লেবেল

শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০২১

রবিবারের গল্প ।। ভয় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত — প্রদীপ দে।। Ankurisha ।। E.Magazine ।।Bengali poem in literature ।।

 





রবিবারের গল্প 



  ভয় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত 
       প্রদীপ দে


জীবনে যে কত ঝামেলায় পড়তে হয় তার ইয়ত্তা নেই। সমাধান করতে গিয়ে বাস্তব কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতেও হয়। তা হোক --;
এ কিন্তু এমন একজাতীয় সমস্যা যার সমাধান আমি করে উঠতে পারিনি, উপরন্তু ভাবলেই হাত পা সিঁটিয়ে পেটের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। আমি ভীতু কিন্তু জীবনে এত ভয় কোনোদিন পাইনি -নাকি সবটাই আমার লেখার ফাজলামি সেটা দেখার দায়িত্ব আমি আমার বন্ধুদের মধ্যে ভাগ করে দিতে চাই - তাই একটু ধৈর্য ধরে ঘটনাটা পড়ুন।


২ রা জুলাই,২০২০, বৃহস্পতিবার :

-- হ্যালো --
-- হ্যালো, হ্যাঁ  কে বলছেন?
-- ওঃ ভোলা বলছো
-- হ্যাঁ, হ্যাঁ,ভোলাই বলছি --
-- আরে, আমি বিপদতারনদা বলছি --
-- ওঃ ওঃ দাদা আপনি? গলাটা চেনা লাগছে, তবে আমার কাছে আপনার নম্বরটা সেভ করা নেই, তাই বুঝতে পারি নি।
--  ওঃ আচ্ছা, কোনো ব্যাপার নয়। অনেকদিন তোমায় আর বাইরে দেখতেও তো পাই না।
-- হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি এখন খুব কম বেড় হই। কাজ ও তেমন আর করি না।
-- সে কি? এতো ভালো কাজের লোক?  আমি যে তোমায় কাজের জন্যই ফোন করেছিলাম। আমার কাজটা যে তোমায় করে দিতেই হবে।অন্য কাউকে দিয়ে আমি করাবো না - তুমি ছাড়া এই কাজ কেউ করলে মেশিন বিগড়ে দেবে।
--  আরে দাদা কি যে বলেন?  কতো ভালো ভালো মেকানিক্স রয়েছে। আপনি আমায় স্নেহ করেন তাই। যাহোক আমি যাবো, এখন কি হয়েছে তাই একটিবার শুনি।
-- এসি মেশিনটা বিগড়েছে , গরম হাওয়া বেড়োচ্ছে। তুমি যে সেই শেষ গতবছর সার্ভিসিং করে দিয়েছিলে তারপর আমি রিটেয়ার করলাম, একে পয়সার অভাব অন্যদিকে করোনার প্রভাব দুয়ে মিলে আমি কাত,  তাই হে ভায়া, আমার আর একবছরে কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি, তোমাকেও ডাকতে পারি নি। কিছু মনে করো না।
--  না না ওতে কি আছে? সেটা আরকি?  যাক আমি কাল সকালেই যাবো, দেখে দেবো। কোনো চিন্তা করবেন না।
-- ঠিক। তুমি কখন আসবে?
-- ওই ন টার মধ্যেই।
-- ব্যাস। আর কোন চিন্তা নেই তুমি হাত দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তাহলে একবার এসো কিন্তু ভোলা ভাই ।
-- আর কোন চিন্তা নেই বিপদতারনবাবু, চুপ করে ঘুমান, আমায় যখন ডেকেছেন, তখন ধরুন আপনার মেশিন ঠিকই হয়ে গেছে --আর গরম নয় এবার শুধুই ঠান্ডা হাওয়াই বেড়োবে ।
-- আচ্ছা, তাহলে ছাড়ি, ভালো থেকো
-- হ্যাঁ, হ্যাঁ  বাই!
লাইন কেটে দিলাম।




৩ রা জুলাই,২০২০, শুক্রবার :

পরের দিন সক্কাল সক্কাল উঠে সব কাজ গুছিয়ে, স্নান সেরে,আহ্নিক করে রেডি হয়ে গেলাম, মিস্ত্রি আসলে অনেক ঝক্কিঝামেলা, এটা দাও ওটা দাও হাতে -হাতে আবার থাকতেও হবে সাথে সাথে। আর কাজটা বেশ ঝামেলার হবে আমি জানি। কারণ মেশিনের কন্ডেন্সর খারাপ হয়ে গেছে, বলে গেছে পাড়ার অপু নামের এক মিস্ত্রি।গ্যাস ও নেই, ভর্তি করতে হবে। অনেক টাকার ব্যাপার, প্রায় দশ হাজারের ওপর। মিস্ত্রিটাকে ভাগিয়ে দিয়েছি, পরে করবো বলে।আসলে চেষ্টা চালাচ্ছিলাম অন্যত্র যাচাই করে যদি কমে হয়। এসব কথা ভোলা কে বলিনি, ওকে বলার দরকারই বা কি? যাচাই করেই কাজ করাতে হয় সব কথা সবাইকে জানাতে নেই।

নটা, দশটা করে সূর্যিমামা মাথায় চড়ে বসলেন, কিন্তু ভোলা এলো না। ঘরদোর বার এক করে গেলাম এই আসে ওই আসে করে সে আর এলো না। ভাবলাম আটকে গেছে।  ফোন করবে বা বিকালে আসবে। বিকালে না আসায় আমিই ফোন লাগালাম । অবাক কান্ড পাঁচবার ফোন করেও ধরলো না। চিন্তায় পড়ে গেলাম। কেন আসলো না?  কম পয়সায় কাজটা করিয়ে নেওয়া যেতো।রাতে ফোন মারলাম তো ধরলো ,ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো।
--    হ্যাঁ, বিপদদা আজ আমি একটু অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম, ফোনেও চার্জ ছিলো না তাই করতে পারিনি। কোনো চিন্তা করো না,কাল সকালবেলাতেই আপনার ওখানে যাবো।
মনতা শান্তিতে ভরে গেলো।



৪ ই জুলাই, ২০২০,শনিবার :


পরের দিন ও শেষ হয়ে গেল। ভোলা ভুলে গেছে সুখ দিলো না, তার মুখ দেখিয়ে। বিকালে চিন্তা করছি কি হলো ব্যাপারখানা? ও যদি নাই আসতে চায় তাহলে ওর ফোন করার দরকার হতো না। আর ওর গলার ভয়েস বলে দিচ্ছে ও আসতে ইচ্ছা করছে। গিন্নীর সঙ্গে আলোচনা করলাম। ও সন্দেহ করতে শুরু করে দিয়েছে। 

রাতে আবার যথারীতি ভোলার ফোন এলো - মাফ করুন -- কিছুতেই সময় পাই নি আজ। কাল অবশ্যই যাবো।

গিন্নীই বুদ্ধি দিলো --ওকে সময় দিও না। কাল সকাল বেলায় চলো আমরা ওর বাড়ি চলে যাই, ও কাজে বেড়োবার আগেই ওকে ধরে ফেলি। ও মনে হয় খুব ব্যস্ত।




৫ ই জুলাই, ২০২০, রবিবার :

একদম ঠিক কথা। দুজনেই চা খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। তখন সাতটা হবে। ওর বাড়িতে গিয়ে দরজায় আঘাত করলাম -- ভোলা, ভোলা আছো নাকি?

খচমচ করে মরচে ধরে কব্জার আওয়াজ করে দরজা খুলে গেলো। সামনে এলো ওর মা। বহুদিন পরে দেখছি, কেমন যেন বিব্রত লাগলো দেখতে। ওনার পক্ষে চেনা সম্ভব ছিলো না। আমিই বললাম -- ভালো আছেন মাসিমা? ভোলার সংগে একটু দরকার ছিলো। ও বাড়িতে আছে তো?

নিমেষে মহিলার চোখ দুটি বড় হয়ে উঠলো, করুণ ভাবের উদ্বেগ লক্ষ্য করলাম ওনার চোখেমুখে। চোখ মুছলেন আঁচল দিয়ে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।কি করবো ভেবে উঠতে পারলাম না।

এবার আমার গিন্নিই বলে ফেললো -- কি হয়েছে মাসিমা?  কোন কষ্ট হচ্ছে?

মাসিমা কোন উত্তর দিলেন না, ইশারায় ভিতরে ডাকলেন, আমরা ওনাকে অনুসরণ করে ভিতরে গেলাম।অবিনস্ত ঘর, যেন বহুদিন অব্যবহৃত হয়ে রয়েছে। উনি দেওয়ালে টাঙানো ছবির দিকে আঙুল তুললেন, অবাক চোখে ধাক্কা খেলাম , বুঝতে অসুবিধা হলো না -- ভোলা ছবি হয়ে গেছে।

মাসিমাকে স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা পাইনি। তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এলাম। গিন্নি আমায় দেখে তো- আমি গিন্নিকে।  তাহলে এতদিন ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছিলাম?  আর ও আসবে আসবে কেন বলছিলো? ভয় পেতে শুরু করলাম। হাত পা যেন আঁটকে গেলো পথে। এখন কি করবো? আর জলজ্যান্ত ছেলেটা মরে গেল?

গিন্নির কথা মত সব ভুলে তক্ষনাৎ আমাদের আগের অপু মিস্ত্রীর কাছেই গেলাম। ও দোকান খুলে বসেইছিলো ,আমরা বলতেই, ও ওর দোকান থেকে মালপত্র নিয়ে আমাদের সঙ্গে আমাদের বাড়ি চলে এল। টাকার ব্যাপারখানা এইরকমই। ও আগেই রেট দিয়েছিল।

বাড়ি এসে যথারীতি কাজ শুরু হলো। ছাদের বক্স খুলতেই। অবাক কাণ্ড! মেশিনে নতুন কন্ডেন্সার লাগানো! মিস্ত্রি তো রেগে লাল -- ন্যাকাপনা করছেন? অন্যকে দিয়ে মেশিন সারিয়ে আমার সাথে চালাকি করছেন?

ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা চালালাম। ও কি বুজলো জানিনা, কিন্তু পাঁচশো টাকা ওর হাতে গুঁজে দিতেই ও ভিজে বেড়াল হয়ে চুপসে গেল।
নিচে এসে সব বন্ধ করে এসির সুইচ দিতেই ঠান্ডা হাওয়ায় মন -প্রান সব জুঁড়ে গেল।

1 টি মন্তব্য:

  1. গল্পটি বেশ ভালোই লাগলো। ভৌতিক গল্পের ঘটনা
    হলেও উপস্থাপনার গুণে বাস্তবতার ছোঁয়া পেলাম।
    তবে র এর পরিবর্তে ড় এর ব্যবহার করেছেন
    অনেক জায়গায় যেটা দৃষ্টিকটু ও শ্রুতকটু হয়েছে।

    উত্তরমুছুন