আলো
পায়ে পায়ে এগিয়ে চলেছে শ্রান্ত, ক্লান্ত জীবন। ধুলো মেখে, ভাইরাস মেখে। কাঠফাটা রোদে পুড়ে যাচ্ছে সীমাহীন পথ, দিগন্তবিস্তৃত মাঠঘাট। গন্তব্যে তাকে পৌঁছতেই হবে প্রাণ বাজি রেখে। পরের স্টেশনে দীর্ঘ অপেক্ষায় আছে পরিবার। শুশ্রূষা–প্রলেপ। ভালোবাসার অপার আলোয় ভরা সংসার। যে অনিবার আলো নিজের হাতে জ্বালিয়ে রেখে এসেছে পরিযায়ী এই জীবন, তার পর দিন মাস বছর চলে গেছে কত, ভালোবাসা জড়িয়ে আছে সে আলোঘরে।
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
সুর
দুটো জীবনকে একটাই সুরে বাজাবে বলে হাতে হাত তুলে নিয়েছিল দুজনে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কেটেছে অনেক সময়। একটাই পতাকা ধরা ছিল দুজনের হাতে, পরম মমতায় যা বহন করে কেটে গেছে কত দিন, বছর। সেই সুর তাল লয় আজ কেটে গেছে। বেসুরো ছন্দপতনের মলিন তারে ঝুলছে সুপর্ণা আর হিরণের ভালোবাসার পতাকা। দুজনের হাতই তাকে ছেড়ে সরে গেছে দূরে কোথাও। নিজেদের সুরে বেজে ওঠা আর হয়ে ওঠেনি তাদের। পোকায় কাটা দিনগুলো গড়াগড়ি খাচ্ছে ধূসর দেরাজে।
শব্দ
চেয়ারে–টেবিলে আজকাল অনর্থ সময় দাঁত দেখিয়ে হাসে। সুজয়ের আজ প্রকৃত দুঃসময়। একটা শব্দও সে ইদানীং লিখে উঠতে পারেনি। শব্দের কাছে নতজানু হয়ে মাথা খুঁড়েও নতুন লেখা তার হাত ধরেনি। শব্দের গায়ে ভাইরাসের আঁচড়, দগদগে ঘায়ের মতো। সুজয় অসহায় চোখে দেখে যায় টেবিলের চারপাশে ছড়িয়ে আছে কালো অন্ধকার। তারা হা হা করে কাঙ্ক্ষিত শব্দগুলোর গায়ে থাবা বসাচ্ছে, গিলে নিচ্ছে টপাটপ।
অলংকরণ-বিমল মণ্ডল
ট্রেন
রাতের ১০টা ১২–র লোকালের নরম স্মৃতিগুলো প্রণবেন্দুকে জাপটে ধরেছে এই শব্দহীন রাতে। ট্রেনের চাকা আজ আর গড়ায় না। গতিরুদ্ধ কামরাগুলো কে জানে কোথায় অবসরে আছে। সুপ্রিয়া কীভাবে রাতের ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরে জানা হয়নি তার। ওর চাকরিটা আছে তো! ফোনটা কেন যে ‘সুইচ্ড অফ’ বলে গুমরে কেঁদে ওঠে বুঝতে পারে না প্রণবেন্দু। রাতের লোকাল ট্রেনে দুজনের একসঙ্গে ঘরে ফেরা ইস্পাতের ওই মসৃণ পাতের ওপর পায়ের চাকা ফেলে খেলে তা কি আর ফিরবে না! ডেলি প্যাসেঞ্জারদের সকলেরই রোজনামচা কি পাল্টে গেল! পাল্টে গেল তাদের ফোন নম্বরগুলোও! স্মৃতির দরোজা খুলে জেগে থাকে প্রণবেন্দু। মাথার ভিতরে ঝমঝম ঝমাঝম রেলগাড়ির শব্দ আসে আর যায়। বন্ধু আসে না ফিরে।
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
মিস্ড কল
একটা ম্যাসেজ আসার অপেক্ষায় কত দিন ঘণ্টা কেটে যায় ঈশানীর। হ্যান্ডসেটটা কাছছাড়া করে না সে এক মুহূর্তের জন্যেও। সে–ই তো এনে দেবে গভীর গোপন সে বার্তা। কবে আসবে বিকেলের রোদ মাখা সে ম্যাসেজ! হঠাৎ ফোনের রিংটোনে বেজে ওঠে ‘টাপুর টুপুর বৃষ্টি নূপুর জলছবিরই গায়...’ বাইরে মেঘলা দুপুরের তুমুল ধারাপাতের আবহ সঙ্গীতের সঙ্গে গান গাইছে যেন রিংটোন সুর মিলিয়ে। ছুটে যায় সে ড্রেসিং টেবিলের আলোময় ইশারার দিকে। স্তব্ধ হয়ে যায় মিনিট খানেকের রঙিন সুরের জলত আররঙ্গ। মিস্ড কল। দীপনের ম্যাসেজ কি তবে আসবে না কোনও দিনও! বুকের কাছটিতে বড় আদরে ধরা থাকে শব্দহীন হ্যান্ডসেটটি।
যেকোনো বিভাগে অপ্রকাশিত লেখা পাঠান
মতামত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন