লেবেল

মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০

দীর্ঘ কবিতা ।। শঙ্কর তালুকদার



 "এসো, একসাথে
 থেকে জীবনের সোজা ছবি আঁকি" 


শঙ্কর তালুকদার


এসো না, এখনের সময় ও অনন্তের প্রাণ হয়ে আমরা তেমন একসাথে থাকি; 

পার্থিব দূরত্বের দেয়াল যেন সেখানে থেকেও না থাকার স্বর্গকে প্রত্যক্ষ করে একাকী-

দূর প্রান্তর ধরে, ঐ বিস্তীর্ণ সবুজের উপর দিয়ে- যেন প্রবাহিত হয় সেখানে- মাধুরী-মায়া মাখা প্রকৃতির সে মৌসুমী মলয় মেশে জীবনের বাঁকে;

আদিগন্ত কাশবনে যেন সেথায়, আলো আর মায়ার দোলনা তৈরীর মায়াজাল আঁকে;

নির্জন তেমনই আনমোল একাকীত্বের মাঝে- যেন সেদিনের গান হই আমি একখান-

আর,একলা বাউল, যেন গেয়ে চলুক, নরম মাটির সেই গান; 

যা শুনে আজ ও আমি যেন তোমার বুকের উপর মাথা রেখে, পরম শান্তিতে ও নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরতে পারি;

অপেক্ষার সে নির্যাসেই জীবনের ছবি আঁকার সেই অভ্যাসটা যে আজ দরকার ও ভারী!

মিথ্যা মায়ার এই যাদুর জৌলুসে যেন সে একাত্মতার শপথ কিছুতেই হারিয়ে না গিয়ে করে বিবাগী ;

এসো না, অখণ্ডকালের সব সময়টা জুড়ে, আমরা তেমনই একসাথে থাকার ভাবনা রাখি! 

দাবদাহ থেকে বরফ ঢাকা শীতের কঠিন দিনগুলোতেও যে ফাগুনের ছোঁয়া বা বর্ষার আর্শীবাদ মেখে নিতে পারি আমরা, যদি এক সাথে থাকি!

সময়ের দেয়াল হীন, পার্থিব অস্তিত্বহীনতায় ও স্মৃতির অদম্য ছবি আঁকতে এমন ফলিতেই র'য়ে একাকী- 

সে পাহাড়ি ছেলেটা যে এখনও পাকদন্ডী বেয়ে- 
আরো আরো উঁচুতে উঠেই চলেছে, 

দেখো; সে বোধ হয়, ঐ ঝর্ণাটার কাছেই পৌছোতে চাইছে; 

ঐ, সেই ঝর্ণাটার পাশেই মনে হয় জল আনতে যাওয়া বসুন্ধরার সাথে দেখা হয়েছিল সেবার!

অস্পষ্ট সে জলছবিতেই কি মেঘের তুলিতে তাই- দূরান্তের পাহাড়ী ছবি হ'য়ে, বনবাংলোর জানালার কাঁচে, ফুটে উঠেছে মনের সে সব ফেলে আসা আবছায়ারাই আমার ?

যদিও ছেলেটির পা আজ কেবল ই যেন কেমন টলমলে ও দুর্বল হয়ে পরছে;

তাঁর আঁকাবাঁকা স্নায়ু পথে যেন অনুভূতির সেই তরঙ্গ ও যেন বার্তা দিতে ক্লান্ত হয়ে পরছে !  

তবু ও-তাঁর প্রত্যয়ে ভরা সে লক্ষ্য ও যেন ছুটেই চলেছে –
গন্তর্বে পৌছনোর অদম্য সে লক্ষ্যবিন্দুর দিকে-
যেন অনন্ত কাল ধরে সে ছুটছে!

আমার কটেজের সেই পর্দাগুলি এখনও তেমন ই বনভূমির চালচিত্রের বিচিত্র উজ্জ্বল সবুজ রঙেই রাঙানো রয়েছে;

জানালার অপর পারে, দূরের পাহাড়ে- আকাশের মেঘ ও পাহাড়ের অমন সব চালচিত্র ও প্রহরে প্রহরে সেরকমই বদলে চলেছে!

আর, আমার কফির কাপটির উপর- 
এখনও তেমনই সুবাসিত গরম ধোঁয়া উঁকি দিচ্ছে !

পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো হার কাঁপানো হিমেল ঋতু-যেখানে প্রতিবার ই বসন্তের জানান দিয়ে গেছে প্রকৃতি!

ফেলে গেছে অবস্থার সাথে আপোস করে মানিয়ে  নেবার সেইসব শূন্য অনুভূতি !

এখনও ভেঙে যায়নি কিন্তু আমার সেই জানালাগুলি-
এতগুলি বছরের ফেলে আসা নিঠুর বরফ ঝড়ার দিনগুলোতে ছোট বড় কত রকমের বরফের আঘাতের পরও!

আসেনি আর তেমন কোন ফাগুন, না ফোঁটা জাতের ফুলকে একাধিক বৎসরান্তে ভ্রমরের গুনগুনানি শোনাতে, বা সে মাধুরী ভরা পাপড়ি ছড়ানোর জন্য অনুপ্রাণিত করতে!

কিন্তু, প্রসাধন ঘরেও বুঝি বা আজ ও কেউ - সেই একই সুগন্ধ ছড়িয়ে গেছে নতুনভাবে;

দেশ গাঁয়ের সেই ছাতিম ফুলের মতই মাতাল করা সুবাস যার,ভাসছে-

আর জানালার পাশ থেকে বকুল ফুলের মত ই কোন পাহাড়ি ফুলের গন্ধ যেন ফিরে পাওয়ার বার্তা বয়ে আনছে- 

উথলে উঠছে যেন একেবারে, একাকীত্বের সে নির্জন অনুভূতি! 

এখনও গান গেয়ে চলেছে একটা পাহাড়ি দোয়েল পাখি;

যেন বলছে, 'এসো, একসাথে থাকি', 

কফি কিন্তু এখনও সেই একই পাত্রের মধ্যে থাকে -

আজ হয়ত সেথায় শিউলির শেষ যাত্রা চলছে,বিভূয়ে, সময়েরই ফাঁকে!

অথবা ঋতু পার করা প্রকৃতি, সামলে নিচ্ছে বর্ষা ও সমূদ্রঝড়ে বিধ্বস্ত ভেসে যাওয়া গ্রাম বাংলার পরিবেশ প্রতিষ্ঠিতে আপন স্বীকৃতি! 

বদলানো প্রকৃতির ধ্বংসাবশেষেই   আবার শান্তনীড়ের সন্ধানে ঘর বাঁধছে সেখানে পল্লীবাসিরা যেমনটি করে ওরা প্রতিবার-

হয়ত, ঠিক ঐ ভাবেই, শিউলির মতই ঘাসের সজ্জায়, সূর্যের দিকে তাকিয়ে থেকে- অন্তিমতার মাধুরী চেয়ে নিচ্ছে তাঁরা তাঁদের শেষ লহমায়- 

আর আশীর্বাদিত তোমার তরে আমার চিন্তাও তাই যেন - বেঁচে থাকতে চাইছে অনন্ত কালের জন্যই মৌনতায় এহেন।

এসো না, সেই অনন্তের জন্যই এক হতে থাকি - সেই স্বপ্নময় পৃথিবীতে, কোন রোদ্দুরময় ঔজ্জ্বল্য পরখ করার জন্য না রেখে কিছুই এমন বাকি !

নাইবা থাকল সেথা বাস্তবের সকল নিয়মাবলী, নিষেধের হাজার শৃঙ্খলে- জীবনকে সোজা পথে নিয়ে যেতে সেই বাহুবলী!

আর এমনই ভাঙাগড়ার মধ্যেই এগিয়ে চলুক জনপদ অনন্য- মানুষের মানুষ হবার প্রচেষ্টায়, সৃষ্টিরে করে ধন্য! 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন