সোমবার, ২৫ মে, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ



                            দেবপ্রসাদ জানা




কেনজবাব নাই 

তুমি কি কখনো ভেবে দেখেছ
এই শহরে সাতসকালে যারা
তোমাদের ফেলা ময়লা গুলো
অনায়াসে সাফ করে দেয় - ভেবে দেখেছ কেন?ভেবে দেখেছ  তোমাদের কি
উপকারটাই না করে। ভেবে দেখনি তো?তুমি কখনো দেখেছ যারা পাবলিক টয়লেটটা-ফিনাইল আর অ্যাসিড সহযোগে,
তোমার সিস্ দিতে দিতে ফেলে আসা অমুল্য রতন সাফ্ করে দিতে-দেখনি তো?এরা হয় ঝুপড়ি তে,নয়তো রেললাইনের ধারে,হয়তো বা ফুটপাতেরই বুকে ড়ে থাকে। কেন ? মায়া,বড় মায়া ওদের।
ভেবে দেখতো ওরা -এখানে কী পেলশহর পরিষ্কার করে তোমাদের চলার রাস্তাটা চকচকে করে দেয়। -- কেন?হয়তো ভেবেছিল,পাথুরে এই শহর তাদের -কিন্তু তা. কেই আমরা হরিজন গুরুজন করে ঝুপড়ির বস্তিতে
 ফুটপাতে রেখে দিয়েছি -কেনজবাব নাই... 




তারা কই

এক আকাশ মেঘ নিয়ে যাচ্ছ কোথায় বাতাস - সব ধুলিকনা ভরা দূষিত  বিষাক্ত -ওদের ছাড়োওরা ভালো নয়তুমি এমন ছিলে না?
তুমি তো সভ্য ভদ্র ফুলের সুবাস নিয়ে ঘরে ঘরে বিলি করতে
গোলাপের গন্ধ, জুঁই,   বেল,রজনীগন্ধার গন্ধতারা কই?তাদের কোথায় রেখে এলে?নাকি তাদের সঙ্গে মেলামেশা  বন্ধ তোমার।
 বুঝেছি,যেদিন থেকে অসৎ সঙ্গ নিয়েছ -সেদিন থেকে তারা তোমার সঙ্গ ছেড়েছে, কি ঠিকতো?তা কোথায় চলেছো হন্তদন্ত হয়েসাগর পাড়ে না পাহাড়ের গায়?যেও না  সঙ্গ ছাড়ো।
সভ্য হও ভালো দের সঙ্গে মেলামেসা করো...
 যাক -এক বালতি জল আনো হাত পা ধোও-আমার ঘরে এসো যদি ভালো হতে চাও আজই... 



খুঁজতে হবে জীবন

আবার খুঁজতে হবে খুঁজতে হবে চেনা লোক গুলো কে -খুঁজতে হবে জীবনকে।
গড়ের মাঠে গাছের তলায়-কার্জন পার্কের পাথুরে বেঞ্চের ওপরে-বাগবাজারে নিবেদিতায়
বেথুন স্কুলের সামনে-হেদুয়ায়
খুঁজতে হবে জীবনকে কফিহাউসের টেবিলে-ভেঙ্গে যাওয়া চায়ের কাপে-স্টার থিয়েটারের কাউন্টারে -ভিক্টোরিয়ার সবুজ ঘাষে রোদ্দুরে-খুঁজতে হবে জীবন -আয়লা ঝড়ে-তিতলি,বায়ু,ফনি,কিংবা বুলবুলের পিঠে ভাসতে ভাসতে একদিন -ফুলের মতো রঙিন হয়ে -রঙ তুলিতে ক্যানভাস। পূর্বাভাস -হ্যাঁ গতি রুদ্ধ হতে পারে জীবন খোঁজার কাজে-তবু চলতে থাকি -নদীর মতো বয়ে যেতে থাকি
কিসের অপেক্ষায়?জানালার কার্ণিসে জমে যাওয়া শেওলা বৃষ্টি ভিজে 
সবুজ হয়েছে আজো-প্রচন্ড ঝড়ে নিশ্চহ্ন হতে পারে
গোটা পৃথিবী -তবু 




অপমৃত্য

মৃত্যুভালোবাসার? মরবেই তো। এ তো একটা স্বাভাবিক মৃত্যু।
এতে এত দুঃখ পাওয়ার কি আছে?বছর  ত্রিশের তাজা যুবতী গৃহবধূর লাশ,
আগুনে ঝলসানো , কালো কয়লার মত ।
মর্গে পড়ে পচাগলা  একটা মৃতদেহ মাত্র।
কী চেয়েছিল সে ?
একটা ভালোবাসার সংসার  
অন্যায় চাওয়া? বেশি চাওয়া? অনভিপ্রেত চাওয়াঠিক বুঝে উঠতে পারেনি, গ্যাসের খোলা নবটা
বছর ত্রিশের তরতাজা তরুণী।
আর স্বামী  ছিঃ
রাতের অন্ধকারে শরীরটাই চেনে ।
ব্যস !


সমান সমান

কবি বলতো কার আকাশে সূর্য চব্বিশ ঘন্টা থাকে?তোমার আমার সবার কি? কার জীবনে সুখ প্রতিদিন?কার ঘরেতে আলো নিশিদিন?চাঁদ তাকেও সূর্য পুরো রশ্মি দেয় না,একদিকে দেয় অন্যদিকে আঁধার -পৃথিবীতে বার ঘন্টা এদিক বার ঘন্টা ওদিক -ঠিকতো
বাকি গ্রহ গুলো?এরাতো সব সূর্যের নিজের লোকতবে?তোমার জীবনে যতটা আলো ঠিক ততটা কালো -যতটা দুঃখ ততটা সুখ -তবে কেন মুসড়ে পড়ো অল্পতে?সুখ দুঃখ আলো অন্ধকার সব সমান সমান।
দিনের পরে রাত,রাতের পরে দিন এইতো প্রতিদিন,চিরদিন।
কখনো ভালো কখনো মন্দ,যা ভালো লাগে কর পছন্দ-কখনো সুখ কখনো দুঃখযা কষ্ট তাই পাবে আনন্দ -যার আকাশে চব্বিশ ঘন্টা আলো তার নাম সূর্য সে যে আগুন -পুড়িয়ে মারে কাছে গেলে।
কবি তুমি আগুন হও 
জ্বালিয়ে নোংরা আকাশ, দুষ্ট বাতাস,পাপ তাপহিংসা বিভেদ,সব পুড়িয়ে দাও ।


জোছনা কোথায়


জোছনা কোথায় তুমি?প্রত্যন্ত গ্রামে না ধুলো মাখা শহরে -পাহাড়ের চুড়ায় না মেঘের আড়ালে?স্বপ্নের মতো আকাশের গায়।
পাহাড়ের গায়ে উচ্ছাসিত ঝর্না ধারায় জলস্রোতে?নাকি সমুদ্রে সাঁতার কাটছো?নাকি সুন্দর বনে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছো।
ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন নিয়ে খেলা করছ।
দেখো ওই নিষ্পাপ চরিত্রবান পর্বতমালা কে জড়িয়ে ধরে এত আদর কোরো না-কোনো অন্য পুরুষের বুকে মাথা রেখে নিদ্রা যেওনা -জোছনা।
তুমি সকলকে এত আদর করো-
সবুজ মাঠ,গঞ্জের হাট,গহিন বনে
অট্টালিকায়-পাখিরালয়ে পাখির গায়-ফাগুনে পলাশের পায়-শান্তিনিকতনে -কোথায় তুমি?পারলাম না দৌড়তে আমি তোমার আদর খেতে -রঙিন বসন্তে তোমার ছোঁয়া পেতে।
কচি পাতার ডালে ডালে ঘুটঘুটে কালো অন্ধকারে
কখনও পারিনি তোমার আদর খেতে।
হারিয়ে যাই আমি কবিতার সাজানো মরীচিকায়...



লেখা পাঠান
bimalmondalpoet@gmail. com   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন