বিশেষ কবিতার ক্রোড়পত্র
লিখেছেন —
সৌমিত বসু
শাহিন রেজা
রবীন বসু
রবিন বণিক
সাতকর্ণী ঘোষ
বিকাশ চন্দ
স্বপনকুমার রায়
মৃণালেন্দু দাশ
পিযুষ বাকচি
সঞ্জীব দে
গৌতম রায়
দুর্গাদাস মিদ্যা
ফটিক চৌধুরী
স্বপন বিশ্বাস
অমিত কাশ্যপ
বিকাশ দাস
বিকাশ রঞ্জন হালদার
অশোক রায়
তামস চক্রবর্তী
গোবিন্দ মোদক
সমাজ বসু
পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী
আশিস চৌধুরী
ছোটন গুপ্ত
শুভঙ্কর দাস
দীপক বেরা
জগদীশ মণ্ডল
সুবীর ঘোষ
পলাশ দাস
সুধাংশুরঞ্জন সাহা
ডঃ রমলা মুখার্জী
পুষ্প সাঁতরা
বিকাশ পণ্ডিত
রাজেশ কান্তি দাশ
সুব্রত চৌধুরী
শ্রাবণী বসু
গৌতম মণ্ডল
বহ্নি শিখা
তাপস কুমার চট্টরাজ
তপনজ্যোতি মাজি
শেখ সিরাজ
পাপিয়া গোস্বামী
নন্দিনী মান্না
রাসমনি ব্যানার্জি
দীপা কর্মকার
মালা ঘোষ মিত্র
রত্না দত্ত
বিমল মণ্ডল
সময়ের সংযোগসেতু
রবীন বসু
অবরুদ্ধ দিনের থেকে যে পাখি উড়ান নিল
তার ঠোঁটে গতজন্মের বিষাদ;
স্মৃতি তুলো হয়ে উড়ে যাচ্ছে স্বপ্নে
গভীর সুপ্তি আচ্ছন্ন করে মায়ারাত্রি
রামগিরি পর্বত আর পূর্বমেঘ
তারাও উড়াল দিল অলকাপুরীর দিকে;
পূর্বরাত্রি মহানিশা পররাত্রি, এই সংযোগসেতু
পার হয়েই আষাঢ়ের বর্ষা নামলো
জীবনানন্দের রূপসী বাংলায়।
ধূসর আবরণ টেনে ওই সংযোগসেতু
বিষণ্ণতা মেখে ধাবিত মেঘের দিকে ছোটে।
হে কালগ্রন্থি, সময় নিশ্চুপ,
নির্বাক বেদনাহীন রোমাঞ্চ
তাকে অবলোকনে নিয়ে সময় দাঁড়িয়েছ ঠায়...
কিছু বৃষ্টির মুখোমুখি দাও
দাও অনন্ত জলের সুখ
তুমি যে মেঘেরই বিষয়বস্তু
আমি যে অন্য কারোর মুখ
লাঙল জুড়ে অসুর অসুর গন্ধ
মাটির গায়ে কুয়াশার মতো প্রাণ
ব্যবহৃত আমি রাষ্ট্র বিরোধী জলবা
বীজের রক্তে মৃত কৃষকের ঘ্রাণ
পহন্ডী বিজয়
মৃণালেন্দু দাশ
এ-এক আশ্চর্য রথযাত্রা নীলাচলবাসী দারুব্রক্ষ্মত্রয়
জগন্নাথ বলভদ্র সুভদ্রার ৷ এঁরা ভাইবোন ৷ আসলে যে
এক ও অভিন্ন জগন্নাথ , তিনরুপে অবর্তীন হয়েছেন
তিনি , আছেনও একসাথে ৷ এ তাঁর প্রকট লীলা —
স্কন্দপূরাণ সুনিশ্চিত করেছেন তথ্যটি তাঁর বিষ্ণুখন্ডে ,
এই — "এক এব জগন্নাথস্ত্রিধা তত্রো স্থিতো দ্বিজাঃ ৷"
আর তাই, পুরীর মন্দির ব্রক্ষ্মাকর্তৃক প্রতিষ্ঠার পরেই
রাজা ইন্দ্রদ্যুম্মকে আদেশ করলেন জগন্নাথ—"আষাঢ়ের
শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে বলভদ্র সুভদ্রা সহ আমাকে তুমি
রথে করে নিয়ে যাবে ঐ গুন্ডিচা মন্দিরে সহস্র অশ্বমেধ
যজ্ঞের মহাবেদীতে ৷ জানিবে এইস্থান আমার জন্মভূমি ৷
সেই শুরু রথযাত্রার ৷ আজও সমানে চলেছে একভাবে
তালধ্বজে বলভদ্র , দর্পদলনে সুভদ্রা আর নন্দীঘোষে
জগন্নাথ আরোহন করতেই পুরীর রাজা নিজের হাতে
সোনার ঝাঁড়ুতে পরিস্কার করেন রথ ও পথ ৷ তারপর—
লক্ষ্য হাতে টান পড়ে রথের রশিতে শুরু পহন্ডী বিজয় !
রথের বাঁশি
পীযূষ বাকচি
খোকার বাবা ট্রেনের হকার। মাও কাজের মাসি।
বছর ঘোরে, ট্রেন বন্ধ। বাবার বুকে কাশি।
কাজ গিয়েছে দুটো বাড়ির। মায়ের মুখে আঁধার।
একটা বাড়ির অন্ধকারে সময় কোথায় কাঁদার!
রেললাইনের পাশে তাদের ঝুপড়ি এলোথেলো।
হতাশ বাবা মাথা ঝাঁকায়। স্টাফ স্পেশালটা গেল!
আষাঢ় মাস। মেঘলা দিন। রথযাত্রার বাঁশি।
অনুদান নয়, কাজের শ্লাঘা! বাবার বুকের কাশি
বেড়েই চলে। বেড়েই চলে খোকার দাবি, পাঁপড়!
ভাত ঘরে নেই। মা অসহায়। লক্ষ্মীঘটেই ফাঁপর!
রথের বাঁশি বাজুক। সঙ্গে বাজুক ট্রেনের বাঁশি।
ঘাম-রক্ত-জলে ফুটুক অভাজনের হাসি।
কিন্তু এসব অলীক মায়া। কর্পোরেটের খেলা।
তীব্র অভাব। রাজাজ্ঞাতে জ্বলে গরিব বেলা!
পাঁপড়বিহীন ঘুমোয় খোকা। নিঝুম চারিধার।
মা-বাবাকে হাতছানি দেয় রাতের অন্ধকার!
রথযাত্রার আনন্দ শেষ। ঠুঁটো জগন্নাথ!
পাড়ার ক্যাম্পে উপছে পড়ছে দাস্যজীবীর ভাত।
পথ রেখো গো পরিষ্কারে
সঞ্জীব দে
সারে তিন হাত রথে চড়ে
জীবন যে যায় পরপারে
লোভ, মোহ, প্রেম ভালোবাসায়
থাকে মনের উপর চড়ে
বলরাম, সুভদ্রা জগন্নাথের
রথ চলে ওই গুন্ডিচারী
পথের ধুলায় নদের নিমাই
ভক্তিতে খায় গড়াগড়ি।
কে আছে গো শরীর বিহীন
রসিক প্রেমে টইটম্বুর
মোহ কামের পথ ছেড়ে গো
ভালোবাসায় যাবেই সুদূর
হৃদয় নিয়ে ভক্তিরসে
টানো দড়ির খুট ধরে
বিবেক দিয়ে সরিয়ে ধূলো
পথ রেখো গো পরিষ্কারে।
বন্ধুত্ব
গৌতম রায়
তবু
দুর্গাদাস মিদ্য
মহাকালের রথের চাকা
চলেছে তরতরিয়ে
সময়ের হাত ধরে।
এগিয়ে আসে জগন্নাথের রথ
মানুষের দুঃখ কষ্ট নিরসনে।
এত সময়ের ব্যবধানে
এখনও চোখে পড়ে হতভাগ্য রাধারানীদের।
অশ্রু পীড়িত সেই রাত
বার বার ফিরে আসে মনে সচেতন।
সেই দুঃখের আগুন আজও নেভেনা অঝোর বৃষ্টি ধারায়
তবু ও রথের উৎসব আসে যায়, আসে যায়।
গান্ধর্ব
বিকাশ দাস
বুঝে উঠতে পারছিনা
যে ফুল ঝরে পড়ে থাকে মাটিতে—
ঈশ্বরের-বিগ্রহ সাজিয়ে তোলা ঠিক হবে কিনা।
এতে ঈশ্বর কী ক্রোধিত হবেন?
জীবন অভিশপ্ত করে তুলবেন?
সমাজ-কাসুন্দি বলে
যেটা পড়ে থাকে বা যার সমূহ যায় গলে।
সেটা পতিত-অচ্ছুৎ বলে চোখ ফিরিয়ে নিতে হয়
ছুঁয়ে নিলে অশুচি। পরক্ষণে ধুয়ে শুদ্ধ হতে হয়।
বুঝে উঠতে পারছিনা
সেই ফুল তুলে যে রেখে গ্যাছে ফুলদানির চারপাশ ভরে
আঙুলে আঙুলে স্বাচ্ছন্দ্যের গন্ধে সারা ঘর আলো করে।
সে ফুলদানি কী কলুষিত তবে ?
সে স্বজন কী নিন্দার্হ তবে ?
জল-শূন্য মাটির শরীর,রোদ-পোড়া ছায়ার নিবিড় ধরে
যজ্ঞ-ধোঁয়ায় আকাশের পিণ্ডে পুণ্যতার ফুলকি ওড়ে।
রথের মেলা বসেছে
অশোক রায়
রথের মেলা রঙিন নেশা ছেলেবেলার আস্ত মজা
টিভি ছাড়া মোবাইল বিনা জীবন তখন ছোট্ট খাতা
ধূসর ছবি রথের মেলার আঁকা আছে তার পাতায়
চারচাকার ছোট্ট রথে পাড়ি দিতাম যেমন খুশি যেথায়
রথযাত্রা উৎসব এক সকাল হলেই মন মেলার মাঠ
বন্ধুরা মিলে আনন্দের দড়ি ধরে দিই টান সপাট
কত কিই তো ভাল লাগে সব কেনার পয়সা নেই
খাই পাঁপরভাজা আলুর চপ খাই বোঁদে নিমকি খই
মেলা যখন জমে উঠেছে হ্যাজাকের রোশন আলোয়
সন্ধ্যের মুখে বাড়ি যাবার তাড়া জাগে বকুনির ভয়
দুটো লাট্টু একটা টেনিস বল লুডো দাবার ছক
এর বেশি সামর্থ নেই তবু মন-ভরা আনন্দলোক।।
রথের মেলায়
জগদীশ মন্ডল
বর্ষাকালে জল কাদাতে বহু লোকের ভীড়
জগন্নাথ যায় মাসির বাড়ি লক্ষ্য যে স্থির,
রথ চলেছে ধীরে ধীরে কেউ বা টানে দড়ি
সেই দড়িতে হাত লাগাতে চলে হুড়াহুড়ি।
ছেলে বুড়ো এগিয়ে চলে ঠেলায় ঠেলায়
পথের ধারে লোকারণ্য যাচ্ছে যে পায় পায়,
খোল করোতাল কাঁসর বাজে একই রকম সুরে
বাজনা শুনে ছুটে আসে যারা ছিলো দূরে।
রথ চলেছে রথ চলেছে গড়িয়ে যায় বেলা
বারাসাতের রথ তলাতে বসেছে যে মেলা,
মেলার মাঠে নাগরদোলা দোকান সারি সারি
নানান খেলনা ঘর সামগ্ৰী চলছে দোকানদারী।
এক দিকে তার বিক্রি হচ্ছে চাষির চাষের ফুল
অন্য দিকে পাঁপড়ভাজা,চুড়ি,কানের দুল,
একটি মেয়ে বেলুন বেচে গরীব পাশেই থাকে
পাঁচটি টাকা দাম দিয়ে নিন মেলার মাঠে হাঁকে।
হাতের বেলুন নিয়ে নিলাম একশো টাকা দামে
খামখেয়ালি মেঘটি তখন বৃষ্টি হয়ে নামে।
বহু যুগের ও পার হতে
সুবীর ঘোষ
রথের দিন এখন বাড়ির ওটিজি-তে পাঁপড় সেঁকা হয়
আর ইউটিউবে সনৎ সিংহর রথের মেলার গান।
রথযাত্রা আছে তবে রথের মেলার শিহরণ আমার কাছ থেকে সরে গেছে অন্য কোথাও।
বৃষ্টিতে ভিজবার সেই সাহস আর নেই , নাগরদোলা চড়ে ঘুরবারও।
একবার একটা ভেঁপু কিনে এক বৃদ্ধার কানের কাছে বাজিয়ে দিতেই
তিনি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন—আদিখ্যেতা!
তাঁকে ভুভুজেলা-র গল্প শোনাতে পারলে ভালো হত।
এখন রথের মেলায় যাই না তা নয়। আষাঢ়ের বৃষ্টিতে ভেজা কাঠের আসবাবগুলো দেখি।
আচার-বড়ি-মোরব্বার দোকানে গিয়ে দাঁড়াই। কখনও একটা ঢোলক কিনি বা বুড়ির চুল।
মেলার বাইরে বেরিয়ে চায়ের দোকানের কোনো ছেলেকে দিয়ে দিই।
একভাঁড় কালো চা নিয়ে দোকানদারকে বলি ---ওকে একবেলা ছুটি দেবেন, মেলা দেখে আসবে।
এক সময় রাধারানীকে সঙ্গে নিয়ে মেলায় যেতাম। ওর ভালো নাম ছিল --- সমঙ্গা;-
মহাভারতের নদীর নামে নাম । আমি চাইতাম ও হারিয়ে যাক। কিন্তু হারায়নি ।
তবে পিছলে গিয়েছিল কিছুদিন পর ; কোথায় কে জানে !
অনেক বছর পর এক পাহাড়ি ধাবায় রাধারানীকে দেখেছিলাম।
সঞ্চিত নারীত্বের মধ্যে সেই কিশোরীকে আর খুঁজে পাইনি।
পাপড় ভাজা
পুষ্প সাঁতরা
কাদা প্যাচ প্যাচ মাছি ভনভন্
গ্রাম্য রথের মেলা।
তুতো ভাই বোন মোরা চার জন
ঘন আনন্দের ভেলা।
রথের রশি বনগা মাসি
রস জিলিপির মজা।
রথের মিঠাই গাঢ় মিষ্টি
হলুদ কলাই ভাজা।
সারি সারি মনোহারি
নানান ইচ্ছে খুশি
ডাকছে দোকান আয় সোনা
নাও সবুজ কুশি।
রথে ওঠেন জগন্নাথ বলরাম
আর সুভদ্রা বোন
ঢাকের বোল নাকুড় নাকুড়
ওঠে সারাক্ষণ।
কামড় বসাই পাঁপড় ভাজায়
কলাপাতায় ঘুগনি
আহ্ কি মজা রথের গজা
জোরসে রসি টানি।
মাঠ পেরিয়ে আলপথে
সবুজ স্মৃতি ভ'রে
বছরের মেলা শুধু হাসিখেলা
মায়ের স্নেহ ক্রোড়ে।
আয় তো আমার
আমার রথযাত্রা ও পরবর্তী
রাজেশ কান্তি দাশ
পাঁচ টাকার সম্বল নিয়ে
যে আঙুলটি ধরেছিলাম সেটি খসে গেছে ঘাসে।
ঘাস হলুদ হয়ে মৃত্তিকায় মিশেছে
আর আঙুল হয়েছে জৈবসার।
এখন আমার সেই শৈশব নেই, আমি পাঁচ থেকে দশে নেই;
তবু আমি ছুটে যাই সেই কেলাহলে, শশধরদের ডাকে আবদারে;
আমার দুই কড়ে আঙুলে ঝুলে থাকে দুই দ্বিতীয়ার চাঁদ
একজন একটা দেখায় তো আরেকজন আরেকটা
একজন মুড়িমুড়কি... তো আরেকজন নাগরদোলা...
সেই আমার মতো
আমি ওদের মধ্যে খুঁজে পাই পয়ত্রিশ বৎসর আগের নিজেকে।
পিতার কড়ে আঙুলে লুকিয়ে হাঁটে যেন আমার শৈশব।
জগন্নাথের রথযাত্রা আমার কাছে স্মৃতি
আমার সন্ততির কাছে আনন্দ ও প্রীতি।
রথযাত্রা
সুব্রত চৌধুরী
শহর জুড়ে রথের সুরে
পড়ে গেছে সাড়া,
ছুটছে সবাই রথের পানে
হয়ে পাগলপারা।
জগন্নাথের কৃপার আশায়
ডাকে ভক্তের বানে,
পূণ্য লাভের আশায় সবাই
রথের দড়ি টানে।
রথের চাকায় পিষ্ট হবে
মনের যতো কালো,
ঘুচে যাবে জ্বরা, ব্যাধি
ফুটবে নতুন আলো।
রথ
শ্রাবণী বসু
স্নানযাত্রার মেলা বসে ওমনি রথের তলায়
পাতার বাঁশি ,পাঁপড়ভাজা,
এবং নাগরদোলায়।
ঘুরঘুরঘুর ঘুরছে চাকা রথ চলেছে রথ,
টানলে রশি পুণ্য হবে
পুরবে মনোরথ।
ঝমঝমাঝম রথের চাকা গমগমাগম ভিড়
হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি আসে
রথের গতি ধীর।
ঝড় বাদলে সঙ্গে নিয়ে ,রথ চলেছে খুব
হাসির এবং বাঁশির ধ্বনি
একাকারে অপরূপ।
বাদল দিনে রথের মেলা জল থৈথৈ পথ
চরৈবেতি মানবজীবন -
চলতি পথের রথ।
রথের মেলা
গৌতম মণ্ডল
বসেছে রথের মেলা
ভয়ে ভয়ে লকডাউনে ৷
চলে রথ গড়গড়িয়ে
আষাঢ়ের মেঘলাদিনে
হারুদা ভাজছে পাঁপড়
দূরে ঐ গাছতলাতে ৷
বসেছে রথের মেলা
গাঁয়েরই রথতলাতে ৷
থিক্ থিকে ভীড় জমেছে
রথের ঐ ডাইনে বাঁয়ে ৷
ছেলেকে ভোলায় মা তার
মাটির ঐ খেলনা দিয়ে ৷
টুপ্ টাপ্ বৃষ্টি পড়ে
কালো মেঘ ছাইলো আকাশ ৷
ভিজে দ্যাখ্ রথের চাকা
শন্ শন্ বইছে বাতাস ৷
জিলিপির গন্ধ আসে
চারাগাছ বেচছে চাষি ৷
ঝালমুড়ি হাঁকদিয়ে যায়
টাটকা নয়তো বাসি ৷
মায়ের ঐ আঁচলা ধরে
কাঁদে তার পুঁচকে খোকা ৷
বাজাবে পাতার বাঁশি
তাকে আজ, যায় কি রোখা ?
আজকে , রথের দিনে
মনেপড়ে সে গল্পটা ৷
বঙ্কিম বাবুর লেখা
'রাধারানী'- সেই মেয়েটা ৷
খুঁজলাম , অনেক কোরে
ঝাপসা, চোখের তারা ৷
চেয়ে দেখি, বাবার সাথে
বেচছে ফুলের চারা ৷
'রাধারানী' রইছে আজও
বাঙালির হৃদয় জুড়ে ৷
আজও রথ, চলছে পথে
জীবনের রাস্তা জুড়ে ৷
....আজও রথ চলছে পথে
জীবনের রাস্তা জুড়ে ৷
আজও রথ চলছে পথে
জীবনের রাস্তা জুড়ে...
ভিক্ষা,
বহ্নি শিখা
রথের চাকায় মন বাঁধিয়া
থাকবো অনেক দূরে
ধরবো না যে রথের দড়ি
রইবো ধুলোর ভিড়ে।
টানবো তাঁরে হৃদের সূতোয়
নামের পূণ্য মালায়,
আঁখির জলে অর্ঘ্য দেবো
করাঞ্জলীর ডালায়।
পাপী তাপি জীবন আমার
মগ্ন সংসার মাঝে,
দয়াল বিনা কে আর আছে
বন্ধু সকাল সাঁঝে।
লোভের সাগর মানব হৃদয়
বিদ্বেষ হিংসায় দীক্ষা
কায়োমনো করজোড়ে
জানাই সুজ্ঞান ভিক্ষা।
ছাপ
তাপস কুমার চট্টরাজ
আঙুলে লেগে আছে
দৈনতার ছাপ । ভিক্ষা না আকর্ষণ,
নাকি নিজেকে
সুকৌশলে রক্ষিত হওয়ার মন্ত্র ?
গোপন ইচ্ছা দমিত চিন্তনে
উদাসী হাওয়ায় নির্লিপ্ত হাঁটাচলা
মস্তিষ্কের কাছে বাঁধা পরে গেছে
অলিন্দ নিলয়।হরতনের সাহেবও
কখনো সখনো চিড়িতনের
দুরির তুরুপে নিশ্চুপ ।
ফিরে যাওয়া হয় না কিছুতেই
বিবর্ণ দেওয়ালের নৈকট্যে ।
গতি
তপনজ্যোতি মাজি
গতি কি প্রগতির প্রতীক?
রথে উপবিষ্ট ঈশ্বর।
মানুষ টানছে রশি ধর্মবোধে।
প্রতীক ও বৈপরীত্যর কুহকে যে যেখানে ছিল
সেখানেই আছে।
সর্বজনীন প্রগতি কি তত্ত্ব মাত্র?
প্রান্তিক মানুষের দিকে কে বাড়াবে হাত?
চাকায় পিষ্ট সময় ও শ্রম।
শুধু উদযাপন!
কোলাহল ও জন-জোয়ারে ঈশ্বর কি
রাজনৈতিক নেতার মতো ভুলে যান
কি করণীয় ছিল?
তবুও চরৈবেতি
ইতিহাস ভুলে যায় ইতিবৃত্ত।
মানুষ ভুলে যায় মানুষের সংগ্রামের কথা।
রথের মেলায় মিশে যায় শ্রেণি বিভেদ ,
ঈশ্বর এবং মানুষ।
রথযাত্রা
শেখ সিরাজ
রথযাত্রা লোকারণ্য
মহা ধুমধাম
জগন্নাথের চরণে জানাই
শতকোটি প্রণাম।
রথের রশি স্পর্শ করা
মহাপূর্ণের কাজ
শান্তি আনে মনের মধ্যে
কাটায় সকল বিষাদ।
জগন্নাথের রথযাত্রায়
বলরাম সুভদ্রা
ঘুরতে আসেন মর্ত ধামে
মাহেশ থেকে আদ্রা।
বর্ণ বিদ্বেষ নেই সেখানে
জনতার সমাগম
জয় জগন্নাথ জয় জগন্নাথ
বড়ই মনোরম।
জয় জগন্নাথ
পাপিয়া গোস্বামী
কারা যেন সব দলে দলে চলেছে কোথায় নিঃশব্দে নীরবে।
পড়ছে খসে জীবনবৃক্ষ হতে যেন ঝরা পাতা।
বিশ্বের দরবারে মৃত্যু মিছিল দিয়েছে হানা।
শত্রু ফাঁদ পেতে বসে আছে সবার অলক্ষ্যে।
বন্দি হয়েছে মানুষ এখন গৃহ কারাগারে।
মহাকালের থাবা থেকে মুক্তি কোথায়?
কিছু স্বার্থপর লোভী আত্মকেন্দ্রিক মানুষের অন্যায় ও অপরাধের মাত্রা ছাড়িয়েছে বহুদিন...
সহ্য করতে করতে আজ ভারাক্রান্ত পৃথিবী।
হে জগন্নাথ ! জগতের রক্ষাকর্তা--
নতজানু হয়ে করজোড়ে মিনতি করি তোমার কাছে ।
রক্ষা করো তোমার সৃষ্টি---
নরনারায়ণের প্রাণ।
এবার রথযাত্রায় তোমার রথের চাকায় ধুলোয় মিশে যাক যত মহামারীর জীবাণু।
জয় হোক জগন্নাথদেবের...
অমৃতের ধারা বর্ষিত হোক ভুবন জুড়ে ।
প্রভুর দয়া
নন্দিনী মান্না
মেঘ-বৃষ্টির তুমুল রেশারেশির মাঝে,
ঝর্ ঝর্ ধারা,
গুর্ গুর্ মেঘ,
মাসির বাড়ি যাওয়ার তরে রথ সাজে।
জগতের নাথ দর্শনে সবাই জোটে,
রথের রশি ছোঁওয়া,
আশীষ চেয়ে নেওয়া,
শ্রীরূপের মায়ার বাঁধনে সংসার ছোটে।
মহামারীর চোখ-রাঙানিতে দূরত্ব নিয়ম,
টেলিভিশনে দেখা,
কাঁঠালের স্বাদ চাখা,
প্রভুর দয়ায় ভয় জয় করার স্বপ্ন বুনন।
আকুতি
রাসমণি ব্যানার্জী
বাদল ঘুমের ঘোর ডাকছে আমায়
জীবন রথের চাকা আজ অসহায়।
লোকালয়ে জীবাণু যে পেতেছে গো ফাঁদ
বিশ্বের অসুখ আজ ভয়ে চুপ চাঁদ।
রোগের কারণে লোক দিকে দিকে কাঁদে
মৃত্যুর নুপূর বাজে স্বজনের কাঁধে।
ঘরে দোরে শুধু জল পৃথিবী আঁধার
অকাল বন্যায় আজ ভাঙে নদী পাড় ।
জীবন ভীষণ ক্লান্ত মরণের ডাকে
ঘরে বন্দী মানুষেরা পটে ছবি আঁকে।
তোমার রথের চাকা আজ বড় ক্লান্ত
দিকে দিকে হাহাকার তুমিও অশান্ত।
তোমার রথের চাকা মানুষই তো টানে
তোমার চরণ ফুল ওরা তুলে আনে।
কি হবে উপায় প্রভু তুমি বলে দাও
জগতের সব দুঃখ কাঁধে তুলে নাও।
পথ ও রথ
দীপা কর্মকার
পথের ওপর রথ চলবে
ভাবছে বসে পথ
এবার যে তার পূর্ণ হবে
সকল মনোরথ।
আসবে চড়ে ঐ যে রথে
প্রভু জগন্নাথ
পথের ধূলি তাইতো জেগে
রইলো সারারাত।
ভক্তেরা সব থাকবে পথে
দাঁড়িয়ে সারে সারে
কখন তারা পরশ পাবে
রথের রশিটারে।
দুই পাশে তার বসবে মেলা
আলোর ঝলকানি
পাঁপড় ভাজা, রঙিন বাঁশি
হরেক বিকিকিনি।
পথের ওপর রথের মেলা
চড়ক, নাগরদোলা
আনন্দেতে কাটবে তার
কালকে সারাবেলা।
জগদীশ্বর
মালা ঘোষ মিত্র
আকাশে এত কালো মেঘ
তবে তো বৃষ্টি হবেই
বৃষ্টিস্নাত দিনে কি যে উচ্ছ্বাস
এক অজানা ছন্দে মন উন্মুখ
বিকেলে রথের মেলা
গাছ লাগাতে হবে, পৃথিবী নির্মল-----
একবুক নিঃশ্বাস নিয়ে
সবুজে চোখ জুড়াবে।
পাঁপড় জিলিপি, দরবেশ
মাকে ভীষণ পড়ছে মনে
নাগরদোলায় গাছেদের মাথা ছোঁবো
ভেসে যাবো অনির্বাণ আকাঙ্ক্ষায়
রথের রশি টানা বলে
এসে দাঁড়াই রাস্তার পাশে।
'জয় জগন্নাথ ' জগদীশ্বর
পৃথিবীতে এনে দাও করোনামুক্ত সকাল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন