তুমি আমি কফিহাউস
তুমি ,আমি কফিহাউস...
দু কাফ কফি আর অনেকটা সময় ,
তেরই নভেম্বর দু'হাজার আট,শনিবার
মনে আছে শুভ... ? ।
মিথ্যা বলার শুরুটা খুব সুন্দর করে করেছিলে তুমি ,
সুন্দর করে কেন বললাম ?
তোমাতে হারিয়ে ছিলাম যে - ভীষণ ভাবে ।
যখন ধোঁয়া ওঠা কফিতে প্রথম চুমুকটা দিয়েই
আমার হাতে তোমার আলতো হাতটা ছোয়ালে ,
তার পর আবারও দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ বার... ।
একটা সময় তোমার কফি কাপটা ফাঁকা দেখেছিলাম ,
তুমি অনেক পরে খেয়াল করলে আমার কাপটাকে,
ভর্তি... ঠান্ডা হয়ে আছে ।
তুমি গরোজেই বলেছিলে ,তোমারটা তো...
আর এক কাপ কফি বলি... তুমিতো খেলে না ?
সত্যিই কি খাওয়ার মতো অবস্থা ছিল আমার শুভ ?
আমি তো তখন তোমার হাতের স্পর্শে
অমলিন চিরস্থায়ী ভালোবাসার স্বপ্ন এঁকে চলেছি
তোমাতে অবগাহিত হয়ে ছবি আঁখছি
আজীবন দুটি হাতের স্পর্শ কাতরতার ।
না, সেদিন আর হয়নি আমার উষ্ণ কফিতে চুমু দেওয়া
পরের শনিবার...পরের শনিবার চলতেই ছিলো,
সব দিনগুলোই তুমি একাই নিয়েছিল ফুলের গন্ধ
আমারটা... সেই প্রথমাতেই... ঠান্ডা,ভর্তি কফি কাপ
এভাবেই তো কেটেছিল দুটো বছর ,
তোমার খালিতে পূর্ণতা
আমার পূর্ণতায় খালির ইশারা...।
আমিযে তখন তোমায় প্রায় সবই দিয়ে বসে আছি ।
গত শনিবারও ছিল সেই নভেম্বর, দু হাজার দশ
শুধু তের তারিখটা পড়েনি ।
বনেদি পাড়ায় তোমার বন্ধুর নিরিবিলি রাজকীয় বাংলো ,
তুমি ,আমি তোমার বন্ধু আর অঢেল আয়োজন ,
তোমার স্বপ্নে বিভোর হওয়া আমি সব দেওয়ার শেষেও
তোমার দাবি ছিলো বন্ধুর দাবি পূরনের ।
প্রথমে অনুরোধ পরে শাসন... আরও পরে...
অনাকাঙ্খিত পুরুষ বলের আধিপত্য ,
শেষ হয়েছিল আমার ভয়ঙ্কর বিশ্বাস ভাঙা কান্নায় ।
হ্যাঁ, শেষ দয়া টুকু তুমিই করেছিলে ,
বিশাল বাংলোর গেটে দাঁড়িয়ে থাকা তোমার বন্ধুর
দামি গাড়িটায় তুলে দিয়ে ড্রাইভারকে বলেছিলে
আমার সব হারানো গন্তব্যে পৌঁছেদিতে ।
জানো ,তোমাদের ড্রাইভারটা মানুষ ছিলো ।
আমি এখন অনেকটা দূরে তোমাদের অজানা এক নার্সিংহোমে ।
ছটা দিন কেটে গেছে...আজই শুনলাম
আমার দাবিহীন শরীরি সুখে খুশি হয়ে তোমার বন্ধুর
তোমাকে দেওয়া উপহারের কথাটা...
বিশাল কোম্পানীতে তোমার ম্যানেজারির পোষ্ট ।
আমি লড়াই করছি - বাঁচবই ,
আমি,সিস্টার,ডাক্তার... সবাই ।
অপেক্ষা শেষের পথেই ।
না , ভ্রূণ হত্যা নয় ,
চারা গাছটাকে নিয়ে ঠিক খুঁজে নেব
দামি গাড়ি, বাংলো, কোম্পানি ,তার মালিক ম্যানেজারকে,
আসতে বাধ্য করাবো সেই কফিহাউসে ,
সেই টেবিল,, চারটে ফুটন্ত কফির কাপ,
আমরা চারজন ।
ফিরেও যাবো আবারও আগেরই মতো ,
আমি , আর আমার কচি চারা গাছটা ।
ইতিহাস তো এভাবেই সৃষ্টি হয় শুভঙ্কর ।
ব্যথাটা আর নেই বললেই চলে ,
সিস্টার আসছে আমারই বেডের দিকে হাতে কাগজ
হয়তো ডিসচার্জের সার্টিফিকেটটা নিয়েই ।
কানের কষ্ট কান'ই জানে
আমি কান। আমার যমজ ভাইও কিন্তু একই
একে অপরকে না দেখে, দিব্বি আমরা থাকি।
জানিনা কোন অভিশাপের ফলে
আমাদের দুইজনাকেই, বিপরীতে স্থান দিলে ?
শুধু দুঃখ মোদের, আছে কেবল শোনার অধিকার গালমন্দই হোক অথবা চটুল অহংকার ।
গান,কবিতা,নেতার বাণী,উপদেশ,শাসন
সহ্য করেই থাকতে হয়, গিলতে হয় ভাষণ ।
আমাদের ওপর ঝুলছে কত চশমা রকমারি
হ্যাঙ্গারেতে রূপ দিয়েছ, করছো বাড়াবাড়ি ।
ওদের যত গুরুভার আমাদের উপর রাখা
সমস্যা তো চোখের, তবে মোদের কেন ডাকা ?
বলিনা বটে কিছুই কিন্তু ,শুনতে তো পাই সব
চুপটি করে শুনবো কত ,মিথ্যা কলরব ?
ছেলের মাথায় গোবর আছে ,মাথা কি কাজ করে? মাস্টার মশাইরা হুমড়ে এসে নিংড়ে মুচড়ে ধরে ।
মাথার ব্যাপার মাথা বুজুক, আমার কিসের দায় ?
ব্যাটার ছেলের, তবু এসে কানটা মোলা চাই ।
স্ত্রী-পুরুষ সবাই দেখি, দুল, ঝুমকা লটকাচ্ছে কানে
সারাদিনের বয়ে বেড়ানোর যন্ত্রণাটা জানে ?
নৃসংশতায় ছ্যাঁদা করে বেশ পাচ্ছে সুখ
সবাই কিন্তু মুখশ্রীরই প্রশংসায় পঞ্চমুখ ।
চোখের জন্য কাজল আঁকা ঠোঁটেতে লিপস্টিক
মুখের জন্য হাজারও ক্রিম, ধিক তোদের ধিক ।
চোখ, ঠোঁট, গাল ,নাকের কথা, কবি, সাহিত্যিকে কয় শুধু আমাদের তুলনা টুকু, কুলোর সাথে হয় ।
দূষণ আর শব্দদূষণে, আমরা জর্জরিত হই
এত পাঁচালি লেখা হয়েছে, কান পাঁচালি কই?
ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতায়, আমাদের সূক্ষ্ম বিচার বন্ধ
দেওয়ালের নাকি আমরা আছে, এ ভয়ঙ্কর দ্বন্দ্ব ।
নানারকম ফিসফিসানি বা প্রেমালাপের শোক
চক্রান্তের কথাই বলি বা অন্য কিছু হোক ,
শুনতে মোদের বাধ্য করায়, দরদ কারও নেই
হাজার রকম দুঃখের কথা বলি বা কাকেই ?
অধিকার নেই বলার মোদের, শুধু শুনি'ই চিরকাল
ইচ্ছে করে, হাজার বোলে মিটাই একটু ঝাল ।
ব্রাহ্মনের পৈতা সুতো, দর্জির পেন্সিল
মেঠো বিড়ি, মিস্ত্রির গুটখা সবের আমি খিল ।
আজকাল আবার নতুন ঝঞ্ঝাট মাস্কের ফিতে ঝোলা
কেউ জানেনা এটি'যে কবে, কখন হবে খোলা ।
আরও যদি লটকানর থাকে, লটকাও যত খুশি
চুপচাপ আমি সব শুনি, আর, মুচকি মুচকি হাসি ।
তোর তাপেতে
ডুব দিলি তুই শালুক জলে, সাক্ষী আমায় রেখে
উঠলি যখন ,শালুক লতা আটকে শরীর বাঁকে।
ইসারা'তে ডাকলি আমায়, ছাড়িয়ে দিতে লতা
তোর বাঁকেতে হাত ছোঁয়াতেই, ভুলনু কত কথা।
পুড়লো শরীর তোর তাপেতে, ওষ্ট গেল জ্বলি
হাজার কথা কইতে গিয়ে, একটা কথাই ক'লি।
থাকনা লতা আর কিছুখন, তুইও ওরি মতো
সারু'ক নারে ধীরে ধীরে ,অনেক দিনের ক্ষত।
ডুববো আবার জড়াতে লতা, ছাড়িয়ে দেওয়ার তরে
অনন্তকাল থাকবো হেথায় ,ফিরবোনা আর ঘরে।
লতায় লতায় বেঁধে নেব ,আমার শরীর খানি
দুহাতে তুই ছাড়িয়ে যাবি ,সুয্যি ডুবুক মানি।
চাঁদ হেসে যাক মিষ্টি আলোয়, উঁকি মারুক জলে
দুষ্টু বাতাস যাক ছুঁয়ে যাক, না দেখার'ই ছলে।
তির'তিরে ওই ঢেউ গুলো দেখ, ভাঙছে কোলের কাছে
দুস্টু শালুক সব বুঝে তাই, ঠিক জড়িয়ে আছে।
তোর শরীরের ওম পেতে আজ, ডুববো হাজার ডুব
শালুক লতা খোলার ছলে ,বাসনা ভালো খুব।
চাঁদ ডুবে যাক সুয্যি উঠুক, আবার ডুবুক চাঁদ
অনেক দিনের কান্না'টা তুই,আজ জড়িয়ে কাঁদ।
আমিও কাঁদি তোর সাথেতে, কাঁদিনি কত দিন
আমার কাঁদা, তোর কাঁদাকে, মিটিয়ে দেবে ঋণ।
ছাড়াস'নারে শালুক লতা, কতই'বা আর আছে
এই ছলেতেই হারিয়ে পাওয়ায়, থাকব'রে তোর কাছে।
ছ'য়ে ঋতু কাটিয়ে দেব ,শালুক ডোবার জলে
সব লতা তুই ছাড়িয়ে যানা, না ছাড়ানোর ছলে।
বাসন্তী মেয়ে
পলাশ মাখা সেই মেয়েটা কে জানে কোন ঘরে
এখনো আমি পলাশ হাতে দাঁড়িয়ে তারই তরে
আনছি পলাশ দু'হাত ভোরে পাই যদি তার দেখা
ক্ষনেক তরে যাবো ভুলি নই আমি আর একা
বসন্ত তার দিন ফেলে যায় সময় আঁকা পথে
কবেই যেন বলেছিল থাকবে আমার সাথে
হায় বসন্ত হায়রে পলাশ কেন আসিস ফিরে
শুন্য হাতে বারে বারে পলাশ দিলি ভরে
ফাগুন রাঙা আগুন পলাশ পোড়াবি আর কতো
সেই মেয়েতো বুকের ভেতর এমনি ভরে ক্ষত
ফাঁকা বুকে ঘুন ধরা মন ইচ্ছা ভুলে ভোলে
হাত দুটিতে ভীষণ জ্বালা পলাশ রাখি কোলে
কোল পুড়ছে পলাশ জ্বালায় রাখবো কোথায় আর
মন বলছে ক্ষনেক তরেও ছোঁয়া পাবি তার
বসন্ত গো, ওগো ফাগুন, পলাশ প্রিয়ে মোর
নেইবা এলে বছর বছর ,বন্ধ রেখো দোর
সব সুখেতে স্নাত হয়েও, সে যদিগো শান্তি ফিরে খোঁজে
ক্লান্ত আমি পলাশ মালায় তারে সাজাবো নতুন সাজে
কে জানে আজ সেই মেয়েটা কোন ঘরেতে আছে
অনন্ত কাল পলাশ মালা থাকবে আমার কাছে
হারবে জীবন, থাকবে পলাশ কোল, বুকেতে রাখা
শুধু ,এক পলকেই যাবো ভুলে ছিলাম আমি একা।
কখন পূর্ণ হব আমি ?
আমার, একলা লাগে ভারি ।
কখন তুমি আসবে আমার বাড়ি ?
করব কখন, তোমার সাথে আড়ি ?
কখন তুমি ধরবে আঁচল খানি ?
কখন আমি, হবো অভিমানী। ।
আমার, একলা লাগে ভারি ।
কখন তুমি খোঁপায় দেবে ফুল ?
কখন আমি, বাঁধব আমার চুল ?
কখন তুমি ওষ্ঠে দেবে হাত ?
কখন আমি, জাগব সারারাত ।
আমার, একলা লাগে ভারি ।
কানের লতি কখন হবে রাঙা ?
ভাসবে কখন, আমার মরা ডাঙ্গা ?
কখন আমার কাজল দেবে মুছে ?
কখন আমার লজ্জা যাবে ঘুচে ।
আমার, একলা লাগে ভারি ।
আঁকবে কখন, আমার গালে দাগ ?
কখন আমি করবো কপট রাগ ?
কখন আমার বাড়বে শ্বাসের ধারা ?
কখন আমি, হব আমি হারা।
আমার, একলা লাগে ভারি।
কখন আমার বইবে শ্রাবণ সুখ ?
সেই সুখেতে ভরবে কখন বুক ?
দুই তনুতে, কখন হবো লীন ?
কখন, রাত্রি মুছে হবেনা আর দিন।
আমার, একলা লাগে ভারি ।
কখন ভ্রমর দেখবে আমার চোখে ?
গুনগুনাবে, কখন পাড়ার লোকে ?
কখন আমি লজ্জা হীনা হয়ে ?
আড়াল মুছে, তোমাতে যাব ক্ষয়ে।
আমার, একলা লাগে ভারি।
কখন আমি বুঝবো, আমি নেই ?
কখন আমায় খুঁজবো, তোমাতেই ?
কখন, অজান্তে তেই আমায় নেবে নিয়ে ?
কখন, চিনিয়ে দেবে আমায় তোমা দিয়ে।
এমনি করেই কাটুক সময় মোর
এঁকে দিও অনেক কিছুর ঘোর ।
আমার অপেক্ষাতেই...
হঠাৎ করে, আসুক তোমার চিঠি।
পেয়েছ তুমি ভালোবাসার ছুটি ।
লাগবেনা আর একলা আমার ভারি
পূর্ণ হবে, অপূর্ণ এই তরী ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন