পাঁচ ভাবের মিলন ও জিজ্ঞাসা
শঙ্কর তালুকদার
কবিতার সুরের সন্ধানে, দিয়েছিনু মন কোনখানে, "হৃদয় ও মন" এক ক'রে, কি যেন পাওয়ার আকাঙ্খায় সে "অনুধাবন";
গভীরে মৃত্যুভয়ে তাই, চেয়ে নিতে তেমনই "অমরত্ব"- দেহ ছেড়ে আত্মার চলনে, তবু রয় মনে,সেই "পঞ্চভুতের স্মৃতি"র যাপন-
গভীর অনন্ত ভাব নিয়ে এমনই ভাবনা রয়ে যাবে-
রয়ে যায় প্রশ্ন তাই মনে, "কবে জয় মানবতা পাবে?"
কবিতার মেলবন্ধনে ছন্দ খুঁজে একাকার হল ভাবের গভীরতা, যদি সত্যি সেথা কিছু পায় তেমন -
১.
হৃদয় ও মন
একদিন আকাশ পৃথিবীরে সুধায়-
"বুক জুড়ে যে এত ভালবাসা,
কেমনে তা সঠিক পথ পায় ?"
"সব দিয়েই তো উজার করে সে-
তবে, কে তারে সামলায় ?"
পৃথিবীর ভারী অবহেলা তাতে,
অভ্যাসে সে ও কিছু সুধায়-
"এত দেখো তুমি, বিরাজো সবেতে,
নিজে বল, কে কারে আগলায় ?"
"বারবার শুধু প্রথা ভেঙে ফেলা,
বল ভালবাসা সে কোথা যায় ?"
চকিত আকাশ, সাক্ষী সবের,
ভারী মনেই সে ও সেথা কয়-
"মনে এত মনক্লেষ কেন?
কেন ই বা এমন যে হয় ?
কেন হৃদয় উপচে ভালবাসা,
ভালবেসে তাঁরে ও না পায় ?"
সময়ের বাধা, আরো কত কি,
হৃদয়ের তরেই তো তাই বাঁধা;
অনেকেই তবু ফিরে আসে,
নিয়মে আছে যে সব সাধা"!
"অনন্ত প্রেম- যেন আকাশে, মাটিতে,
মিলে মিশেই কেবল ই সে ভাসে!
তবু ও পার্থিব রূপে নীলাম্বর,
মাটিতেই মিলতে চলে আসে?
পাওয়া না পাওয়ার বেদনার সে অঙ্ক
ভাবি,কি ভাবে মিলবে তা কবে ?
হৃদয় ও মন সত্যিই কি কভু-
সে মনে মিলবে কভুও তার তবে?"
২.
অনুধাবন
অনেক সুন্দর ছবি দেখলে-
আমার কেমন যেন চেনা মনে হয়
ছবির সেই প্রান্তর,
আর ছবির প্রাণীদের সব অন্তর!
আমার গভীর হতে সেই সময়ের কান্নাটা আসে।
বহুদিন আগে আমার এমন হত,
আর, এই ব্যাস্ত কর্মময় জীবনে-
কখন যেন সব যেন ভুলে গিয়েছিলাম!
শৈশবের তারকাঁটা দেওয়া দেয়াল টপকে যাওয়ার সময়, আমার ছিল দূরন্ত উচ্ছাস-
যৌবনকে আমি আন্দাজ করতে পারিনি কখনোই-
বিভিন্ন অবয়বে জয় করার নেশা আমার চিরদিনের-
কখনো জয়ের পতাকা ছিনিয়ে ও নিয়েছি সময়ে-
কিন্তু জয়ের আনন্দে-
কি যেন না পাওয়া রয়ে গেছে সব বারই।
তাই,এখন আর কিছু চাই না আমি !
দেওয়ার মত যদিও কিছুই নেই আমার ,
তবু সে মন বলে, উজার করে দিতে -
শূন্যতার সেই বেদিতে- চার কাঠির উপর যখন দেহটা শুয়ে থাকবে,
সবই তো দিয়ে যেতে হবে সেই মাটির কাছেই !
৩.
অমরত্ব
মরণ আসিল প্রাতে - কহে, সে লইবে হৃদয়;
মোর কাছে নাই যে, সে তো,গচ্ছিত সেথায়!
সময় ও এসেছে সাথে, চেয়ে কালের হিসেব
ব'য়ে গেছে যে কাল,তাঁরে পাই যে কোথায় ?
ভবিতব্য তো সব নেবে- তাঁর নিজের কবলে-
অনন্ত কালের মাঝে সেই বাস্তব ই যে দোলে!
জানি,হৃদয়ের সব চাওয়া মিথ্যা হবে সেখানে
সময়ের চাওয়াও যেথা শুধুই ভবিষ্যৎই গনে!
তবু নিন্দুকরা যে মেলায় ছবি, আপন জ্ঞানের
ছেড়ে গেলে, কষ্ট হবে তাঁরই, সঙ্গী যে প্রাণের!
ভাবের সে গভীর খাদেই,কান্নাও ঘোরে ফেরে-
সব গেলেও মোন জুড়েই রবে যে, সে আঁধারে!
তবু জীবন ছোটে সেই তালেই, আকুতি কুড়ায়-
আর,মৃত্যু না হারাতে পারে সে স্বর্গের ভাবনায়!
৪
পঞ্চভুতের স্মৃতি
সময়ের মাঝে সব স্মৃতিই যে এমন
তাই এখন হৃদয় টনটনায়;
কালের সে ঘরেতে দুষ্টুমি ভরা মন
এখন সে সব গেল কোথায় ?
এমন সময় যদি সবই নিয়ে তার,
আর ফেরৎ না দেয় কিছু-
এমন ছবির সকল জেরক্সে,আর
তাঁরই স্মৃতির পিছুপিছু!
সকল আদর স্নেহ মমতার মাঝে-
মনের মায়া যে হয় ভারী-
তাই মানব শিশুর শৈশব সাজে
থাকে যে আবেগ সারিসারি।
অমন চাওয়া পাওয়া অঙ্ক মেলায়
গভীর যন্ত্রণা আর আকুতিতে
যখন জীবন নদীর কূল ভেসে যায়
সে মায়ার শরীর মেশে যে পঞ্চভুতে !
৫.
কবে জয় মানবতা পাবে?
সময়ের অনির্দিষ্ট অতীত, বছর পেরিয়ে পাঁজরের নীচে- যেন ভারী অনুভূতির কাঠ স্তরিভূত হচ্ছে-
মনের গভীর হতে সিঞ্চনের শূন্যতা যেন ভূগর্ভে জলস্তরে,লাঞ্ছনার হাহাকার সম জন্ম নিচ্ছে।
অথচ,আকাঙ্খা ক্ষুদ্রই তো ছিলো-
প্রাণের মাধুরীর প্রস্রয়ে তা ধীরে ধীরে উঠছে বেড়ে-
নবীনের, সম্ভাবনার, কৌশিক কমনীয়তায়,
জন্মলগ্নে নূতনের প্রচ্ছন্ন প্রকাশ রয় সেথায়!
আচ্ছন্ন নবীন সে রূপে নূতনের সে কোন গাথায়-
নব সৃষ্ট ভাবনায় বেড়ে ওঠে কত কি সেথায়!
অন্তর আকুতি খোজে, বেদনার অমোঘ সে রসে-
সময়েরই মাঝে, ভাবনার আকন্ঠ আবেশে
আগলিয়ে, যন্ত্রণার আর কষ্টের অদম্য প্রকাশে!
না প্রকাশে বিষ যেন, প্রাণেরই সে জীবন্ত প্রবাহে,
সময়ের পাড় ধরে সারি সারি দূষণের সেই আবহে-
আগের মত এখন আর পাখিরা যে গান গায় না;
ঋতুর মাধুরীতে বাতাসে তেমন যে পাতা নড়ে না;
কেউ তো আর প্রকৃতির উপর সে বিশ্বাস রাখে না;
এখন অসুখ হয় অতিমারীতে,
মানুষের সংখ্যা কমাতে !
এখন সমূদ্রের ঝঞ্ঝার সাথে-
সাগর উঁচিয়ে এনে পাড়ে ফেলে;
প্রকৃতির উপদ্রপের ছবি যে ভয়ানক হয় আজকাল ;
মানুষের পাপে,ধ্বংশলীলায়,পৃথিবীর হয় যে সকাল-
সজ্ঞানে সকল প্রত্যক্ষ ক'রে অশ্রুজল বহে ক্ষণকাল;
প্রজ্ঞার সাথে সংক্রমনে, অজানা আত্মহননের স্পৃহা-
কত জনেই তাই আজ, জীবনকে নিজেই করে হত্যা-
জীবন বোধের এমনি মৃত্যুতে- প্রকৃতির তবু নিরবতা!
পৃথিবীতে সে সকাল কবে ফের হবে, জয়ী হবে মোর মানবতা ?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন