লেবেল

শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ


  একদিন আসে

একদিন আসে যখন শরীর আর পারে না নিতে 
স্বছন্দে পাত পেতে
  পেট ভর্তি ভাত খেতে 

যদিও সব খিদের জ্বালা নিয়ে বয়স উতলা নিভৃতে যৌথ ঘরের ভিতে  
প্রেম ভালবাসার সমস্ত সম্পর্ক পরষ্পরের রক্তের দাগ
  মিলিয়ে নিতে ।

 

সূর্য বিনা রোদ্দুর মেঘ বিনা বৃষ্টি  
খুঁজে নিতে সংঘর্ষের প্রতিধ্বনি;
 
দু’হাতে বয়স ঠেলে শরীরের জানলায় মেলে...
খোলা আকাশ অগোচরে
  উষ্ণতার আঁচ নিতে 
এক সম্পর্ক আর এক সম্পর্ক
  গভীর করে দিতে  
উজার রোদ্দুর উজার বৃষ্টি
  
বয়স লাগা শরীরের পাঁজরের ভেতর হৃদয় পেতে ।

শরীর বলতে খোলামেলা গাছ গাছালির ভুবন কাছারি  
বয়স ঘর বাড়ি বোঝাপড়া সম্পর্কের দালান খবরদারি;
সম্পর্কের সাথে শরীর শীতের কাঁপন উষ্ণতার
  যাপন 
স্পর্শের জেদ
 
আদর
   ভেদ 
উঠতে বসতে
 
এক ঘরের মতো ঘরের কোণে

রোজ বয়স বাড়ে শরীরের  ভেতরে বয়স  ভুলে 
আর কেউ আসে না নিতে ঘাসপাতায় দুর্বা তুলে ।

অলংকরণ- বিমল মণ্ডল  



  খোলা হাওয়ায়


তুমি এসো বা   যাও ফিরে 
তোমার ইচ্ছে লাগার ভিড়ে।

যদিও নেই 
আমার ভেতর ঘরের বাসা
  সুখ দুঃখ কষ্ট মুখের ভাষা ।
আছড়ে মুচড়ে পড়ার ব্যথা
 সম্পর্কের কাঁচ ভাঙ্গা অযথা ।
আলো আঁধারের বাড়াবাড়ি
 ধনদৌলতের কাড়াকাড়ি ।
ধারদেনার কোর্ট কাছারি
 
হাট বাজারের ফর্দ
 হিসেব নিকেশ করার জারি ।
অনুষ্ঠানের বাড়তি আবর্জনা
  অহেতুক নেশার সরাই খানা ।
আরাম করার বাগান বাড়ি
  ভাগাভাগির জঞ্জাল ভারি ।
খুনসুটির
  ঝগড়া ঝাঁটির  বালা ।
সিংহদুয়ার
  
সতর্কতার
 
চাবি তালা।

এখানে শুধু  রোজকার মতো... 
খোলা হাওয়ায় স্বাভাবিক
  আসে যায় 
ধারাবাহিক টাটকা ফুলের উজার গায়
 
সন্ধ্যা ভোর মাটির গন্ধ আকাশ জোড়া
 
ভালোবাসার
  বসত ঘর  হৃদয় মোড়া ।

অলংকরণ- বিমল মণ্ডল  


  জীবন কুর্তি


কাঠ রোদের ভেতর মজুরীর শ্রম দানে  
তাদের দু’হাতের কষ্টের দাগ চিনতে শেখো ।
সময়ের ভাঙামেঘের বর্ষাতি জলের বাণে
 
ভিজতে ভিজতে জীবনকুর্তি বুনতে শেখো 


জীবন কি শুধু ঘর বাড়ি !
  বইয়ের পাতায় চোখ না রেখে 
ঘরের পাঁচিলের বাইরে এসে মানুষের সাথে মিশতে শেখো।

সুন্দরতা বাস্তবের স্তবকে দৃষ্টির সঙ্গোপনে
 
না বস্তুর আবরণে
চোখের বাঁধনে আঁকতে শেখো ।
তর্কের মারকুটে না গিয়ে বুকের মধ্যে হাত রেখে
 
দু’চোখ খুলে বিনা আতস কাঁচে দেখতে শেখো ।

প্রকৃতির পৃথিবী কতটা সুন্দর কতটা মুগ্ধময়
 
হৃদয়ের স্পন্দনে স্বরলিপি বেঁধে ঠোঁটের পাতার
 
উপর রাখতে শেখো ।

চোখের নজরে দেখা সম্পর্কের দুরত্ব
 
দিতে পারে ধোকা আরো দূরত্বের বোঝা
 
চোখের কাছে পিঠে ।

সূর্যের আলো উঠছে সূর্যের আলো নিভছে 
সব অন্ধকার চাঁদের আলোর ভেতর
 
সন্তান সন্ততির হাত বাড়িয়ে বুকে টানতে শেখো ।



অলংকরণ- বিমল মণ্ডল  


 নিসঙ্গতার কবিতা

আমার বয়সের কাঁধে এখন আর নেই কোনো ওজন 
শিরদাঁড়ায় হাত বুলিয়ে
  দেওয়ার মতো কোন স্বজন ।
নিস্তেজ পড়ে থাকা গন্ধমাখা রুমালে
 
সেই আকাশী গগন ...
আর
 
প্রহরের গ্রিল খুলে দুজনে এক সাথে বসে থাকা
 
দুবেণীর দোলায় সূর্য্যর আসা যাওয়া গায়ে মাখা ।

যদিও সময় থাকতে দিয়েছি মেয়ের বিয়ে
 
ভালো ঘরে আমার সাধ্যের
  বাইরে গিয়ে 
ছেলেও খুঁজে নিয়েছে রোজগার নিজের বিদ্যা বুদ্ধি দিয়ে;
তারা এখন ভীষণ ব্যাতিব্যস্ত নিজের নিজেরএকান্ত সংসারে ।

একদিন 
গাছে ফুল ছিলো ফল ছিলোছিলো পাতার সবুজ
  সুরভি 
ছায়া রোদ্দুর মেঘলাগা বৃষ্টিঋতুর স্পর্শ সুখ লাগা পৃথিবী ।

কোলে পিঠের সম্পর্ক এখন ঝুললাগা ছবি;
একলা ঘরের ভেতরে
  নিজের মতো করে  
আজো অতীত ভাতের গন্ধের মতো ছুটে আসে
 
নিঃশব্দে পেরিয়ে
  চৌকাঠ স্বচ্ছতার বাতাসে।

আমার নিসঙ্গতার পাতায়  হারানো সঙ্গতার  
অবাধ বর্ণের নিছক বর্ণনা টেনে আনায় কি কবিতা !




পোড়ামুখো 


আমরা ঘরের মধ্যে এখনও খুঁজছি নিজেদের ঘর 
অন্ধকারের আপান্ন ঘেরায় প্রাকৃতিক আলোর প্রপাত

বয়েসের সব আঙুল অকাজের এলোমেলো ধুলো ঝড়
 
কড়া নাড়ছি আর ঝেড়ে ফেলছি অকুশলতার ঘাত ।

অকারণে দৌড়ের মুঠোয়
  
অযথা দু’চোখের ভেতর অশ্রুর স্খলন
 
ছন্নছাড়া ছিপে অস্তিতীরে সমুদ্র মন্থন 

পৃথিবীর অরণ্য রোদ্দুরী আকাশ
বাঁধনহারা
  উদাসী প্রহর দাঁড়ে 
প্রবাহ দুয়ার পায়ের কাছে কাছে 

আমরা নিতান্তই নিরুপায় মাটির ঘাস পাতায়
রাত্রি সকাল দীনতার
 
মুখ নামিয়ে হাতের তালু নৌকো বানিয়ে
 
আছি দাঁড়িয়ে;
আর
 
ঈশ্বরের দালাল বলে ওঠে :
 
হাত পাতো চরণামৃত লহ
  
দুঃখ-ক্লেশ নিজের মতো করে সহ
পুণ্যের পূর্ণতায় ধরো তব দেহ
 
না সাঁতরে পাড়ে বসে সব তীর্থ পারাপার

সময়ের স্তর নাগাল হারালে আমরা নিজেদের ভিড় নিজেরাই ঠেলে ধরে 
অজল শীলায় ঈশ্বর দেখার লহমা দেওয়ালজোড়া রোমাঞ্চর আবদ্ধ ঘরে
শ্বাস রুদ্ধ
 ফুল পল্লবের গন্ধ  
যদিও ঈশ্বর কাল ঘুমে কষ্টি পাথরে
 
জটিল লোহার গ্রীলে বা কাঁচের ফ্রেমের কিলে
  
সহস্র জমকালো কৃতিম আলোর দর্প দ্বিধার সর্পিল লাবণ্যে 

কোন মোহে আমরা অলস শরীর ভাঙ্গতে পারিনা কর্মঠ কর্মযোগে  
প্রত্যহ বেঁচে থাকার দিন খুঁজি নিজের খামতি জরা ভাগ্যের রোগে 

আমরা পোড়া মুখো   এখনও স্বপ্ন হুঁকোর নিমগ্ন 
হাতে নিয়ে নিজের মুখ পোড়াই
 অবস্কর স্বপ্নের ধোঁয়ায় ।





যেকোনো বিভাগে অপ্রকাশিত লেখা পাঠান
মতামত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com        


 



 

 

 

 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন