সোমবার, ২৫ মে, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ



                         সুমন দিন্ডা





  জলের আলপনা

কোনো গান শোনায়নি মাঝরাত অবসর
কবিতাও বলেনি কোনো এলোচুল বারান্দা 
তবু হাওয়ারা বারবার ছুঁয়ে গেছে তোমার চোখ
লজ্জা নামিয়ে তুমি মেখে নিয়েছো অঙ্গীকার
মুখের ওপর ঝেঁপে আসা চুল সরিয়ে
দেখেছো কীভাবে সরে যাচ্ছে এক একটা গাছ
বুক থেকে ঝরে পড়া অনুরাগ ঘন হওয়ার আগেই 
আমলকী সন্ধ্যা খসে পড়েছে বৃষ্টির ঝোঁকে 
যেটুকু জীবন ভার্চুয়াল হতে হতে বেঁচে আছে 
তার সবটুকু স্রোত বিকেল হওয়ার আগেই 
ফিরে গেছে মেঘজমিনের দূর মিলনে
শুধু মুখের দিকে চেয়ে কী এক পাগলামিতে
পথটাও চলতে শুরু করে তোমার দিকে
না সামলানোর শেষ সীমানাও আদুরে অন্ধকারে 
ঠিক খুঁজে নেয় ঊষর মরুর বুকে জলের আলপনা



  পাথর গলানোর বার্তা

পাথরের ওপর শিকড় চালিয়েও গাছ হয়
এলোমেলো বাতাস তাকে মাটি ছোঁয়াতে পারেনা
বাঁচার অদম্য ইচ্ছায় তারা জয় করে দুর্যোগ। 
উপকূলও এখন পাহাড়ি জীবনে মিশে গেছে 
তবে মাটি নরম বলে গাছগুলো সহ্য করতে পারেনি
ঘরের চালের মতো হয়তো উড়ে যায়নি দূরে 
কেবল মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে মৃত্যুর আশা গুনছে। 
মানুষের পরমায়ু ফুরোয়নি বলে 
এক একটা প্রবল প্রবাহ সামলে নেমে পড়ছে 
নিজেকে নতুন করে সারিয়ে তুলতে। 
এই সংগ্রামে হার মেনেছে বুলবুল কিংবা আমফান,
যতই ধ্বংস হোক বুকের পাঁজর 
যতই অন্ধকার ডুবিয়ে দিক চোখমুখ 
কেউ পাশে থাকুক বা না থাকুক 
একাই গড়ে তুলছে নতুন মৌচাক।
শুধু হৃদয় এখনো পাথর হয়নি বলে
বন্ধ নেটওয়ার্ক পেরিয়ে বার্তা পাঠায় আকাশে 
পাহাড় গলিয়ে নদীকে আবার ডেকে আনবে উপকূলে। 



  মেঘজন্মের নেপথ্যে

মার্গারেট, তুমি কি জানো 
ঝড় এলে মানুষ কেমন মেঘ হয়ে যায় ?

জল লুকিয়ে থাকে গাছের চোখে 
ঘাস শোনে কেবল মাটির দীর্ঘশ্বাস, 
পাতাগুলো উড়তে উড়তে অন্য সীমান্তে
কান্ড ঝুঁকতে ঝুঁকতে মৃত্যুর ঠিক আগে
এই বুঝি ফেটে পড়লো শুকনো সব অভিমান।

এত তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়না নটরাজ,
আরো আরো ধ্বংস না দেখলে
কীভাবে পূর্ণ হবে তার জমানো অভিলাষ ? 
নীল গুলে ফেলা চোখে সে কেবল দ্যাখে
বিস্ফারিত হৃদয় থেকে কতটা কষ্ট বের করা যায়। 

মানুষ কেবলই পোড়ে, কখনও নিজে 
কখনও বা প্রকৃতি তাকে আগুনে ফ্যালে।
পুড়লে নাকি খাঁটি হওয়া যায় শাস্ত্র বলে,
তবে কতটা পুড়লে পরিবার শুকিয়ে ওঠে 
কোনো চোখ তাদের সেকথা শোনায়নি। 

বুঝেছো মার্গারেট, 
সেজন্যই তো মানুষ মেঘ হয়ে যায় ঝড় এলে।




 সানাইয়ের রূপকথা

বাতাস ভাসিয়ে আনে পোড়া কাঠ
খুবলে খাওয়া পচতে থাকা ডেডবডি
শুধু বাতাস নয়, জোয়ারও কিছুটা মস্তানি করে।
পাড়ের ঘরগুলো এসবের সাক্ষী, 
তবু কুঁড়েঘরের মাথায় মাইক টাঙানো হয়
এ বাড়ির মেয়ে যৌবন পাওয়ার আগে
ফুল চন্দনের সাজে পানপাতায় মুখ ঢাকে।
পরিপূর্ণ বাঘের হাতে তুলে দেওয়া হয়
সিঁদুর নামের একটা ধারালো নখ
যাকে রক্ষা করার চেষ্টায় ক্ষতবিক্ষত বুক
আর রক্তাক্ত যোনি ঢেকে থাকে রান্নাঘরে।
মাঝে মাঝে পানের বরোজ কিংবা উচ্ছের ক্ষেত
তাদের রক্ত আর ঘাম শুষে নিয়ে সবুজ হয়।
তারপর মদ্যপ কিংবা লম্পট চরিত্রের হাতে
প্রহৃত হতে থাকে তাদের সুখের রাত।
কারও গায়ে আগুন জ্বলে, কেউ ঝোলে গাছে,
কেউ আবার নদীর জলে মৃত্যুকে ঝাঁপিয়ে তোলে।
আর যারা বেঁচে থাকে আহত আরশোলা হয়ে
তাদের চোখের জলে ভেজা ঘাস শোনে
বোবা সানাইয়ের রূপকথা। 




 রোদের কোনো অভিনয় নেই 

গাছপালাগুলো মুষড়ে পড়ে আছে কারো অপেক্ষায়
গলিত স্থবির ব্যাঙ বোবা কান্নায় আছে চোখ বুজে
কিছু একটা ঘটবে বলে মাটিও লাল হয়ে দিন জাগছে 
শুধু আকাশের দিকে তাকানোর অবকাশ নেই। 
মেঘের ছায়ায় তেমন অমৃত ছিলো না কখনো
কংক্রিট পথ কেমন করে পুড়ছে সবার সামনে
কারোর কিছু করার কি ছিলনা, কিছু বলারও?
হৃদয় আর সূর্য সবসময়ই সমার্থক 
একটা আর একটাকে সহ্য করতে পারে কিনা জানিনা
তবে কারোর ধ্বংস আমি কখনো চাইনি
জানি ওদের ছাড়া আমি কতখানি অসহায়। 
কখনো কখনো বাতাসে ভেসে আসে জলীয় বাষ্প 
আড়ালে পাঠায় রোদের কিরণ, অন্ধকার নেমে আসে,
আর হৃদয় তো ভাঙার জন্যই তৈরি হয়েছে
কতবার কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে 
নগ্ন পায়ে হেঁটেছি তার ওপর
রক্ত কিংবা চোখের জল কোনোটাই দৃশ্যমান নয়।

রোদের মতো পরিষ্কার যে ধারা ভিজিয়েছে বারবার 
তাতে কেবল বয়ে চলা আছে, কোনো অভিনয় নেই।





লেখা পাঠান 
অভিমত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন