথবা চারাগাছ
নিমাই জানা



ঋগ্বেদ আগুনের কোন পরিমাপ হয় না বলতেই দক্ষিণ মুখটি ব্রহ্মাস্ত্র ফেলে চলে যাচ্ছেন প্রাচীন তীর্থক্ষেত্রের উর্ধ্বাঙ্গে

অক্ষৌহিণী সেনাদের উড়িয়ে দেওয়ার পর দাহিত ক্ষতস্থানটিকে একবার জলীয়বাষ্প দিয়ে মেপে নেয় হিমঘরের কোন ভার্গবী , আমি পলেস্তারা খসানো প্রবাল পাথরের কাছে গিয়ে দেখেছি বৈকুণ্ঠ বলয়ের ঠোঁটে লেগে থাকা পেন্সিল কম্পাস গুঁড়োয় সহস্র অন্ধ প্রলয়ের বৈরাগীরা সাদা পোশাক পরে নেচে বেড়িয়েছেন জলন্ধর সংসারের ভেতর
কতোবার মৃত্যুবরন করেন এই বৈষ্ণবী ও পুরুষ , স্বয়ম্ভু শরীর নিয়ে তিনি জরায়ুজ হয়ে গেছেন অবলিক সলিটারি বিষবৃক্ষের তলায় দাঁড়িয়ে
ক্ল্যামাইডোমোনাস অথবা আশাবরী পর্বত গুহায় আমরা ক্রমশ পরজীবী হয়ে যাচ্ছি লিউকোপ্লাস্ট তন্ত্রীকে হারানোর পর ,
চতুর্ভুজ আগুনের ভেতর মৃত্যুর আরো একটি ১১ /২ অপ্রাকৃত শরীর দেখেছি , যে ক্রমশ পিচ্ছিল নাভির ভেতর বিবস্ত্র থাকে অর্জুন অস্ত্রশিক্ষা অধ্যায়টির পর ,

দ্রোণাচার্য শিবাজী ঘাটের বার্নিং প্লেসটিকে বিলক্ষণ চিনতেন
নাভি নেই অথচ শরীরের রোমকূপে গজিয়ে উঠছে ভৈরবীর স্বরলোক , আকাশ থেকে একটি সাদা পালক রাজহাঁসের গর্ভকেশর ছাড়িয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে আলোকমন্ডলের গোপন গভীরে কন্ঠনালীর প্রাচীন গুহা গহ্বর থেকে ব্রহ্মা ৎ বিষয়ক কন্ঠ থেকে নির্গত করছেন এক খাম্বাজ সরস্বতীর দেহ
আমরা সকল বিষধর সাপকে আর ভয় পাইনা , মন্বন্তর অসুখ গিলে খাওয়ার পর সাপেরা সায়ানাইড লোমকূপ আর কক্সিস স্কোয়ামাস ঢেকে দিয়েছে ক্লান্ত মৈথুন পাখির ক্যানাইন দাঁত দিয়ে
বৈরাগ্য পৃষ্ঠার ত্রিকোণমিতিক অঞ্চলগুলো সমাধান করছি ঋণাত্মক ৪৪ ডিগ্রির বাঁধভাঙ্গা হিমায়িত জমাট স্ত্রীলিঙ্গ দিয়ে 

নাইটিঙ্গেল পাখিটি আমাদের নিশিরাতের সরোদ শেখাচ্ছেন
বাকলমোচন করলেই মৃত্যুটি হাফহাতা জামায় নিজেই আগুন ধরিয়ে দেয়
 


হৃদয়লতা 
 তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য 
       
 এক আকাশে  একটি "লতা " 
 বীণা  হাতে চললে কোথা ? 
 পড়ে রইল গানের ঘরবাড়ি  হৃদয়ে সুর  ফেরি।
তুমি জানোনা তুমি ছাড়া আমরা বড় সুর আনাড়ি!
মর্তে এলেন সরস্বতী ধন‍্য হল বসুমতি।
যে কোনো ঋতু যে কোনো সময় সপ্রতিভ উদয়
বসন্ত কিংবা বর্ষা লতার গানে 
 হৃদয় আবেগ আনন্দ প্লাবনে।
 বিষাদ সাজাতে আজ সব  ফুলগুলো ফুটে আছে।
কে সামলাবে গভীর  সমুদ্রের সঙ্গীত সম্ভার?
সরস্বতীর বিসর্জন ভুল কথা কেন বলে মন?
দেবী আছেন গানের প্রাণে  সুর ভূবনে।
গ মানেই গান সুরোলোক আকাশ  ভরা একটি লতা
   প্রেম বিরহে হৃদয় ব‍্যাকুল বারতা।
আকাশের মুখ ভার হৃদয় ভেঙে চুরমার।
একটি লতা আকাশ পানে 
"আজা রে পরদেশী " গাইছেন স্বর্গের অনুষ্ঠানে।



প্রণমি তোমায় --লতা মঙ্গেশকর
নীতা কবি মুখার্জী


আমাদের গর্বের লতা মঙ্গেশকর, সুরের রানী তুমি
মা সরস্বতী  দিয়েছেন বর, তোমার তুলনা শুধু তুমি!

আপামর ভারতবাসী, অখিল বিশ্বের তুমি আপনার জন
তোমার মিষ্টি সুরের জাদুতে ভরেছো সকলের মন।

কত শত সম্মান, পুরস্কারের তুমি অধিকারিণী
অতি সাধারণ, নিবেদিত-প্রাণা, তুমি নিরহঙ্কারিনী।

তোমার সৃষ্টি, তোমার শিল্প, তুমিই মহাসমুদ্র সম
তোমার প্রতি শত সম্মানও  মনে হয় অপ্রতুলতম।

আসমুদ্রহিমাচল  আজ চোখের জলে জানালো বিদায়!
ঘরের লক্ষ্মীমেয়ে আজ কত দূরে চলে যায়, হায়!

আবার এসো গো সোনার মেয়ে, ভারতরত্ন তুমি,
প্রণাম তোমায়, সেলাম তোমায়, তোমার চরণচুমি।


চলে গেলেন গানের সরস্বতী
অশোক ব্যানার্জী


চলে গেলেন লতা মঙ্গেশকর
চলে গেলেন গানের সরস্বতী
তানপুরাটা স্তব্ধ হলো আজ
রেখে গেলেন অনেক মধুর স্মৃতি।

কণ্ঠে বসে স্বয়ং সরস্বতী
গানে গানে ভরিয়ে দিয়ে ভুবন
সরস্বতীর বিসর্জনের দিনে
সুরলোকে ধীর পায়েতে গমন।

কেমন করে ভুলবো আমরা তাঁকে
তাঁর গানেতেই মজেছিলাম বেশ
তাঁর গানেতেই দুলছে সবার মন
তাঁর গানেতেই হাসিকান্নার রেশ।

দু'চোখে আজ জল ভরে নাও সবাই
জিরোতে দাও ক্লান্ত শরীরটাকে
গানগুলো তাঁর থাকবে সবার প্রাণে
দু'হাত জুড়ে প্রণাম কর তাঁকে।



লতা কোনো শব্দ নয় লতা একটি গান 
অশোক   রায়

একক দশক পার হয়ে শতকের দোরগোড়ায়
বীনা নিন্দিত সপ্তসুরের ধারা এসে থামল বুঝি
স্বর্গ মর্ত্যর সীমানায়

ছোট থেকে বড় তোমার কণ্ঠের জাদুতে 
মোহিত হয়নি এমন মানুষ মেলা ভার 
হিন্দি বাংলা ছবির গান ভজন ঠুংরি বৈচিত্র অপার 

ঈশ্বর -দত্ত হলেও এমন কোকিল কণ্ঠ
বছরের পর বছর ধরে রাখা উচ্চাঙ্গের সাধনা
তোমার গান ছিল মানদন্ড আপামর শিক্ষার্থীর 

সৃষ্টির রথ তো থামিয়ে দিয়েছিলে সেই কবে
তবু তোমার গান ঢেউ হয়ে ফিরে ফিরে আসে 
ঝিনুকের মুক্তো হৃদয় তটে সুকরুণ রাগে।

    

কিংবদন্তি গায়িকা লতা
শ্রাবণী বসু


সুর-সরস্বতী লতার কণ্ঠে
প্রাণ পেয়েছিল সংগীত।
প্রতিভাময়ী শিল্পীর সুরের ঝরনাতলায়
অমরত্ব কুড়িয়ে পেয়েছিল ,
'সা' থেকে 'সা'।।

দেশ ছাড়িয়ে উপমহাদেশ পেরিয়ে
পৃথিবীর কোণায় কোণায়
গড়ে উঠেছিল সুরের সাম্রাজ্য।

সে এক বিস্তৃত মায়ার ভুবন
আসমুদ্রহিমাচল কণ্ঠ মাধুর্যে
ভিজতে ভিজতে পেরিয়েছে
দেশ এবং কালের সীমা।

  সারস্বত কন্ঠটি সাঁকো হয়ে
  পথ কেটেছে মানুষের হৃদয়ে।
অবিনশ্বর সেই কণ্ঠের নাম 'লতা'
অবিস্মরণীয় পাখিটি, 'নাইটিংঙ্গেল'।

সোনার অক্ষরে মহাকাল  নামটি
লিখে  রাখায় -লোকে লোকে,  
কালে কালে তিনি -কিংবদন্তি।       


৺লতা মঙ্গেশকর
গৌতম বাড়ই



মনে কুঠুরিতে রেশ রয়, মনে হয়
হাজারটা বছর গান হয়েছে
হাজারটা বছর শুনি
লতাপাতায় অন্তরীক্ষে
বায়ুর গগণ তলায়
কিন্নরী সে এক কন্ঠী কোকিল
গান ধরেছে গলায়
এমন কী আমার বঙ্গভাষায়
সুরেলা সেই গলার,
রেকর্ডপ্লেয়ার ক্যাসেট থেকে আকাশের ঐ বাণী
জানি,জানি, গানওয়ালাদের বড়দিদি,
লতা মঙ্গেশকর নাম খানি।

ফেব্রুয়ারি ছয় বিশের পর বাইশ হল সাল,
লতা মঙ্গেশকরের সাঙ্গ হল অমূল্য ইহকাল ।

ভোরের কোকিল আর জাগবে না
সারেগামাপাধানিসা কন্নড় কী তারানা!
গানের সেই বাতিটি আঁধার পেল দেশটি।

ভেসে আসে দূর থেকে--- একদিন আমরা ক'জন
মিলে চললাম টাইগার হিলে, যেখানে নিঝুম সন্ধ্যায়
ক্লান্ত পাখিদের বাসায় ফেরা কারণ প্রেম সব্বার
একবার এসেছিল নীরবে...


লতা মঙ্গেশকর
স্মৃতি শেখর মিত্র 

এক আবেগের নাম "লতা মঙ্গেশকর"
যে লতায় পারিজাত ফুল ফোটে
 ঈশ্বরের চরণে ঠাঁই পাওয়ার জন্য।
 আপামর ভারতবাসীর ভালবাসায় যাঁর
  নাড়ীর বন্ধন।এ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ গায়িকা
  যাঁর কখনও মৃত্যু হয় না হতেই পারে না।
  তিনি আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন
  যতদিন সঙ্গীতের সমাদর থাকবে এই ভারতভূমিতে।এক হৃদয়বতী রমনীর নাম লতা
   যাঁর ভালবাসার ছোঁয়ায় ও সুরের মূর্ছনায়
   মৃত্যু পথগামী মুমূর্ষুও প্রাণ ফিরে পায়।


       

 সুরের আকাশে
   জয়শ্রী সরকার

সরস্বতীর বরপুত্রী তুমি!
সংগীতের জলসায় সহস্র ধারায় রেখে গেলে
সুর আর স্বরের আবেশ ,
থেকে গেল রেশ... 

তোমার সুরের নিবিড় আলিঙ্গনে
আজও যেন সিম্ফনি বেজে ওঠে।
কন্ঠে তোমার ভৈরবী-বিভাবরী,
কখনো আবার বেজে ওঠে মেঘমল্লার,
কখনোবা সুরেলা আহির-খাম্বাজ!

গানের রানি তুমি... 
ভারতের বুলবুলি, বিশ্বের নাইটেঙ্গল;
সুরের আকাশে শুকতারাটির মতো
জীবনের যাবতীয় ক্ষত জুড়িয়ে দাও তুমি!
তোমার সুরেলা কন্ঠে একদিন যে আকাশে প্রদীপ জ্বালিয়েছিলে
আজ তুমিই চলে গেলে সেই তারাদের দেশে,
স্বর্গের পারিজাত হয়ে , নতুন সুরের আবেশে!

যেন জীবনের না-থামা কোনো নাগরদোলায় চেপে
নম্র নদীর মতো চলে গেলে তুমি...
দিয়ে গেলে অমরত্বের আশ্বাস!
এখানে স্মৃতির অমর উদ্যানে নিঃশব্দ-নীরব ধ্যানে
অশ্রুর লিপিতে লেখা হয় তোমার স্মরণিকা!
কন্ঠহারা ভারতবাসী...
উপলব্ধির অক্ষরমালায় সাজিয়ে তোলে
জীবনের প্রবহমানতা... 

তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী ! তাই তো মন বলে,
মৃত্যুকথারা চলে যাওয়া শুধু না যে
মৃত্যুঞ্জয়ী জীবনেরই সুর ভাজে!      
  

সুর পাখি
জয়দেব মাইতি 

চলে যাওয়া কি সহজ ছিল 
সহজ ছিল কি ওড়া? 
আপন ডানায় বাঁধলে  সবায় 
ভেঙে কঠিন বেড়া?

অনুরাগের সোহাগ ছায়ে 
আঁকলে ভূবণ ঘর
সুরের মাতন আজও মাতায়
ভোলায় আপন পর।

সুরের দেশ- দেশের সুর 
একসূত্রে বাঁধা 
অমৃতলোকে সুরগামী
লিখি শোক গাঁথা। 


এ এক সকাল
রঞ্জন ভট্টাচার্য

যে কন্ঠে একদিন ফুটেছিলো গান 
আজ যেন স্তব্ধ সকাল !
নতুন করে পাবো না তাঁকে
পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করি 
আমৃত্যু কাল ...
ফল্গুধারার মতো বয়ে যায় 
চোখের জল 
শুধু রাজপথে নয় হত গরীবের বুক ফাটে 
ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠে 
হৃদয়ের বল !
এ এক সকাল !
বিরহ বেদনায় নিরবে পথ চলা 
অনন্তকাল...!

      
রূপকথা
হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়


তোমার অনন্ত ঘুমের কাছে আমার এই ক্ষণিক
জাগরণ কিছু নয়,লাজুক অন্ধকারে ছদ্মবেশ 
সহ‍্য করা বড়োই কঠিন
প্রার্থিত দু:খ আমাকে ধ‍্যানমগ্ন হতে শিখিয়েছে
এখন আমি অন্ধকার থেকে আলোর টুকরো
গুলি সযত্নে কুড়িয়ে রাখব কুলুঙ্গিতে 
যাতে প্রতিচিত্রে মিশে যায় প্রাচীন রূপকথা।


আবহমান 
বিমল মণ্ডল 


সহজ বিদায়ে ভেসে এল উতলা সুরের মায়া,যেন অনন্ত জলধারায়  গড়িয়ে যাচ্ছে উপলখণ্ডভূমি দিয়ে। বেজে চলেছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত,মেলোডি ও ক্ল্যাসিক্যাল সুর সত্তায়।

আবহমান  আমাদের  এই দেশ ঘন শিকড়ের মতো শত ব্যঞ্জনাময় সুরেলা সুরের ভেতরে দোলায়, আপন করে নেয় ছায়া ছবির সাবলীল স্বভাব। সেই    সুরব্রহ্মের শ্বাস- প্রশ্বাস আজও অনন্ত বাতাসে অমরত্ব পায়।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন