বিকাশ চন্দ
ঝুপড়ি চাতর দু'কুলে
কোন স্মরণীর পথ ধরে কেমন বাঁচে অরণী
ইচ্ছে আতস কাঁচের ভেতর
দাঁড়িয়ে আগুন বরণী।
অনেক উঁচু সীমানা হীন জীবন জুড়ে হৃদ্যতা
খোলা শরীর উষ্ণ কথা
স্বর্গ জানে কী বদ্ধতা !
রাত জোনাকি নাচন দেখে স্পর্শ সুখের চুম্বনে
শোকাহত ফুলের গন্ধে
চলেছি সহ মরনে।
নোঙর তুলেছি ভরা জোয়ারে নৌকো জানে—
জলের ঢেউ নাচায় শরীর
জীবন জোয়ার উজানে।
শঙ্খচিল ভিজিয়ে দিল ডানার নোনা জলে—
রাতের ভেতর শীত বাসনা
চোখ ঢাকেনি কাজলে।
চেনা সবুজ লতা গুল্ম সাজছে বকুল মুকুলে—
প্রসন্নতা চোখে মুখে
জোয়ার টানে দিস খুলে,
আগুন রাঙা ছাই পোড়া সুখ ঝুপড়ি চাতর দু'কুলে।
জমির অঙ্গীকার
চৌদ্দ হাতের গলির ভেতর আজব পুজোর বাড়ি —
ইচ্ছে গুলো সকল সময় শব্দ বোনা জীবন,
শরীর জুড়ে পাক খেয়েছে অন্ধ সাপের গরল—
দু'চোখ ঢেকে ম্যাজিক আলো যাদুকরের রীতি।
কপাল জুড়ে জীবন খেলে অচেনা কোন অক্ষরে—
জন্ম বীজের শেকড় জানে কেমন ছিলো অঙ্কুরে,
অজানা সব কথা চেনেন তিনিই নাকি দার্শনিক —
বছরগুলো ঘুরে ফেরে দুঃখ বরণীর ঘরে।
অসহ্য সব কথা যা বলার জন্য অপেক্ষায় —
দিন রাত্রি দীর্ঘশ্বাসের দায় বোঝে না নির্বাসনের,
ভালোবাসা'র ডানার আড়ালে বেঁধে ফেলেছে পরি–
সকল কাজের ভেতর রক্ত ঘামের নোনা আস্তরণ।
কতবার সামর্থ্য হীনতায় প্রিয় সময় উধাও কপাল ছিঁড়ে–
শুভ্র জানু পায়ের পাতায় সুনিপুণ আলোর মহড়া,
অস্থির দেবতা আমজনতার সন্ন্যাসী অনুরাগ–
চোখের জলের পেছনে খোঁজে বাসযোগ্য জমির অঙ্গীকার।
পাখির নরম পালক
নিমডালের ছায়ার আড়ালে ঘুমোচ্ছে শরীর—
অনেক উদ্বেগে জনতার হাত তালি বাহবা বাগ্মী পুরুষ,
রূপ কথার মন্দিরের দেয়ালে গলে পড়ে রক্ত—
কোন বিশ্বাস যোগ্যতা নেই জেনে ও পথের উপরে পা,
শুধরে নেওয়ার সময় কেবল ভাসে শরীরের ছায়া—
ছায়ার উপরে ভাঙা মুখ স্নিগ্ধ জলের মায়ায়।
বাতাসে উড়ছে সাদা শাড়ি আর রঙিন শাড়ির ঢেউ
অনার্য মহিমায় চান সেরে আসে সিন্ধু নদের জলে,
গর্ভজাত ক্রোধের দায় নেই বনজ অঙ্কুর সকাল
চেটেপুটে অনন্ত মজলিশ জল ছবি আঁকে,
বিষাক্ত সাপের চেরা জিভ চাটে আকালের কপাল
বীজ চিহ্নে পুঁতে রাখে আড় কাঠি পাচন কাঠি কত,
বেল পাতা পঞ্চামৃত ঘিরে রাখে কুশলী অক্ষয় বাসর
বন কুসুমের মালা নির্ভীক স্বয়ম্বরা শরীরে ঝলকায়।
লৌকিক প্রবক্তা গ্রহফেরে ঘিরে আছে অনন্ত প্রবাস—
পৃথিবীর সমান্তরাল গ্রহণ কালের শোক আবহমান,
নমনীয় শরীরে জড়িয়ে বেশ নরম শিশুর আবাস—
দিব্যি রাজা- রানী পারিষদ ব্যস্ত ধূলো মাটি জলের খেলায়,
শরীরে জড়িয়ে রয়েছে শীত সরিসৃপ বাঁধন
চাঁদের পেছন থেকে নিয়ে আসি পাখির নরম পালক।
সংহার
হৃদয় জ্বলনের গন্ধে ভাসে না প্রেম কথা যত পোড়ে,
অন্তস্থলের গহীনে যত উত্তাল কলরোল —
রেখে গেলাম পথে ঘাটে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষত।
কত দূর যেতে হবে গণ্ডি রেখা সীমান্ত চিহ্ন ভেঙে,
সহজ সখ্যতা রাস রঙ্গ বাধা নেই পারিজাত সাথী—
প্রতি পদে ভীরু চেতনা ভিজে যায় গোপন রক্তস্রোতে।
বিদেশী সবুজ গিলে খায় দাবানল, তবু নদী জানে তার স্রোত,
তার ও চেয়ে কঠিন বীভৎসতা ছিন্নভিন্ন গাঢ় সম্পর্ক বোধ—
ম্যাজিকওয়ালার আলখাল্লার কত না অচেনা ফাঁদ,
ছায়ার আড়ালে রাত দিন খেলে জানে সে বনস্পতি —
সম্মোহনের মমতায় রঙিন জীবন বোঝে আত্মরতি
কত শত চেনামুখ,কত চেনা সুর প্রীতিময় গান,
ভালোবাসায় দুধ ধানি ক্ষেতের গন্ধে মজেছে পরাণ।
চেনা মানুষের ভেতরে বেড়ে ওঠে অন্য অস্পষ্ট শরীর —
নিঃসঙ্গ কেউ থাকে না আকাশ নীল দিনের ভেতর,
মৃগশিরা নক্ষত্র রাত নাভিমূল ছুঁয়ে যায় রোজ।
কি করে বোঝাই বাস্তুহীন মানে কি শরীরহীন সবাই,
ঠিকানা বিহীন প্রেম পরকিয়া হয় তো বা মন প্রাণ—
অদৃশ্য কালো শর্তাবলী সম্প্রতি শান্তি সংহার।
ছিন্নমতি
ভীষণ রকম যন্ত্রনা ছিল বলে মুক্তির পথ খুঁজি দিন রাতে,
এ রকম ভাবলেশহীন জীবন কি জানে যায় অপঘাতে!
শ্রমসিক্ত প্রতিদিন রাতের ঝিমুনি অবসৃত মজার মায়ায়–
রিক্ত মানুষ আমি আত্মজা ফেলে এসেছি গাছের ছায়ায়।
কাল রাত্রির বাসর ভাঙ্গিনি তাই দোষ গুণ বে-কসুর–
আশ্চর্য কিশোর বেলা অকথা অন্তরের জানে সে পশুর,
হয়তো বা ছিল চাষাভুষা সময়ে ধানি জমি ভিজে আল–
দুধ ক্ষীর জমেছে ধানের শীষে গন্ধ জানে আদুরে দুলাল।
শহর তো আসে মশগুল থাকে ফাঁকা মাঠে আপন সত্ত্বায়—
অপরূপ প্রেমকথা গান মজলিশ এখন মেলে খুব সস্তায়।
ছায়া ঘেরা সরল গ্রাম কথা শহর কেনা বেচা শেষ আসরে—
কোন কথা নেই প্রতিবাদী স্বপ্ন বাঁচে মরে মাথা বেচা বাসরে।
তবু তো এখনও কুয়াশায় ভেজে মাঠের রূপশালি ধান শিষ–
ভালোবাসায় মনের ভেতর রক্ত মাখা কথারা জাগে অহর্নীশ।
জ্বালায় বড় অন্তর্গত সংসারী সুখ অযথা আকাল ছিন্নমতি–
মাথায় করে বয়ে আনে দুপুর খাওয়ার সে তো লক্ষ্মী সরস্বতী।
লেখা পাঠান
bimalmondalpoet@gmai. com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন