বৃষ্টির গান
বৃষ্টি এলে নদীর জলে নাচন লাগে তা থইথই
নাচতে থাকে দুলতে থাকে সেই নদীতে নৌকো ব-ই
গাছের ওপর বৃষ্টি এলে সবুজ কেমন নাচে হই
এদিক ওদিক পাতারা সব আনন্দতে জাগে ওই
মাটির 'পরে বৃষ্টি এলে মাখামাখি নাচন তার
টুপটুপাটুপ জলের ফোঁটায় মাটির হৃদয় একাকার
আমরা মানুষ বৃষ্টি এলে কেউ বা ভিজি কেউ পালাই
বৃষ্টি ভয়ে কাঁপে কে ওই ঘরের দরজা বন্ধ তাই
ময়ূর নাচে পেখম খুলি বাতাস তারই সঙ্গী হয়
চতুর্দিকে কল-কাকলি ব্যাঙের ডাকও মন্দ নয়
ছোট্ট খুকি ছোট্ট খোকা নৌকো ভাসায় নন্দনে
তাদের মনে হিসেব-নিকেশ দাগ কাটেনা বন্ধনে
বৃষ্টি আসে বৃষ্টি যায়ও সাদা কালোর কোল ঘেঁষে
বড়োরা নয় ছোটোরা সব আকাশ বুকে যায় মেশে
আজ রঙের দিন
আয়রে খোকা আয়রে খুকু
রঙের বসন্তে
রং দিবি না আবির দিবি
রঙিন দিগন্তে
ওই যে দূরে খেলছে কারা
ভুতের না-কি সঙ
দেখলে বাবা ভয় পেয়ে যাই
নিজের অজান্তে
রঙের থেকে বেরিয়ে কারা
ছুটছে কালান্তে
ওই যে দূরে কৃষ্ণচূড়া
লাল দিগন্তে লাল
কে যে কাকে রং মাখালো
বসন্তের এই কাল
রং মাখাবো ভিজব রঙে
নাচবো তা-ধিন-ধিন
চতুর্দিকে ফুটবে আলো
পলাশ ফাগুন দিন
আহা পলাশ ফাগুন দিন
আহা পলাশ ফাগুন দিন।
ছায়াযুদ্ধ খেলা
একদিন এক গভীর রাতে অন্ধকারের ছায়া
হাত ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিল মহামারীর কায়া
ঘুমের ঘোর কাটেনি তখন এমন গভীর ঘুম
চোখদুটিকে কচলে দেখি বিভৎস সে ধুম
এক হাতে তার মুণ্ডু কাটা অন্য হাতে অস্ত্র
কাঁপছে মাটি দুলছে বাতাস উড়ছে তার বস্ত্র
ঘুম ছুটে যায় তেপান্তরে বাঁচার আশা ক্ষীণ
চতুর্দিকে রক্ত ছোটে মনুষ্যত্ব হীণ
তখন কি আর করার আছে চোখটি বুজে--- এ-কী
হাজার হাজার মোমবাতিতে জ্বলছে আলো দেখি
ভয়ে ভয়ে চোখটি খুলি কোথায় গেল ছায়া
দেখি আমার ঘরের মাঝেই সেই অবিকল কায়া
এ-কায়া তো সে কায়া নয় আমার দেহের শ্রী
আলো ঝলমল মোমের বাতি ভাবনাটা বিশ্রী
ঘুমের ঘোরে আর জাগিনা আর ভাবিনা কিছু
রৌদ্র ওঠা বারান্দাতে আমার ছায়ার পিছু
যাই ডেকেছি ফুসমন্তর লুকোচুরির খেলা
জ্যোৎস্না রাতে ঘরের ভিতর চাঁদপরীদের মেলা।
স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতা শব্দটি আজ
বড্ড বেশি একঘেয়েমি
সূর্য দেখি লাল হাসিতে
ভাঙছে সকাল আলসেমি
বোনটি আমার ভাষা চেনে
জিগ্যেস করে স্বাধীন মানে
আমি তখন চুপ থেকে যাই
বোনকে বলি কানে কানে
শুনে বোনের বেদম হাসি
যেমন হাসে ফুলের রাসি
সকালবেলার স্বাধীনতা
সন্ধে হলেই হয় যে বাসি
সেদিন আমার পোষা কুকুর
ঘেউ করে কি বলল এসে
ভাষার এমন বিভেদ-প্রভেদ
স্বাধীন চলার পথের শেষে
আইন কানুন যখন তখন
অর্থবাদী পোষ মানায়
দেশের জন্য কেউ ভাবেনা
নিজের হাতে দেশ ডোবায়
এমন একটি কুড়িয়ে পাওয়া
চেয়ে পাওয়া স্বাধীনতা
তার কী আর গতি থাকে
চলতে চলতে স্তব্ধতা---
লক্ষ হাজার প্রাণ গিয়েছে
যতীন সুভাষ অনুসূয়া
তাদের চোখে স্বাধীনতা
ভিক্ষে নয় ছিনিয়ে নেওয়া
তেমন তেমন সত্যি হলে
বুকের ছাতি গর্বে ফুলে
স্বাধীনতার মানে বোঝার
ছোট্ট বোনটি যেতই ভুলে
কয়েক দশক পার করে সেই
ফিরেই আছি পিছন মুখেই
বিপ্লবীরা ঘুমোচ্ছে সব
ভাবছ কি সব শান্তিতেই
আমার এ-দেশ আমারই দেশ
স্বদেশ শাসক তফাৎ যাও
মুখোশ পরে আর কতদিন
আমার দেশকে বেচতে চাও
স্বাধীনতার বুঝেই মানে
বলেই দেব উচ্চ স্বরে
বিপ্লবীরা জাগবে আবার
নতুন ফুলের স্বপ্ন ভোরে।
আমার স্বপ্ন
ওই দ্যাখো মা চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে গাছে
ওই দ্যাখো মা মেঘের ভেতর হাতি কেমন নাচে।
সবাই কেমন নাচেগো- মা তাক্ ধিনা ধিন না
আমার বেলায় নাচলে ও- মা কেন মানায় না?
স্কুলের ভেতর পড়ার ফাঁকে ভাবছি অন্য কী সব
হঠাৎ দেখি ক্লাসজুড়ে সে এক, হইচই চই রব।
বাঁদর নাচে শিয়াল নাচে নাচে হরেক পাখি
তার সাথে নাচি আমি স্বপ্নতে পা রাখি।
ক্লাস শুরু পড়া শুরু আমি কোথায় আছি
এমন প্রশ্ন দিদিমণির স্বপ্ন ছেড়ে বাঁচি।
কী জানি ভাই সত্যি বলি আমার সঙ্গেই জোটে
স্বপ্নে যত বন্ধু আমার শত্রু নয় মোটে।
একদিন এক পড়ার ফাঁকে আঁকছি কি সব যা-তা
তারই মাঝে চাঁদ উঁকি দেয় ফুঁড়ে খাতার পাতা।
এসব বললে ভাববে মিছে মা-ও শোনেনা কথা
কার কাছে স্বপ্ন আমার রাখতে পারি যথা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন