রবিবারের গল্প
জীবনবিমা
সন্দীপ দত্ত
কাজলটানা চোখে দৃষ্টির মিষ্টত্ব খানিক কমিয়ে একটু চমক মেশালো ঊর্মি। চমকে যাওয়ারই কথা। পলাশ যা বলছে,সেটা শিশুসুলভ। অবুঝ মনের বাহাদুরি। অমন বাহাদুরি দেখালে লোকে আজকাল বোকা ভাববে। পাগলও নিজের ভালটা বোঝে। অথচ পলাশের এক গোঁ। এর বেশি সে পারবেনা। মাস ফুরোলে মাত্র কুড়ি হাজার টাকা পায় সে। সংসারে তিন তিনটে মানুষ, একটা বাচ্চা। নিত্যদিনের বাজারহাট আর রোগঅসুখ সামলে আলাদা যেটুকু সঞ্চয়,সেটা তো সে ব্যাঙ্কে দেয়। তার থেকেই কুলিয়ে গুছিয়ে হাজার দুই জীবনবিমার জন্য রাখবে বলছে। তবুও মন ভরছে না ঊর্মির। এর বেশি সে পারবে কেন?
"পারবে না-ই বা কেন? টাকাটা তো আমাদের ভবিষ্যতের জন্যই। এখন একটু কষ্ট করে রাখলে একদিন এর ফায়দা তুলবে। তাছাড়া অন্যান্য সুযোগ সুবিধা তো রয়েছেই। এলআইসির ধর্মই তো তাই।" বলে ঊর্মি জলের গ্লাসটা মুখে তুলল। এখন রাত দশটা। ডিশ থেকে ডিনারের শেষ গোরাসটা নিতে আর খানিক বাকি। পলাশ খেতে খেতে জল খায়না।
"শুভময়দা পলিসি করে। ওটাই ওর পেশা। দুইয়ের জায়গায় চার পেলে ওর কমিশন বাড়ে। ওর কমিশন বাড়াতে আমরা যাব কেন? আমরা আমাদের সামর্থ্য'টা বুঝব না? ওকে কি তুমি কথা দিয়ে দিয়েছ যে,চার হাজার টাকার করব? যদি তাই করে থাক,তাহলে ঠিক করোনি। শুভময়দা তোমার বাপের বাড়ির এলাকার চেনাশোনা হতে পারে। টাকাটা তো গুনতে হবে আমাকেই। কাল সকালেই তুমি ফোন করে জানিয়ে দাও ছোটখাট একটা পলিসি করব আমি। ইচ্ছে থাকলে আসতে পারে।" আর বসল না পলাশ। একটা সিগারেট খেতে হবে। দক্ষিণের খোলা ব্যালকোনিটাতে দাঁড়াতে হবে কিছুটা সময়। এই গরমে বিছানাতে এখন শুতে পারবেনা। ঘুম আসবে দেরিতে।
২.
জীবনবিমা নিয়ে যারা কাজ করে,ঊর্মি যতটুকু জানে,ঝোঝানোর চাতুর্যেই না কে হ্যাঁ করানো যায়। শুভময়দাকে ফোন করেনি সে। ফোন করে জানানো মানেই তো মান সম্মান নিয়ে টানাটানি। এক্ষুনি ভেবে বসবে,স্বামী তার বেজায় গরিব। হয় গরিব,নয়তো কৃপণ। এই দুটোকেই একেবারে সহ্য করতে পারেনা ঊর্মি। সমাজে এদেরকে নিয়ে চর্চা হয় খুব। চর্চাটাতে পাঁকের গন্ধ থাকে।
পরদিন যেহেতু পলাশের অফিস ছুটি,তাই ঘন্টা দুয়েকের বাস জার্নি করে বেলা এগারোটা নাগাদ এসে পৌঁছল শুভময়। এসে তিন ঘন্টার মতো ঠায় বসে থাকল। কিন্তু পলাশকে দু হাজার টাকার বেশি ওঠাতে পারলনা। লজ্জায় মাথা কাটা গেল ঊর্মির। তার বাপের বাড়ি আরামবাগে এবার রাষ্ট্র হবে,পলাশের মাইনে কম। ছেলেটাকে বিয়ে করে ঊর্মি অভাবের সাগরে পড়েছে। বাবা মা'র দেখে দেওয়া পাত্রের সাথে বিয়ে দিলে এমনটা হতো না।
৩.
দু'দিন ধরে ঊর্মির মুখ ভার। পলাশের সাথে কথা বলল কম। পাঁচ বছরের ছেলেটাকে নিয়েই সময় কাটল তার। আশি বছরের বৃদ্ধ শ্বশুরের সেবা করে।
দু'দিন পর পলাশের অফিসের মাইনে হল। মাইনের সমস্ত টাকা পরিকল্পনা মাফিক বিভিন্ন খাতে রাখতে গিয়ে আরও দুটো পলিসির টাকা রাখল লুকিয়ে। একটা পাড়ার পরিচিত বাপ্পাদিত্যের জন্য,আর একটি নরেশকাকুর। ওরা দুজনেই ক'দিন আগে পলিসি করার জন্য খুব করে অনুরোধ করেছিল পলাশকে। লকডাউনে রোজগারপাতি সব বন্ধ। পলাশ পলিসি করলে ওদের জীবনবিমা বাঁচে।
কথাটা ঊর্মিকে বলতে পারেনি পলাশ। তাই শুভময়দার কাছে কৃপণ হতে হয়েছে তাকে। সাজতে হয়েছে গরিব। তবে মনে এটুকুই তৃপ্তি,তার জীবনবিমার টাকায় তিন তিনজনের জীবনবিমা চলছে।
আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾
https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/07/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_3.html
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন