পারমিতা ব্যানার্জি
পিলসুজ
পিলসুজের ওপর বসানো
এক জাজ্বল্যমান প্রদীপ!
সুন্দর!
পিলসুজও সুন্দর, আপন মনে!
হয়ত সুন্দরতর!
কখনো আলো পড়ে না তাতে।
'প্রদীপের জন্য কত কবিতা!'
'আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখবে?'
পিলসুজ আবদার করল কলমের কাছে।
কাঁপতে কাঁপতে আলো নিভু নিভু হয়ে এলো প্রদীপের!
কলমটা লিখতে শুরু করেই থেমে গেল!
আর চলার শক্তি নেই তার।
অন্ধকার!
কেউ বলল, উস্কে দাও সলতে।
কেউ বলল, তেল দাও প্রদীপে।
কলম কিন্তু আর চলল না।
একবার থেমে গেলে চলা যে মুশকিল!
নিভতে নিভতে হঠাৎই
দপ্ করে জ্বলে উঠলো আলো!
এমনই হয় যাবার আগে...
পিলসুজ কিন্তু হাসলো ;
গায়ে একটুও আলো নেই তার!
পড়ে রইল –প্রদীপের নীচে অন্ধকার ;
যেমন থাকে।
চিরন্তন!
সৌন্দর্য নিয়ে
অন্ধকারে পড়ে থাকে পিলসুজ –
একা!
শূন্য যখন সঙ্গী
মাঝে মাঝে সজনেডাঁটার সঙ্গে
রজনীগন্ধার স্টিককে গুলিয়ে ফেলি!
এটা কি জটিল সংসারের লক্ষণ?
আমি উদাসীন...
আমার স্বপ্নের বাড়ির উঠোনে
বেনোজল ঢুকে যায় যখন...
আমি ছাদে উঠে আকাশ দেখি!
কোথা থেকে একটা কালো মেঘ
আমার মুখোমুখি দাঁড়ায়!
চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়...
শূন্যতাই যেন আমার ভালবাসা!
আমি তাই নীল খুঁজি আকাশে!
কখন অন্ধকার নামবে এই আশায়
প্যাঁচাটা ওঁৎ পেতেছিল,
চিলেকোঠার ঘুলঘুলিতে।
কালো মেঘ দেখে
খুকখুক করে কেশে উঠল...
আমি শুনেও না শোনার ভান করি!
আমায় যদি কেউ খোঁজো
আমায় যদি তোমরা কেউ খোঁজো –
জানবে –দিগন্তের শ্যামলিমায়,
আমি হারিয়ে গেছি।
রক্তমাংস, কাঁটা চামচ ;
সুবিচার - অবিচার ;
পাশাপাশি বিশ্বাস!
ন্যায়দণ্ডের মাপকাঠিটা বড় বেশি নড়বড়ে!
আমায় যদি তোমরা কেউ খোঁজো —
জানবে – আকাশের নীলে,
আমি হারিয়ে গেছি।
মহাশূন্য, আশ্বাস, মোহ;
সৌখিন সাজানো প্রলেপ!
পাশাপাশি প্রেম!
দৈহিক কিংবা মানসিক – ভাববার আছে।
আমায় যদি তোমরা কেউ খোঁজো–
জানবে–জমাট বাঁধা বদ্ধ মাটিতে
আমি হারিয়ে গেছি!
মূক বধির, সুদৃশ্য মডেল;
কাঁচের শোকেসের উপর আলতো পরশ!
পাশাপাশি ঘৃণা বা আবেশ।
কীটগুলোতে অদৃশ্য পদদলনে গর্বের হাসি!
আমায় যদি তোমরা কেউ খোঁজো...
সিন্দুকে অভিমান
তোমাকে একটা কবিতা দিয়েছিলাম।
তুমি চাওনি –
তবুও দিয়েছিলাম,
অনেক অভিমান মুড়ে!
তুমি চোখ বুজে বসে –
হয়ত খুঁজছিলে কিছু!
তুমিও কি আমার মত ভালবাসা খোঁজো?
দিনান্তে মেলাও হিসেব?
আমি ঝুড়ি ঢাকা দিয়ে ছায়া ধরি।
খুশি থাকি রাংতায় মোড়া
বিবর্ণ অবজ্ঞায়!
ফিরে আসি তবু...
তোমার মনের সিন্দুকে গচ্ছিত থাকুক
আমার এলোমেলো কিছু অক্ষর...
যদি রাখতে চাও!
উদাসী শ্রাবণে
একবুক মেঘ নিয়ে আজ
থমকে আছে আকাশ।
মাসটা শ্রাবণ...
তবু অঝোর ধারা হারিয়ে
নিঃশব্দ রিমঝিম!
ইলেকট্রিকের তারে ভিজছে কাকটা।
ল্যাম্পপোস্টের মাথায়,
ওর পুরোনো বাসার দিকে তাকিয়ে উদাসী...
ভাঙা বাসায় ওর অতীত!
একটু দূরে গাছের আড়ালে,
কোকিলটা ডেকে উঠলো ;
অথবা ডুকরে কেঁদে...
ও কি চিনতে পারলো,
ওর পালিকা মাকে?
কাকটা ভিজছে এক নাগাড়ে।
ভাঙা বাসায় ভিজছে ওর অতীত!
বারিধারায় বুঝি, মুছে গেল যত ভুল!
লেখা পাঠান
মতামত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com
সুন্দর উদ্যোগ। শুভেচ্ছা রইল। সব কটি কবিতাই গভীরতা সমৃদ্ধ।
উত্তরমুছুনপড়লাম। ভালো লাগলো। আবার পড়বো।
উত্তরমুছুন