লেবেল

শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১

আজ প্রকাশিত হল অঙ্কুরীশা-র রথযাত্রা সংখ্যা' ।। বিশেষ কবিতার ক্রোড়পত্র ।। Ankurisha ।।E.Magazine ।। Bengali poem in literature ।।

 






বিশেষ কবিতার ক্রোড়পত্র 






লিখেছেন


সৌমিত বসু 

শাহিন রেজা 

রবীন বসু 

রবিন বণিক

সাতকর্ণী ঘোষ

বিকাশ চন্দ

স্বপনকুমার রায়

মৃণালেন্দু দাশ

পিযুষ বাকচি

সঞ্জীব দে

গৌতম  রায় 

দুর্গাদাস মিদ্যা

ফটিক চৌধুরী 

স্বপন বিশ্বাস 

অমিত কাশ্যপ 

বিকাশ দাস 

বিকাশ রঞ্জন হালদার 

অশোক রায় 

তামস চক্রবর্তী 

গোবিন্দ মোদক 

সমাজ বসু 

পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী 

আশিস চৌধুরী

ছোটন গুপ্ত

শুভঙ্কর দাস

দীপক বেরা 

জগদীশ মণ্ডল 

সুবীর ঘোষ 

পলাশ দাস

সুধাংশুরঞ্জন সাহা 

ডঃ রমলা মুখার্জী

পুষ্প সাঁতরা

বিকাশ পণ্ডিত 

রাজেশ কান্তি দাশ 

সুব্রত চৌধুরী 

শ্রাবণী বসু 

গৌতম মণ্ডল 

বহ্নি শিখা 

তাপস কুমার চট্টরাজ

তপনজ্যোতি মাজি 

শেখ সিরাজ

পাপিয়া গোস্বামী

নন্দিনী মান্না 

রাসমনি ব্যানার্জি 

দীপা কর্মকার 

মালা ঘোষ মিত্র

রত্না দত্ত

বিমল মণ্ডল 















রথের মেলায় তোমাকে
সৌমিত বসু 

ছোটবেলায় রথের মেলায় সবাই যখন পুতুল কিনতে ব্যস্ত, কেউ বেলুন কিনছে কেউ বা নাগরদোলায়,আমার মনে খচখচ  করতো একটা প্রশ্ন, তুমি কেন এমন অদ্ভুত হলে?

পাঁচন খেয়ে তোমরা তিনভাই যখন শুয়ে থাকতে, আমরা চেয়ে থাকতাম উল্টোরথের দিকে, তখন তোমাকে দেখেই আমি আঁতকে উঠতাম,কিছুতেই মেনে নিতে পারতাম না , হাতহীন কালো রঙের ভেতর কৃষ্ণের অনুভব।

সুভদ্রাকে যখন অর্জুনের জন্য চুরি করে তুললেন কৃষ্ণ, তখন আমার কোনো অসুবিধা হতো না ভাবনায়।

বলরাম যখন কাঁধে হাল নিয়ে হেঁটে যেতেন কিংবা মহাসমুদ্রের পাড়ে বসে মুখ থেকে বের করে দিতেন অজস্র সাপ, তখনও তার অবয়ব আমায় শান্তি দিতো।

অথচ তোমায় কৃষ্ণ বলে মা যখন বাড়িয়ে দিতো ছাপ্পান্ন ভোগ আমি চোখ বন্ধ করে ভাবতাম কোথায় যেন একটা ভুল হয়ে যাচ্ছে।

আজ এতটা বয়সে অনেক পরে বুঝেছি
চেহারা কিছুই নয়।আত্মাই সব।






মানুষ
শাহীন রেজা 

মানুষের হাত ধরে ভীড়ের মধ্যে হাঁটা ছায়াটাও কেমন মানুষ হয়ে ওঠে। ভীড়ের ভেতরে জোছনা ঢোকেনা, প্রেমবালিকার চোরা চোখ ঝলসে ওঠেনা-
তবুও লোকটা মানুষ হয়ে উঠল, অন্ধ দৃষ্টি মেলে খুঁজল মেঘের বেদীতে ফুটে ওঠা কয়েকটি নক্ষত্র। অমানুষের ভাষা আলাদা, লোকটা খাঁটি বাংলায় সুর করে গাইতে শুরু করল–' আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি'।
লোকটার মুখাবয়বে তখন বিচিত্র সেই রং, যে রং মেখে স্বর্গ থেকে আদিমাতা হাওয়ার হাত ধরে পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন প্রথম পুরুষ আদম।
মিছিলে শ্লোগান হয়, ক্রুদ্ধ পদভারে কেঁপে ওঠে রাজপথ, দাবীর শব্দগুলো চিলের পালক হয়ে উল্কি আঁকে সময়ের হাতে, কখনো গুলির শব্দ, রক্ত ও ঘামের মিলিত লোনা ঘ্রাণ। সেই ঘ্রাণে জন্ম নেয় একাধিক চে , মাও, লেনিন। লোকটি মানুষ হতে গিয়ে একসময় হয়ে ওঠে কোনো এক রাখাল রাজা; শেখ মুজিব।







সময়ের সংযোগসেতু

রবীন বসু


অবরুদ্ধ দিনের থেকে যে পাখি উড়ান নিল

তার ঠোঁটে গতজন্মের বিষাদ;

স্মৃতি তুলো হয়ে উড়ে যাচ্ছে স্বপ্নে

গভীর সুপ্তি আচ্ছন্ন করে মায়ারাত্রি

রামগিরি পর্বত আর পূর্বমেঘ

তারাও উড়াল দিল অলকাপুরীর দিকে;

পূর্বরাত্রি মহানিশা পররাত্রি, এই সংযোগসেতু

পার হয়েই আষাঢ়ের বর্ষা নামলো

জীবনানন্দের রূপসী বাংলায়।

ধূসর আবরণ টেনে ওই সংযোগসেতু 

বিষণ্ণতা মেখে ধাবিত মেঘের দিকে ছোটে।


হে কালগ্রন্থি, সময় নিশ্চুপ,

নির্বাক বেদনাহীন রোমাঞ্চ

তাকে অবলোকনে নিয়ে সময় দাঁড়িয়েছ ঠায়...





উপকরণ 
রবিন বণিক 

কিছু বৃষ্টির মুখোমুখি দাও

দাও অনন্ত জলের সুখ

তুমি যে মেঘেরই বিষয়বস্তু 

আমি যে অন্য কারোর মুখ

 

লাঙল জুড়ে অসুর অসুর গন্ধ

মাটির গায়ে কুয়াশার মতো প্রাণ

ব্যবহৃত আমি রাষ্ট্র বিরোধী জলবায়ু

বীজের রক্তে মৃত কৃষকের ঘ্রাণ





খুকি ও বাবা 
সাতকর্ণী ঘোষ


পড়াশোনার চাপ কমেছে 
খুশি খুকির মনে
দিনরাত সে নেচেই বেড়ায় 
স্বপ্নে ফুলের বনে
টিভি খোলে কার্টুন দেখে
হাততালি দেয় জোরে
আবার কখন আনন্দতে 
বনবন সে ঘোরে
অনলাইনে পড়া করে
নিজের বাড়ি বসে
ম‍্যামের দেওয়া গণিতগুলো
খাতায় ভরে কষে

নিত‍্য নতুন বায়না জোড়ে
যা খেতে চায় পায়না
মহামারির দেশে নাকি
ইচ্ছে মতো খায় না
বললে বাবা রাঁধতে পারি
তোর জন্যে চিংড়ি -লাউ
বললে খুকি আনতে পারো 
মহামারির গরম চাউ
মানুষগুলো বড্ড বোকা 
চালাক যারা অতি
বোকাগুলোর মাথা ভেঙে
করছে দেশের ক্ষতি

বাবা তখন বলবে কী আর
খুকির কথাই দামি
খুকি আমার বুদ্ধিমতী
যা বলেছে আনি
শুনে খুকির বেদম হাসি
বাবাও তুমি বোকা
মা তোমাকে ঠিক বলেছে 
নাম দিয়েছে খোকা






রথের দেবতা পথের দেবতা
বিকাশ চন্দ 

ধুলো মাটির পথে পথে এখন মানুষের দেবতা
ঘরে বাইরে ঈশ্বর কথায় সানন্দ আয়োজন, 
আষাঢ় মেঘ রঙ মাখে মাটি রসে ভেজে দূর্বাদল 
মিলন মেলা জানে আবহমান মধুর স্বরালাপে,
পথে পথে জেগে ওঠে প্রীতি ময় নাগরিক ঋতি
রথের চাকায় দড়ির টানে হাতে হাত সম্প্রীতি। 

জমি জিরেতে ভেজা মাটি সুর তোলে অঙ্কুরে
সকল চোখের আলোয় সকল দৃষ্টি মেলে---
ভ্রাতৃপ্রেমে উদার ভগিনী মায়ায় বরাভয় কথকতা 
দ্বিধা হীন পরম্পরা ভাঙে ভাষা জাতি ধর্ম প্রাচীর, 
ঋতু কাল বারো মাস মাটির আঁচলে বোনে শস্য বীজ
মহা প্রসাদের শস্য ফসল সব্জি আনে চাষি চাষিবৌ। 

সকল ঋতুর পরাগ তুমি ফুলের হাসি মাখো
জাতি ধর্মের দড়ির বাঁধনে ছুঁয়েছে হৃদয় মুলুক যতো,
বিস্ফারিত চোখের আলোয় জাগে সকল রত্ন মণি
সাজানো সকল শস্য জমিন চেনে সকল যাজন ভূমি,
জল মাটি কাদা ভাঙে ধূলট বেলায় হাঁটে পদাতিক
রথের দেবতা পথের দেবতার ঠাঁই মাটির মাসীর বাড়ি। 






শুনশান রথের মেলা
স্বপনকুমার রায়


রাস্তায় গড় গড় রথ চলে সারি
বড়োসড়ো কোন রথ ছোট বা মাঝারি।

টিমটিম করে জ্বলে প্রদীপ আর বাতি
পাড়ায় পাড়ায় বেশ খুশি মাতামাতি!

রঙিন কাগজ আর নানা ফুল গাছে
সেজেছে রথের শোভা দূরে কেউ কাছে।

আমাকে দেখেই এক রথটানা খোকা
বললে দাঁড়াও, চলে যাচ্ছো খামোখা!

প্রসাদ নেবে না তুমি? বলে হাত পাতো
জগন্নাথের ভোগ, না বলবে নাতো!

হাত ভরে গুটিকয় নকুল-দানায়
মিষ্টি প্রসাদ পেয়ে মন ভরে যায়!

তারপর নমো করে দিই দশ টাকা
টানলো খুশিতে খোকা ফের রথ-চাকা।

সে দৃশ্য নেই আজ দেখি পথে ঘাটে
রথের মেলাটা বুঝি শুনশান কাটে!
         



পহন্ডী বিজয়
মৃণালেন্দু দাশ

এ-এক আশ্চর্য রথযাত্রা নীলাচলবাসী দারুব্রক্ষ্মত্রয়
জগন্নাথ বলভদ্র সুভদ্রার ৷ এঁরা ভাইবোন ৷ আসলে যে
এক ও অভিন্ন জগন্নাথ , তিনরুপে অবর্তীন হয়েছেন
তিনি , আছেনও একসাথে ৷ এ তাঁর প্রকট লীলা —
স্কন্দপূরাণ সুনিশ্চিত করেছেন তথ্যটি তাঁর বিষ্ণুখন্ডে ,
এই — "এক এব জগন্নাথস্ত্রিধা তত্রো স্থিতো দ্বিজাঃ ৷"

আর তাই, পুরীর মন্দির ব্রক্ষ্মাকর্তৃক প্রতিষ্ঠার পরেই
রাজা ইন্দ্রদ্যুম্মকে আদেশ করলেন জগন্নাথ—"আষাঢ়ের
শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে বলভদ্র সুভদ্রা সহ আমাকে তুমি 
রথে করে নিয়ে যাবে ঐ গুন্ডিচা মন্দিরে  সহস্র অশ্বমেধ
যজ্ঞের মহাবেদীতে ৷ জানিবে এইস্থান আমার জন্মভূমি ৷

সেই শুরু রথযাত্রার ৷ আজও  সমানে চলেছে একভাবে
তালধ্বজে  বলভদ্র , দর্পদলনে সুভদ্রা আর  নন্দীঘোষে
জগন্নাথ  আরোহন  করতেই  পুরীর রাজা নিজের হাতে   
সোনার ঝাঁড়ুতে পরিস্কার করেন রথ ও পথ ৷ তারপর—
লক্ষ্য হাতে টান পড়ে রথের রশিতে শুরু পহন্ডী বিজয় !



রথের বাঁশি

পীযূষ বাকচি


খোকার বাবা ট্রেনের হকার। মাও কাজের মাসি।

বছর ঘোরে, ট্রেন বন্ধ। বাবার বুকে কাশি।


কাজ গিয়েছে দুটো বাড়ির। মায়ের মুখে আঁধার।

একটা বাড়ির অন্ধকারে সময় কোথায় কাঁদার!


রেললাইনের পাশে তাদের ঝুপড়ি এলোথেলো।

হতাশ বাবা মাথা ঝাঁকায়। স্টাফ  স্পেশালটা গেল!


আষাঢ় মাস। মেঘলা দিন। রথযাত্রার বাঁশি।

অনুদান নয়, কাজের শ্লাঘা! বাবার বুকের কাশি


বেড়েই চলে। বেড়েই চলে খোকার দাবি, পাঁপড়!

ভাত ঘরে নেই। মা অসহায়। লক্ষ্মীঘটেই ফাঁপর!


রথের বাঁশি বাজুক। সঙ্গে বাজুক ট্রেনের বাঁশি।

ঘাম-রক্ত-জলে ফুটুক অভাজনের হাসি।


কিন্তু এসব অলীক মায়া। কর্পোরেটের খেলা।

তীব্র অভাব। রাজাজ্ঞাতে জ্বলে গরিব বেলা!


পাঁপড়বিহীন ঘুমোয় খোকা। নিঝুম চারিধার।

মা-বাবাকে হাতছানি দেয় রাতের অন্ধকার!


রথযাত্রার আনন্দ শেষ। ঠুঁটো জগন্নাথ!

পাড়ার ক্যাম্পে উপছে পড়ছে দাস্যজীবীর ভাত।


   


পথ রেখো গো পরিষ্কারে 

সঞ্জীব দে


সারে তিন হাত রথে চড়ে           

জীবন যে যায় পরপারে

লোভ, মোহ, প্রেম ভালোবাসায়

থাকে মনের উপর চড়ে


বলরাম, সুভদ্রা জগন্নাথের

রথ চলে ওই গুন্ডিচারী

পথের ধুলায় নদের নিমাই

ভক্তিতে খায় গড়াগড়ি। 


কে আছে গো শরীর বিহীন

রসিক প্রেমে টইটম্বুর

মোহ কামের পথ ছেড়ে গো

ভালোবাসায় যাবেই সুদূর


হৃদয় নিয়ে ভক্তিরসে

টানো দড়ির খুট ধরে

বিবেক দিয়ে সরিয়ে ধূলো

পথ রেখো গো পরিষ্কারে। 


            

বন্ধুত্ব

গৌতম রায়


ধূপ পোড়ে
নক্ষত্রও
ঘ্রাণ এসে কেবল নাক-ই পোড়ায় না
পোড়ায় রাতুল পানপাতাও

ছাই জমছে মহাশূন্যে
শক্তির রূপান্তরে রূপান্তরে জেগে থাকে
নিউটনের বংশধররা

ধূপ আর নক্ষত্র পরম বন্ধু
মাঝে আরশিনগর
মনের মানুষের খোঁজে
পরিখা সাঁতারে কে যাবি আয় ।

    

              

 তবু

দুর্গাদাস  মিদ্য


মহাকালের রথের চাকা

চলেছে  তরতরিয়ে

  সময়ের হাত  ধরে। 

এগিয়ে আসে জগন্নাথের রথ

 মানুষের দুঃখ কষ্ট নিরসনে।

 এত সময়ের ব্যবধানে 

  এখনও চোখে পড়ে হতভাগ্য রাধারানীদের। 

অশ্রু পীড়িত সেই রাত

 বার বার ফিরে আসে মনে সচেতন। 

 সেই দুঃখের আগুন আজও নেভেনা অঝোর বৃষ্টি ধারায়

তবু ও রথের উৎসব আসে যায়, আসে যায়। 



রথযাত্রা
ফটিক চৌধুরী

ভিজে ভিজে ক্লান্ত হয়ে গেছে গাছ
নুয়ে পড়েছে তার  যত পাতা
মাথাবাঁচানোর নেই কোন ছাতা
তাই অসহ্য লাগছে বর্ষণমুখর আঁচ।

ফুরিয়ে আসে আষাঢ় শেষের বেলা
মনখারাপের  আকাশ  যত
ঘুরপাক খায় নিজ-ইচ্ছেমত
সূর্য খেলে যায় তার লুকোচুরি খেলা।

মেঘেরা এখন রয়েছে ব্যস্ত ভারি
প্রথম উৎসবে লিখেছে নাম
জগন্নাথ সুভদ্রা  ও বলরাম
আজ যাবে তাদের মাসীর বাড়ি।

ফিরবে সপ্তাহ খানেক পর,  একই পথে
এর মাঝে চলবে  রথের মেলা
শেষ হলে আষাঢ়শেষের বেলা
রথের রশি ধরে তারা ফিরবে উল্টোরথে।





আমাদের জগন্নাথ 
 স্বপন বিশ্বাস 

আমরা তার গান গাই
তার জন্য পদ্য লিখি;
অবিরাম তার হয়ে কাঁসর-ঘন্টা বাজাই।
তিনি যাতে তুষ্ট হন,আমাদের ছেলেরা ভক্তিভরে 
সেই পুজো নিয়ে জড়ো হয়,
আমাদের মেয়েরা মন্দিরে তার জন্যে ব্রত করে
নৈবেদ্য সাজায়।
আমরা যারা গরীব-গুর্বো,
যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়
নীরক্ত শরীরে তবু 
তার রথ টেনে যাই।
শুধু খুব ক্ষিদে পেলে,তাঁকে ডাকি---
জয় জগন্নাথ!!

আর তখনই,তিনি পকেটের ভিতরে হাতদুটো ঢুকিয়ে 
পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে আসেন।এসে বলেন,
দ্যাখ ভাই,আমাদের কোন হাত নাই।




কাজল দিঘির মাঠ
অমিত কাশ‍্যপ

এখন দিঘি আছে, মাঠ আছে 
কাজল দিদি নেই, নেই বিধুভূষণ চৌধুরীও
বিধুভূষণের শরিকরা জাঁক করে রথ করে 
ঘোরে সারা গ্রাম এই মাঠ তার মাসির বাড়ি 

মাসির বাড়ির মেলা, রথের মেলা
এটা ওটা মনোহারি হাতা খুন্তি
তেলেভাজা পাঁপড়ভাজা জিলিপি
দোলনা ময়ূর যান ম‍্যাজিক শো, কি নেই 

মেঘ ঝুলে আছে আকাশের গা থেকে 
বৃষ্টি নেই, আষাঢ় আর রথযাত্রা 
মোহনপুর আর বেগমপুর পাশাপাশি 
বিনোদনের বাতি জ্বলে সম্প্রীতির রথযাত্রা 




গান্ধর্ব

বিকাশ দাস   

 

বুঝে উঠতে পারছিনা

যে ফুল ঝরে পড়ে থাকে মাটিতে

ঈশ্বরের-বিগ্রহ সাজিয়ে তোলা ঠিক হবে কিনা।

এতে  ঈশ্বর কী ক্রোধিত  হবেন?

জীবন অভিশপ্ত  করে তুলবেন?

 

সমাজ-কাসুন্দি বলে

যেটা পড়ে থাকে বা যার সমূহ যায় গলে।  

সেটা পতিত-অচ্ছুৎ বলে চোখ ফিরিয়ে নিতে হয়

ছুঁয়ে নিলে অশুচি। পরক্ষণে ধুয়ে শুদ্ধ  হতে  হয়।

 

বুঝে উঠতে পারছিনা

সেই ফুল তুলে যে রেখে গ্যাছে ফুলদানির চারপাশ ভরে 

আঙুলে আঙুলে  স্বাচ্ছন্দ্যের গন্ধে সারা ঘর আলো করে।

 

সে ফুলদানি কী কলুষিত তবে ?

সে স্বজন কী নিন্দার্হ তবে ?

 

জল-শূন্য মাটির শরীর,রোদ-পোড়া ছায়ার নিবিড় ধরে

যজ্ঞ-ধোঁয়ায় আকাশের পিণ্ডে পুণ্যতার  ফুলকি ওড়ে।

 


রথযাত্রা 
বিকাশরঞ্জন হালদার 


কাল্য চকাক্ষী দারুব্রম্ভ। ব্রম্ভাণ্ডের প্রভু। আদিবাসী বৃক্ষ-উপাসক  সরভরা - এর  দেবতা জগনাত। বৈষ্ণব-শৈব-শাক্ত-গাণপত্য। রথযাত্রায় সর্ব সম্প্রদায়।

প্রসিদ্ধ প্রসিদ্ধ রথ জগন্নাথ ধামবাই
বাংলাদেশে ভক্তিরসে তুলনা যার-নাই 

তুলসীদাসের রাম। শ্রীচৈতন্যের কৃষ্ণ। শৈব-শাক্তের শিব। আবার মহারাষ্ট্রের গণপতিভট্টের দেবতা গণেশ। বহু রূপে জগন্নাথ। জগত্তারণ।

মেঘ গর্জায় বৃষ্টি নামে আষাঢ়ে জাগে প্রাণ
রথযাত্রা লোকসমাগম গাছ লাগানোর গান 

জনপ্রিয় রথযাত্রা-পুরীর উৎসব। পূর্ব-মেদিনীপুরের মহিষাদল।  শ্রীরামপুরের মাহেশ। আর উল্লেখযোগ্য ইসকন।

রাধারাণী কাদাপথে একলা অসহায় 
রাধারাণী কাদাপথে একলা অসহায়। হঠাৎ 
মিষ্টি আঁধার শীতল হাওয়া 
প্রেম জাগিয়ে রথের চাকা গড়িয়ে চলেযায়
প্রেম জাগিয়ে রথের চাকা গড়িয়ে চলেযায় 





রথের মেলা বসেছে

অশোক রায় 


রথের মেলা রঙিন নেশা ছেলেবেলার আস্ত মজা

টিভি ছাড়া মোবাইল বিনা জীবন তখন ছোট্ট খাতা

ধূসর ছবি রথের মেলার আঁকা আছে তার পাতায়

চারচাকার ছোট্ট রথে পাড়ি দিতাম যেমন খুশি যেথায়  

রথযাত্রা উৎসব এক সকাল হলেই মন মেলার মাঠ

বন্ধুরা মিলে আনন্দের দড়ি ধরে দিই টান সপাট

কত কিই তো ভাল লাগে সব কেনার পয়সা নেই

খাই পাঁপরভাজা আলুর চপ খাই বোঁদে নিমকি খই

মেলা যখন জমে উঠেছে হ্যাজাকের রোশন আলোয় 

সন্ধ্যের মুখে বাড়ি যাবার তাড়া জাগে বকুনির ভয়

দুটো লাট্টু একটা টেনিস বল লুডো দাবার ছক

এর বেশি সামর্থ নেই তবু মন-ভরা আনন্দলোক।।



সূর্যস্নাত এক পৃথিবীকে 
তামস চক্রবর্তী 


এমন এক ফোঁটা রক্ত দিতে পারো 
যা দিয়ে একটা নিখাদ প্রেমের গল্প লেখা যায়। 
কিংবা মুছে ফেলা যায় একটা আত্মহত্যার ইতিহাস ।

এমন একটু পবিত্র স্পর্শ দিতে পারো
যা দিয়ে ভালোবাসার লাশকাটা ঘরে 
 নারী হৃদয়ের ময়নাতদন্ত করা যায় ।

এমন এক স্ফুলিঙ্গ আগুন দিতে পারো
যা দিয়ে কোনো এক গৃহবধুর 
সিঁথির সিঁদুর পুড়িয়ে 
তার কৌমার্যকে ফিরিয়ে দেওয়া যায়। 

এমন এক ফোঁটা পবিত্র জল দিতে পারো এই গঙ্গায় 
যা দিয়ে কামনার আগুন নিভিয়ে 
সতীত্বের পদ্ম ফোটাতে পারি এই পঙ্কিলতায়। 

কিংবা এমন একটা দীর্ঘশ্বাস এনে দিতে পারো
যা দিয়ে এ পৃথিবীর সমস্ত সবুজ উড়িয়ে 
অবিশ্বাসী সমুদ্র ছায়ায় মতো ছাই রঙে 
ঢেকে দিতে পারি অবাধ্য সূর্যকে।

 অথবা
এমন একটা পবিত্র হৃদয় দিতে পারো যার মধ্যে অনেকটা অপবিত্রতা লুকিয়ে থাকতে পারে নির্ভয়ে। 

আর যদি কিছুই দিতে না পারো
তবে কাছে এসো অনেক কাছে
আমি এক হতভাগ্য কবির দুচোখ উপড়ে দিয়ে যাবো
যা দিয়ে তোমরা দেখবে 
সূর্যস্নাত এক সুন্দর পৃথিবীকে। 





রথের মেলা  
গোবিন্দ মোদক 


আষাঢ় এলেই মনে পড়ে 
        বসবে রথের মেলা, 
নাগরদোলা,  পুতুল নাচ 
        ম্যাজিক জাদুখেলা।
 
জিলিপি আর পাঁপড়ভাজা
        মেলার আকর্ষণ,
ভেঁপু বাঁশি, তালের সেপাই 
        কাড়বে শিশুর মন।

হরেক রকম মনোহারি 
        নানা স্বাদের খাজা,
এগরোল-চাউ-ফুচকা-পাস্তা
        'সব খেয়েছি'-র মজা !

হয়তো মেলা চলার সময় 
         বৃষ্টি আসবে তোড়ে, 
'জয় জগন্নাথ' উঠবে ধ্বনি 
        রথ ছুটবে জোরে !    


 

মেলা
সমাজ বসু

মেলা গুটিয়ে নেয়---
সারি সারি দোকান,ম্যাজিকঘরের পর্দা, জিলিপির উনুন---
হৈ হৈ কোলাহল, বন্দুক-বেলুন কিংবা
নিরুদ্দেশ ঘোষণা। 
এভাবেই মাঠ বদলে যায়---
এক মাঠ রেখে আর এক মাঠে পা বাড়ায় মেলা,
শুধু মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখে যায়---
"রাধারানী"গল্পের পাতায়।

দয়া বিশ্বাস আর সততা ঘুরতেই থাকে নাগরদোলার মত।



প্রতীক্ষায়
পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী 


কেউ কি আসবে বলে ছিল!
উন্মুক্ত অবারিত অবকাশ সঙ্গী করে,
বলেছিল অনেক কথা হবে, গান বা অকারণ হাসি
বেলা শেষে আমি ত অনেকক্ষণ বসে।

আমার বড় ভুল হয়ে যায়।
আমিতো সেজেছিলাম আগ্রহ নিয়ে,
যত্নে বেঁধে কবরি ফুল সাজে 
প্রসাধন করেছিলাম, সুগন্ধি ছড়িয়ে দিয়ে।

অপেক্ষায় প্রহর বয়ে যায় 
খোলা আকাশের নিচে এক অচেনার,
এক কৃষ্ণচূড়ার আগুন রাঙা আকাশে
সন্ধ্যার আঁচল ধরে আসে অন্ধকার। 

মনে হয় আমার অজ্ঞাতে চুপি চুপি
সে বুঝি এসে ছিল খোলা দরজায়,
গোপন অভিসারে নিঃশব্দ আলিঙ্গনে, 
কে জানে, আজকাল বড় ভুল হয়ে যায়। 





রাজার এঁটো
আশিস চৌধুরী

 বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে যারা গর্ববোধ করে
তাদের সেই বোধ অমলিন আছে কি না
এই বিতর্কে নাই বা গেলাম
যারা বলে এই গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে
খুন জখম ধর্ষণ অগ্নিসংযোগ ঘটবেই
বৃহত্তর কল- কারখানাকে বাঁচিয়ে রাখতে
কত শ্রমিকেরই তো মৃত্যু হয়
আসলে এই সব কথার আড়ালে
সুকৌশলে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিটাতেই
কুঠারের আঘাত হানা হচ্ছে
যে কবি রাষ্টের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে 
প্রতিবাদ করে না, কলম ধরে না
তিনি কবি নন
রাজার এঁটো খাওয়া কীট।


বর্ষার দু-চার কথা
ছোটন গুপ্ত

পুরানো ছাতাটা হারিয়েছি জলে নেমে,
আপাতত ভিজি ছাতা ছাড়া বৃষ্টিতে ।
ভিজতে ভিজতে চেনা প্রান্তরে থেমে...
তোমাকে খুঁজেছি নতুন এক সৃষ্টিতে ।

ভালোবাসা এলে আকাশের কালোমেঘে...
হঠাৎ ভাঙনে ঝরঝর জলচিঠি ।
চোখ মেলে আছো অকারণ উদ্বেগে...
ঘরে ফেরো তুমি আমি হাসি মিটিমিটি।

আকাশ পাঠালো বৃষ্টি শ্রাবণে সুরে,
ভালোবাসাহীন নয়া এক জলবাসা।
স্বপ্নের থেকে আছি যে অনেক দূরে,
একলা একাই ভিজে রেখে যাই আশা।

আকাশটা কালো রূপটানে জাগে আজ,
অপ্রেম কালে ঝাপসা চতুর্দিক।
চেনা জঙ্গলে সবুজাভা রূপসাজ,

কালকে আমরা পৃথিবী সারাবো ঠিক।।




চিরন্তন 
শুভঙ্কর দাস 

দু'জনের দেখা হলে
দশবারোজন চলে আসে,এই দৃশ্য 
অশ্রুতে খানিক ভিজিয়ে নিয়ে আগুন দিয়ে শেষ করে।
অথচ যার জন্য দু'জনের দেখা, সেই অনুপস্থিত, অনুচ্চারিত!

এ কেমন ধাঁধা? এ কেমন প্রহেলিকা?এ কেমন অস্ত্রহীন অস্ত্র,  শানিত?

ধরে নাও,দু'জন হল জীবন ও মৃত্যু, তাহলে উত্তর কী পাবে?
ধরে নাও,দু'জন হল মাটি ও মেঘ,তাহলে কি উত্তর পাবে?
ধরে নাও,এই দুজন আমি ও তুমি,তাহলে কি উত্তর পাবে?

একটি প্রশ্নের অযুত উত্তরে, অপু রেলগাড়ী হয়,দুগ্গা পড়ে থাকে জ্বরে...





সৃষ্টির বীজ
দীপক বেরা

চারিদিকে মৃত্যু-মিছিল.. 
বিভীষিকার প্রান্তরে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে একা
হীমশীতল ভয়ংকর ভীতি কাঁপিয়ে দিচ্ছে শরীর 
টলিয়ে দিচ্ছে মনোবল
ধ্বংসের কীট আচ্ছন্ন করে ফেলছে ক্রমশ 
মানবজীবন ও সভ্যতার ছড়ানো গ্রন্থিসমূহ
এখনও মানুষের ধর্ম নিয়ে জেহাদ 
উন্নাসিক ক্ষমতার উন্মত্ত উল্লাস-নৃত্য 
তবুও শীতের নীল সন্ধ্যায় পেয়ালা-চুমুক 
ভেজা ঠোঁটে মাখামাখি ব্যাপৃত জীবনের পাঁচালি! 
পিছিয়ে যেতে যেতে ঠিক কতটা হেরে গেলে
তির্যক শিরদাঁড়াটা খুঁটে নেয় চেতনার রঙ? 
জানি না, ..অপেক্ষার প্রহর গোনা শুধু!

ধ্বংসের মুখে আজ নির্ঘুম জাগরণ 
এই জাগরণের মধ্যে রাতজাগা এক পাখি 
জেগে থাকে নিপুণ আশায় ডিমের আশ্রয়ে
নিরুদ্দেশে দিকভ্রমণ শেষে অনির্ণেয় ভবিষ্যৎ
তবুও, কেউ নবজন্মের বীজ ছড়ায় গোপনে 
মুক্তির আকুলতায় ভবিষ্যতের প্রত্যাশায়.. 
ধ্বংসের পাশে শুয়ে থাকে সম্ভাবনাময় সৃষ্টির বীজ! 




রথের মেলায়

জগদীশ মন্ডল


বর্ষাকালে জল কাদাতে বহু লোকের ভীড়
জগন্নাথ যায় মাসির বাড়ি লক্ষ্য যে স্থির,
রথ চলেছে ধীরে ধীরে কেউ বা টানে দড়ি
সেই দড়িতে হাত লাগাতে চলে হুড়াহুড়ি।

ছেলে বুড়ো এগিয়ে চলে ঠেলায় ঠেলায়
পথের ধারে লোকারণ্য যাচ্ছে যে পায় পায়,
খোল করোতাল কাঁসর বাজে একই রকম সুরে
বাজনা শুনে ছুটে আসে যারা ছিলো দূরে।

রথ চলেছে রথ চলেছে গড়িয়ে যায় বেলা
বারাসাতের রথ তলাতে বসেছে যে মেলা,
মেলার মাঠে নাগরদোলা দোকান সারি সারি
নানান খেলনা ঘর সামগ্ৰী চলছে দোকানদারী।

এক দিকে তার বিক্রি হচ্ছে চাষির চাষের ফুল
অন্য দিকে পাঁপড়ভাজা,চুড়ি,কানের দুল,
একটি মেয়ে বেলুন বেচে গরীব পাশেই থাকে
পাঁচটি টাকা দাম দিয়ে নিন মেলার মাঠে হাঁকে।

হাতের বেলুন নিয়ে নিলাম একশো টাকা দামে
খামখেয়ালি মেঘটি তখন বৃষ্টি হয়ে নামে।



বহু যুগের ও পার হতে

সুবীর ঘোষ


 রথের দিন এখন বাড়ির ওটিজি-তে পাঁপড় সেঁকা হয়

আর ইউটিউবে সনৎ সিংহর রথের মেলার গান।

রথযাত্রা আছে তবে রথের মেলার শিহরণ আমার কাছ থেকে সরে গেছে অন্য কোথাও।

বৃষ্টিতে ভিজবার সেই সাহস আর নেই , নাগরদোলা চড়ে ঘুরবারও।

একবার একটা ভেঁপু কিনে এক বৃদ্ধার কানের কাছে বাজিয়ে দিতেই

তিনি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন—আদিখ্যেতা!

তাঁকে ভুভুজেলা-র গল্প শোনাতে পারলে ভালো হত।

এখন রথের মেলায় যাই না তা নয়।  আষাঢ়ের বৃষ্টিতে ভেজা কাঠের আসবাবগুলো দেখি।

আচার-বড়ি-মোরব্বার দোকানে গিয়ে দাঁড়াই। কখনও একটা ঢোলক কিনি বা বুড়ির চুল।

মেলার বাইরে বেরিয়ে চায়ের দোকানের কোনো ছেলেকে দিয়ে দিই।

একভাঁড় কালো চা নিয়ে দোকানদারকে বলি ---ওকে একবেলা ছুটি দেবেন, মেলা দেখে আসবে।

এক সময় রাধারানীকে  সঙ্গে নিয়ে মেলায় যেতাম। ওর ভালো নাম ছিল --- সমঙ্গা;-

মহাভারতের নদীর নামে নাম । আমি চাইতাম ও হারিয়ে যাক। কিন্তু হারায়নি ।

তবে পিছলে গিয়েছিল কিছুদিন পর ; কোথায় কে জানে !

অনেক বছর পর এক পাহাড়ি ধাবায় রাধারানীকে দেখেছিলাম।

সঞ্চিত নারীত্বের মধ্যে সেই কিশোরীকে আর খুঁজে পাইনি।




ঘাস 
পলাশ দাস



মেলার মাঠের কথা মনে পড়লে 
মুখ মনে পড়ে 
আদল কিছু - 

কিন্তু, রাস্তা মনে পড়ে না 

দেখি, আবিল ঘাসের ভিতর 
পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছি
 
ঘাস ক্রমশ 
হাঁটু  -  কোমর - মাথা - 





অসমাপ্ত পুতুল
সুধাংশুরঞ্জন সাহা

অসমাপ্ত পুতুলের খোলামেলা মন।
হাতের মুঠোয় দম ফুরনো বেলুন।
সবার চোখেই পোষ না মানা শমন।
এবার কোথাও অন্য জীবন মেলুন।

আড্ডার মুখ মুখের আড্ডায় মুখর।
সময়ের চোখে চোখে রটেছে আঁধার।
সকালের রোদ মেখে হাসে বালুচর।
মাখামাখি অবসরে দিন যায় তার।

মনখারাপের চিত্রনাট্যে তাকে চাই।
এবার অন্যরকম যাত্রা হবে শুরু।
শীতকাল হেমন্তের হাত ছাড়ে তাই।
মানুষজন তুলুক মাঝেমাঝে ভুরু।

দইফুচকায় হবে বিশ্বকাপ খেলা।
ফুটপাত জুড়ে হোক কুচো কুচো মেলা।





বন্ধ পথে ঘরের রথে
  ড. রমলা মুখার্জী

রথের রশি টানবে কে গো বল?
লকডাউনে পৃথিবী স্তব্ধ হল।

হারাণ বাগ ফুচকা বেচে রথে,
বিক্রি করে গাড়িতে ঘুরে পথে।

রথের মেলা জমেনি একদম
জলেতে যায় সবার পরিশ্রম।

কান্নাকাটি ধরেছে রাজু সোনা-
শুনছে না সে  কারুর কোন মানা।

বেশ বিপদে পড়ল বাবা দাদু-
ঠাম্মী বলে, শোন রে সোনা জাদু,

কাঠের রথ সাজাবো ফুলে ফুলে-
গাইবো গান নাচবি দুলে দুলে।

জগন্নাথের ধ্বনিতে নাতি ভোলে-
আঙিনা মাঝে রাজুর রথ চলে।

মামনি আনে পাঁপড়, চপ, মুড়ি-
বৃষ্টিও শুরু ইলশে গুঁড়ি গুঁড়ি।



পাপড় ভাজা

পুষ্প সাঁতরা

কাদা প্যাচ প্যাচ মাছি ভনভন্
গ্রাম্য রথের মেলা।
তুতো ভাই বোন মোরা চার জন
ঘন আনন্দের ভেলা।

রথের রশি বনগা মাসি
রস জিলিপির মজা।
রথের মিঠাই গাঢ় মিষ্টি
হলুদ কলাই ভাজা।

সারি সারি মনোহারি
নানান ইচ্ছে খুশি
ডাকছে দোকান আয় সোনা
নাও সবুজ কুশি।

রথে ওঠেন জগন্নাথ বলরাম
আর সুভদ্রা বোন
ঢাকের বোল নাকুড় নাকুড়
ওঠে সারাক্ষণ।

কামড় বসাই পাঁপড় ভাজায়
কলাপাতায় ঘুগনি
আহ্ কি মজা রথের গজা
জোরসে রসি টানি।

মাঠ পেরিয়ে আলপথে
সবুজ স্মৃতি ভ'রে
বছরের মেলা শুধু হাসিখেলা
মায়ের স্নেহ ক্রোড়ে।



আয় তো আমার

বিকাশ পণ্ডিত

আয় তো আমার গোলাপ ফুল
জুঁই ফুল তো ডাকিনি! 
শোন রে চাঁপা তোমার জন্য
একটু আদর রাখিনি। 

কেন জানিস? বোশেখ মাসে
আসতে তোকে বলিনি ;
সোনার বরণ অঙ্গ দেখে 
আমি কিন্তু  গলি নি। 

রাগ করলি? করতে পারিস 
বলছি তোকে শুনলি না;
বোশেখ মাসের নিদাঘ বেলায়
ফুলবাড়িতে আসিস না। 

শোন রে চাঁপা পরের বছর
আষাঢ় মাসে আসা চাই;
তখন না হয় দু -জন মিলে
রথের মেলায় পুরী যাই। 



আমার রথযাত্রা ও পরবর্তী


রাজেশ কান্তি দাশ



পাঁচ টাকার সম্বল নিয়ে
যে আঙুলটি ধরেছিলাম সেটি খসে গেছে ঘাসে।
ঘাস হলুদ হয়ে মৃত্তিকায় মিশেছে
আর আঙুল হয়েছে জৈবসার।
এখন আমার সেই শৈশব নেই, আমি পাঁচ থেকে দশে নেই;
তবু আমি ছুটে যাই সেই কেলাহলে, শশধরদের ডাকে আবদারে;
আমার দুই কড়ে আঙুলে ঝুলে থাকে দুই দ্বিতীয়ার চাঁদ
একজন একটা দেখায় তো আরেকজন আরেকটা
একজন মুড়িমুড়কি... তো আরেকজন নাগরদোলা...
সেই আমার মতো
আমি ওদের মধ্যে খুঁজে পাই পয়ত্রিশ বৎসর আগের নিজেকে।
পিতার কড়ে আঙুলে লুকিয়ে হাঁটে যেন আমার শৈশব।
জগন্নাথের রথযাত্রা আমার কাছে স্মৃতি
আমার সন্ততির কাছে আনন্দ ও প্রীতি।


রথযাত্রা

সুব্রত চৌধুরী


শহর জুড়ে রথের সুরে

পড়ে গেছে সাড়া,

ছুটছে সবাই রথের পানে

হয়ে পাগলপারা।

জগন্নাথের কৃপার আশায়

ডাকে ভক্তের বানে,

পূণ্য লাভের আশায় সবাই

রথের দড়ি টানে।

রথের চাকায় পিষ্ট হবে

 মনের যতো কালো,

ঘুচে যাবে জ্বরাব্যাধি

ফুটবে নতুন আলো।






রথ

শ্রাবণী বসু


স্নানযাত্রার মেলা বসে ওমনি রথের তলায়

পাতার বাঁশি ,পাঁপড়ভাজা,

এবং নাগরদোলায়।


ঘুরঘুরঘুর ঘুরছে চাকা রথ চলেছে রথ,

টানলে রশি পুণ্য হবে

পুরবে মনোরথ।


ঝমঝমাঝম রথের চাকা গমগমাগম ভিড়

হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি আসে

 রথের গতি ধীর।


ঝড় বাদলে সঙ্গে নিয়ে ,রথ চলেছে খুব

হাসির এবং বাঁশির ধ্বনি

একাকারে অপরূপ।


বাদল দিনে রথের মেলা জল থৈথৈ পথ

চরৈবেতি মানবজীবন -

চলতি পথের রথ।




রথের  মেলা 

গৌতম   মণ্ডল


বসেছে     রথের  মেলা

ভয়ে ভয়ে লকডাউনে ৷

চলে  রথ  গড়গড়িয়ে

আষাঢ়ের মেঘলাদিনে 


হারুদা  ভাজছে পাঁপড়

দূরে  ঐ  গাছতলাতে ৷

বসেছে  রথের  মেলা

গাঁয়েরই   রথতলাতে ৷


থিক্ থিকে  ভীড় জমেছে

রথের ঐ  ডাইনে বাঁয়ে ৷

ছেলেকে  ভোলায় মা  তার

মাটির ঐ  খেলনা  দিয়ে ৷


টুপ্ টাপ্   বৃষ্টি  পড়ে

কালো মেঘ  ছাইলো  আকাশ ৷

ভিজে  দ্যাখ্   রথের  চাকা

শন্  শন্  বইছে  বাতাস ৷


জিলিপির  গন্ধ  আসে

চারাগাছ  বেচছে  চাষি ৷

ঝালমুড়ি   হাঁকদিয়ে যায় 

টাটকা  নয়তো  বাসি ৷


মায়ের  ঐ  আঁচলা ধরে

কাঁদে  তার  পুঁচকে  খোকা ৷

বাজাবে  পাতার  বাঁশি

তাকে  আজ, যায় কি  রোখা ?


আজকে ,  রথের  দিনে

মনেপড়ে  সে  গল্পটা ৷

বঙ্কিম বাবুর  লেখা

'রাধারানী'-  সেই মেয়েটা ৷


খুঁজলাম , অনেক কোরে

ঝাপসা,  চোখের  তারা ৷

চেয়ে দেখি,  বাবার সাথে

বেচছে  ফুলের  চারা ৷


'রাধারানী'  রইছে  আজও

বাঙালির  হৃদয়  জুড়ে ৷

আজও  রথ,  চলছে  পথে

জীবনের  রাস্তা  জুড়ে ৷

....আজও  রথ  চলছে  পথে

জীবনের  রাস্তা  জুড়ে ৷

আজও রথ  চলছে  পথে

জীবনের  রাস্তা  জুড়ে...






ভিক্ষা,

বহ্নি শিখা 



রথের চাকায় মন বাঁধিয়া 

থাকবো অনেক দূরে 

ধরবো না যে রথের দড়ি

রইবো ধুলোর ভিড়ে।


টানবো তাঁরে হৃদের সূতোয়

নামের পূণ্য মালায়,

আঁখির জলে অর্ঘ্য দেবো 

করাঞ্জলীর ডালায়। 


পাপী তাপি জীবন আমার

মগ্ন সংসার মাঝে,

দয়াল বিনা কে আর আছে

বন্ধু সকাল সাঁঝে।


লোভের সাগর মানব হৃদয়

বিদ্বেষ হিংসায় দীক্ষা 

কায়োমনো করজোড়ে 

জানাই সুজ্ঞান ভিক্ষা।





ছাপ

তাপস কুমার চট্টরাজ


আঙুলে লেগে আছে

দৈনতার ছাপ । ভিক্ষা না আকর্ষণ,

নাকি নিজেকে

সুকৌশলে রক্ষিত হওয়ার মন্ত্র ?

গোপন ইচ্ছা দমিত চিন্তনে

উদাসী হাওয়ায় নির্লিপ্ত হাঁটাচলা

মস্তিষ্কের কাছে বাঁধা পরে গেছে

অলিন্দ নিলয়।হরতনের সাহেবও

কখনো সখনো চিড়িতনের

দুরির তুরুপে নিশ্চুপ ।

ফিরে যাওয়া হয় না কিছুতেই

বিবর্ণ দেওয়ালের নৈকট্যে ।







গতি 

তপনজ্যোতি মাজি


গতি কি প্রগতির প্রতীক?

রথে উপবিষ্ট ঈশ্বর।

মানুষ টানছে রশি ধর্মবোধে।

প্রতীক ও বৈপরীত্যর কুহকে যে যেখানে ছিল 

সেখানেই আছে।


সর্বজনীন প্রগতি কি তত্ত্ব মাত্র?

প্রান্তিক মানুষের দিকে কে বাড়াবে হাত?

চাকায় পিষ্ট  সময় ও শ্রম।

শুধু উদযাপন!

কোলাহল ও জন-জোয়ারে ঈশ্বর কি 

রাজনৈতিক নেতার মতো ভুলে যান

কি করণীয় ছিল?


তবুও  চরৈবেতি

ইতিহাস ভুলে যায় ইতিবৃত্ত।

মানুষ ভুলে যায় মানুষের সংগ্রামের কথা।

রথের মেলায় মিশে যায় শ্রেণি বিভেদ ,

ঈশ্বর এবং মানুষ।




রথযাত্রা

শেখ সিরাজ


রথযাত্রা লোকারণ্য

মহা ধুমধাম

জগন্নাথের চরণে জানাই

শতকোটি প্রণাম। 


রথের রশি স্পর্শ করা

মহাপূর্ণের কাজ

শান্তি আনে মনের মধ্যে

কাটায় সকল বিষাদ। 


জগন্নাথের রথযাত্রায়

বলরাম সুভদ্রা

ঘুরতে আসেন মর্ত ধামে

মাহেশ থেকে আদ্রা। 


বর্ণ বিদ্বেষ নেই সেখানে

জনতার সমাগম

জয় জগন্নাথ জয় জগন্নাথ

বড়ই মনোরম। 




জয় জগন্নাথ 

পাপিয়া গোস্বামী 


কারা যেন সব দলে দলে চলেছে কোথায় নিঃশব্দে নীরবে।

পড়ছে খসে জীবনবৃক্ষ হতে যেন ঝরা পাতা।


বিশ্বের দরবারে মৃত্যু মিছিল দিয়েছে হানা।

শত্রু ফাঁদ পেতে বসে আছে সবার অলক্ষ্যে।


বন্দি হয়েছে মানুষ এখন গৃহ কারাগারে।

মহাকালের থাবা থেকে মুক্তি  কোথায়?


কিছু স্বার্থপর লোভী আত্মকেন্দ্রিক মানুষের অন্যায় ও অপরাধের মাত্রা ছাড়িয়েছে বহুদিন...

সহ্য করতে করতে আজ ভারাক্রান্ত পৃথিবী।


হে জগন্নাথ ! জগতের রক্ষাকর্তা--

নতজানু হয়ে করজোড়ে মিনতি করি তোমার কাছে ।

রক্ষা করো তোমার সৃষ্টি---

নরনারায়ণের প্রাণ।


এবার রথযাত্রায় তোমার রথের চাকায় ধুলোয় মিশে যাক যত মহামারীর জীবাণু।


জয় হোক জগন্নাথদেবের...

অমৃতের ধারা বর্ষিত হোক ভুবন জুড়ে ।




প্রভুর দয়া

নন্দিনী মান্না


 মেঘ-বৃষ্টির তুমুল রেশারেশির মাঝে,

 ঝর্ ঝর্ ধারা,

 গুর্ গুর্ মেঘ,

 মাসির বাড়ি যাওয়ার তরে রথ সাজে।

 জগতের নাথ দর্শনে সবাই জোটে,

রথের রশি ছোঁওয়া,

আশীষ চেয়ে নেওয়া,

 শ্রীরূপের মায়ার বাঁধনে সংসার ছোটে।

 মহামারীর চোখ-রাঙানিতে দূরত্ব নিয়ম,

 টেলিভিশনে দেখা,

 কাঁঠালের স্বাদ চাখা,

প্রভুর দয়ায় ভয় জয় করার স্বপ্ন বুনন।




আকুতি

রাসমণি ব্যানার্জী


বাদল ঘুমের ঘোর ডাকছে আমায়

জীবন রথের চাকা আজ অসহায়। 

লোকালয়ে জীবাণু যে পেতেছে গো ফাঁদ

বিশ্বের অসুখ আজ ভয়ে চুপ চাঁদ। 

রোগের কারণে লোক দিকে দিকে কাঁদে

মৃত্যুর নুপূর বাজে স্বজনের কাঁধে। 

ঘরে দোরে শুধু জল পৃথিবী  আঁধার

অকাল বন্যায় আজ ভাঙে নদী পাড় । 

জীবন ভীষণ ক্লান্ত মরণের ডাকে

ঘরে বন্দী মানুষেরা পটে ছবি আঁকে। 

তোমার রথের চাকা আজ বড় ক্লান্ত

দিকে দিকে হাহাকার তুমিও অশান্ত। 

তোমার রথের চাকা মানুষই তো টানে

তোমার চরণ ফুল ওরা তুলে আনে।

কি হবে উপায় প্রভু তুমি বলে দাও

জগতের সব দুঃখ কাঁধে তুলে নাও।





পথ ও রথ

দীপা কর্মকার 


পথের ওপর রথ চলবে

ভাবছে বসে পথ

এবার যে তার পূর্ণ হবে

সকল মনোরথ।


আসবে চড়ে ঐ যে রথে

প্রভু জগন্নাথ

পথের ধূলি তাইতো জেগে

রইলো সারারাত।


ভক্তেরা সব থাকবে পথে

দাঁড়িয়ে সারে সারে

কখন তারা পরশ পাবে

রথের রশিটারে।


দুই পাশে তার বসবে মেলা

আলোর ঝলকানি

পাঁপড় ভাজা, রঙিন বাঁশি

হরেক বিকিকিনি।


পথের ওপর রথের মেলা

চড়ক, নাগরদোলা

আনন্দেতে কাটবে তার

কালকে সারাবেলা।



জগদীশ্বর  

মালা ঘোষ মিত্র


আকাশে এত কালো মেঘ

তবে তো বৃষ্টি হবেই

বৃষ্টিস্নাত দিনে কি যে উচ্ছ্বাস

এক অজানা ছন্দে মন উন্মুখ

বিকেলে রথের মেলা

গাছ লাগাতে হবে, পৃথিবী নির্মল-----

একবুক নিঃশ্বাস নিয়ে

সবুজে চোখ জুড়াবে। 

পাঁপড় জিলিপি, দরবেশ

মাকে ভীষণ পড়ছে মনে

নাগরদোলায় গাছেদের মাথা ছোঁবো

ভেসে যাবো অনির্বাণ আকাঙ্ক্ষায়

রথের রশি টানা বলে

এসে দাঁড়াই রাস্তার পাশে। 

'জয় জগন্নাথ ' জগদীশ্বর

পৃথিবীতে এনে দাও করোনামুক্ত সকাল। 



রথযাত্রার পূণ্যলগ্নে
 রত্না দত্ত

আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথি
হে জগন্নাথদেব,তোমার পদতলে রাখি
আমার শ্রদ্ধা,প্রণাম ও মিনতি।
হে জগন্নাথ,হে জগতের নাথ
তুমি যে মহাপ্রভু,তুমি যে শ্রীধামনাথ
প্রতিবছর এই রথযাত্রার পূণ্যলগ্নে
অপেক্ষাতে থাকেন তোমারই ভক্তরা,
সোজারথ ও উল্টোরথ উৎসবের মধ্য দিয়ে
সবাই যে হয় আনন্দে ও উল্লাসে মাতোয়ারা।
রথের ধ্বজা উড়িয়ে রথে চেপে
তুমি যে আসো হে ত্রিলোকের নাথ,
সুভদ্রা ও বলরামকেও সঙ্গে আনো
রথযাত্রার এই পুণ্য তিথিতে
হ্যাঁ জগন্নাথ,হে শ্রীধামনাথ।
তোমারই আশীর্বাদে আলোকিত
আজ পুণ্যতীর্থ পুরীধাম।







রাত হয়, বৃষ্টি নামে 
বিমল মণ্ডল 


সারাদিন,সারারাত, সারাবছর 
আমাকে দেখতে ব্যস্ত
আমাকে টানছে;একটা সময়, সাহস ও ভয়
আমাকে দেখছে ঈশ্বর  ও মানুষ 
লোকে চলেছে 
লোকে ছুটছে
রঙ বদলের পাড়ায় - পাড়ায়

হাসি- হাততালি - প্রণামের গানে ছটপটে,ঝলমল
দূরে দূরে— কেনাকাটার ব্যয়ভার
নিকানো রাস্তায় এলোমেলো, এঁকেবেঁকে 
আমিও পার হই... রাত হয়, বৃষ্টি নামে...









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন