লেবেল

বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১

আজ প্রকাশিত হলো অঙ্কুরীশা-য় — কবি ও চলচ্চিত্রকার বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত-এর স্মরণে কবিতা সংখ্যা।। Ankurisha ।।E.Magazine ।।Bengali poem in literature ।।

 




আজ প্রকাশিত হলো অঙ্কুরীশা-য়  

কবি ও চলচ্চিত্রকার বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত-এর  স্মরণে কবিতা সংখ্যা 













কলমে


অজিত বাইরী 

আরণ্যক বসু 

গৌতম হাজরা 

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় 

সৌমিত বসু 

সঞ্জীব দে

দুর্গাদাস মিদ্যা 

সুধাংশুরঞ্জন সাহা 

ফটিক চৌধুরী 

অমিত কাশ্যপ 

অশোককুমার লাটুয়া 

দীপক বেরা 

মৃণালেন্দু দাশ

জগদীশ মণ্ডল 

শুভ্রাশ্রী মাইতি

অশোক রায় 

বিকাশরঞ্জন হালদার 

আলোক মণ্ডল 

তপনজ্যোতি মাজি 

নিমাই জানা 

শুভময় দাস

তীর্থঙ্কর সুমিত 

যুথিকা দাস অধিকারী 

চন্দন চৌধুরী 

সেক সিরাজ 

লক্ষ্মণ মণ্ডল 

রাসমনি ব্যানার্জি 

নন্দিনী মান্না 

রঞ্জন ভট্টাচার্য 

বিমল মণ্ডল 


























নিজ-হাতে গড়া   

অজিত বাইরী 


নিজ-হাতে গড়া এই আমার বাড়ি;

এ বাড়ি নিয়ে আমার গর্বের অন্ত নেই।

একফালি বাগানের শখ ছিল, তা হয়নি;

কিন্তু কত তারা ফোটে আকাশে!

বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে  আসে সান্ধ্যগ্রীষ্মের হাওয়া...

বাতাসে দোলে ছাতিম ফুলের গন্ধ;

মনই তখন বসন্তের ভরা সাজি।

মেঘমুক্ত আকাশে অর্ধেক রাত অব্দি

সঙ্গ পাই অত্রি, স্বাতী, রোহিনী, কৃত্তিকার।

কখনও কখনও  বসি কলম হাতে

স্বরচিত  দু'এক পঙ্ক্তির কাছে

ঈশ্বর আমাকে ঋণী করে রাখেন।

এই বাড়ি যত ক্ষুদ্র হোক, তুচ্ছ হোক; তবু

এই আমার পারিজাতবৃত স্বর্গ।





গৃহযুদ্ধ'র ক‍্যামেরার সামনে

আরণ‍্যক বসু


( যখন মাটির কলসি তৈরি হয় দেখবেন, শিল্পী খুব হালকাভাবে স্পর্শ করেন , সেই কলসি যাতে আকার পায়। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তও সেইভাবে তাঁর অভিনেতাকে আলতো করে ছুঁয়ে দিতেন।

-- পবন মালহোত্রা / বাঘবাহাদুর ছবির প্রধান অভিনেতা।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : সংবাদ প্রতিদিন'এর একটি প্রতিবেদন 

১১জুন, ২০২১ )



একজন শীর্ণ গোলকিপার একটা চাকরির জন‍্যে , ফুটবল খেলতে খেলতে, ক্রমশ অন্ধকারে হারাতে হারাতে , একসময় স্থিরচিত্র হয়ে যাচ্ছে।


একজন শ্রমিক নেতা লাল পতাকাকে আঁকড়ে ধরে , মুহূর্তে লাশ হয়ে যাচ্ছে।


একজন স্বপ্ন স্বপ্ন স্বপ্নময় সাংবাদিক , হন‍্যে হয়ে সেই খুনের তদন্তে নেমে , তাঁর দুচাকায় এফোঁড় ওফোঁড় করছেন শহর ও মফস্বল।


 নামকরা কাগজের নির্লিপ্ত বিভাগীয় সম্পাদক , সেই উন্নতশির ইনভেসটিগেটিভ জার্নালিস্টের পরিশ্রমী তদন্তের রিপোর্টকে, কাগজের পাতায় শেষ পর্যন্ত ছাপছেন না ।


একজন স্বার্থপর শহুরে মধ‍্যবিত্ত যুবক , তাঁর নতুন কেনা ফ্ল্যাট , চাকরি , উচ্চাশা আর প্রেমিকাকে আঁকড়ে, শুধু তুমি আমি, আমাদের সন্তানমার্কা পৃথিবী গড়ে তুলতে আকুল চেষ্টা করছে।

তাঁর যন্ত্রণাবিদ্ধ প্রেমিকা এই কাচের স্বর্গ ভেঙে,শান্ত নির্ভীক সাংবাদিকের হাতে হাত রাখছে -- শুধু এই জন‍্যে যে , শ্রমিক নেতার লাশ হয়ে যাওয়ার পিছনে আসল কারণটা জানতে । 


সেই সত‍্যকে জানবার নেশায় পাগল সাংবাদিকের , হঠাৎ দুর্ঘটনায় মৃতদেহ , যখন সেই নির্বাক মানবীর চোখের সামনে , ময়দানের নির্জন রাস্তা থেকে লাশ কাটা ঘরে সরানো হচ্ছে—


তখন , পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত , দুর্দান্ত সাহসী বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত , কবি বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত -- ১৯৮২ নাকি ১৯৮৩  সালের এক রাগী যুবক , এই আমি , অন্ধকার সিনেমাহলের সিটের হাতল চেপে ধরে , বিড়বিড় করে বলছি , না না , প্রতিজ্ঞা করছি -- একদিন আমিও...


বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম মাইলস্টোন -- আপনার গৃহযুদ্ধ...

সমাজের অদ্ভুত অন্ধকারের গালে সপাটে থাপ্পড় মারা প্রতিবাদ , শেষ দৃশ্যে এসে ,পড়ন্ত রোদের ডালহৌসির জনারণ্যে যখন আছড়ে পড়ে ;  তখন ,  প্রকৃতবন্ধু ও মেকি প্রেমিককে হারিয়ে আসা সেই একা মানবী , চে'গেভারার মতো নির্বাণহীন অগ্নিশিখা হয়ে , অফিস-ভাঙা বিষণ্ণ মানুষের মিছিলে মিছিলে হারিয়ে যায়।

একক থেকে কখন যেন সমষ্টিতে চলে যায়।

আপনার কবিতা-আঁকা ক্যামেরা, ক্লোজআপ থেকে আউট অফ ফোকাস পর্যন্ত সেই দিকে তাকিয়ে থাকে... তাকিয়ে থাকে...


বুদ্ধদেববাবু , আমাদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়ে , হঠাৎ যখন ক‍্যামেরার পিছন থেকে ,অন্তরের অ্যালবামে চলে গেলেন ,তখন ভীষণ ভীষণ জানতে ইচ্ছে করছে -- দূরত্ব, নিমঅন্নপূর্ণা,বাঘবাহাদুর ,চরাচর , লাল দরজা'র নেগেটিভগুলো জীবিত আছে তো ? 


আর গৃহযুদ্ধ? 

আবার সেই মহাকাব‍্যিক ছবি টিভির পর্দায় দেখতে পাবো তো? 

যদি তা না হয় , 

আমরা তাহলে এত বিষের ধোঁয়ার মধ‍্যে,

কী নিয়ে বাঁচবো ?







টোকা

গৌতম হাজরা 



একজন মানুষ যখন দরজায় টোকা দেয়
তখন বুঝতে হবে, সে কিছু বলতে চাইছে
তা হতে পারে আমাদের জীবনের কথা, 
আমাদের পারিপার্শ্বিকতার কথা, সময়ের কথা 
কিংবা অন্বেষণের কথা
যে কথা উঠে আসে সিনেমার দৃশ্যে অথবা
                  কবিতার প্রতিটি ছত্রে ছত্রে
তখন শিল্পের মতো শিল্পীত হতে হতে আমরাও একদিন পৌঁছে যাই ঘরের চৌকাঠে

দেখি, টোকার শব্দে আমরাও হাট করে খুলে দিচ্ছি দরজা

মননে অনুরণনে তোমার মুখের মতো আলোর আদলে ! 






পাতা খসার গল্প 

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়



গাছ থেকে 

একটা পাতা খসে পড়ছে

আমি মাটিতে শুয়ে দেখছি 

কোথাও থেকে একটা বার্তা 

আমার দিকে ভেসে আসছে 


আমার চোখের সামান্য দূরে 

নিজের ছন্দে এসে দাঁড়ায়

বুঝতে পারি না 

তবুও শাশ্বত পাতার মতোই

অন্দরমহল থেকে 

হাত বাড়িয়ে আমার দিকে 


বাড়ির কাছেই

জানলা খুলেই দেখতাম 

সারা দিনরাত 

আলোর বৃত্তে নড়াচড়া 


সোজা উঠে গেছে 

মাথা উঁচু করে 

সমগ্র পৃথিবী দেখা যায় 


এসব দেখেছে কয়েকজন 


আজ মুখে মুখে 

পাতা খসার গল্প। 






মেশিন

সৌমিত বসু 



একটি মেশিন থেকে বের হয়ে আসে অজস্র মেশিন

একটি পিতার থেকে বের হয়ে আসে অজস্র পিতা।


শুধুমাত্র একটি কবিতায়

যদি একটি দশকে টিকে থাকতে হয়

তবে তা তোমার মেশিন।

ডানায় ভর করে কতো অল্প আয়াসেই

তুমি পেরিয়ে যাও আকাশ ,

পেরিয়ে যাও বোধের সমুদ্র

অন্যরা ঈর্ষায় জ্বলে আর তাদের নিবগুলো ক্রমশ ভোঁতা হয়ে আসে

তোমার ভাবনা তোমার লং- শট ছাড়িয়ে

মিশে যায় জঙ্গলের সবুজে

তুমি দূর থেকে হেসে মাথা নাড়ো,

আর আমাদের মুখে ভেসে ওঠে অভ্রের ঝিলিক।


আজও একটি ছবি থেকে বের হয়ে আসে অজস্র ছবি

আজও তোমার মেশিন থেকে বের হয়ে আসে অজস্র কবিতা।






সিগনেচার
সঞ্জীব দে

রোলগোল্ডের চশমা, টুপি ক্যাপ, মাপলারে
ঢাকা ছিলো বুদ্ধি বিচক্ষণতা শিক্ষা, 
কথা বলার ঢঙ, মুন্সীয়ানা
ক্যামেরার আলো-ছায়ার কারসাজি। 

নীল আকাশ তো নয়, 
মেঘের আস্তরে খুঁজতে চেয়েছিলে
                                       কোহিনূর, 
পেয়েছিলে ও হয়তো বা ;

' নিম অন্নপূর্ণা ', ' উত্তরা ', ' তাহাদের কথা ' থেকে -
বেছে ছিলে ' মন্দ মেয়ের উপাখ্যান', 
' চরাচর ' জুড়ে ছিলো
অবহেলিতদের প্রতি তোমার নজর, 
বাঘ হয়ে লড়াইয়ে নামিয়ে দিয়েছিলে মানুষ কে
অন্ন সংস্থানের জন্যে, 
' কালপুরুষের ' নামে
       রেখে গেলে তোমার সিগনেচার। 

এর প্রস্তুতির শুরু বোধহয়
          কথা ভাঙার অসমকালীন
                     কথা তৈরির ছকের
                               কবিতা দিয়েই ;
 
                      -

 







সব্যসাচী 
দুর্গাদাস মিদ্যা


মৃত্যু সে তো মহীয়ান হয়  কোনো কোনো সময়
শব্দের আড়ালে শব্দের বন্ধন যখন ছন্দের
আয়োজন করে তখন তিনি কবি। নানা সত্তায
মানুষ বাইরে এসে দাঁড়ায়। আলোকিত অন্তর
 যখন দুচোখে ছবি আঁকে  ক্যামেরায় পরিচালকের ভূমিকায় তাকে পাওয়া যায়। 
এভাবে সব্যসাচী হয়ে দাঁড়ান আমাদের পাশে
উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে মন। মরণ লজ্জায়  থাকে
অধোবদন। 





কবিতা এবং সিনেমা : দুই
সুধাংশুরঞ্জন সাহা


এখন চারিদিকে অবিশ্বাসের বাতাবরণ।
ভাঙনের গান ...।
এই অসময়েই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন
কবি ও চলচ্চিত্রকার বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।
যার ছবিতে ছিল কবিতা আর স্বপ্নের উড়ান,
কবিতায় পরাবাস্তবতা
আর ম্যাজিক রিয়ালিজমের ছায়া ।
তাঁর গৃহযুদ্ধ, লাল দরজা, দূরত্ব, 
কালপুরুষ কিংবা বাঘ বাহাদূর সিনেমা ঘিরে
আমাদের সেই যৌবনের দিনগুলো
মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায় আজও ।






রোবটের গান
ফটিক চৌধুরী


সময় দাবি করে সত্য কথা বলতে
সময়ই তো শেষ কথা যায় বলে
হোঁচট খেলাম আমরা চলতে চলতে
সময়কে ডিঙিয়ে তুমি চলে গেলে।

আমরা মেনে চলি এখন দূরত্ব-বিধি
তোমার 'দূরত্ব' পৌঁছে গেছে অনেক দূর
জানি, তোমার না-'ফেরা'র পরিধি
অসময়ে চলে গেলে তুমি দিকশূন্যপুর।

'জানালা' দিয়ে তাই আমরা 'মুক্তি' চাই
'অন্ধগলি'তে  সবাই যে পড়ে আছি
আর পাব না তোমাকে সিনেমা কবিতায়
তুমি ছিলে যে মাটির খুব কাছাকাছি।

চলে গেছ ?  নাকি যাওয়ার করেছ ভান
মানুষ নেই আর তাই শুনি 'রোবটের গান'।





ভালোবাসা 
অমিত কাশ‍্যপ

( বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত 'বেড়িয়ে পড়ো শেষবারের মতো' কবিতাটির ছায়াবলম্বনে )

সামনের কয়েকদিনের মধ্যে পৃথিবী 
চাঁদের পাশে চলে যাবে 
          আর চাঁদ নেমে আসবে  নীচে 
খাবার টেবিলের ওপর।'

আমি শেষবার তাই দেখলাম কাল
পুকুর জুড়ে চাঁদের নীরব পড়ে  থাকা 
আগেই নীরবে চাঁদ দাঁড়িয়েছে  জানালায় 
শিক ধরে ঠায়, ঠিক যেন বলে উঠবে কিছু 
জোরে জোরে বলে মিলিয়ে যাবে 
ঠিক আগের জায়গায়, ঠিক পুকুরের জলে 
তোলপাড় তোলপাড় করে তুলবে মসৃণ জল
তোমার মুখ আর ভাসবে না জলের আয়নায় 
জলের আয়নার ভেতর রুপোলি গুঁড়ো মেখে 
মাছের পোনারা সহমত শেখাবে আজ
তুমি-আমি পাশে পাশে হাতে হাতে ভালোবাসব
চাঁদের মায়ায়, পৃথিবীর মায়ায় অনন্তকাল







দূরত্ব থেকে উড়োজাহাজে
  অশোককুমার লাটুয়া 


'দূরত্ব' থেকে ' উড়োজাহাজে ' স্বপ্নের উড়ানে
' চরাচরের ' ' লাল দরজা ' পেরিয়ে
নিজস্ব সিগনেচার স্টাইলে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল মানুষটি।
' তাহাদের কথায় ' ' মন্দমেয়ের উপাখ্যান ' রেখে
'গৃহযুদ্ধের ' পরে 
অনেক ' টোপ ' আর ' জানালার ' পাশে 
' উত্তরাকে ' এঁকে
আচমকা অবিশ্বাস্য খবর হয়ে গেল 'কালপুরুষ'। 
-- বাস্তব থেকে পরাবাস্তবে স্বচ্ছন্দ যাতায়াত ছিল বুদ্ধের।
যে সমাজ কিংবা রাষ্ট্র মানুষের স্বপ্নের বিরুদ্ধে 
বুদ্ধ দাঁড়িয়েছে তার বিরুদ্ধে একপৃৃথিবী স্বপ্নের জন্যে।
নিজস্ব নির্জন প্রতীকে অনুর্বর আকাঙ্খার ধূসর বিষণ্ণতায় তার কবিতা খুলে দিয়েছে
হাজার হাজার পাখির বন্দী খাঁচা। সেই পাখিরা
' গভীর এরিয়েলে ' ' হিমযুগ ' পেরিয়ে ' কফিনের ' অন্ধকার সরিয়ে 
ডানায় ' সুটকেশ ' নিয়ে 
শুনেছে কানপেতে কি আশ্চর্য  হতে পারে ' রোবর্টের গান '।





কবিতার ছায়াছবি 

দীপক বেরা


তাঁর কবিতার মেঘলা আকাশ থেকে 
অঝোর ধারায় শব্দ পড়ে টাপুর টুপুর
তাঁর মুভিতে চিঠিও হয়ে ওঠে চরিত্র 
চিঠির বাক্স কত কথা বলে অন্তরের 
সভ্যতার হারিয়ে যাওয়া সব স্বরগ্রামে
পথের প্রান্তর থেকে মুভিরা পাড়ি দেয় 
বিস্তৃত মাঠে, সড়কে, পৌরাণিক সমকালে
পৃথিবীর সবখানে বসে টের পাওয়া যায় 
অনিবার্য 'উত্তরা'র সেই উদাত্ত আবাহন
নীল বেদনার নদীতে নিমজ্জিত হতে হতে
ধাক্কা লাগে তাঁর 'লাল দরজা'র গায়ে
নিজের একান্ত নির্জনে হারিয়ে যেতে যেতে 
মনে হয় অন্তত একটিবার 'তাহাদের কথা' 
আর, জগতের মরচে ধরা মুখের আড়ালে
তাঁরই দু'চোখের দর্পণে ভেসে ওঠে 
আমাদেরই জীবনের সব বিলুপ্ত রং-বাহার! 

সৃষ্টির অন্তর্ভেদী বৈশিষ্ট্যে ও বৈচিত্র্যে
কবিতার ভিতর দৃশ্যপট বুনে চলেন তিনি 
সিনেমার ভিতর রেখে যান কবিতার শব্দ 
দৃশ্যশিল্পের ম্যাজিসিয়ান 'বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত'
তাঁর সৃষ্টির ভিতর সেই আলোটুকু রেখে যান তিনি
আমাদের ব্যথাতুর চোখ সেদিকেই তাকিয়ে থাকে
"আমি কোনদিকে যাবো, 
সবখানে জেগে ওঠে তোমার অন্তিম পরিণাম".. 
তিনি আছেন আমাদের নেশায় বুঁদ করে রাখা 
মোহাবিষ্টতার সেই অবিকল্প অবিচ্ছেদ্য আবহে
কবিতার ছবিতে স্বপ্নীল ছায়ায়, গভীর মায়ায় 
তিনি আছেন পর্দার ওপারে সদাজাগ্রত নির্নিমেষ 
তাঁর ক্যামেরার উজ্জ্বল লেন্সে চোখ রেখে 

আমাদেরই হেজেমজে থাকা বিস্তীর্ণ 'চরাচর'-এ! 





অন্তিমে সন্ধ্যা
মৃণালেন্দু দাশ




যেভাবে তাকিয়ে থাকি না কেন তুমি আমার চোখ বরাবর
আমার খুব অস্বস্তি হয় এতটাই সব উগলাতে থাকি 
হর্ষবর্ধন থেকে হিউয়েন সাঙ সবটা গড় গড় করে

এই পর্যন্ত ঠিক তারপরের অংশটুকু পুরোটা দ্বিধায়
পকেট থেকে বিড়াল পাতের উপর  হুলুস্থুল

লঙ্কাকান্ড ঘটে যাওয়ার উপক্রম , ঘটল  না
সিচুয়েশন বদলে গেল —  ফুল ফুটল গাছে গাছে প্রচুর
ক্যানভাসে সারি সারি মুখ  হঠাৎ স্প্যেচুলার থ্যাবড়া টানে
একটা দমবন্ধ হওয়া অন্ধকার ভাবনার চোরা স্রোত
খেলিয়ে মাছ তোলবার অবস্থা ছিপ বেঁকে যাচ্ছে

বিশ্বাস করি বা না করি গাছের একটি পাতাও নড়ল না
কিন্তু দাঁত নড়ল .দাঁতের সঙ্গে মুখের নাড়ীছেঁড়া সংযোগ
যেমন আঁতুড়ঘরে মা তার সদ্যোজাত সন্তান

আসমান জমিন ফারাক হতে শুরু করল ক্যামেরা স্টার্ট
ফিরে আসছিলাম ফেরা হলনা জমে ওঠে কথার পাহাড়
ডিঙোবো না চড়বো ভাবতে ভাবতে অন্তিমে সন্ধ্যা। 






থাকবেন তিনি বেঁচে
জগদীশ মন্ডল


একদিকে কবি,নির্মাতা বিখ্যাত চলচ্চিত্র
বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ছিলেন সবার কাছে মিত্র,
অধ‍্যাপনায় নাম করেছেন অনেক ছাত্র প্রীতি
অর্থনীতির শিক্ষা এখন তাদের কাছে স্মৃতি।

দশ মিনিটের ডকুমেন্টারি নজর কাড়ে সবার
নতুন ধারায় জীবন তরীর শুরু হয় ক‍্যারিয়ার,
অধ্যাপক ছিলেন সিনেমায় সোনালী অধ্যায়
'নিম অন্নপূর্ণা' দাগ কাটে মনের আঙিনায়।

'বাঘ বাহাদুর' নয় বহুদূর 'লাল দরজা' 'ফেরা'
জন্মভূমি পুরুলিয়ার লালমাটিতে ঘেরা,
'মন্দ মেয়ের উপাখ্যান' ও 'উত্তরা' 'স্বপ্নের দিন'
'সময়ের কাছে' 'আরণ্যক' 'টোপ' থাকবে অমলিন।

'গৃহযুদ্ধ' থেমে গেলে 'অন্ধগলি'পথ
'দূরত্ব' আর থাকতে পারে আসে 'মুক্তি' রথ,
'কালপুরুষ' সব দেখেছে 'জানলা' ছিলো খোলা
'পত্রলেখা' মন কেড়েছে সে সব যায় ভোলা।

'আনোয়ার কা আজিব কিসসা' অন্তরে 'চরাচর'
জাতীয় চলচ্চিত্র সন্মান আনে পরস্পর,
সোনার টুকরো এমন ছেলের চলে যাওয়া সাজে

থাকবেন তিনি বেঁচে জানি চলচ্চিত্রের মাঝে।





নৈঃশব্দের পাখি
শুভ্রাশ্রী মাইতি


ঠোঁট বন্ধ রেখে কথা বলা শিখিয়েছিল যে নীলকন্ঠ পাখিটি
আজ খাঁচা খুলে রোদ্দুরের চরাচরে ডানা মেলেছে বেশ।
ক্যামেরার উজ্জ্বল লেন্সের কাঁচে কবিতার জলছবি গন্ধ মেখে
ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে তার সহজ স্বপ্নের সকাল, হলুদ গন্ধমাখা দুপুর 
আর জন্ম-মৃত্যুর চক্রবূহ্যে একটু একটু করে বেড়ে ওঠা শান্ত তিলের মতো জীবন...

এসব শিশু-শিশু দৃশ্যগুলো কালপুরুষীয় ছবির ঢঙে কাঁধে চেপে বসলেই
‘তাহাদের কথা' শুনবে বলে লাল দরজার চৌকাঠে ভিড় করে আসে মন্দ মেয়েদের দল
তড়িঘড়ি খুলে দিই মুক্তির বদ্ধ জানালাগুলো...
দেখি সাঁওতালী নাচের তালে কোমর দুলিয়ে 
হেঁটে আসছে উত্তরা কুস্তির ধুলোমাখা আখড়া পেরিয়ে
বাঁকা নদীর ঝিরিহিরি হাওয়ায় মৃদু মৃদু উড়ছে আগুনপলাশ আঁচল
গভীর স্নেহকূপ থেকে শীতল স্নানজল তুলে দিচ্ছে সন্ধ্যাছায়ার মায়া...

আমার ক্লান্ত ঘুমের পাশে অপেক্ষায় বাঘবাহাদুরের মুখোশ আর বন্দুকের হিম হিম নল
আদুরে ডিমপাড়া স্বপ্নের ভেতর ঠুক ঠুক করে ঠোঁট ঠুকতে থাকে নৈঃশব্দের পাখি
আমার ডিম ভেঙে বেরোনোর ইচ্ছেগুলো বাঁচিয়ে রাখবে বলে...







নিভৃত কীর্তির রেখা 

অশোক রায় 


একটি পদ্ম ফুটেছিল নিস্তরঙ্গ এক হ্রদে  

একটি প্রাণ জন্মেছিল ধরিত্রীর এক কোণে   

চোখ ছিল ছায়াপথের গভীর আড়ালে

সব্যসাচী মন কবিতায় সেলুলয়েডে কীর্তি অপার    

নশ্বর জীবনে অমর সৃষ্টি প্রতিবাদী আখর    

কবিতার বলয়ে সিনেমা, সিনেমায় মোড়া কাব্য  

মিলেমিশে সুররিয়াল অদম্য সৃস্টির স্বর্ণিম আকর

হৃদয়ের কথা সোচ্চারে বলা উণ্মুক্ত ফল্গুধারা   

দেখেছি দৈন্য প্রেম মানবতা তোমার চোখ দিয়ে

সেই উজ্জ্বল মহাপ্রাণ যখন বিদায় নেয়

নিষাদের বুক চিরে বৃষ্টি ঝরে বিষাদে  

বিরল হাসি কবির ঠোঁটে ক্রমশঃ গলে যায়

ভুতেরা কোথায় থাকে বোধহয় জানা গেছে

গ্রীন করিডোর দিয়ে চলে যায় স্তব্ধ চরাচর।। 





বিরতি আর মৃত্যু পুড়ে যায় 

বিকাশরঞ্জন  হালদার 


সময় বড় নির্মম। হাত ছাড়িয়ে নেয় !

শূন্যতাই  বোধ হয় একমাত্র 
কখনও-কখনও !

মনের নিভৃতি দিয়ে ছুঁয়ে দেখি 
কালের মৃত্তিকা !

পাণ্ডুলিপি অক্ষর সাজায় 

শোক - তাপ - অন্ধকার 
শ্মশান - কলসি - কাঠ

বিরতি আর মৃত্যু পুড়ে যায় !





ছবিকবি
আলোক মণ্ডল


আদর্শ আর সুযোগের লড়াইয়ে যে গৃহযুদ্ধ
চলছে নিরন্তর তার
ফল অবসম্ভাবী।

নিঃস্বতা আর সৌখিনতার পক্ষ নিয়ে চরাচর ভ্রমণ তোমার
এতো মুখের কথা নয় কবি!
তাগদ থাকলে  মহুল বনের সেরেঞের মতোই বলা যায়,আমার ছবিই আমার কবিতা, কবিতাই আমার চল চিত্র!
যে ধ্রুবপদ বেঁধেছ সংগীতে শব্দবন্ধে ছায়াচিত্রে 
পুব আকাশের কালপুরুষ লুব্ধকের আনুগত্যে দেখেছে সেসব
অভিভূত বিমূঢ চিত্তে।

তোমার কবিতা পঙক্তি খুঁড়ে পাই 
জল আর জল, তৃষ্ণা মেটাই।
খুঁড়তে খুঁড়তে পেয়ে যায় ছবি,
চোখ পায় বিশ্রাম- চোখের আরাম,
চলচ্চিত্রে শুধু ঢেউ কবিতা-অবগাহন! 

সব্যসাচী তুমি চির অনন্য ছবিকবি।






ছোঁয়া যায় যে আকাশ
 তপনজ্যোতি মাজি

 
 মাটিকে মাটি, আকাশ কে আকাশ বলতে পারা সহজ
 নয় , সহজ নয় মানুষের ওপর সর্বোচ্চ 
 বিশ্বাস রাখা।

আমাদের শরীর পুড়ে যায় ধর্মজ্বরে ,
আমরা নিঃস্ব দাঁড়াই মানবতার কাছে।
অথচ বৃষ্টিবর্জিত পুরুলিয়ার পাথুরে প্রান্তরে এক
কিশোরের কবি হয়ে ওঠার গল্প জানে বাংলা
বর্ণমালা।

শব্দ থেকে চলচিত্র , 
অন্তহীন এই পথ নক্ষত্রলোক পর্যন্ত পৌঁছে গেল।
অথচ আমাদের অজ্ঞতার ওপর জমেছে
নদীমাতৃক পলি।
অপরাজেয় আত্মবিস্মৃতি।

ক্রমাগত খর্বকায় হতে হতে আমাদের 
বিন্দু হয়ে ওঠার ইতিহাস লিখবে নির্মোহ
অক্ষর।






১৬ টি পতাকা ও সুবর্ণ যুগ
নিমাই জানা


তোমার শরীরের চৌকাঠে লাল দরজার মানুষটি বসে আছে 

হৃদয়ে ১৬ টি মহাজনপদের বিজয়ী পতাকা মানুষের গ্রীবাটি এক বৃহৎ উদ্যান বিচরণ ক্ষেত্র বলেই , নারীর উপাখ্যান লিখতে গিয়ে উইকিপিডিয়া থেকে বের হলেন ঝাঁকড়া চুলের ছত্রাক পুরুষটি
মৃত অস্তিত্বে যে রঙিন ছত্রাক থাকে তাকে গেঁথে রাখি নারীর উপাখ্যানের বাদামী খোলা চুলে

প্রতিটি নারী আসলে সজীব জানালার মতো চরাচর মৃত্যু জানলেও তোমার চোখের মণিকর্ণিকায় এক্সট্রিম ইনফিনিটি আছে
মহাজনের সাথে হাঁটতে হাঁটতে ছেড়ে যাচ্ছ এ চরাচর ভূমি , রাতের অন্ধকারকে ডাকে কোকিল
মৃত্যু পাখির মতো উড়ে গেলে তাকে ও ছুঁতে পারা যায় না কোন ক্রমে
নরম রঙের তুলি দিয়ে আঁকা তোমার দুর্বা মোহ তুমি আসলে এক দুর্বাঘাস
অক্ষরের দেহঘর বয়ে চলে প্লাবন ভূমির ছেঁড়া উপত্যকায়

তোমার শরীরে সুবর্ণ যুগের ক্যালকুলাস আছে





মানুষ 
শুভময় দাস 


ক্যামেরার লেন্স কি ডিম প্রসব করে?
ডিম ফুটে শব্দেরা কি ছবি হয় বা ছবিরা কবিতা?
কিমবা উভমুখী বিক্রিয়া কিছু?
ডিম কি উপুড় হয়ে শোয় হাতের মতো অন্য হাতের ওপর?
মানুষের মতো?
মানুষ?
মানুষ সজীব না নির্জীব জানো কিছু?
নির্জীব l ওকে সজীব ক'রে তুলতে হয়
চারপাশের স্নেহ-মমতা দিয়ে-
কিমবা বন্দুকের নলে আর শব্দবুননে -
কিমবা কাঠবেড়ালিপ্রমান বিস্ময় মাধুর্য প্রাণ বুনে
কিমবা হরিবোল অনুসঙ্গে  পয়সা কুড়ানি শৈশব
শব্দএঁকে l
তবেই না মানুষ সজীব l
ডিমের ভেতরের ছানা যেমন বেড়ে ওঠে
পাল্টে যায় ভেতরের খাদ্য ভান্ডার প্রতিদিন-
যে খোলাআবরন আশ্রয় দিল এতদিন
তাকে ঠুকরে ভাঙার ছবিই জীবন
নইলে শুধুই ডিমজীবন সে তো নির্জীব অসার l

চরাচরের কবিতা জেগে আছে  কবিতার শরীর ছুঁয়ে l




বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের উদ্দেশ্যে
তীর্থঙ্কর সুমিত


কতগুলো কথা না বললেই নয়
হিজলের ছায়ার মত দাঁড়ানোর অপর নাম
যেমন ভাবে নদী মিশেছিলো সাগরে 
কথার পাহাড় জমেছিলো এ বুকে 
হাতের ওপর হাত ভরসার নদী আজ
বর্ষাতও অসম্পূর্ণ ...
##
চাঁদের দেশে আজ তারাদের ভিড়।





শ্রদ্ধাবনত মস্তকে
যূথিকা দাস অধিকারী 

    
আকাশটা  সেদিন ভীষণই থমথমে
সাতসকালে হয়েছে গর্ভপাত ;
কবি বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ,
৯ই জুন ছিল তাঁর শেষ রাত।

রাত নিঝুম,পৃথিবীর চোখে কালঘুম,
কে জানতো সকালটা হবে এমন ভয়ানক,
রোদ ঝলমল আকাশটা হবে ঘনঘোর;
চিরনিদ্রায় মগ্ন হবেন বিক্ষাত পরিচালক।

তাঁর সুদক্ষতার দীপ্ত পরিসর জুড়ে
লালন হয়েছে সৃষ্টি,সম্পৃক্ত সাহিত্য অঙ্গন,
হায়-রে পৃথিবী দিনে দিনে আর কত শূন্য হবে?
কালের ইশারায় হবে কত নক্ষত্র পতন?

"দূরত্ব " থেকে শুরু করে নৈকট্যের সাধনায় 
অকুণ্ঠ চিত্তে করেছেন অসীমতা দান;
"কফিন কিংবা সুটকেস" সাথে নিয়ে "হিমযোগ",
সৃষ্টি সুখের উল্লাসে গাওয়া "রোবটের গান"।

ছকে বাঁধা ছিলনা জীবনের পথ চলা,
ছিল প্রশ্ন,ছিল বৈচিত্র্যে ভরা ছকভাঙা অভিযান ,
প্রণমি তাঁহারে প্রণমি, শ্রদ্ধাবনত মস্তকে,
অন্তরাকাশে ঝড় তুলেছে যাঁহার মহাপ্রয়াণ ॥



গভীর  আড়ালে  
চন্দন চৌধুরী


এসো-- মৃত্যু র  আজ একটা নতুন  নামকরণ করি। 
যে চলে যায়  --সে  কি  সত্যিই যায়। 
শুধু  'দূরত্ব' নির্মাণ  করে - সৌধ  সময় 'কালপুরুষ'। 

'ফেরা'  আর  হবে না জেনে ও মনে হয়-
'স্বপ্নের দিন'   যদি  ফিরে আসে, 
'গৃহযুদ্ধ'  শেষ --'গভীর আড়ালে' -'চরাচর প্রস্থান হীন। মৃত্যু শব্দে 'উত্তরা' বিহ্বল শূণ্যতা।

বৃষ্টি পড়ছে পড়ুক অবিরল  -চোখ কেন ধারাপাত-, শোকের বর্ষণ প্রেম 'ছাতা কাহিনী'র 'গভীর আড়ালে'। ঘুম এসেছিলো তবু 'রোবটের গান' -নিদ্রাতুর-। ঐ 'নিম অন্নপূর্ণা'র ঘাট-দাউদাউ-
'বাঘ-বাহাদুর'হাসে 'লাল-দরজা'র পার-
তবু বাজবে ঐ সুর জীবনের--
'মহুল বনের সারেঙ্'  


এসো-- মৃত্যুর আজ একটা নতুন  নামকরণ করি।




বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত স্মরণ
শেখ সিরাজ


বাংলা সাহিত্যের গগন থেকে খসে পড়লো একটা তারা
বাংলা চলচ্চিত্র থেকে ভেঙে পড়লো মহীরুহ 
পল্লীর কথা বলা পুতুল যেন চিরনিদ্রায়। 
বিরহ সমীরে
ব্যথার বারিষে
বিষাদ সিন্ধুর জলোচ্ছ্বাসে কণ্ঠ হলো রূদ্ধ
চলে গেলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। 
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন
কবি সাহিত্যিক চিত্রপরিচালনায় সুচারু দক্ষতার মেলবন্ধনে 
তাঁর স্মৃতি রোমন্থনে 
তিনি রয়ে গেলেন
অসংখ্য কলা-কুশলী তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে ছিলেন। 
প্রণাম তোমায় প্রণাম 
বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।




বুদ্ধিজীবি
লক্ষ্মণ মণ্ডল


আসলে সকাল সন্ধ্যা কল্পনা গুলো বাসা বাঁধত,
রাত দুপুরে সাদা পাতা ভর্তি হত।
গল্পটা সাজানো হতো কলমের ছোঁয়ায়,
চরিত্র গুলো সাজিয়ে নিতাম বুদ্ধির মায়ায়।

শহর থেকে দেশে , দেশ থেকে বিদেশে,
চলচ্চিত্র বা কবিতা আজও মানুষের মনে আছে মিশে।
চরিত্রগুলো জীবন্ত হতো ,
হোক না যতই কাল্পনিক
দু- দুবার জাতীয় পুরস্কার ছিনিয়ে নেওয়ার ছিল সৈনিক।


'বাঘ বাহাদুর','চরাচর', 'উত্তরা', 'তাহাদের কথা',
বুঝিয়েছিল সমাজের প্রতিছবি মানুষের ব্যাথা।


'লাল দরজা', 'মন্দ মেয়ের উপাখ্যান',
চলচ্চিত্রের গণ্ডিতে নয়....
আজও অমর ছবি মানুষের হৃদয়ে চির অম্লান।


কবিতা গুলো অসাধারন...., ছন্দ মায়াতে ছিল মাখা।
'গভীর আড়ালে', 'কফিন কিংবা সুটকেস', নয়তো,
'হিমজগ' আজও মানুষের মনে গাঁথা।




তারাদের দেশে
রাসমণি ব্যানার্জী

গমন করেছো তুমি! তারাদের দেশে? 
ক্লান্ত দেহে শান্ত মনে! চলে গেলে শেষে। 
চরাচর অন্ধগলি! তোমার যে সৃষ্টি
মন্দ মেয়ে মন্দ নয়! টেনে ছিল দৃষ্টি। 
পুরুলিয়ার সন্তান! বুদ্ধদেব তুমি
তারাদের দেশে আজ! রেখে গেলে ভূমি। 
ভারতীয় কবি তুমি!ছিলে গুণীজন
কাঁদিয়ে হারিয়ে গেলে! কাঁদে যে স্বজন। 
রোবটের গান কবি!লিখেছিলে জানি
তুমি জ্ঞানী তুমি মানী! সকলেই মানি। 
সকলেই চলে যাবো! যেতে হবে বলে
আবির্ভাব অন্তর্ধান! পৃথিবীতে চলে। 
তারাদের দেশে তুমি! থেকো সুখে দুখে
আত্মার আত্মীয় তুমি! থাকবে এ বুকে।


            
জাদুবাস্তব প্রায়োগিক
নন্দিনী মান্না 


 মন ভাবনায় রুপোলীর অমোঘ হাতছানি,
 বারবার ঘূর্ণায়মান চিন্তাভাবনায়,
 গল্প ছবির প্রতি মোড়ে মোড়ে,
 মাতোয়ারা চিত্র ভাঙা-গড়ার খেলায়।
 অপূর্ব নেশায় জাদুবাস্তবতার আশ্রয়,
 ছাপ ফেলা এক অনন্য সৃষ্টির মেলায়,
 ব্যাষ্টি-সমষ্টির রসনায় জীবন রসায়,
 শিল্প-শিল্পীর সৃষ্টির অশেষ বিষয়।
 সত্যজিতের সৃষ্টির মাঝারেই পান প্রভাবনা,
 সুযোগ্য উত্তরসূরির 'চরাচর' এ আগমন,
 নিখুঁত মাত্রার নান্দনিকতায় প্রচারণা,
 প্রাসঙ্গিকতার প্রয়োগে পান সম্মানন।





স্মরণে
রঞ্জন ভট্টাচার্য


তোমার বহুমুখী প্রতিভার চিহ্ন রেখে গেছো এই সমাজের বুকে ...
হতদরিদ্র সংগ্রামী মেহনতী মানুষের চলার পথে । তোমার চলচ্চিত্রে টনক নড়েছে সব বুর্জোয়া শ্রেণির, স্বৈরতান্ত্রী  বিরুদ্ধাচারণে তুমি তো তুমিই
নিজেকে বিলীন করেছ মেহনতী মানুষের হৃদয়ের মাঝে ,
যারা কাঠ ফাটা রোদে লাঙ্গল চালিয়ে খায় 
যারা নিঃশব্দ নীরবে কারখানায় খেটে যায় 
প্রখর রৌদ্রে যারা সড়ক বানায় 
তুমি তাদেরই হৃদয় করেছো জয় 
ভয় হয় ভয় হয় ভয় হয়! সেইসব মানুষের 
যারা গরীবের রক্ত চুষে চুষে খায় 
যারা গরিবের মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় 
যারা হৃদপিণ্ড পিষে মারে।
তুমি শাসন করেছে তাদের ...
তোমার শক্তি মুক্তি পথ দেখায় 
আমরা তোমার-ই দিশারী ।






সাক্ষ্যশিলা
বিমল মণ্ডল 


কি করে নির্বাসন নিলেন?এই সহজ কথার স্রোতে 
ভেসে যাচ্ছে নির্মোহ বিসর্জনের বাজনা
ডুবে  যাচ্ছে অন্ধকারে ত্রয়ী মুখের শেষ বাসনা 
প্রতিটি সৃষ্টির কণায় ভালবাসা 
গ্রাম থেকে শহর যাত্রার পূর্ণতার সহজ সন্ধি
ছোটো ছোটো  বর্ণমালার অন্যন্য দ্বীপের মাঝে
স্বচ্ছ জলে রঙিন ছবির গল্প কোলাজ
পাখিদের কলতানে 
ঢেকে যাওয়া সূর্যের কাছে 
আজ পৃথিবী  বিষাদ- আক্রান্ত 

তবুও  ঘুমেরঘোরে,বৃষ্টির মাঝে,গভীর অন্ধকারে 
নক্ষত্রের অববাহিকায় —
তুলে রাখা আপনারই সাক্ষ্যশিলা।











কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন