আলোর উৎসব -৩৮
সুমনা রায়
১.
আলোর দিকে হেঁটে যাই
আলো নয়,তার বাঁকানো ঠোঁটে
জলবিদ্যুৎ খেলা করে।
গাজরের রঙের মতো হলুদ রোদ
তার মুখে পড়লেই
আমি পুড়ে পুড়ে যাই।
সাহস হারাই স্পর্শ খোঁজার।
সে নরম তরল হাতে ছুঁয়ে দেয়
আমার দুঃখের দিন রাত্রি।
তখন আমি গড়িয়ে গড়িয়ে
আলোর দিকে হেঁটে যাই।।
২.
হ্যারিকেন
বানভাসি জল গিলে নিয়েছিল বিদ্যুৎ।
প্রস্তর যুগের গুহা থেকে
অগত্যা বেরিয়ে এলো হ্যারিকেন।
তার পেটে কেরোসিন আর
মুখে আগুন ধরতেই
মুহূর্তে ধরা দিল ছোট্ট সূর্য।
চোখে ভেসে এলো হ্যারিকেনের তলায়
মাথা ঠোকাঠোকি ভাই বোন।
পুরনো রিফিল আগুনে পুড়িয়ে রং বাহারি সব বেলুন ।
বইএর তলায় লুডোর ছক্কার সাথে মিষ্টি তেঁতুলের চুরিকরা আচার।
একটু দূরে কালিপড়া হ্যারিকেনের তলায়
মাথা ঝুঁকে দাদু পড়ছে কাশিদাসী রামায়ণ।
ঠাকুমা লণ্ঠনের আলোয়
গরুর উপর টাঙিয়ে দিচ্ছে মস্ত মশারি।
মা ল্যাম্পের আলো জ্বেলে
উনুনে ভাজছে গরম মুড়ি।
তারই আলোয় বাবা উঠানে বসে তালপাতার পাখা নাড়ছে।
সে বাতাস আলতো করে
মুছিয়ে দিচ্ছে মায়ের পিঠের ফোঁটা ফোঁটা ঘাম।
সারারাত হ্যারিকেনের আলোয় আমার ভিতর দরজায় দাঁড়িয়ে রইলো বিলুপ্ত শৈশব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন