বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ধারাবাহিক ভ্রমণকথা( পর্ব- ২৮)।। পৃথিবীর উল্টো পিঠ —বিশ্বেশ্বর রায়।।Ankurisha ।। E.Magazine ।।Bengali poem in literature ।।

 



ধারাবাহিক ভ্রমণকথা( পর্ব- ২৮)

পৃথিবীর উল্টো পিঠ
বিশ্বেশ্বর রায়



আজ আমরা ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। শার্লটের বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থান বাছাই করে প্রথমে একটা লিস্ট বানানো হল। কাছাকাছি কোথায় কোথায় আগে যাওয়া যেতে পারে। তো সেইমতো আমরা দুপুর এগারোটার দিকে প্রথমে গেলাম শার্লটের বিখ্যাত এক মানুষ বিলি গ্রাহাম প্রতিষ্ঠিত The Billy Graham Library-তে। 1921 সালে বিলি এখানকার এক সম্পন্ন চাষির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনা শেষ করে তিনি পারিবারিক কর্মে লিপ্ত হন। পরে 1952 সাল থেকে তাঁর মধ্যে এক প্রবল ঐশ্বরীয় প্রভাব লক্ষ করা যায়। তখন থেকেই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাঁর ধর্মীয় ভাবনা নিয়ে নানা প্রবন্ধ প্রকাশিত হতে থাকে। 'মানুষ নিমিত্ত মাত্র, ঈশ্বরই  সবকিছুর নিয়ন্তা' এটাই হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র। এই মন্ত্র নিয়ে তিনি বাইবেল এবং জেশাস ক্রাইস্টকে পৃথিবীময় প্রচারে মনোনিবেশ করেন। U S A Government তাঁকে ধর্মীয় প্রচারক তথা শান্তিদূত হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত ঘটেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে তিনি শান্তিদূত হিসেবে হাজির হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী Ruth ছিলেন এক জাপানি খৃষ্টান পরিবারের কন্যা। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাত ঘটেছিল। 2007 সালে তাঁর দেহাবসান ঘটে। তাঁদের পারিবারিক বাসগৃহ থেকে চার মাইল দূরে তাঁর স্থাপিত এই লাইব্রেরিটি শার্লট তথা আমেরিকার এক অন্যতম দ্রষ্টব্য।


      বিশাল জায়গা জুড়ে এই লাইব্রেরিটির বৈশিষ্ট্য হল--শুধু নিছক বইপত্র নয়, বিভিন্ন কক্ষে টি ভি এবং পর্দায় তাঁর সারা জীবনের কীর্তি-কাহিনি নিরন্তর প্রচারিত হয়ে চলেছে। প্রথম দ্রষ্টব্য একটি রোবটের জার্সি গাই, একটি রোবটের বিড়াল, এবং গোয়ালে রাখা পর পর বিশ-পঁচিশটি রোবট জার্সি গাই-বাছুর। প্রাথমিকভাবে দেখে জীবন্ত বলেই ভ্রম হওয়া স্বাভাবিক। তাদের শুধু ঘাড়ে, কান, চোখ এবং লেজটুকুই নড়ে। শরীরের বাকি সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অনড়। যেহেতু তিনি কৃষক পরিবারের সন্তান তাই ওই ডেয়ারি ফার্ম দিয়েই শুরু হয় দেখার পর্ব। এখানে কোনও প্রবেশমূল্য নেই। তবে অনুদানের ব্যাপার আছে। এবং আছে একটি রেস্টোরেন্ট। সেখানের খাবার কিন্তু বিনা পয়সায় মিলবে না।  সেখানকার খাদ্যসামগ্রীর প্রায় সবই তাঁরই কৃষিক্ষেত্রে উৎপন্ন।


        ওখানে মধ্যাহ্নভোজ সেরে চারটের দিকে ওখান থেকে বেরিয়ে আমরা গেলাম Up Town-এর কাছাকাছি এক বিশাল পার্কে। নাম Freedom park. সেখানে নানাবিধ খেলাধুলোর মাঠে, শিশুদের মনোরঞ্জনের নানান আনন্দ উপকরণ, অসংখ্য গাছপালা, একটি সুদীর্ঘ লেক--তার দু'পাশ দিয়ে চলাচলের রাস্তা, একটি সুবৃহৎ মুক্তমঞ্চ, দুটি ট্রেল, পিকনিক স্পট ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে। তবে ওই পিকনিক স্পটে রান্না করার অনুমতি নেই। বাইরে থেকে রান্না করা খাবার এনে সবাই ওখানে খাওয়াদাওয়া সেরে সারাদিন হইচই করে, খেলাধুলো করে, আনন্দ-উৎসবে মেতে থাকে। সবই চলে তবে কোনও হাঁকাহাঁকি, গোলমাল বা নোংরামি নেই। সবাই ক্যামেরায় ছবি তুলছে, খেলছে, জগিং করছে, ট্রেল করছে। আবার কেউ বা চুপচাপ বেঞ্চে বসে আছে, গল্পগুজব করছে।এক সুন্দর শোভন পরিবেশ। আর পুরো পার্কটাই 'No smoking zone.' অজস্র গাড়ি নিয়ে মানুষ আসছে, যাচ্ছে, আনন্দে মেতে আছে। জীবনকে এরা উপভোগ করতে জানে। এতো বিশাল পার্ক কলকাতা কেন সারা ভারতের কোথাও আছে কিনা জানা নেই। এর মধ্যে আছে একটা Nature  Auditorium. যেটা সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে। ওই পার্কে বিকেল সাড়ে ছ'টা পর্যন্ত কাটিয়ে আমরা সন্ধের মুখে মুখে Target Mall-এ গেলাম। কিছু কেনাকাটা সেরে  সাড়ে নটায় অ্যাপার্টমেন্টে ফিরলাম।




চলবে...


















শুধু কবিতায়...  আগমনী  বন্দনা বিভাগের  জন্য  আপনিও আপনার  মৌলিক  ও অপ্রকাশিত  দুটি কবিতা  পাঠিয়েদিন। 
ankurishapatrika@gmail.com




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন