লেবেল

বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১

আষাঢ়ে গপ্প কথা -১৯।। অরবিন্দ সরকার।। Ankurisha ।। E.magazine ।।Bengali poem in literature ।।




       

আষাঢ়ে গপ্প কথা -১৯

অরবিন্দ সরকার



 পড়াশোনা এখন

              

হ্যাঁরে নিত্য স্কুলে যাবি কখন। বিছানা থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে, খেয়ে নে! স্কুল যাবার জন্য তৈরী হ। 

একথা বাবা আনন্দ মোহন রায়ের প্রতিদিনের রুটিন বলা। বংশের প্রদীপ নিত্যগোপাল।আলো দেখার আশায় বাবা মা উৎসুক।

গাছপালা ঘেরা গ্রাম চৈতন্যপুর।পাশ দিয়ে মনোহরা নদী বয়ে গেছে। গ্রামে একটি প্রাইমারি স্কুল ও তিন কিলোমিটার দূরে হাইস্কুলের অবস্থান।

আনন্দ মোহন নিম্ন মধ্যবিত্ত।বিঘা পাঁচেক চাষের জমি ও বসতবাড়ি দশকাঠার উপর। শাক সব্জী বাড়ীতেই মেলে, তাছাড়া, পেঁপে, আম, জাম, কাঁঠাল ফলের গাছে ভর্তি।যার ফলে আনন্দ বাবুর সচ্ছল পরিবার। বংশের একমাত্র ছেলে তার উপর নজর বেশী। লেখাপড়া শিখে উপার্জন করুক এই ইচ্ছা আনন্দবাবুর।তখন ছিলো সরবপাঠ, জোরে জোরে পড়তে পড়তে মুখের ফেণা বেড়িয়ে পড়তো। তাছাড়া সেই লেখাপড়া আর নেই।কালের গহ্বরে সব চাপা পড়ে গেছে।কুমোর পাড়ার গোরুর গাড়ী, আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে,হা টি মা টিম ,তারা মাঠে পাড়ে ডিম  এসব ছড়া কবিতা সিলেবাস থেকে উধাও।

এখন লুকোচুরি পড়াশোনা। উত্তর খুঁজে বের করো।কি ইতিহাস, ভূগোল,কি অঙ্ক, বাংলা সব উত্তর দেওয়া আছে এটা নয়তো সেটা।টিক মেরে পাশ। কি সব যে এলো? খেলাধুলা হলো গিয়ে ব্যায়াম।সে সব ডকে উঠেছে,- এখন মোবাইলে গেম। পড়াশোনা মোবাইলে, চাকুরীতে ইন্টারভিউ মোবাইলে। দরখাস্ত মোবাইলে।ঐ একটু  মোবাইলে লেখাপড়া আবার লেখাপড়ার মাথা খাওয়া।

প্রেম পীড়িত, বন্ধুত্ব, ব্যাঙ্কের টাকা তোলা ও ব্যাঙ্ক ডাকাতি সব মোবাইলে। শত্রু খতমের ব্যবস্থাপনা এই মোবাইল।ছেলেপিলের ঘুম নাই আবার মোবাইলের ঘুম নাই।দিনরাত পরিশ্রম করেই চলেছে।এখন ছেলেমেয়েদের সারারাত্রি ধরে পড়াশোনা। চোখে ঘুম আসেনা।

মোবাইলে জোনাকির আলো জ্বলে সারারাত।

নিত্যগোপাল আড়িমুড়ি ছেড়ে বাবাকে বললো - বাবা তোমরা আলতুফালতু পড়েছো।ধারাপাত, বর্ণপরিচয়,শতকিয়া ওসব চলেনা। তোমরা করেছো লেখাপড়া, লিখতে লিখতে দম বেরিয়ে যেতো তোমাদের।আর এখন পড়াশোনা।যেমন মোবাইলে পড়ছি তেমনি মোবাইলে শুনছি। বেশী খাটাখাটি শরীরের উপর চাপ তাই অল্পতেই এর সমাধান।তোমরা লেখাপড়া করে শতকরা কুড়ি পার্সেন্ট পাশ করেছো আর এখন না পড়াশোনা করে একশোতে একশো।কোন কাটাকাটি নয়, সঠিক লেখায় সঠিক মান । বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফল এগুলো বুঝলে। পড়তে হয় নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়। এখন পড়াশোনার এত লড়াই যে পঞ্চাশ জন প্রতিযোগী প্রথম হয়, দ্বিতীয় স্থানে দুইশতাধিক, তৃতীয় স্থানে বাদবাকী মোটামুটিভাবে হাতেগোনা বাদ দিয়ে সবাই। অকৃতকার্য এ কথাটির মৃত্যু ঘটেছে। অগ্রগতির ধারায় ধারাবাহিক কৃতকার্য সবাই। কতো ক্যামেরার ঝলকানি, খবরের কাগজে ছাত্রছাত্রীদের ছবি। সঙ্গে বাপ মায়ের ছবি ফাউ। তোমাদের সময়ে লেখাপড়ার মান নিম্নমুখী তাই তোমাদের দিকে ফিরেও কেউ তাকাতো না। আর আমরা জামার কলার তুলে পোজ দিয়ে ছবি তুলি। তোমাদের হামাগুড়ি দিয়ে লেখাপড়া বড্ডজোর কেরাণী।আর আমাদের পড়াশোনা ইন্টারনেটের দয়ায় বিদেশে পাঠ। হামাগুড়ি নয় রকেটের গতি আমাদের।







আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾

http://wwwankurisha.blogspot.com/2021/07/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_10.html





২টি মন্তব্য:

  1. জীবন এখন নতুন খাতে বইছে।কি বিচিত্র এই
    পড়াশোনা।সবাই এখনও গাড়ি চড়া বা বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পায় না। তবে সব যুগেই ভালো মন্দ দুটো দিকই থাকে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এটাই মুখের ধর্ম। ভালো লাগলো আপনার লেখাটি।

    উত্তরমুছুন