শনিবার, ৬ জুন, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ




                      অতসী চক্রবর্তী ঠাকুর 



ঝরাপাতা


না আমার কোন ব্যাস্ততা নেই...আমি ঝরাপাতার দেশে ছুটে যাই।
দক্ষিণের খোলা হাওয়ায়... ওদের গায়ে হাত বোলাই
জাগিয়ে তুলি...স্পর্শ অনুভব করি!

কি যেন বলেওঠে গভীর আগ্রহে...আড়ামোড়া ভেঙে
তারাও ভীষণ শুশ্রূষা চায়...একান্ত নির্জনতায়। 

ওদের প্রত্যেকের একটা নিজস্ব স্বপ্ন ছিল।
 প্রত্যেকেই ঘর বাঁধতে চেয়েছিল।
 মালাও গেঁথেছিল... নিজেদের মত করে।
জোছনার আলো মেখে  তারাও অন্ধ ঘরে প্রদীপ জ্বেলেছিল।

অজানা অচেনা এক আকর্ষণে
তারাও নিরবচ্ছিন্ন থাকার শপথ নিয়েছিল।
ভিন্ন ভিন্ন কাহিনী নিয়ে তারা যে যার মত করে পুড়ছে।

ওরা আজও আদর পেতে চায়।
আমি ওদের জন্য পবিত্র প্রার্থনা জানাই।


আপোষ 



সেই একই ভুল করতে বসেছিলাম।

জীবনের সাথে আপোষ করতে করতে
কখন যে আমার আমিকে খুন করে ফেলেছি!

মৃত শিকড়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ঘুন ধরা মানব শরীর!!

চাপানো সিদ্ধান্তের ওপর চেপে বসে মৃত গ্রহে বসবাস।

আমি ধুলোর মতো চুপচাপ এঁটে বসে থাকি 

ব্যাস্ত জীবনের কোলাহল, সঙ্গম,ঝলসানো মত্ততা, বিষাদ সবই লক্ষ্য করি।

বিষয়গুলো প্রত্যেকেই আমায় শিক্ষা দেয় আরো আরো পরিণত করে তোলে... কিছুটা হলেও।

আমি আপোষ করেছিলাম।

আড়ালে দাঁড়িয়ে আমার অন্ধকার কে নিজেই ঢেকেছি।

সাপের ফণার মত উঁচিয়ে থাকা মুখ আর তীরের মতো কথারা আমায় হিমঘরে ঠেলে নিয়ে গিয়ে ফেলেছিল।

আমি প্রেয়সীর আরাধনায় ঈশ্বর খুঁজতে গিয়ে 
কখন যে একটা আস্ত জানালার ধার খুঁজে নিয়েছি...
নিজেই বুঝতে পারিনি!!


মধুর ফাল্গুন


যেন ছবির মত প্রকৃতির পথ পরিক্রমা 
পূর্ণতার ছবি এঁকেছে প্রয়োজনীয় আরাধনা

বসন্ত ধুয়ে শুকিয়ে খোলশ ছাড়িয়ে নতুন করায়

কচি কচি পাতায় প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পায়...
মেতে ওঠে সুন্দরের পূজায় 

কত সাধ কত আরাধনায়...বসন্তের অবসর... 
পলাশের রক্তিম আগুনে... 
মিলনযঞ্জ উদযাপন

শেষবেলায় স্বপ্নের ভেলায় চেপে
রক্তসন্ধ্যায় ভেসে যায় স্বপ্নসুখ
মধুর ফাল্গুন বারে বারে ফিরে আসুক 




 হঠাৎ  বড় ক্ষণস্থায়ী হয়



হঠাৎ মানুষ হয়ে উঠতে চেয়েছিলাম। 
এই বৈচিত্র্যময় জগৎ... 
এক খোলশ থেকে বেরিয়ে আর এক খোলশ ধারণ! 
পাতার পর পাতা শুধু ভিন্ন ভিন্ন ব্যাক্তিত্বের প্রকাশ। 
আবেগ মিশ্রিত ভাবনা নিয়েই একের পর এক শব্দের খেলায় মেতে ওঠা... 

এসব থেকে ছুটি নিয়ে একটু বাস্তবিক হতে চেয়েছিলাম। 
কত নদী পেরিয়ে কত পথ হেঁটে, 

হঠাৎই তোমার খোঁজ পেলাম সেদিন। 
এক অজানা দ্বীপে তোমার হাত ধরে পাড়ি দিলাম। 

কিছু সময় তোমায় দিলাম, 
কিছু সময় তোমার থেকে চেয়ে নিলাম। 
বিষয়টা বেশ আন্তরিক। 
দেয়াল ছাতহীন একটা পৃথিবী। 

হঠাৎ বড় ক্ষণস্থায়ী হয়...




তোমায় হারতেই হবে করোনা



আজ আমার একটু ও ভয় করছে না... একা থাকার স্বার্থকতা
রাস্তা জুড়ে নৈশঃব্দের মিছিল হতাশ এতোটুকুও না... 
তোমায় হারতেই হবে করোনা

স্মৃতির গভীরে মিশেথাকা দীর্ঘশ্বাস অপার শূন্যতাই
কত কত অনুভূতি পড়ে থাকে অতলেই
তবু শেষ হাসি হেসে বলে যেতে চাই... 
না... কোন দুঃখ নেই... 

প্রেম আমার যত্নশীল ভেঙে সব নিয়মের মিছিল

আমার মিষ্টি সুখের অভিসারী বন্দর 
নিমেশেই দুলিয়ে দেয় মনের ভিতর

থাকনা পড়ে অংকের হিসেব নিকেশ... 
এক ঘেয়েমি করোনার কথা ভেবে ভেবেই 
জীবন অর্ধেক শেষ!

এমন ভাবে ধনে প্রাণে শেষ হতে কেই বা চায়
হে ঈশ্বর... এখন কি শুধু খারিজ ই হবার সময়!


না...আজ আমার আর একটু ও ভয় করছে না 
তোমায় হারতেই হবে করোনা।




অপ্রকাশিত গল্প ও পদ্য পাঠান  
অভিমত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com      

1 টি মন্তব্য: