ধারাবাহিক উপন্যাস (পর্ব-৯)
ছায়া -ছায়া অন্ধকারের আড়ালে
অনন্যা দাশ
পরদিন সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে ল্যাব থেকে ফিরে ঘী ভাতের প্লেটটা নিয়ে সবে খেতে বসেছি এমন সময় দরজায় বেল! আমি এতটাই ক্লান্ত ছিলাম যে রান্না করার মতন এনার্জিও ছিল না সেদিন। তাই তো ঘী ভাত আর ডিম সিদ্ধ খাচ্ছিলাম। তার মধ্যে আবার কে এল? ম্যাজিক আই দিয়ে দেখলাম কালকের ডিটেক্টিভ ওই রোহন কুমার আর তার সঙ্গে একজন মহিলা। খুলে দিলাম দরজা।
“আমি খেতে বসেছি। এই মাত্র ল্যাব থেকে ফিরলাম। প্রচন্ড ক্লান্ত, শরীর চলছে না! আপনাদের কী বিশেষ কোন দরকার আছে?”
“আচ্ছা পরিচয় করিয়ে দিই। এই হল আমার পার্টনার মেগান মিলরয়। আমরা ভাবছিলাম যদি আপনার রুমমেট ঐশীর সঙ্গে একটু দেখা করা যায়! তিনি তো ফোন করলেন না আমাকে!”
“কী করে করবে, আমি তো ওকে বলারই সময় পাইনি। কাল আপনি চলে যাওয়ার পর আমি যখন খেয়ে দেয়ে শুতে গেলাম তখনও ও ফেরেনি। সকালে উঠে আমি যখন ল্যাবে যাই তখন ও ঘুমোয়, ওকে ডিস্টার্ব করা বারণ। একবার ওকে বিরক্ত করে খুব ঝামেলায় পড়েছিলাম তাই আর ও মুখো হই না। সেই জন্যে ওকে তো আপনার কথা জানানই হয়নি!”
“ফোনেও তো বলতে পারতেন ওকে!”
“ও ফোন ধরে না দিনেরবেলা ওর অফিসে মিটিং ইত্যাদি থাকে বলে। তাছাড়া ও মনে হয় এই কিছুদিন আগে ফোন বদল করেছে, ওর নতুন নম্বর আমার কাছে নেই। আর এই ব্যাপারটা ওকে সামনাসামনি বললেই তো ভালো তাই অপেক্ষা করছিলাম। কেন আবার কিছু হয়েছে নাকি?”
রোহন কুমারের চোখ ছোট ছোট হয়ে গেছে, “না ঐশীর সঙ্গে দেখা করাটা জরুরি। ওনার কথার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে!”
“ও!”
“তা আমরা ওনার ঘরটা একটু দেখতে পারি?”
“জানি না! আমি ওর ঘরে ঢুকি না কখনও। সেটা নিয়ে প্রথম থেকেই আমাদের মধ্যে কথা হয়ে গিয়েছিল যে আমি ওর শোওয়ার ঘরে ঢুকব না আর ও আমার শোওয়ার ঘরে ঢুকবে না। রান্নাঘর, বসবার ঘর আর খাবার জায়গাটা কমন ওটা আমরা দুজনেই শেয়ার করি।“
“আচ্ছা এই অ্যাপার্টমেন্টের লিজ কার নামে?”
“লিজ আমার নামে। আমিই ঐশীকে সাবলেট করি।”
“সেটার জন্যে কোন কাগজপত্রে সইটই করিয়েছেন?”
“সেটা তো আপাতত মৌখিক ভাবেই ঠিক আছে। আমাদের কথা হয়েছিল যে মাস তিনেক ও এমনি থেকে দেখবে যে আমরা পরস্পরের সঙ্গে এক বাড়িতে থাকতে পারছি কিনা। যদি সেটা ঠিকঠাক চলে তাহলে এক বছরের জন্যে এগ্রিমেন্ট তৈরি করে সই সাবুদ করা যাবে। লিজ একবার সাইন করে ফেললে তো আর পিছানো মুশকিল তাই। তারপর সেই ভাবেই চলছিল। ও আমাকে ক্যাশে অর্ধেক ভাড়া দিয়ে দিত। কোনদিন দেরি করেনি। তবে আমার বাড়িওয়ালী মহিলা কিন্তু এই সাবলেটিং করছি ব্যাপারটা জানেন না। উনি হয়তো ভালো চোখে দেখবেন না! এমনিতেই খুব ঝগড়ুটে মহিলা আর আমাকে একদম পছন্দ করেন না। আমার সঙ্গে অলরেডি ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে লেগেছে!” সত্যিই মেনকা পালিওয়ালকে আমি দুচোখে দেখতে পারি না। ওর কাছে গেলে আমার নামে এক ঝুড়ি মিথ্যে কথা বানিয়ে বানিয়ে বলে দেবে সে আমি জানি!
“হুঁ! আপনি ওর বেডরুমে কোনদিন ঢোকেননি বলছেন?” মেগানের প্রশ্ন।
“না, কোনদিন ঢুকিনি বললে ভুল হবে, ওকে ডাকতে ঢুকেছি!”
“ঠিক আছে চলুন, দেখা যাক একবার। ততক্ষণে যদি ঐশী ফিরে আসে তো ভালো!”
“ওর ফিরতে ফিরতে রাত দশটা তো হয়ই! এখন তো মোটে ন’টা পনেরো বাজে। ওর ফিরতে এখনও দেরি আছে!”
“ঠিক আছে। ও কিছু বললে সেটা আমরা বুঝে নেবো। কোন ঘরটা ওর?”
আমি দেখিয়ে দিলাম। আশ্চর্য, দরজাটা খোলাই ছিল! ঠেলতেই খুলে গেল! আমি বেশ আশ্চর্য হলাম। ঐশী কখনও দরজা খুলে রাখে না, সব সময় তালা অথচ আজকেই খোলা ছিল আর আমি খেয়াল করিনি!
মেগান আর রোহন কুমার ভিতরে ঢুকলেন আর আমি দরজার গোড়া থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। ওমা ৪৪০ ভোল্ট কারেন্টের ধাক্কা খেলাম আমি! ঐশীর ঘরটা একদম খালি! মানে খাটটা রয়েছে কিন্তু সেটা ছাড়া আর কিছু নেই ঘরে। ঐশীর নিজের সব জিনিস হাওয়া! আলমারিও খালি! ওর গুচ্ছের জামাকাপড়, জুতো যা কিছু থাকত ওই ঘরে কিছুই নেই! বিছানাটায় টানটান করে চাদর পাতা যেন কেউ শোয়ইনি! ঐশী কখনও বিছানা ওই রকম সুন্দর পরিপাটি করে রাখত না। ঘরে জিনিসপত্র অগোছালো হয়ে ছড়িয়ে থাকত বরাবর! আমার মুখটা মাছের মতন খুলতে আর বন্ধ হতে লাগল। কোথায় গেল ঐশী?
রোহন কুমার চোখ আবার ছোট ছোট হয়ে গেছে। ওনার সঙ্গে মেগানের চোখাচোখি হল।
আমি আমতা আমতা করে বললাম, “ঐশী কখন ঘর খালি করে চলে গেছে আমি জানি না! আমাকে কিছু বলে যায়নি!”
আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾
https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/06/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_46.html
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন