বুধবার, ৬ অক্টোবর, ২০২১

শুধু কবিতায়... আগমনী বন্দনা -২২ ।। বিশ্বজিৎ রায়।। Ankurisha ।।E.Magazine ।।Bengali poem in literature ।।

 





আগমনী বন্দনা -২২

বিশ্বজিৎ রায় 




মৃন্ময়ী ও চিন্ময়ী 


সারাবছর ঘুরে ঘুরে 'মা দুগগা' দেখি  ঘরেবাইরে,  
এখানে-সেখানে,  পাড়ায়-পাড়ায়, ট্রেনে- বাসে, প্ল্যাটফর্মে, অফিসে, হাসপাতালে, ইটখোলায়---
কতো জায়গায় যে তাদের দেখা পাই,  
দেখতে দেখতে হাঁপিয়ে যাই ... 

মুন্নির মা রোজ সন্ধ্যায় যখন দুরন্ত ক্ষিপ্রতায়  
দু হাতে চপ ভাজতে ভাজতে ঘিরে থাকা খদ্দেরদের হাতে ঠোঙায় তুলে দেয়, 
রসিফার মা যখন ঝড়ের গতিতে  তিনটে  বাড়ির বাসনকোসন ধুয়ে, জামাকাপড় কেচে, 
অবাক গতিতে একটা সকাল পার করে দেয়, 
তখন ভাবি,  'মা দুগগার' মতো এদেরও  দশটা হাত রয়েছে কি!

চন্দনা আর কেয়াদিকে দেখি 'মেল ওয়ার্ড-ফিমেল ওয়ার্ড'-এর এমাথা থেকে ওমাথা বিড়ালের মতো নিঃশব্দ-দ্রুততায়  রোগীদের  সেবা দিচ্ছেন!
তুহিনাবৌদিকে দেখি সারাদিন অফিস করে ফিরে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা,  শয্যাশায়ী শ্বশুর মশাই, রান্নাঘর, কেমন বিরক্তিহীন মুখে সামাল  দিচ্ছেন ! ভাবি, 
কোথা থেকে আসে এদের এতো জীবনী শক্তি !

গড়ের মাঠে ফুটবল ম্যাচ থাকলে এক বউদিকে দেখতাম  টুপি পরে লজেন্স বিক্রি করতে, 
এখন দেখি তেমনই এক বৌদিকে টুপি পড়ে 
পাড়ায় পাড়ায় জ্যাম জেলি আচার বিক্রি করতে--- এই বৌদিরা পারেন না কি মা দুগগার খন্ডচিত্র হতে ? 

অবসরের পরও কণিকা দিদিমণি পড়ানো থামান নি। প্ল্যাটফর্মের এক কোনায় পথশিশুদের তিনি বিনা পারিশ্রমিকে শুধু পড়ান না, গান-আবৃত্তিও শেখান। রিক্সাওয়ালা উমেশ যাদবের মেয়ে পূজা এখন আই এ এস হয়ে আস্ত একটা জেলা সামলায়, 
অটোচালক গোপাল দাসের মেয়ে মৌসুমি 
ব্রম্মান্ড-গবেষণা করে তৃতীয় নয়ন দিয়ে,  এদের আমরা মর্ত্যের  'মা দুগগা' বলতে পারিনা কি? 

ভোটের সময় 'ডি সি আর সি' তে দেখেছি  কয়েকজন  দিদি কী অসামান্য দক্ষতায় সব কাজ করে চলেছেন, 
এক পুর-চিকিতসক দিদিকে দেখেছি প্রতিদিন 
শয়ে শয়ে মানুষকে আন্তরিক ভাবে  দিয়ে চলেছেন ভ্যাকসিন,  বিরক্তিহীন।

প্রতিটা আগমনীতে স্বপ্নে দেখা  'মা দুগগা' মর্ত্যে এলে  এইসব চেনা মা দুগগা দের মুখগুলো  মনে পড়ে যায়--- 
পুজোমণ্ডপে দাঁড়িয়ে মৃন্ময়ী  মাকে প্রণাম করার সময় এইসব চিন্ময়ীদেরও মনে মনে প্রণাম করি। 
এবারও করবো। দেব  শ্রদ্ধাঞ্জলি ...












কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন