রামমোহন রায়
জন্ম-১৭৭২ খ্রীস্টাব্দে২২শে মে
মৃত্যু- ১৮৩৩ খ্রীস্টাব্দে ২৭শে সেপ্টেম্বর
ধর্মের মূল সত্যঃপ্রসঙ্গ রামমোহন রায়
বিমল মণ্ডল
বিমল মণ্ডল
রাজা রামমোহন রায় জন্মেছিলেন এক সম্ভ্রান্ত রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ পরিবারে। কিন্তু পরে হিন্দু ধর্মীয় প্রথা এবং সামাজিক ব্যবস্থায় সংস্কার সাধনই হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য। তাঁকে খুবই অল্প বয়স অর্থাৎ মাত্র দশ কিংবা দশের কম বয়সে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয় ভারতের পূর্বাঞ্চলে পাটনা শহরে। সেখানে আরবী ও ফারসি ভাষা পরে সংস্কৃত ভাষার শিক্ষা আরও পোক্ত করতে এবং হিন্দু ধর্মশিক্ষা করতে তিনি যান বেনারসে।বহু ভাষা অধিকারী ছিলেন তিনি।
রামমোহন রায় ২৪ বছর বয়সে ইংরেজি ভাষা শেখা শুরু করলেও তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে খুবই সুদক্ষভাবে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারে করতে পেরেছিলেন। যুগান্তর পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদক কৃষ্ণ ধর তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন - ''তিনি ছিলেন বাংলা গদ্যেরও জনক। বাংলা গদ্য তখন সবে শুরু হয়েছে। বাংলা গদ্যের বহু গ্রন্থ রচনা করেছিলেন তিনি। মূলত আমাদের শাস্ত্রগুলো তিনি অনুবাদ করেছিলেন। তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন দেশাচার বলে যেগুলো চালানো হয়, সেগুলো আমাদের শাস্ত্রে কোথাও লেখা নেই।"
১৮০৪ সালে একেশ্বরবাদ নিয়ে আরবী ও ফারসি ভাষায় তাঁর প্রথম বইটি প্রকাশিত হয় "তুহফাত-উল-মুয়াহহিদিন "নামে। ফারসি ভাষায় লেখা এই বইয়ের মুখবন্ধ ছিল আরবীতে। তিনি আরবী ও ফারসি ভাষা শিক্ষাকালে একেশ্বরবাদের দিকে ঝুঁকেছিলেন এবং হিন্দু ধর্মের পৌত্তলিকতা নিয়ে তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে। তিনি সুফি দর্শনের ব্যাপারেও আগ্রহী হয়ে ওঠেন।এছাড়া হিন্দু ধর্ম, খৃষ্ট ধর্ম এবং ইসলাম এই তিন ধর্মেরই মূল সত্যকে অনুধাবন করার প্রয়াস নিয়েছিলেন।
এর ফলে হিন্দু ধর্মের আচার ও পৌত্তলিকতা নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে বাবা মার সঙ্গে তাঁর তীব্র বিরোধ বাঁধে এবং পিতা তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র করে দেন। কলকাতায় তিনি পাকাপাকিভাবে চলে আসেন ১৮১৫ সালে। শুরু হয় সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই। হিন্দু ধর্মকে সংস্কার করতে তিনি আজীবন লড়াই করেছেন।
প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের মত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সহযোগিতায় রামমোহন রায় ১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাহ্মসমাজ, যা এক সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন এবং বাংলার পুনর্জাগরণের পথ-প্রদর্শক হিসাবে কাজ করেছিল।তাঁর মধ্যে যুক্তিবাদ ও সার্বজনীনতা-এই দুটির সঙ্গে মিলিত হয়েছিল তাঁর সহনশীলতা এবং সম্বন্বয়ের ক্ষমতা। তার ফলে তিনি অন্যতম একজন আধুনিক মানুষ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।
রামমোহন রায় ছিলেন ভারতে সংবাদপত্রের একজন প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ব্রাহ্মনিকাল ম্যাগাজিন নামে তাঁর প্রথম দ্বিভাষিক পত্রিকা প্রকাশ করেন ১৮২১ সালে। পত্রিকার বাংলা নাম ছিল ব্রাহ্মণ সেবধি: ব্রাহ্মণ ও মিশনারি সংবাদ। দ্বিভাষিক এই পত্রিকার মাত্র তিনটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।
১৮২১ সালে সংবাদ কৌমুদী নামেও একটি পত্রিকা বের করেন তিনি। ঠিক একবছর পর অর্থাৎ ১৮২২ সালে রামমোহন ফারসি ভাষায় "মিরাত - উল-আকবর নামে একটা পত্রিকা প্রকাশ করেন। দশ বছর ধরে সংবাদ কৌমুদী প্রকাশিত হয়েছিল। এর আগে "বেঙ্গল গেজেট" নামে একটি সংবাদপত্র প্রকাশিত হতো। এছাড়া জীবনের শেষ নয় বছরে রামমোহন রায় মোট পাঁচটি সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর ফলে সংবাদপত্রের একজন দক্ষকর্মী হয়ে উঠেছিলেন।
ঐতিহাসিক বাসুদেব চট্টোপাধ্যায় বলছেন -রামমোহন ভারতবাসীকে তাদের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন করেছেন, এমনকী ভারতে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশও তাঁর হাত ধরে হয়েছিল। তিনি তাঁর সংবাদপত্রে তুলে ধরতেন কীভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিপ্লব মানুষকে মুক্তির সন্ধান দিয়েছে। তিনিই প্রথম ভারতে বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে আলাদা করতে চেয়েছিলেন।এই বিষয়ে ' রিফর্ম বিল' এনে তিনি বলেছিলেন যে " বিচার বিভাগ এবং শাসন বিভাগ এক থাকলে কখনও সুবিচার হয় না।"
আজ রামমোহন রায়ের তিরোধান দিবস। সারাবিশ্বে করোনার আবহে আজ যে কঠিন পরিস্থিতি চলছে। তারমধ্যে আমরা ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক তথা ভারতের নবজাগরণের পথিকৃৎ রামমোহন রায়কে একজন ভারতবাসী হিসেবে এই তিরোধান দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করি ।
অনেক অজানা তথ্যের ভিত্তিতে লেখাটি সুখপাঠ্য এবং সমৃদ্ধ হয়েছে। এই মহামানবকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন
উত্তরমুছুনকরতে পেরে খুব খুশী হলাম। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এই
মানুষটি ভারতের আপামর জনসাধারণের জন্য
অনেক কাজ করে।
আপামর জনসাধারণের জন্য অনেক কাজ করে গেছেন।
উত্তরমুছুন