লেবেল

বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১

ধারাবাহিক উপন্যাস (পর্ব-১২)।। ছায়া -ছায়া অন্ধকারের আড়ালে — অনন্যা দাশ।। Ankurisha ।। E.Magazine ।। Bengali poem in literature ।।

 






ধারাবাহিক উপন্যাস (পর্ব-১২)


ছায়া -ছায়া অন্ধকারের আড়ালে 

অনন্যা দাশ 



ওয়ারেন্ট জোগাড় করে রাত ন’টা নাগাদ রোহন কুমার আর তার পার্টনার দীপার বাড়ি এসে কড়া নাড়লেন। বাইরে থেকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে যে ঘরে আলো জ্বলছে কিন্তু কেউ দরজা খুলল না। প্রায় দশ মিনিট ধরে কড়া নেড়ে বেল বাজিয়ে, ডেকে যখন কেউ দরজা খুলল না তখন বাধ্য হয়ে দরজা ভাঙতে হল। ভিতরে ঢুকলেন বন্দুক হাতে। মেয়েটার কোন বিপদ হল না তো? সব ঘরে আলো জ্বলছে কিন্তু কেউ নেই! সেল ফোন ল্যাপটপ কিছুই নেই। দীপার মোবাইলে ফোন করলেন, নাহ মোবাইল সুইচড অফ! ওকে ট্র্যাক করার তাহলে তো কোন উপায় থাকবে না।  



রোহন কুমার মার্কাসকে ফোন করে বললেন, “মেয়েটা মনে হয় বুঝতে পেরে গিয়েছিল যে আমরা ওকে অ্যারেস্ট করতে আসতে পারি তাই পালিয়েছে!”

“ঠিক আছে। আমি এয়ারপোর্ট, স্টেশান, বাস স্টপ ইত্যাদিতে অ্যালার্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি। এই জায়গাটা ছেড়ে পালাতে পারবে না। ওর ছবি চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তোমরা ওর বন্ধুদের বাড়িতে খোঁজ করে দেখো। কারো বাড়িতে যদি আশ্রয় নিয়ে থাকে।”

“আমার মনে হয় না, তাও আমরা দেখছি!” 


দীপার বন্ধু আর অন্যান্য চেনা কয়েকজনের বাড়িতে গিয়ে গিয়ে দেখলেন রোহন কুমার আর ওঁর পার্টনার। সুনেত্রা, মানে যাদের বাড়িতে পার্টি ছিল তাকে যখন বলা হল যে দীপাকে পলাশের মৃত্যুর জন্যে দোষী মনে করা হচ্ছে এবং তার ডিসোসিয়েটিভ পার্সোন্যালিটি ডিসর্ডার আছে তখন সুনেত্রার মুখ হাঁ হয়ে গেল। 

সব শুনে বললেন, “বাপরে! মেয়েটাকে আমরা নিরীহ ভাবতাম! আমাদের বাড়ির অনুষ্ঠানে তো বেশ কয়েকবার এসেছে। গোপাদের ওখানেও গেছে। আমি তো ভাবতেই পারিনি! পলাশ ছেলেটা খুব ভালো ছিল। কী দারুণ গান গাইত!ওর মৃত্যুতে আমরা সবাই মর্মাহত! বেচারার বিয়ে ঠিক হয়েছিল, সেই খবর পেয়ে কত আনন্দ করলাম আমরা সেদিন। কিসের থেকে কী হয়ে গেল!” বলে সুনেত্রা চোখের জল মুছলেন। ওনার কাছ থেকে নাম নিয়ে আরও কয়েকজনের কাছে নাম ঠিকানা নিয়ে তাদের বাইতেও গেলেন কিন্তু কোন ফল হল না। কেউ কিছুই বলতে পারল না। বাড়িওয়ালি, ডাক্তার মিত্র আর বসের সঙ্গে পরদিন কথা বলবেন ঠিক করে ক্লান্ত রোহন আর তার পার্টনার বাড়ির পথে রওনা হলেন।



আকাশে বিশাল বড়ো চাঁদ উঠেছে। সেই চাঁদের দিকে তাকিয়ে রোহন দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন, “আই উইল ফাইন্ড ইউ! তোমাকে আমি খুঁজে বার করবই! ইউ ক্যান রান বাট ইউ ক্যানট হাইড। দৌড়ে পালাতে পারো তুমি কিন্তু কত দূর যাবে? লোকাতে তুমি পারবে না! ওই সব ডিসর্ডারের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারবে না তুমি! আমার হাত থেকে বেঁচে পালানো তত সহজ নয় জেনে রেখো! অনেক বাঘা বাঘারা হার মেনে নিয়েছে। একটা একরত্তি ভারতীয় মেয়ে যদি মনে করে সে আমাকে বোকা বানাবে তাহলে সে খুব ভুল ভেবেছে! আমি অত সহজে হাল ছাড়বার পাত্র নই সেটা আমাকে যারা চেনে তারা সবাই মোক্ষম জানে! আমার দেশে এসে খুন করে পালিয়ে যাবে সেটি হচ্ছে না! তোমায় ধরব আমি তারপর তুমি হয় জেলে পচবে না হয় দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হবে ডিপোর্টেড হয়ে!” 

বাড়ির দরজা খুলে ঘরে ঢুকতে কুকুর বক্সার লাফিয়ে এসে হাজির। ক্লান্ত হাতে ওকে আদর করে ওর ডিশে খাবার আর জল দিয়ে নিজে ফ্রিজ থেকে এক টুকরো পিজা বার করে মাইক্রো ওয়েভ করে নিয়ে খাবার টেবিলে বসলেন রোহন।  


বক্সার এসে ওনার পা চেটে দিল। ওর গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অন্যমনস্ক হয়ে রোহন বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, “কী জানি বক্সার, বুঝতে পারছি না! কিছু ভুল করছি না তো? জানি না, দেখি কাল ডাক্তার মিত্র, মেয়েটার বস আর ওর বাড়িওয়ালির সঙ্গে কথা বলে দেখি। আজ রাতটা ভালো করে ঘুমোতে পারলে হয়!”

সত্যিই আন্দাজ করেছিলেন রোহন সেদিন রাতে ঘুম ছিল না কপালে! রাত তিনটে নাগাদ ফোনটা এল। দীপার বাড়িতে আগুন লেগেছে! দমকল নিভিয়েছে আগুন কিন্তু ভিতরের জিনিস পত্র অনেকই পুড়ে গেছে!

ফোনে খবরটা শুনে রোহন বললেন, “কী করে এটা হল? টিমের তো পাহাড়া দেওয়ার কথা ছিল না?”

“হ্যাঁ, ছিল তো। তবে অন্য কেউও মনে হয় নজর রাখছিল। বেচারা টিম বাথরুমে গিয়েছিল। ফিরে এসে দেখে ওই কান্ড! কে ঘরে ঢুকে এক ডাঁই জামাকাপড়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পালিয়েছে! দীপা মেয়েটাই হবে। টিম ছিল বলে আগুনটা ছড়িয়ে পড়তে পারেনি নাহলে তো পুরো বাড়িটাই পুড়ে ছাই হয়ে যেত!”

“কী লাভ হল?”

“আমার মনে হয় কিছু প্রমাণ লোপাট করার চক্করে কাজটা করা হয়েছে! কিছু একটা পোড়াতে চাইছিল মেয়েটা বলেই পুড়িয়েছে!”

“হুঁ! ঠিক আছে আমি আসছি!”





ভয়ঙ্কর একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম আমি। আমি একটা গাড়ি চালাচ্ছিলাম খুব জোরে কিন্তু আমার গাড়ির ব্রেকটা কাজ করছিল না। হু হু করে এগিয়ে চলছিল গাড়িটা। আমি প্রাণপণে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু কোন লাভ হচ্ছিল না! কী ভয়ঙ্কর অসহায় অবস্থা! শেষে গাড়িটাকে নিয়ে আমি দড়াম করে একটা গাছের সঙ্গে গিয়ে ধাক্কা খেলাম! স্টিয়ারিংয়ে মাথা দিয়ে বসে রয়েছি। সারা গা থরথর করে কাঁপছে। পলাশ কোথা থেকে রক্ত মাখা মুখ নিয়ে এসে বলছে, “কোন ভয় নেই, আমারও এই একই রকম হয়েছিল কিন্তু আমি বেঁচে গেছি! সুনেত্রাদির চেনা ডাক্তার আছে, খুব ভালো। তাকে দেখালেই সেরে উঠবে! ঐশীর ফোন নম্বরটা আমাকে দিলে না তো? ঠিক আছে আমি গোপাদিকে জিগ্যেস করে নিচ্ছি, উনিও চেনেন ঐশীকে!”    

ধাঁ করে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল আমার। একটা ঘটনা যেটা প্রায় ভুলে যেতে বসেছিলাম সেটা হঠাৎ মনে পড়ে গেল! গোপাদির বাড়িতে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম আমরা। আমি আর পলাশ। গোপাদিও সুনেত্রাদির মতন এখানকার একজন বাঙালি। ওনার স্বামী আর উনি নিজেো স্টেটের ভালো চাকরি করেন। তাই ওঁদের বাড়িটা বিশাল, একেবারে ফ্রেঞ্চ শ্যাটুর মতন! সেদিন অনুষ্ঠানে এক সময় যিনি কবিতা পড়তে নামলেন তাঁর কবিতা না পড়লেই ভালো হত! মানে একেবারেই জঘন্য। আমরা দুজনেই বোর হচ্ছি তাই পলাশ বলল আমাকে বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেবে। আমি তো রাজি। অমন সুন্দর বাড়ি কে না দেখতে চায়? পরে মনে হয়েছিল অনুমতি না নিয়ে দোতলায় উঠে যাওয়াটা আমাদের ঠিক উচিত হয়নি কিন্তু তখন ওই রকম বিলাসবহুল একটা বাড়ি দেখার উত্তেজনায় সে সব কিছু আর মনে ছিল না। দেখছি আর মোহিত হচ্ছি। কিন্তু তারপর দোতলার একটা ঘরে ঢুকে দেখি একজন পুরুষ আর একজন মহিলাকে বিবস্ত্র অবস্থায় অন্তরঙ্গ হতে দেখতে পেলাম। তখুনি ভীষণ লজ্জা পেয়ে সরি বলে বেরিয়ে এসেছিলাম। তারা মনে হয় আশা করেনি অনুষ্ঠানের মধ্যে কেউ দোতলায় উঠে চলে আসবে। কে ছিল তখন সেটাও খেয়াল করে দেখিনি! পলাশো আর ওই ঘটনাটাকে নিয়ে কিছু বলেনি। আজকে হঠাৎ কেন যে ব্যাপারটা মনে পড়ে গেল!। আমি আর পলাশ দুজনেই ব্যাপারটাকে দেখেছিলাম আর আজ পলাশ মৃত আর আমি পাগল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছি! ওই ঘটনাটার সঙ্গে কী কোন যোগাযোগ থাকতে পারে? আমি মনে করতে চেষ্টা করতে লাগলাম ঠিক কী দেখেছিলাম আর কে হতে পারে!”








(চলবে...)







আরও  পড়ুন 👇🏾👇🏾


https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/07/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_70.html



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন