মঙ্গলবার, ২ জুন, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ


                            তৈ মু র খা ন 





  পাথুরে সভ্যতার মানুষ


 মেধাহীন দিন আর চর্বিতে চিকন নাভি
 প্রত্যহ বাজার ঘুরে এসে
 আমাকে যৌনতা এনে দেয়

 আমিও আলোর নামে বেঁচে থাকি
 আলোকবিহীন,
সভ্যতার নামে আদিম পদ্ধতি
পাথুরে অস্ত্রের শিকারি।

 আগুন জ্বালি আর আগুনের চারপাশে
 বসাই শীত,
 শরীরসর্বস্ব গান, কেবল মাংসে রুচি;
 রমণী মাংসের জন্য ধর্ষণও প্রচলিত
কতদিন নিজেরাও সাপের মতন বাঁচি।



    নিরক্ষর হৃদয়


 কতবার স্বপ্নপ্রস্তাব ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি
 তবু কেন শহরের মেয়ে গ্রামের ছেলেকে টানে?
 একাকী রাত্রি আলপথ বেয়ে শহরের হাইরোডে
 আলো-ঝলমল পার্কের কাছে গ্রাম্যতা খুলে রাখে।
 আর মোটর সাইকেল চড়ে রাজপুত্তুর যায়
 গ্রামের ঘোড়ারা অদূরে বসে রোদ্দুরে হাঁপায়।





   তোমাকে কোনোদিন বলতে পারব না


 এতক্ষণ তুমি আমাকে ভুল বুঝেছ
 এতক্ষণ তুমি আমার জন্য ঠোঁট ব্যাঁকাচ্ছ
 ভ্রু-কোঁচকাচ্ছ আর জনান্তিকে মন্তব্য ছুঁড়ে দিচ্ছ
 একজন মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারালে
 যা যা ঘটা দরকার তোমার মধ্যেও তার প্রকাশ ঘটছে
 তোমার মধ্যেও একটা বিদ্রোহের সাইরেন বেজে উঠছে
  রোমাঞ্চ জাগছে বুকে
 তোমার মধ্যেও একটা পালতোলা নৌকা
অন্য ঘাটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে
 তোমার মধ্যেও একটা সূর্যোদয় হচ্ছে
 দূরের কুয়াশায় কারও বাঁশি শুনতে পাচ্ছ
 তোমার ওড়না সরে যাচ্ছে
 শ্বাস-প্রশ্বাসে উষ্ণতা বাড়ছে

 তুমি বিশ্বাস করবে না এই মুহূর্তে আমি মৃত
 আমার মেধা আর যৌনতা ভাগ করে খেয়ে নিচ্ছে
 মাংসাশী কাক-পক্ষীরা।



    এক একটা প্রজাপতি


 এক একটা ফুলের মতো প্রজাপতি উড়ে উড়ে আসে
 এই মুহূর্তে আমি আর বিষ খাব নাকো
 সব চাপা আর্তনাদ বাইরে আসুক
 ওদের মুখেও আজ ভাষা তুলে দেবো;
 কান্নারা শুকিয়ে ধুলো হয়ে গেছে
 খিদেরা পুরনো অভ্যাসে শুধুই ডেকেছে।

 এক একটা প্রজাপতি মেঘ আর রোদ্দুরের গান
 পৃথিবীর মাটিতে স্বপ্ন বুনে দেয়।



   ১৪ এপ্রিলের প্রার্থনা


  আজ সকালবেলা বল্লমের মতো
 যে সূর্য রশ্মি এসে পৌঁছায়
 তার দীপ্ত পৌরুষে আমরা স্নাত হই

  আমাদের মৃত ও জীবিত আত্মা
 আর একবার জেগে ওঠে
 আর একবার নতজানু জন্মের মাটিতে

 প্রেমের শাসন দাও, দিব্যকান্তি
 মানব মহিমার শৃঙ্খলে বেঁধে
 অনন্ত বিস্ময় খুলে খুলে

 হে ভারতভাগ্যবিধাতা !



    সভ্যতা


 সংকেত পাঠাচ্ছে তার সাইকেলের ধ্বনি
 ঘর থেকে বের হও এবার দিদিমণি

 কতদিন বুঝে গেছে উদ্ভিদবিজ্ঞান
 নিষেক চ্যাপ্টারে বুঝি পরাগমিলন

 পথে আজ কাঁচা রোদ ছুটেছে সাইকেল
 একটি ঝরনার পাশে সুন্দর বিকেল

 আগুন জ্বালাতে শেখা মাংস-শিকারির
 ভাষা ফুটছে, গান উঠছে আলো-শতাব্দীর।



   আয়না


 আজ আলো নেই বলে সব দেখতে পাই
 অন্ধকারে উড়ে আসে দাঁতাল মাছ
 বিবেক খায়, মনুষ্যত্ব খায়
 অবশিষ্ট  হাড়ে মেশায় নুন-লঙ্কা;
 যাঃ শালা বেঁচে থাকা এক তামাশা!

 তারপরও বেঁচে থাকা চলতে থাকে :

 সকাল এসে শুধায় : বাঁচার নাম কী?
 দুপুর এসে শুধায় : বাঁচার নাম কী?
 সন্ধ্যা এসে শুধায় : বাঁচার নাম কী?

 রাত্রিতে আলো নিভে গেলে
 মুখের সামনে বড় আয়না তুলে ধরে
 আর রোজ নিজের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়।



    মুগ্ধতা


 মুগ্ধতা এভাবে আসে
 যখন তুমি নিচু হয়ে থালা মাজছ ঘাটে
 যখন তুমি স্নান সেরে চুল ঝাড়ছ একা
 যখন তুমি কলসিতে জল ওড়না যাচ্ছে সরে

 তোমার দুটি ডানা আছে
 তোমার পায়ে অজস্র স্রোত
 বিকেলে সাইকেলে

 আকাশী রং বুটিক জামা, নীল চপ্পল
 জলের ভেতর দ্রুত মাছ যাচ্ছ সাঁতার কেটে!



   যে যার মতন ঘোড়া


 লুকানো চাবুক খেয়ে সবাই রোদ্দুরে হাঁটি
 যে যার মতন ঘোড়া। বাতাসে হাসির শব্দ
 দীর্ঘ বালুপথ

 কোথায় হারিয়ে যায় নিজের ছায়ারা?

 আমার বিবাহসভা কালবৈশাখীর চক্র
 নিমন্ত্রিত অতিথি সবাই—

 মদন ভস্মের পর অশ্রুমতি রতি
 অস্পষ্ট বুকের সাঁঝে তুমি এলে
 করুণ রক্তিম বিকেলের আঙিনায়—
 আমি আজ নই শুধু বসন্তের সেনা
 আমার সমূহ বিজ্ঞাপনে রুদ্র ভৈরব বন্দনা।

 সমস্ত ছোবল ধরে রাখি বিষের বাঁশিতে
 গর্জনে নিনাদে সব চৈত্রকন্যারা
 পরিণয়ে বাঁধুক বিস্ময়—
 গোপন পিপাসা খুলে দেখুক পৃথিবী
 আমি একা জেগে আছি কামে করিশমা।

 বালুঝড়ে আরও দীর্ঘ গ্রীবা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি
 ঝরনা ঠোঁট, বকলমে বৃষ্টি শুধু বৃষ্টি !



   উপসংহার


 কত চিঠি দিয়েছি তোমাকে
 একটারও উত্তর দাওনি—
 প্রেমে তুমি ভয় পেয়েছিলে?
 আজ গাধা হয়ে ঘাস খেতে যাই পুরনো মাঠে
 চাঁদের আগুনে তাপ বাড়ে…..
 আমাকে চিনতে পারো?
 উঠোনে ছড়ালে ভাত কাক হয়ে নামি।
 ব্যস্ত হাতের চুড়ি বাজে
 সন্ধ্যার আলো জ্বালো
 হাঁস ডাকো—
 আমি শুনতে পাই

 বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে একা পথ হাঁটি
 অবশিষ্ট কিছু চিঠি লিখে যাই মেঘে।



অপ্রকাশিত গদ্য ও পদ্য পাঠান
অভিমত জানান
      bimalmondalpoet@gmail. com    

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন