লেবেল

বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১

ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস পর্ব-১৪।। ট্রেকিংয়ের পথে রহস্য — অনন্যা দাশ।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 




ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস পর্ব-১৪




ট্রেকিংয়ের পথে রহস্য 

অনন্যা দাশ 


ট্রাস্টি অ্যালের দোকানে গিয়ে ওরা দেখল গাড়ির টায়ারের মেরামত চলছে।

ভজা বলল, “আমি নিশ্চিত ওই গাড়িতে কিছু একটা লুকোনো আছে যেটা কিছু লোক খুঁজছে। কী আমি জানি না তবে দামি কিছু একটা। সেই জন্যেই ওরা ওই ধূসর হ্যুন্ডাইতে করে আমাদের পিছু নিচ্ছে। এবার গাড়িতে কী আছে সেটাই খোঁজার পালা!” 

বলে গাড়িটার ভিতর ঢুকে খুঁজতে লাগল ভজা। সিটের কোনে হাত ঢুকিয়ে এদিক ওদিক চারিদিকে। কিছুক্ষণ খোঁজার পর একদম ছোটো একটা মোড়ক হাতে নিয়ে বেরিয়ে এল।    

“মনে হয় এটার জন্যেই ওরা আমার পিছনে লেগেছিল, আর তো কিছু পেলাম না। আমাদের বাড়ির পার্কিং লট থেকে শুরু করে সব জায়গায় ওরা গাড়িটার ভিতর ঢুকতে চেষ্টা করেছে কিন্তু প্রতিবার অ্যালার্ম বেজে ওঠে আর কেউ না কেউ এসে পড়ে তাই ওরা কিছুতেই সফল হতে পারেনি। শেষমেশ আমাদের এখানেই আটকে রাখবে বলে টায়ার থেকে হাওয়া বার করেছে। অঙ্কন তোর মনে আছে গোমড়া মুখো হিপো আঙ্কেল এই গাড়িটা কেনার জন্যে কেমন উঠে পরে লেগেছিল কিন্তু তারপর মারামারি হতে তুই ফেসবুকে ছবি দিয়ে দিবি শুনে ভয়ে পালালো! তখনই আমার বোঝা উচিত ছিল কিছু একটা গন্ডগোল! ওর সঙ্গে যে শুঁটকো চেলাটা ছিল সেই তো মনে হয় আমাদের মোটেলে এসে উঠেছিল বিশাল বপুকে নিয়ে।”     

“ওর ভিতরে কী আছে দেখ!” অঙ্কন উত্তেজিত হয়ে বলল, ওর যেন আর তর সইছিল না   

ভজা মোড়কটা খুলে দেখে বলল, “এ বাবা, এটা তো একটা পেনি, মানে এদের এক পয়সা! এটার জন্যে এত কিছু?”

রক পেনিটাকে হাতে নিয়ে দেখে বলল, “ওরে বাবা! এটা যে সে পেনি নয়! ১৯৪৩এ তৈরি তামার পেনি। সেই বছর সব স্টিলের পেনি তৈরি হয়েছিল কিন্তু কয়েকটা তামার পেনি ভুল করে তৈরি হয়ে বাজারে ছাড়া হয়ে গিয়েছিল কোন কারণে। এই পেনিগুলো আজকের বাজারে আশি হাজার থেকে একশো হাজার ডলারে বিক্রি হয়!”       

ভজার তো মাথায় হাত বলল, “সর্বনাশ! তার মানে এটা যার গাড়ি ছিল সে ওটাকে চুরি করে গাড়িটার মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল! কিন্তু সে তো জেলেই মারা গেছে। হুঁকো মুখো আঙ্কেল পুরো ব্যাপারটা জানত বলে ওর ওই দুই চেলাকে আমাদের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছিল! দুর্ভাগ্য চেলাগুলোর মাথায় বুদ্ধি বেশি নাই তাই এতদিনেও কিছু করতে পারেনি! যাই কেভিনকে বলি ওর মামাকে বলবে! উনি খোঁজ খবর নিন। পেনিটা যার ছিল তাকে ফেরত দিয়ে দিতে হবে তো!”    





চাকা সারিয়ে ওরা বাড়ির পথে রওনা হয়েছে এমন সময় রক গাড়ি চালাতে চালাতে সামনের আয়নায় দেখে বলল, “পিছনে কয়েকটা গাড়ি আসছে!”   

ওরা তাকিয়ে দেখল কয়েকটা ধরধরে ট্রাক ওদের পিছনে আসছে। ভজা বলল, “রাস্তার ধারে সাইড করে গাড়ি থামাও!”

ওরা গাড়ি থামাতে ট্রাকগুলোও ওদের পিছনে এসে থামল। প্রথম ট্রাকটা থেকে নামলেন গ্রান্টের বাবা, সঙ্গে ওর দিদি। ওদের চোখে জল। পরের ট্রাক থেকেও বেশ কিছু লোক নামল।  

গ্রান্টের দিদি কেঁদে ক্ষমা চাইল আর অন্যরা সবাই ওদের ঘিরে ধরে এক সঙ্গে কথা বলতে লাগল। শেষে গ্রান্টের বাবা ওদের সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “আমাদের ব্যবহারের জন্যে আমরা অত্যন্ত লজ্জিত কিন্তু প্রাণের ভয় বড়ো ভয় তা তো জানই! তোমরা আমাদের জন্যে, গ্রান্টের জন্যে যা করেছো তা আমরা কোনদিন ভুলব না!”

ভজা আর অঙ্কন তো কী বলবে বুঝতে পারছিল না। রক এগিয়ে গিয়ে গ্রান্টের বাবার হাত ধরে বলল, “আমাদের ধন্যবাদ দেবেন না প্লিজ! ও আমাদের বন্ধু ছিল। বন্ধুকে তো বাঁচাতে পারিনি কিন্তু ওর খুনিকে ধরার জন্যে যদি আবার একই ভাবে ঝুঁকি নিতে হয় তো আমরা নেবো, তাই না ভজা, অঙ্কন?”

অঙ্কন আর ভজা উত্তর দিল, “একশোবার!”




সমাপ্তি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন