লেবেল

মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২২

মহান মনীষী বিবেকানন্দের ১৬০তম জন্মদিনে অঙ্কুরীশা-য় কবিতায় শ্রদ্ধাঞ্জলি।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 





মহান মনীষী বিবেকানন্দের ১৬০তম জন্মদিনে অঙ্কুরীশা-য় কবিতায়  শ্রদ্ধাঞ্জলি


১.

হে মহাজীবন

সৌমিত বসু 


তিনি আমাদের শিখিয়েছিলেন 

কিভাবে ছবির ওপর থুতু ফেলতে হয় 

আমরা শিখিনি ; ভয়ে, সামাজিকতায়, বশ্যতায়।


দূরে সমুদ্রের ওপর জেগে উঠছে তার চূড়ো 

ভিজিয়ে দিচ্ছে আমাদের কাপড় চোপড়, 

                                            গ্লানি, সমূহ অতীত;

চোখ জ্বালা ক'রে কান্না এসে দাঁড়াচ্ছে 

রেটিনা ব রা ব র 

স্পর্শ এসে দুলিয়ে দিচ্ছে বিশ্বব্রম্ভান্ড 

একটি ছড়ি হাতে নিয়ে তিনি হেঁটে চলেছেন 

উত্তর থেকে দক্ষিণ 

পায়ের স্পর্শে নেচে উঠছে অভাবী ভারতবর্ষ।


বিজ্ঞাপনের সমস্ত রং শুষে নিয়ে 

একটি বিশাল বটগাছ ডালপালা ছড়িয়ে 

উন্মাদের মতো শুধু হাসছে 

আর তার তলায় ছায়া পোহাচ্ছে একনৌকো সন্ততি।



২.

ইহাই সত্য 

বিশ্বজিৎ রায় 


প্রতিটা জন্মজয়ন্তীতে আপনার মূর্তিতে  মালা পরিয়ে, ধূপ-ধুনো জ্বালিয়ে পুজো করে,

অনেক ভড়ং, আদিখ্যেতা দেখাই আমরা—

আদতে, এ যুগে আপনি জন্মালে আপনাকে আমরা পাত্তাই দিতাম না, এতো সাধু-সন্তদের ভীড়ে

আপনাকে চিনতামই না হয়তো, 

পুজো পাঠ করা তো অনেক দূরের কথা---


আপনি এসব কথা জানলে দুঃখ পেতেন, বিবেকবাবু, 

কিন্তু, " ইহাই সত্য"...


আপনার ওই গেরুয়া বসন দেখে আমরা "সেকুলাররা" আপনাকে হিন্দুত্ববাদী কোনো 

"ভন্ড বাবা"বলে প্রথমেই দেগে দিতাম, 

আর, আপনার ওই সব বাণী-বক্তৃতা শুনলে, 

" ফালতু জ্ঞান মারছে" বলে, পাস কাটিয়ে চলে যেতাম 'জরুরী' কাজে...


দুস্থ-অসহায় মানুষদের পাশে  দাঁড়ালে বা 

দলবল নিয়ে প্লেগ রুগীদের  সেবা করতে দেখলে 

ধরে নিতাম,  নিশ্চিত আগামী নির্বাচনে 

দাঁড়াবার মতলবে জমি তৈরি করতে নেমেছেন—

বিদেশিনী নিবেদতার সঙ্গে সখ্যতা নিয়ে নানান রসালো গল্প বাজারে ছেড়ে দিতাম নির্দ্বিধায়.... 


এ'যুগে আপনি জন্মাননি বলে এসব থেকে বেঁচে গেছেন, 

নাহলে কী যে দুর্দশা হতো আপনার ভেবে পাচ্ছিনা--- 

এই যে আপনার নামে প্রতিদিন জয়ধ্বনি দিচ্ছি, 

আপনার নামে কত ভালো ভালো কথা বলছি, সরকারি-বেসরকারি কতকিছুর নামকরণ করছি, 

সব ফক্কা হয়ে যেত, 

আমেরিকা যাওয়ার জন্য আপনি পা বাড়ালেই 

কাঠি করে দিতাম গোপনে—


হে 'বীর সন্ন্যাসী',  গরীবের এই কথাগুলো শুনে ভালো লাগবেনা আপনার,  কিন্তু, "ইহাই সত্য" ...



৩.

বিবেকানন্দ স্মরণে

নীতা কবি মুখার্জী


আমাদের সবার প্রিয় মনীষী বিবেকানন্দ তুমি

তোমার গরবে গর্বিত হয় আমার ভারতভূমি।


রামকৃষ্ণের মানস-পুত্র, মহান মনীষী নরেন

ভারত-দেশের সনাতন ধর্ম সর্ব সমক্ষে তুলে ধরেন।


তাঁহার বানী যে অমর বানী আমরা যে তা মানি

তাঁহারই দীক্ষায় দীক্ষিত হই, তাঁরেই ঈশ্বর জানি।


জীবে করো প্রেম, আর্ত-দুঃখী সবারেই সেবা করো

ঈশ্বর-সৃষ্ট এই দুনিয়াটা প্রেম দিয়ে শুধু ভরো।


ধর্ম-বিজয়ে যাত্রা করলেন দেশ হতে দেশান্তরে

ভারত-মায়ের সনাতন ধর্ম রইলো সর্বোপরে।


দামাল, চঞ্চল, দস্যি ছেলে, নাই তুলনা তাঁর

ভয় কাকে বলে জানতেন না, দুঃসাহস যে অপার।


ধন্য গো মাতা রত্নগর্ভা, রতন তোমার ছেলে

একশো কোটি সন্তান মাঝে হয়তো একটা মেলে।


ধর্মের নামে দিকে দিকে আজ, লড়াই-লুটত-রাজ

অমানুষ, ভীরু ধর্মান্ধরা শোষন করছে সমাজ। 


একবার ফিরে এসো এ ধরায় বীর-সন্ন্যাসী তুমি

তোমার পাদস্পর্শে ধন্য আমরা, ধন্য মাতৃভূমি।


ভারত-মায়ের বীর সন্ন্যাসী, মহান ঋষি যে তুমি

তোমার চরণ-পরশে হয়েছে ধন্য ভারতভূমি


ছোট্ট নরেন বড় দুরন্ত, বড় যে দস্যি ছেলে

সকল ভয়কে জয় করে সে যে সব বাধা পায়ে ঠেলে।


ধর্মকে নিয়ে কাটাছেঁড়া আর শুধু হানাহানি চলে

দেখ রে, মানুষ ! ধর্মান্ধরা! ধার্মিক কাকে বলে!


দেশে দেশে গেলেন ধর্ম প্রচারে, করলেন বিশ্বজয়

তাঁরই চরণ-পাদপদ্মে সব পাপ হয় ক্ষয়।


আর্ত-দুখীর সেবা করলেন মনপ্রাণ এক করে

শিব জ্ঞানে পূজা করলেন জীবে অনন্ত ভক্তি-ভরে।


রামকৃষ্ণ হলেন গুরু, সারদামনি যে মাতা

নিবেদিতা হন মন্ত্র-শিষ্যা, কত ভাগ্যের কথা।


ভারতের মহান সনাতন-ধর্ম বিশ্ব করল জয়

মানুষেরই মাঝে দেবতা বিরাজে, কিসের রক্তক্ষয়?







৩টি মন্তব্য:

  1. কবিতা দুটি খুব ভালো হয়েছে,বেশ লাগলো।

    উত্তরমুছুন
  2. কবি সৌমিত বসু উদ্ভট কল্পনা করে তাঁর কবিতায় প্রথম তিন লাইন যা লিখেছেন সেটাকে বিকৃত বিবেকানন্দ দর্শন বলা ছাড়া আর কিছু যায় না। বিবেকনন্দ কোনোদিন থুতু ছিটাতে বলেন নি,পৌত্তলিকতার মধ্যে কিভাবে মূলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ পায়, এবং সেই মূল পরম স্রষ্টার প্রতি,
    সেই পরম আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে হিন্দুরা মূর্তি পুজো করে।এই কথাটা ব্যাখ্যা করে বোঝানোর জন্য তিনি বলেন দেওয়াল থেকে মহারাজের ছবিটা নামিয়ে আনতে এবং তার উপর থুতু দিতে। স্বামীজি জানতেন সেটা তাঁদের কাছে অত্যন্ত আপত্তিকর বলেই মনে হবে কারণ তাঁরা সম্মান করেন। এটা স্বামীজি শিক্ষা দিতেই এভাবে বলেছিলেন। তাই তিনি দেওয়ানকে বলেছেন,রাজাকে আপনারা সম্মান করেন, তাহলে কখনো পারবেন কী সেই ছবিতে থুতু ছিটাতে? মূর্তি বা ছবির মধ্যে মানুষের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের বিষয়টি তুলে ধরতে স্বামীজি এভাবে কথাগুলি বলেন। কী আশ্চর্য, সম্পূর্ন উল্টো ভাবনায় লিখেছেন সৌমিত বসু। কবিতা লিখে কবি তাঁর কল্পনা আশ্রয় করতে পারেন, কিন্তু ইতিহাস এবং স্বামীজির ভাবনা, শিক্ষা, দর্শন বিকৃত করে লিখতে পারেন না।আমি কবিকে অনুরোধ করব, তাঁর প্রতি পাঠকের শ্রদ্ধা যাতে বজায় থাকে তাঁর জন্য স্বামীজি থুতু দিতে শিখিয়েছিলেন এই চরম ভুল কথাটি সংশোধন করে দিন।

    উত্তরমুছুন
  3. বিশ্বজিৎ রায় যা খুশি লিখেছেন, এসব লেখা কেন প্রকাশ করা হয় কে জানে!কবিতায় যে ভাষায় যা লেখা হয়েছে সেটা প্রথমত এটা কবিতা হয়ে ওঠে নি, যা খুশি লিখে চার ছয় লাইন দিলেই কবিতা হয় না, যাইহোক সেই বিতর্ক না করে বলি, বিবেকানন্দ সেই সমাজে জন্মিয়ে ঠিক সেই বাধা, এবং কু প্রচার , কবির কথায় কাঠি, ও সরেস গল্পের শিকার হয়েছিলেন, এবং তখন আরো বেশি সন্ন্যাসী ছিল, কলকাতার সমাজ তাঁকে সাধু হিসেবে মানতেই পারত না, এবং বিদেশিনীর সঙ্গে তাঁকে নিয়ে অনেক গল্প রটিয়েছিল, এমনকি তাঁকে ফাঁসি দেওয়া উচিত বলে হাইকোর্টের তৎকালীন এক হিন্দু বিচারপতি বলেছিলেন কারণ বিবেকানন্দ নাকি হিন্দু ধর্মের কলঙ্ক , ইত্যাদি ইত্যাদি।তাঁর শিকাগো ধর্ম সভা থেকে স্বীকৃতি বাতিলের জন্য এবং পরে বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠার সময় কলকাতার বাঙালি সমাজের একাংশ স্বামীজির বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল। এমনকি তাঁর মৃত্যুর পর কোনো বাংলা কাগজ সেই কথা প্রকাশ করে নি।কবিতা লিখতে গেলে এসব না জানা থাকলে মুস্কিল, সব দিক থেকে কবিতাটি প্রকাশের অযোগ্য।

    উত্তরমুছুন