লেবেল

রবিবার, ১৩ জুন, ২০২১

সদ্য প্রয়াত সব্যসাচী বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত -এর শ্রদ্ধা ও স্মরণে — সৌমিত্র মোহান্তি ।। Ankurisha ।।E.magazine ।। Bengali poem in literature ।।

 





কবি ও চলচ্চিত্রকার বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত:


  শ্রদ্ধা ও স্মরণেঃসৌমিত্র মহান্তি


অনেক সিনেমা দেখেছি। কিন্তু সব সিনেমার কাহিনী কি মনে থাকে?তবে কিছু কিছু থাকে। মন ছুঁয়ে যাওয়া একেই বলে। 

বস্তুত ক্ষেত্রে প্রাত্যহিক জীবনে একটা সিনেমার কিছু কিছু ডায়ালগ আমি বলেই থাকি। বড় বেশি বাস্তবধর্মী ছিল ওগুলো। 

মনে পড়ে, “কি তর পার্টি, কি তর ডেপুটি! তর মুখে তর পার্টির মুখে হাগি।”

সিনেমাটার নাম ‘তাহাদের কথা’(১৯৯২)।  পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। বিখ্যাত সাহিত্যিক কমল কুমার মজুমদার এর লেখা এই অসাধারণ কাহিনীকে পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত সিনেমায় সুন্দরভাবে প্রস্ফুটিত করেছেন। শিবনাথ(মিঠুন চক্রবর্তী) একজন বামপন্থী মনোভাবের স্বাধীনতা সংগ্রামী যে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে গিয়ে এক অত্যাচারী ইংরেজকে হত্যা করে জেলে যায়। 

এগার বছর জেল খাটার পর দেশ স্বাধীন হলে মুক্তি পায়। ওর বাড়ি ছিল অবিভক্ত দেশে যা পরে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্গত হয়। তাই তার পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে এই দেশে এক প্রত্যন্ত গ্রামে আশ্রয় পায়। 

সাহায্য করে তারই সহ সংগ্রামী বন্ধু যে কিনা স্বাধীন ভারতের একজন সফল ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক কর্মী। ছাড়া পাওয়ার পর শিবনাথ বুঝতে পারে যে মহান উদ্দেশ্য নিয়ে ওরা দেশ স্বাধীন করতে লড়াই করেছিল স্বাধীনতার পর তা বদলে গেছে। সবাই কেমন মিথ্যা ও বুজরুকি দিয়ে যাদুকরের মতো মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। 

অবশ্য এক হাটে ম্যাজিক দেখানো লোকের মানুষ ঠকানোর কায়দা দেখতে পেয়ে ওকেই খুন করে সব ক্ষোভ উগরে দিতে গিয়ে অর্দ্ধ পাগল শিবনাথ জেলে চলে গেল। জেলই ভালো ওর পক্ষে। 

‘তাহাদের কথা’ সিনেমা ভারতের সেরা সিনেমা ও মিঠুন চক্রবর্তী সেরা অভিনেতার পুরস্কার(১৯৯৩) পেয়েছিলেন। 


আর একটা সিনেমার কথা খুব মনে পড়ে। 

‘বাঘ বাহাদূর’(১৯৮৯)। পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের নিজের লেখা কাহিনী। নিজেদের অভিনয় ছাপিয়ে গিয়েছিলেন পবন মালহোত্রা ও দক্ষিণী অভিনেত্রী অর্চনা। কাহিনী খুব বেদনাদায়ক। 

একজন মানুষ(অভিনয়ে পবন মালহোত্রা) গ্রামে বাঘ সেজে নেচে অর্থ উপার্জন করতো। যেমন সুন্দর ছিল তার সাজ তেমনই নাচ। এটা বাংলার একপ্রকার শিল্প ছিল এক কালে। গ্রামের এক মেয়ে রাধা(অভিনয়ে অর্চনা)র সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক। 

একদিন ওই গ্রামে এলো এক ছোট্ট সার্কাসের দল যাদের হেপাজতে ছিল একটি জীবন্ত বাঘ। সবাই দলে দলে ওই সার্কাসের তাঁবুর কাছে ভীড় করে। ওরা সত্যি বাঘ দেখতে চায়। রাধাও যায়। এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে বাঘের দেখাশুনা করা মানুষটির সঙ্গে গল্প করে। বাঘবাহাদূর অনুধাবন করে যে ওর বাঘ সাজের নাচ দেখতে কেউ আর আসে না। একই সঙ্গে পেষা এবং ভালোবাসা হারাবার ভয়ে জেদ যায় চেপে। 

চ্যালেঞ্জটা নিয়েই নেয়। বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঘকে হারাবে। চারিদিকে গ্রামের মানুষ ভীড় করেছে দেখতে যুদ্ধ। তারপর?

সিনেমার দৃশ্যে দেখায় যে একটা রক্তের স্রোত গড়িয়ে চলেছে দর্শকের চোখ ও মনের পর্দার দিকে। সিনেমাটা ভারত শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছিল। 


ঋত্বিক-সত্যজিৎ-মৃণাল এর নামে সিনেমা আমরা দেখেছি কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে যে গুটিকয় পরিচালকের নামে সিনেমা হোত তার এক অংশীদার বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। 

চরাচর,লালদরজা,মন্দ মেয়ের উপাখ্যান,কালপুরুষ ইত্যাদি তাঁর পরিচালিত সিনেমা যেমন নানা পুরস্কার পেয়েছেতেমনই,নিম,অন্নপূর্ণা,জানালা,ফেরা,উত্তরা,গৃহযুদ্ধ প্রভৃতি সিনেমাতেও তিনি তাঁর বলিষ্ঠ পরিচালন দক্ষতা রেখে গেছেন। 

বেশ কিছু কাব্যগ্রন্থ তিনি লিখে গেছেন। প্রকৃত অর্থে মানুষটি ছিলেন কেবল অন্য ধারার পরিচালক নন তিনি সমাজকে অভিপ্রেত বার্তা দিতে চেয়েছিলেন আপন শিল্পের মাধ্যমে। 


আজ  আমরা হারালাম এই স্বনামধন্য মানুষটিকে। আক্ষরিক অর্থে সব মৃত্যুই আমাদের কাছে দুঃখের তবে কিছু কিছু ক্ষতিরও বটে। 

১১/০২/১৯৪৪ এর যাত্রা থেমে গেল যেমন থামতে হয় সবাইকে। তাঁর  এই প্রয়াণে শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই। 





আরও  পড়ুন 👇👇👇


https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/06/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_23.html



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন