বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০২০

মেমসাহেব" খ্যাত ঔপন্যাসিক এবং সাংবাদিক বাঙলা সাহিত্যের দিকপাল নিমাই ভট্টাচার্যের জীবনাবসান

 
"মেমসাহেব" খ্যাত ঔপন্যাসিক এবং সাংবাদিক বাঙলা সাহিত্যের দিকপাল নিমাই ভট্টাচার্যের জীবনাবসান  
 শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে-  ড.শঙ্কর তালুকদার 






তৎকালীন যশোর জেলার মাগুয়া মহাকুমা(বর্তমান জেলা)   শালিখা থানার অন্তর্গত শরশুনা গ্রামে নিমাই ভট্টাচার্য ১০ই  এপ্রিল ১৯৩১ জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর ডাকনাম ছিল- বাচ্চু।তিন বছর বয়সে তিনি মাতৃহীন হন। ভীষণ কষ্টে পিতার সীমিত আয়ের মধ্যে ভর্তি হন কলকাতা কর্পোরেশনের ফ্রি স্কুলে।তাঁর পিতার নাম সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ।

কলকাতা রিপন কলেজে কিছুদিন পড়ালেখা করার পর যশোরে ফিরে আসেন। ১৯৪১ সালে তিনি যশোরের সম্মিলনী ইন্সটিটউশনে চতুর্থ শ্রেনীতে ভর্তি হন এবং নবম শ্রেনী পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা করেন। নিমাই ভট্টাচার্যের পিতা সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য নিজেও যশোরের সম্মিলনী ইন্সটিটিউশনের ছাত্র এবং পরবর্তীতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন কলকাতা গমনের পূর্ব মুহূর্ত  পর্যন্ত। পরবর্তীতে দেশ বিভাগের পর নিমাই ভট্টাচার্য তাঁর পিতার সাথে পুনরায় কলতায় যান এবং সেখানে আবারো রিপন স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং সেখান থেকেই তিনি আই.এ পাস করেন এবং স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫২ সালে বি.এ পাস করেন।



    
লেখক বাংলাদেশের বগুড়া জেলার কালীতলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর কন্যা দীপ্তি ভট্টাচার্যকে বিবাহ করেন। 
দেশভাগের পর তিনি পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ী হন। অতঃপর তিনি কলকাতার টালিগঞ্জের শাশমল রোডের বাসায় বসবাস করতেন।

 সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তার কর্মজীবন শুরু হয়।এবং তিনি দীর্ঘ পঁচিশ বছর দিল্লিতে ভারতীয় পত্রিকার রাজনৈতিক-কূটনৈতিক-সংসদীয় সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ভারতের অনেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিদেশ সফর করে নিউজ কাভার করেছেন। 




১৯৬৩ সালে তার লেখা একটি উপন্যাস কলকাতার সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং তা ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। এরপর, তার চারটি উপন্যাস একই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

নিমাই ভট্টাচার্যের  প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৫০ -এর অধিক। বাংলা সাহিত্যে "মেমসাহেব "উপন্যাসটি তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা। 



মেমসাহেব গ্রন্থ অবলম্বনে ১৯৭২ সালে একই নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার এবং অপর্ণা সেন। তার লেখা উল্লেখযোগ্য বইগুলো হল:—

মেমসাহেব, মিনিবাস, মাতাল, ইনকিলাব, ব্যাচেলার,
ইমনকল্যাণ, ডিফেন্স কলোনী, প্রবেশ নিষেধ, কেরানী, ভায়া ডালহৌসী, হকার্স কর্নার , রাজধানী এক্সপ্রেস,  নিমন্ত্রণ, নাচনী, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, ডার্লিং, ম্যাডাম, ওয়ান আপ-টু-ডাউন, গোধুলিয়া,
প্রিয়বরেষু,আকাশ ভরা সূর্য তারা, মোগল সরাই জংশন, ইওর অনার, ককটেল, অনুরোধের আসর, যৌবন নিকুঞ্জে শেষ পরানির কড়ি হরেকৃষ্ণ জুয়েলার্স, পথের শেষে প্রভৃতি।  



 ২৫শে  জুন ২০২০ বিকেল ৫টায়  আমাদের  সবার প্রিয়,  এই সাহিত্যিক তাঁর ৮৯ বছরের বৈচিত্রময় জীবন ছেড়ে ইহলোক ত্যাগ করে চির শান্তির দেশে চলে গেলেন। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।





প্রিয় লেখক ও সাংবাদিক- উপন্যাসিক কালজয়ী মহান আত্মা নিমাই ভট্টাচার্যের প্রতি আন্তরিক স্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই !
















1 টি মন্তব্য: