বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ

                                     সন্দীপ রায়  


না ফেরার ঘর 

নক্ষত্র লোকের আলোকের নীচে 
এক টুকরো বিষাদের অন্ধকার, 
সাফল্যের ভরকেন্দ্রে থেকেও
অবসাদের আত্মহূতি...

অনেক না বলা গল্প থেমে থাকে 
বন্ধু মহলের রাজপথে 
ব্যস্ত মনের অলিন্দ-নিলয়ে-

অবসাদের দাবার ঘরে  কোনদিনও 
ভুল চাল ছিল না !
ছিল না  কি সমর সজ্জার অবিন্যস্ত বিন্যাস ?
একঝাঁক প্ররোচনার এলোমেলো বাতাস--
বাতাস বিষময় ...প্রাণঘাতী, 
যে কোন মূল্যে জীবন বাজি 
কিস্তিমাত  !

দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া জীবন সৈনিকের 
রণে ভঙ্গ-অসহায় আত্মসমর্পণ ।

না ফেরার ঘরে চিরস্থায়ী ঘর বাঁধা!






 প্রতীক্ষার দীর্ঘ ছায়া 


অদৃশ্য প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে মানব সভ্যতা 
কখন ট্রেন আসবে কেউ জানে না...
প্রতীক্ষায় কেটে যায় অনেক রাত
অপেক্ষার আয়না মুখ টিপে হাসে ।

ঘন কুয়াশার চাদর গায়ে ভোর হলে
রোদ্দুর গিলে খায় শরীরী ছায়া  
কারা যেন কানে কানে কথা বলে-
গোলা ভরা ধান -আর কত দিন ?

বেলা-অবেলায় দেনা বাড়ে 
ঋণের বোঝায় আমানতে টান
ভাঁড়ার শূন্য-
কার কাছ বাড়িয়ে দেবে রুগ্ন হাত !

অসময়ে ঝমঝম বৃষ্টি নামলে স্বস্তি  ,
মেঘের দেখা কই !
ধান বীজে পোকা লেগেছে, মাথায় হাত
শ্রাবণ দূর অস্ত, লাঙ্গলের ফলায় পাথুরে মাটি
রুজি-রুটির বোবাকান্না ।

অদৃশ্য স্টেশনে ক্লান্তির ধকল সামলে
অনন্ত প্রতীক্ষায় কেটে যায় অনেক অজানা রাত ।






   অনুরাগ 

সন্ধ্যা গাঢ় হলে- নিমেষে দু'টি ছায়া 
কাঁধ ছুঁয়ে আরও ঘনিষ্ঠ, মুখোমুখি...

ভারী ঠোঁট-অন্ধকার হাতড়ে 
নরম ঠোঁটের নিবিড় স্পর্শ সুখ ।

সেই কবে যৌবনের অসমাপ্ত চুম্বন --
সেদিনটাও ছিল ধবধবে সাদা 
জ্যোৎস্না মাখা তারা ভরা রাত ,

অজান্তেই হাত কাঁপে আবেশে 
নড়ে যায় মূর্তির অবয়ব, 
রং- তুলির গাঢ় প্রলেপ 
অপূর্ণ চক্ষু দান পর্ব।

খোলা আঁচল মাটিতে লুটোপুটি 
ঘন ঘন নিশ্বাসে বাতাস ভারী 
মাধবী লতা জড়িয়ে কোমরে 
সন্ধ্যা মালতী চোখ-- অমৃত তৃষ্ণা ...

কলঙ্ক দাগ রেখে যায় কলঙ্কিনী চাঁদে ।




  নীল আকাশের নীচে 

ভেতরে মেঘ জমেছিল অনেককাল আগেই -
মেঘের পরে মেঘের পরত, বিদ্যুৎ চমক ।
বাইরে দ্রুত গড়াচ্ছে সময় 
সময়ের হাতে মুঠোবন্দি উদ্বেগ-
উচ্ছ্বাসে ভাসল আতঙ্কিত কেউ,
শুধু একটি দু'টি বক মেঘের চাদরে 
অজানার সন্ধানে মেলে দিল ডানা।

জীবন মৃত্যুর চেয়ে অনেক বড়,
কিছুই নেই, তবু যেটুকু আছে - তাই স্বর্গ ।
গৃহস্হালী সামলে-অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ...

স্বপ্নের আকাশে মাঝ রাতে ঝড় ওঠে
ছবি আর ছবি থাকে না
ছায়া হয়ে দূরে সরে যায়, 
দিশেহারা ঝরা পাতা নিষেধের কাঠগড়ায় -
তাণ্ডব বলে যায় শতাব্দীর প্রাচীন ধ্বংস-কথা ।

পা আছে অথচ মাটি নেই, শুধুই জল 
মাথা আছে অথচ ছাদ নেই,খোলা আকাশ -
অভাবী মানুষগুলোর চোখ খোলা আকাশে স্থির। 




 
  স্মৃতির ডুব সাঁতার 


জানালা দিয়ে দেখা পৃথিবীটা হয়তো অনেক ছোট --

গ্রিল ধরে দাঁড়ানো ভেতরের মানুষটি
দিন-রাত হন্যে হয়ে খোঁজে 
পৃথিবীর অন্য কোন এক মানচিত্র ।
হালকা হাওয়ায় ওড়ে উস্কোখুস্কো চুল
যে চুলে একদিন অবাধ্য আঙ্গুলের ছোটাছুটি—
ভরা কোটালের সংগীত সুমধুর ।

মন- পিয়ানোর ছন্দে ছন্দে 
মানচিত্র বদলে যায় নিশিদিন, 
ভূগোল আর গোল থাকে না
যেন ভাবনার চরম ইতিবৃত্ত, 
ঢেউ ওঠে, বান আসে অহরহ
ভাটার টানে পড়ে থাকে ভেজা খড়কুটো ।

জানালার বাইরে জমাট অন্ধকার, 
দূরে স্কাইলাইল মিশে আছে 
পৃথিবীর অন্য গোলার্ধে-
ঠিকানা বদলের অন্য গৃহস্হালী, 
সাজানো আবাসন।
যে ভাবে কল্পনার মন-ভালোর বিকেলে 
রূপ ছড়ায় সন্ধ্যামালতী ।


এখনও কী শাঁখ বাজে প্রতি সন্ধ্যায় ?
এখনও কী শিশিরের টুপটাপ ছন্দে
হেঁটে চলে মন- সকাল!
এখনও কী তারাভরা রাতে আঙ্গুল গুনে গুনে--
ঐ দ্যাখো সন্ধ্যাতারা, সপ্তর্ষি...আরও কত কি...

জানালার ভেতরে দ'চোখে ঝমঝম বৃষ্টি নামলে 
অবসন্ন হাত বন্ধ করে দুটো কপাট   ।






যেকোনো বিভাগে অপ্রকাশিত লেখা পাঠান
মতামত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com        

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন